স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই দেখতে হল। দুজনেরই মামুলি সমস্যা। ওই যেমন হয় গড়পরতা বয়স্ক মানুষের। গ্যাস অম্বল কাশি ব্যথা। মামুলি বললাম বটে। আসলে মামুলি না।
সে ভাবে ভাবলে কারওর কোনও সমস্যাই ওই যাকে বলে মামুলি না। যার হয় তার জীবন-মরণ সমস্যাই প্রায়। তেমন তুচ্ছ হলে কেউই নিজের সময় নষ্ট করে বারাসত সিটিজেনস ফোরামের প্রায় দাতব্য এই ক্লিনিকে উপস্থিত হতেন না। নিশ্চয়ই পীড়াটা কোথাও ততখানি গুরুতর কষ্ট দিচ্ছিল।
কেউ হয়তো বলবে মানসিক ব্যাপার। ও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটু আধটু শরীর গড়বড় করবেই। তা সেই মানসিক… হলেও হতে পারে, সেই সব কষ্টও তো কষ্টই একরকমের। তাই ওঁরা, এই সমস্ত রোগীরা আসেন। অবশ্য সত্যি সত্যি আরও মারাত্মক অসুখের রোগীরাও আসেন কেউ কেউ। কারও রোগ ধরা পড়ে এখানেই। কাউকে বা অন্য কোথাও, অন্য যোগ্যতর কাউকে দেখাতে বলি।
এখানে আসেন কেন? সহজবোধ্য কারণেই। সরকারি বিনিপয়সার আউট ডোরে আধঘণ্টা টিকিটের লাইন আর একঘণ্টা ডাক্তারের ঘরের সামনের লাইন পেরিয়ে ডাক্তারের সামনে খুব বেশি হলে এক মিনিট সময়। নইলে একশ থেকে আটশ টাকা ভিজিটের ডাক্তারের চেম্বারে নাম লিখিয়ে অনন্ত প্রত্যাশায় বসে থাকা।
তার চেয়ে এই সিটিজেনস ফোরামে ব্যাপারটা সহনীয় মনে হয় হয়তো। তাইই বোধ হয় এই এঁরা এখন এখানে, আমার সামনে।
সে যাই হোক। দুজনকেই দেখা হল। দেখার চাইতে বেশি হল শোনা। হ্যাঁ, এই শোনা ব্যাপারটা খুব উল্লেখযোগ্য শুধু নয়, জরুরীও। আমরা চিকিৎসা কর্মীরা রোগীকে শুশ্রূষা দিই। মানে দেবার চেষ্টা করি। এই শুশ্রূষা শব্দটার আভিধানিক অর্থ জেনেছি অনতিঅতীতে। আপনারাও দেখে নিতে পারেন অভিধানে। ততটা প্রচলিত নয় যে শুশ্রূষার যে অর্থটি তা হল, “শুনিবার ইচ্ছা”। এই “শুশ্রূষা”টি রোগীসংখ্যার চাপে, সময়াভাবে, কখনও বা অনভ্যাসে আর অন্যতর কারণেও উপেক্ষিত হয়ে যায়। “শোনা” হয় না।
নিজে যখন রোগী হয়ে যাই অন্য কারওর কাছে, স্পষ্টই অনুভব করি নিজের মনোগত বাসনাটি। চাই যেন আমার কষ্টটা পুরোপুরি “শোনা” হয়।
আজ্ঞে হ্যাঁ। কথা ঠিকঠাক ভাবে যেন শোনা হয়। হয় তো রোগীর বলার মধ্যে পুনরাবৃত্তি থাকবে অনেক। তবু শুনতে হবে। তিনি যতক্ষণ যা যা বলবেন তার পুরোটাই। অনেক অবান্তর কথা থাকবে তার মধ্যে। তবুও…
আমার শিক্ষক দেবব্রত সেন বলতেন, “অনেককটা সুতো। তার মধ্যে ঠিকঠিক সুতোর ডগাগুলোকে চিনে নিয়ে জোড়া দিলে বেরিয়ে আসবে রোগনির্ণয়ের হদিশ”। স্যারের বলা অনেক উপদেশের মধ্যে আরও একটা ছিল, এই রোগীর বলা কথার সম্বন্ধে।
কথা ঠিক না। বলা ভালো রোগীর সঙ্গে কথোপকথন। ইংরেজিতে হিস্ট্রি-টেকিং। স্যার বলতেন ঠিকমত হিস্ট্রি নেওয়া হলে, শতকরা আশিভাগ অসুখই বেরিয়ে আসে ,ডায়াগনোসিস করা যায় হিস্ট্রি থেকে। তারপরের শতকরা পনেরো ভাগ ডায়াগনোসিস বেরোয় ক্লিনিক্যাল একজামিনেশন থেকে। মানে ওই ঠোকাঠুকি, শোনা-দেখা-স্টেথোস্কোপ ইত্যাদি। আর একেবারে শেষে বাকি যে পাঁচ পার্সেন্ট রোগ তার পরেও ধরা পড়ল না, তার জন্য দরকার নানান পরীক্ষা রক্ত-মল-মূত্র-নানান গ্র্যাফি ও স্ক্যান!
এই অবধি লিখেছি কী লিখিনি। একটা ফোন এল। বারাসত হাসপাতালের ইসিজি টেকনিশিয়ানের। ফোনে নানান কথার মধ্যে যা সংবাদ শুনলাম, তা হাস্যকর ভাবে ভয়াবহ। দুটো প্রায় পরস্পর বিরোধী শব্দকে জুড়ে দিতে হল বাধ্য হয়েই। বারাসত হাসপাতালের ইনডোর আর এমারজেন্সিতেও এখন নাকি “মৃত্যু” ঘোষণা করতে ইসিজি করানো হচ্ছে। সেখানে স্ট্রেইট লাইন পেলে তবেই “মৃত”। নাঃ, ডেথ ডিক্লেয়ারেশনে এই রকম পাইকারি ইসিজি করানোর প্রথা শুনিনি আগে। ভাবুন একবার, ডাক্তারের অনিরাপত্তা বোধ কোথায় পৌঁছিয়েছে।
এখন এভিডেন্স বেসড মেডিসিনের যুগ। মুখের কথার দাম নেই। কথা শোনা হোক না হোক, এভিডেন্স জোগাড় করে রাখতে হবে। নইলে কনজিউমার প্রোটেকশন অ্যাক্টের হাত থেকে চিকিৎসকের রক্ষা নেই। আর তাই প্রেসক্রিপশনের সিংহভাগ দখল করে থাকে নানা ইনভেস্টিগেশনের চাঁদমালা। সেই পরীক্ষানিরীক্ষা কখনও বা আত্মরক্ষামূলক আর কখনও বা অন্যতর রেভেনিউ-উৎপাদনকারী রহস্যকাহিনি।
এহ বাহ্য। মূল গল্পের থেকে অনেকখানি সরে এসেছি। এই সমস্ত গোলোযোগ সরিয়ে আসল কথায় ঢুকি। সামনে বসা দুজনেই নিজের নিজের শারীরিক সমস্যার কথা বলেছেন। দেখানোর পর্ব চুকে গেছে। তবুও দম্পতির মধ্যে স্বামীটির মুখে দেখি কী একটা সলজ্জ জিজ্ঞাসার ভাব। ভাবলাম কোনও অমীমাংসীত প্রশ্ন রয়ে গেছে হয় তো।
অনেকসময়েই স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে এলে, বয়স যাই হোক, তাঁদের অনেক রকম ব্যক্তিগত প্রশ্ন থাকে, নিজেদের মধ্যে মেলামেশা সম্বন্ধীয়। সেই রকমেরই কোনও প্রশ্ন হয় তো। লজ্জায় বলতে পারেন নি। আরও দু চারজনকে দেখা বাকি যদিও, একটু প্রশ্রয়ের গলায়ই বলতে বললাম, বাকি জিজ্ঞাস্যটি।
অনুমতি দিতেই মহিলা বললেন দ্বিধাজড়িত গলায়, “উনি শুধোতে সাহস পাচ্ছে না। আমি বলি?”
আমি ঘাড় নাড়ার আগেই উনি পেশ করলেন সম্মিলিত জিজ্ঞাসাটি।
“ডাক্তারবাবু, আপনি লাউশাক খান?”
ওঁদের দুজনকেই বেশি করে শাকপাতা খেতে বলেছি একটু আগেই। কিন্তু আমার খাবার প্রশ্ন উঠছে কেন?
এবার মুখ খুললেন স্বামী ভদ্রলোক। “বলছিলাম কী, আমাদের চালের বাতায় লাউগাছ উঠিয়েছি। একেবারে লকলকিয়ে উঠেছে তার ডগাগুলো। যখন অল্প বাতাস দেয়, মনে হয় যেন হাত বাড়িয়ে নাচছে। কটা ডগা এনে দিলে খাবার জন্যি, বাড়ি নে যাবেন? আমরা তো তেমন ইয়ে, মানে বড়োলোক নই। নেবেন, ডাক্তারবাবু?”
একলহমায় মনে পড়ে গেল, পেছনে ফেলে আসা বছর চল্লিশেকের স্মৃতি। সত্যিকারের ভালোবাসা থেকে উঠে আসা নানান এই রকম অমৃত উপহার। না, আমার কৃষ্ণগঞ্জের দাদা, সন্তোষদার সেই দুহাত উজাড় করা উপহার শুধু নয়। ভালোবাসার আম জাম কাঁঠাল লিচু, আর সারা বছর ধরে আরও কত উপহার, পরিবারশুদ্ধ সবাইকে দিয়ে ভরিয়ে দিতেন সন্তোষদা। একবার নদীতীরের জমি দেখাতে গিয়ে কয়েকটা আকাশমণি গাছ দেখিয়ে বললেন, “নামে নামে গাছে পুঁতেছি। এই গাছটা আমার, এই গাছটা ছোটোভাইয়ের, এইটা আপনার বৌদির আর এই দুটো আপনার আর বৌমার।” শুধু তাই নয়। দেখানোই নয়। বছর কয়েক বাদে আমাদের “ভাগের” সেই আকাশমণি গাছ কাটিয়ে তক্তা করে ম্যাটাডোরে করে আমার বাড়িতেও পৌঁছে দিয়েছিলেন, অকালপ্রয়াত সন্তোষদা’।
এই দাদা ছাড়াও অন্য দূর দূর গ্রাম থেকে আসা মানুষেরা ছোটো বড়ো নানান উপহার নিয়ে আসতেন কখনও। কেউ একটা পাকা পেঁপে। কেউ বা দুটো ডিম। সুনীল চৌধুরী বলে একজন ছিলেন। পদবিতে চৌধুরী থাকলে কী হবে, গরিব চাষিই। তাঁর আবার আমার চাইতে বেশি ভাব ছিল আমার গিন্নি সুনন্দার সঙ্গে। আসলে সুনীলের মায়ের ছিল জেনিটোইউরিনারি প্রোল্যাপ্স। তার কনজারভেটিভ চিকিৎসা আউটডোরে বসে সামলাতো আমার গিন্নি। এই রকম যাওয়া আসার মধ্যে সুনীল আমার গিন্নিকে চিনে ফেলল।
বেচারা সুনীল সর্বমোট কী কী চাষ করতেন, জানি না। সম্ভবত বেগুন চাষটাই ছিল প্রধানতম। তিনি নিয়ে আসতেন উপহার হিসেবে দশ পনেরো কিলো করে বেগুন। মাঝে মধ্যেই।
অত বেগুন খাওয়া যায়? আমরা তো সংসারে মোটে দুজন। এর মাঝে আশিস, আমার ক্লাসমেট বেড়াতে এল একবার। আশিস ঘোষ। পরে মস্ত গাইনিকোলজিস্ট হয়েছিল। এই বেগুনের স্রোত দেখে সে যা মন্তব্য করেছিল তা বাঁধিয়ে রাখার মত। বলেছিল, “উরিঃ শালা, তুই আর সুনন্দা দেখি বেগুনটাকেই স্টেপল ফুড করে ফেলেছিস!”
আমি সুনন্দাকে ঠাট্টা করে বলতাম, “আগামী কাল তো আমার অফ ডিউটি, হাটবারও পড়েছে কাল। যাই, তবে হাটে গিয়ে তোমার পাতানো ছেলের বেগুনগুলো ঝেড়ে দিয়ে আসি!” সুনন্দাকে “মা” বলে ডাকতেন সুনীল।
অবশ্য আমি বেগুন বিক্রি করতে গেলেও যে খুব অবাক হত ওই অঞ্চলের লোকজন তা বোধহয় না। এর কিছুদিন আগেই বিডিও অরুণ দাসের বাবা, একটা না দুটো লাউ নিয়ে বাজারে বসেছিলেন, বিক্রি করার উদ্দেশ্যে। নিবৃত্ত করতে গিয়েছিলাম। আত্ম অভিমানী বৃদ্ধ বলেছিলেন, “তোমাদের বিডিও, ওই অরুণকে তো এই ফসল বিক্রির টাকাতেই পড়িয়েছি।”
আজকের এই রোগী দম্পতি বাড়ি যাবার আগে তাঁদের ঝোলায় হাত পুরে যেন কতই না সঙ্কোচ, বার করে আমার হাতে দিলেন গোটা কতক লজেন্স। একটু যেন গর্বিত। বললেন পড়শি ভাইপো ইটালি থেকে ফিরে কটা দিয়েছে। নেওয়া ছাড়া উপায় রইল না আমার।
গত চল্লিশ বছরের চিকিৎসক জীবন এই রকমের কত ছোটো ছোটো উপহার দিয়ে যে গাঁথা তার ইয়ত্তা নেই।
শেষতম উপহার পাবার গল্পটা বলে শেষ করি। সেটা পেলাম মাত্রই গতকাল। এখন যেখানে আছি, নিউটাউনে, সেখান থেকে বড়ছেলের বাড়ি যেতে হলে নানান ভাবে যাওয়া যায়। অটো বা টোটো রিজার্ভ করে। কিম্বা ক্যাবে। কিম্বা একটু হেঁটে নারকেলবাগানে গিয়ে বাসে ইকোপার্ক চারনম্বর গেটে নেমে।
আমি স্বভাবকৃপণ বলে বাসটাই প্রেফার করি। এই ব্যাপারেও আমার মন ভালো করা কিছু তুকতাক রয়েছে। আমার ধারণা কৃপণস্বভাব অনেকেই এটা করে। যেমন ধরুন বারাসত যেতে হলে আমি ইনড্রাইভ অ্যাপে দেখে নিই ভাড়া কত। ভাড়া দেখাচ্ছে পাঁচশ বাইশ। এই বারে নির্ধারিত বাসে উঠে মনে মনে হিসেব করি টিকিটের দাম বাইশ টাকা। তাহলে এ যাত্রায় নেট সেভিং হল পাঁচশ টাকা। এই রকমের ইয়ে করি। স্নেহপ্রবণ দুএকজন বন্ধুকে বললে তাঁরা বলেন, “এ তোমার মিতব্যয়িতা, কৃপণতা নয়।”
সে যাই হোক, ছাত্রাবস্থার সুদূর অতীতে বাসভাড়া না দেবার দুর্মর লোভ কখনও যে পেয়ে বসত না তা নয়। এই ব্যাপারে আকর্ষণীয় গল্প একদিন বললেন অরুণাংশুদা’। তখন কলকাতায় ট্রাম চলত খুব। ভিড়ও হত বেশ। একদিন শ্যামবাজার থেকে সেই রকমের এক ভিড় ট্রামের চওড়া পাদানিতে দাঁড়িয়ে মেডিকেল কলেজে আসছেন দাদা। ঠনঠনে আর কলেজস্ট্রিট মোড়ে অনেক লোক নামাওঠা করেছে। চাইলে ভেতরে ঢোকাই যেত। দাদা কিন্তু ভেতরে ঢোকেননি। ইউনিভার্সিটি স্টপ পেরিয়ে মেডিকেলের দিকে এগোচ্ছে ট্রাম। কন্ডাকটর হাত বাড়িয়ে ভাড়া চাইতেই দাদা সপাটে বললেন, “দূর মশাই, এই যে সেই শ্যামবাজার থেকে অ্যাদ্দুর অবদি আপনার বগলের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে এলুম, সে কি অমনি ভাড়া দেবার জন্য?”
বলেই শ্লথগতি ট্রাম থেকে নেমে মেডিকেলের দু নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে পড়লেন ভেতরে।
তা এই সব নিষিদ্ধ প্রাগৈতিহাসিক গল্প থেকে আমি এখন অনেক দূরত্বে নির্বাসিত। বাসভাড়া অনাদায়ী রেখে অবতরণকালীন সামাজিক অসম্মানের ঝুঁকি নেওয়া অসম্ভব। তাই বাসে উঠেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভাড়া কেটে ফেলি। কন্ডাক্টরেরা তাদের স্বল্পস্মৃতির কারণেই হোক বা আমার চেহারার পুরোনো ছাপ দেখেই বিভ্রান্ত হয়। নামবার মুখে আবার ভাড়া চায়। তখন টিকিট কাটার সময়ের সামান্য বিতণ্ডার কথা মনে করিয়ে দিতে হয়। ছেঁড়া নোট কিম্বা খুচরো জনিত অশান্তির কথা মনে করাই সাগ্রহে। টিকিটও দেখাই
আজকেও ছেলের বাড়ি যাবার সেই বাসে ঘটনা ঘটল। আজ্ঞে, ভাড়া না দেবার ঘটনা নয়। বরং উলটো ঘটনা। বাসে উঠেই পকেট থেকে একটা দশটাকার নোট বার করে কন্ডাক্টরকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করেছি। একবার নয়। বারবার। তিনি ভ্রুক্ষেপহীন। কাছে আসেননি। বাস থেকে নেমে, তিনি যখন তারস্বরে চিনারপার্ক, এয়ারপোর্ট, বারাসত ইত্যাদি বলে খদ্দের ডাকছেন, আমি ওই মলিন দশ টাকার নোট তাঁর নাকের সামনে পতাকার মত দুলিয়ে বললাম, “ভাড়াটা নিন!”
তিনি লজ্জিত ভাবে বললেন, “ভাড়া লাগবে না স্যার!”
আমি অবাক। আজ তো সিনিয়ার সিটিজেন’স ডে বা ওই জাতীয় কোনও বাসভাড়া মকুবের কথা শুনিনি! তবে?
আমার চোখে বিস্মিত সংশয় লেগে আছে দেখে সেই মলিন পোষাক উদ্ভাসিত মুখের কন্ডাক্টর তাঁর ব্যস্ততার মধ্যেই বললেন, “ডাক্তারবাবু, আমায় চিনতে পারলেন না? সেই যে আমি, বুকে জল জমেছিল। কত সময় নিয়ে দেখে, এক্সরে আর কফ পরীক্ষা করে ছমাস ওষুধ খাওয়ালেন। কত কথা বলেছিলেন। বুঝিয়েছিলেন। সারাজীবনের মত বিড়ি সিগ্রেট বারণ করেছিলেন।”
ভাড়া দেওয়া হল না। ভিড় বাস আমাকে নামিয়ে এগিয়ে গেল। সামান্য কুয়াশা। বাসের লাল ব্যাকলাইট ঝাপসা হয়ে গেল ক্রমশ।
সেই কোন এককালে বলা আর শোনা কিছু কথা আজ এতদিন পরে ডিভিডেন্ড দিল।