স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে ব্যাপক হইচই এর মধ্যে কয়েকটি তথ্য বোধ হয় জেনে নেওয়া ভালো।
১) স্বাস্থ্যবিমা না সামগ্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা কোনটা লক্ষ্য হওয়া উচিত।
২) এতে সাধারণের স্বাস্থ্য কতটা রক্ষিত হবে?
৩)হঠাৎ ভোটের আগে এই নিয়ে এত লাফালাফি কেন?
৪) এর ভবিষ্যৎ কী?
চিকিৎসা শাস্ত্রের ইতিহাস তো কয়েক হাজার বছরের। কিন্তু, তা ক্ষমতাবান গোষ্ঠী পেরিয়ে সাধারণ মানুষের কতটা আয়ত্তের মধ্যে ছিল?
মিশরের এক প্রাচীন ভুর্জপত্রের (প্রায় ৩ হাজার বছরের পুরোনো) লেখায় দেখা যাচ্ছে অসুস্থ কর্মচারীর পারিশ্রমিক কাটা হচ্ছে না বরং তার কাছে চিকিৎসক পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভারতবর্ষে চিকিৎসক জীবক বুদ্ধের শরণাপন্ন হওয়ার পর সাধারণের চিকিৎসাতেই নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। পরবর্তীকালেও নিশ্চয়ই বুদ্ধ ধর্মের অনুগামীদের মধ্যে এই ধারা বজায় ছিল। ইতিহাসে উপহাসের পাত্র মহম্মদ বিন তুঘলক কিন্তু দিল্লীতে সাধারণের চিকিৎসার জন্য বিনামূল্যের হাসপাতাল করে দিয়েছিলেন।
তবে আইন প্রণয়ন করে বিশেষত শ্রমিকদের জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রথম দিশা দেখান চ্যান্সেলর বিসমার্ক। ১৮৮৩ সালে sickness insurance act, ১৮৮৪ সালে accident এবং ১৮৮৯ সালে disability সংক্রান্ত আইন চালু করা হয় যেখানে শ্রমিক ও মালিক উভয়পক্ষকেই একটি তহবিলে টাকা জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়।
১৯১৭ সালে রাশিয়ায় বিপ্লব সংগঠিত হওয়ার পর ১৯২০ সালে সমস্ত মানুষের স্বাস্থ্যের দায়িত্ব নেয় রাষ্ট্র; যদিও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এর সুফল পেতে সময় লাগে অনেক বছর। কিন্তু একটা অভূতপূর্ব অনন্য অধ্যায়ের শুরু হয়। রাষ্ট্র সমস্ত মানুষের স্বাস্থ্য-শিক্ষার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে পারে, এই নতুন ধারণার জন্ম হয়।
ভারতবর্ষে আইনগত প্রথম পদক্ষেপ ESI Act,1948 এর মাধ্যমে। মজুরীর শতকরা ৬•৫ শতাংশ (মালিক ৪•৭৫ এবং কর্মচারী/শ্রমিক ১•৭৫), পরবর্তীকালে যা শতকরা সাড়ে ৪ শতাংশ ভাগে (৩•৭৫+০•৭৫) নেমে আসে।
স্বাধীন ভারতবর্ষে চিকিৎসা ব্যবস্থায় Bhore Committee র নির্দেশিত পথে সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা সুদূর গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত প্রসারিত করা হয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধি সমেত। পরবর্তীকালে মুদালিয়ার কমিটি ও কর্তার সিং কমিটিও সরকারি ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করার পক্ষেই অভিমত দেন।
বেসরকারি চিকিৎসাব্যবস্থা চিরকালই ছিল কিন্তু ৮০ দশক থেকে এর ব্যাপক রমরমা শুরু হয় আর নয়া অর্থনীতিতে তার কলেবর ও উৎসাহ দুইই বর্দ্ধিত হয় বহুগুণ।
স্বাস্থ্যে বিমা প্রথম আসে ১৯৮৬ সালে Mediclaim এর হাত ধরে সরকারি ইনসিওরেন্স কোম্পানীর মাধ্যমে। পরে বেসরকারি উদ্যোগও এই পর্যায়ে এগিয়ে আসে। তবে এর প্রসার ও প্রভাব কোনটাই মধ্যবিত্ত খুব বেশী হলে নিম্ন মধ্যবিত্তের স্তর পেরিয়ে দরিদ্র জনগণ পর্য্যন্ত পৌঁছতে পারে নি।
বিমার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্প ESI এর পরে আসে ২০০৮ সালে RSBY(Rashtriya Swasthya Bima Yojana) সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের জনগণ.. মূলতঃ সমাজের পেছিয়ে পরা মানুষের জন্য। পরিবার পিছু ৩০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার পর বছরে ৩০,০০০ পর্য্যন্ত টাকার চিকিৎসা বিভিন্ন নির্দিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।
অবশ্য এই বিষয়ে পথপ্রদর্শক আগের বছরে এপ্রিলে অবিভক্ত অন্ধ্র প্রদেশে Y.S.Reddy মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন চালু হওয়া ‘আরোগ্যশ্রী’ প্রকল্প। পরে, তামিলনাড়ুতে CM comprehensive insurance scheme, কেরালায় ‘কারুণ্য’, মহারাষ্ট্রে ‘রাজীব গান্ধী জীবনদায়ী আরোগ্য যোজনা’ (পরে নামান্তর হয় ‘মহাত্মা জ্যোতিবা ফুলে জনআরোগ্য যোজনা’).. ইত্যাদি বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প চালু হয়। এর মধ্যে একমাত্র কেরলে ভিন রাজ্যের শ্রমিকদের জন্য হয় ‘আওয়াজ’ প্রকল্প। পঃবঙ্গে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প চালু হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে।
National Insurance, United India Insurance, Bajaj Allianz, IFFCO TOKYO, Oriental Insurance ইত্যাদি বিভিন্ন সময়ে যুক্ত হয়েছে বিমার সহযোগী হিসাবে। প্রাথমিক ভাবে beneficiary family র হিসাব মোটামুটি ৬৪ লক্ষের লক্ষ্যমাত্রায় রাখা হয়।
২০১৮ সালে সেপ্টেম্বর মাসে চালু হয় ‘আয়ুষ্মান ভারত প্রধান মন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা’ সারা ভারত জুড়ে। প্রকল্পের শতকরা ৬০ শতাংশ দেবে কেন্দ্র আর ৪০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট রাজ্য। এখানেই পঃ বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি। নাম হবে কেন্দ্রের বা প্রধানমন্ত্রীর, কার্ডে ছবি থাকবে প্রধানমন্ত্রীর..অথচ রাজ্যকে দিতে হবে শতকরা চল্লিশ ভাগ। আপত্তি পুরোপুরি অসঙ্গত বলা যায় না কারণ মানুষের উপকার তো উপলক্ষ্য মাত্র; আসল তো রাজনৈতিক প্রচার। ফলতঃ, মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তিতেই পঃ বঙ্গে ‘আয়ুষ্মান যোজনা’র প্রবেশ আটকে যায়।
তামিলনাড়ু, তেলাঙ্গানা, অন্ধ্র প্রদেশ, কেরালা, দিল্লী সমেত অন্য কয়েকটি রাজ্যের আপত্তি থাকলেও বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে তারা নিজের রাজ্যভিত্তিক স্বাস্থ্যপ্রকল্পের সঙ্গেই জায়গা করে দেয়। ‘আয়ুষ্মান যোজনা’য় RSBY এর মতোই বিমাকারীকে ৩০ টাকা দিতে হয়। স্বাস্থ্যসাথীতে কোনো টাকা দিতে হয় না।
তবে, প্রাইভেটে আউটডোর চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই দুটিরই কোনো ভূমিকা থাকছে না। ‘আয়ুষ্মান ভারত’ ও স্বাস্থ্যসাথী উভয়েই পরিবার পিছু বছরে ৫ লক্ষ টাকার সংস্থান রয়েছে।
এই পর্য্যন্ত মোটামুটি ঠিকই ছিল যদিও এটা ঠিক রাজ্য এই প্রকল্পে যোগ দিলে রাজ্যের খরচ অনেকটাই কম বা কোষাগারের সাশ্রয় সম্ভব ছিল। সমস্যা বাড়লো ১লা ডিসেম্বর থেকে প্রকল্পটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ায়। শুধু তাই নয়, ‘দুয়ারে সরকার’ এর বিভিন্ন পর্যায়ে (চতুর্থ পর্ব শেষ হয়ে পঞ্চম পর্ব শুরু হচ্ছে), কয়েকদিন আগে পর্যন্ত নতুন কার্ড হয়েছে ৭৬ লক্ষ ২৬ হাজার অর্থাৎ অতগুলি পরিবার। পঃ বঙ্গে পরিবার বা household এর সংখ্যা ২ কোটির কিছু বেশী।
যেহেতু ‘স্বাস্থ্যসাথী’ তে মহিলার নামে কার্ড হচ্ছে এবং তার শ্বশুর শাশুড়ির সঙ্গে কার্ডে নিজের বাবা-মা এর নামও থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে পরিবারের সংখ্যা অল্প হলেও কমতে পারে। পঃ বঙ্গের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। সাড়ে ৭ কোটি তো ইতিমধ্যেই এর আওতায় চলে এসেছে। পঃ বঙ্গ সরকারের অন্যান্য স্কীম (যেমন, wb health scheme) এর বাইরে যারা আছেন, আশা করা যায় তারা সকলেই যোগদান করে ফেলবেন।
সরকার সকলকে এতো সুযোগ দিচ্ছে এতে অসুবিধা কোথায়? অসুবিধা আছে আর তা বেশ ঘোরতর……
১) সবচেয়ে বড় অসুবিধা এই মুহূর্তে বিমার প্রিমিয়াম নয় সরকার পুরো টাকা দিচ্ছে এবং দৈনিক কয়েক কোটি টাকার বিল হচ্ছে প্রতিদিন। বলা হচ্ছে ২০০০ কোটি টাকার সংস্থান রেখেছে। তাতেও হবে তো? প্রসঙ্গত, সরকারের স্বাস্থ্যখাতে ২০১৯ এ বরাদ্দ ছিল ৯৫৫২•৭০ কোটি সব মিলিয়ে।
২) সকলেই যদি পরিবার পিছু বছরে ৫ লক্ষ টাকা খরচ করার অধিকারী হয় তাহলে ভর্তি হয়ে চিকিৎসার জন্য সে কোথায় যাবে? সরকারি হাসপাতাল অন্তত সেখানে অগ্রাধিকার পাবে না। আর, এই কার্ড বাবদ চিকিৎসার টাকা মিটিয়ে স্বাস্থ্যখাতে আদৌ কী পড়ে থাকবে? RSBY প্রকল্পে সরকারি হাসপাতালও সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ কৃত টাকা পেতো। এতে হাসপাতাল বা ‘রোগী কল্যাণ সমিতি’ র অনেক উপকার হতো কারণ user fee উঠে যাওয়ায় ‘রোগী কল্যাণ সমিতি’ র কোনো তহবিল সংগ্রহ বন্ধ হয়ে যায়। অথচ, হাসপাতালের নিত্য নৈমিতিক সমস্যা সুরাহায় এই তহবিল সত্যিই জরুরী।
৩) কোনটা বেশী জরুরী ছিল যে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা আছে তাকে আরও শক্তিশালী করে সমস্ত মানুষের চিকিৎসাকে সহজসাধ্য করা, না, বেসরকারি ব্যবস্থার দিকে মানুষকে প্রলুব্ধ করা ? পঃ বঙ্গে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার নেটওয়ার্ক কিন্তু অনেক আগে থেকেই যথেষ্ট বিস্তৃত। বর্তমান সরকার তো দাবী করে তারা ICU, Critical care Unit, SNCU, Multi Speciality Hospital ইত্যাদি যথেষ্ট পরিমাণে তৈরী করেছে। তাহলে তাকে শুকিয়ে যাওয়া (wither away)র রাস্তা পরিষ্কার হচ্ছে কেন?
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা উচিত দিল্লি সরকার বিভিন্ন মহল্লায় ক্লিনিক খুলে স্বাস্থ্যকে সাধারণের অনেক কাছে নিয়ে এসেছে। মুম্বাই মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের অধীনে ৪টি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, একটি ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল, ৬টি স্পেশালিটি হাসপাতাল ও ১৬ টি সাধারণ হাসপাতাল বেশ ভালো ভাবেই চলছে যেগুলি সাধারণ মানুষের আয়ত্তের মধ্যেই। আমাদেরও এই ধরণের চিন্তা করায় বাধা কোথায়? না কি সবই অভিনব হতে হবে?
৪) কোনো প্রকল্পে সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা বা অপারেশনে অর্থ নির্দিষ্ট করার আগে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক মণ্ডলীর সঙ্গে অবশ্যই কথা বলা উচিত। সারজেন, ফিজিসিয়ান, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি প্রত্যেকটি বিভাগের আলাদা সংগঠন আছে এবং তারা কেউ রাজনীতি পরিচালিত নয়। তাদের সঙ্গে কথা বলতে অসুবিধা কোথায়? কিছু প্রশাসক বসে অতি দ্রুততায় কোন চিকিৎসায় কত প্রাপ্য ঠিক করে দিলে যা হয় তাই হচ্ছে। পুরোটাই এত অসঙ্গতিপূর্ণ যে প্রত্যহ রোগী প্রত্যাখানের অভিযোগ আসছে অসংখ্য।
৫) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো অর্থ সংস্থান।সারা পৃথিবীতে এখন ‘Universal Health Care’ এর সপক্ষে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কিছু দেশ সরকারি খরচে (অর্থাৎ জনগণের করের টাকায়) সকলের জন্য স্বাস্থ্যব্যবস্থা চালু রেখেছে। কিউবার নামটা প্রথমে মনে এলেও ব্রিটেন,ডেনমার্ক, ফিনল্যাণ্ড, অস্ট্রেলিয়া,কানাডা, ভুটান, বাহরিন, গ্রীস,নিউজিল্যাণ্ড প্রভৃতি অনেকগুলি দেশে এই ব্যবস্থা বলবত। আবার, অনেকগুলি দেশ করদাতার টাকা ছাড়াও যাদের সামর্থ আছে প্রত্যেকের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বাস্থ্যবিমার টাকা সরকারি বা আলাদা তহবিলে সংগ্রহ করে। যাদের ক্ষমতা নেই সরকার তাদের টাকা দিয়ে দেবে। এখানেও বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে। চীন তো অনেক বার পরীক্ষামূলক ভাবে নিয়ম পাল্টেছে। বিভিন্ন প্রদেশে নিয়মে তারতম্য আছে। অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রদেশের বেশীর ভাগ দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা নেয়। অন্যদের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন, শিল্পকর্তৃত্ব, শ্রমিক বা কৃষক সংগঠন এমনকি অল্প হলেও ব্যক্তির contribution বা অবদান থাকে। রাশিয়ায় অতি শক্তিশালী পুরোনো স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থাবলী থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন, জেলা, প্রদেশে এর আর্থিক ও অন্যান্য দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট আছে। জার্মানীতে আবার প্রত্যেককে রোজগারের ৭•৫ শতাংশ আলাদা স্বাস্থ্যবিমার জন্য জমা দিতে হয়। সেই তহবিল সরকার নিয়ন্ত্রিত হলেও জনগণ পছন্দ মতো বেসরকারি সংস্থা বেছে নিতে পারে। অর্থাৎ, যার রোজগার বেশী তাকে বেশী টাকা দিতে হয়। বয়স্কদের অনেক ছাড় আছে; সুতরাং কম বয়স্কদের তুলনামূলক ভাবে বেশী দিতে হচ্ছে। ফ্রান্স, ইতালী, নরওয়ে, সুইডেন সমেত ইউরোপের প্রায় সব দেশে, ল্যাটিন আমেরিকার আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, পেরু, মেক্সিকো প্রমুখ বিভিন্ন দেশে, এশিয়ার ভিয়েতনাম, জাপান, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক, ওমান, কুয়েত এমনকি আফ্রিকায় দঃ আফ্রিকা, কেনিয়া, রোয়াণ্ডা, মিশর ইত্যাদিতে জনসাধারণের স্বাস্থ্যব্যবস্থার বৃহত্তর অংশ কোথাও পুরোপুরি সরকারি, কোথাও সরকার ও সরকার নিয়ন্ত্রিত বিমা ব্যবস্থা, কোথাও সরকারি-বেসরকারি মিলিত প্রচেষ্টায় নেওয়ার চেষ্টা চলেছে।
বিমার নিয়ন্ত্রিত অবয়ব সামগ্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার পরিপূরক হিসাবে কাজ করতেই পারে। সুপরিকল্পিত পদক্ষেপে তাতে কোনো বিরোধ থাকার কথা নয়। স্বাস্থ্য খাতে শুধু GDPএর শতাংশ বাড়ালেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমেরিকায় স্বাস্থ্য খাতে খরচ হয় GDP র ১৭ শতাংশ, অন্যান্য সমস্ত দেশ থেকে অনেক এগিয়ে। কিন্তু সেখানে বহু মানুষ এখনও স্বাভাবিক স্বাস্থ্য পরিষেবার বাইরে। তীব্র বৈষম্য- অসাম্য, অদ্ভুত প্রতিক্রিয়াশীল দৃষ্টিভঙ্গি আর তার সঙ্গে আইনগত পদক্ষেপ এড়াতে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও ব্যবস্থাদি সম্পর্কিত ব্যাপক অপচয়..এ সবই প্রত্যাশিত ফল থেকে অনেক পেছিয়ে পড়ার কারণ সমূহ, বিপুল খরচ সত্বেও।
সুতরাং, সঠিক পরিকল্পনা, পরিষ্কার দৃষ্টি ভঙ্গি এবং দেশের মানুষের সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান, এগুলির সমন্বয়েই একমাত্র বেরিয়ে আসতে পারে সঠিক পথ। আর তার সঙ্গে সুনিশ্চিত করতে হবে প্রত্যেকটি স্তরে আর্থিক জোগানের ধারাবাহিকতায় যাতে প্রকল্পগুলি স্বনির্ভরযোগ্য বা financially viable হয়।
ঠিক এইখানেই ‘স্বাস্থ্যসাথী’ র মূল সমস্যা। বিস্তারিত সযত্ন পরিকল্পনা এবং আর্থিক সংস্থানের পরিষ্কার ব্যবস্থা না রেখে যে ভাবে চটজলদি সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে তার ফলাফল হতে পারে মারাত্মক। শুধুমাত্র ভোটের জন্য যা খুশী করার অধিকার সংবিধান দিয়েছে কি না জানি না কিন্তু এর দ্বারা পুরো প্রকল্পটার গঙ্গাযাত্রার বন্দোবস্ত পাকা করা হচ্ছে এ বিষয়টি নিশ্চিত।আর তার সাথে সাথেই অন্যান্য চালু প্রকল্পগুলির (যেমন wb health scheme) ভবিষ্যত হয়ে উঠছে ঘোর অনিশ্চিত।
যে প্রকল্প দরিদ্র ও পশ্চাদপদ অংশের কাজে নিয়োজিত হতে পারতো, ব্যক্তিগত বা দলগত স্বার্থে জেনেশুনেই তার সর্বনাশ করা তো অপরাধ হিসাবেই গণ্য হওয়া উচিত। না কী ??
৬) RSBY প্রকল্পে ত্রিশ হাজার টাকাতেই বহু দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। নার্সিং হোম, ডাক্তার এবং অবশ্যই তথাকথিত রোগীর যোগসাজসে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই বিল করে টাকার ভাগ বাঁটোয়ারার উত্তম বন্দোবস্ত তৈরী করা হয়েছিল কিছু মধ্যবর্তী মানুষ বা দালালের মাধ্যমে। আর এখানে তো ৫ লক্ষ টাকার ব্যাপার। এর মধ্যেই ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পে উত্তরাখণ্ডে ব্যাপক জালিয়াতি ধরা পড়েছে। দুর্নীতির বিষয়ে বর্তমানে পঃ বঙ্গের অবস্থান মোটেই সুখকর নয়। সমস্ত জনগণের জন্য বিশাল পরিকল্পনায় সেটা হিসাবের মধ্যে রাখা হয়েছে না সেটাই অন্যতম বিচার্য বিষয় সেটা ঠিক পরিষ্কার নয়…..।
‘স্বাস্থ্যসাথী’ কে ‘ভোটের সাথী’ করাটা কী আদৌ যুক্তিযুক্ত হচ্ছে? কী মনে হয় ???