শুরু থেকেই যেন অন্যান্য পেশার সঙ্গে ডাক্তারির একটা ফারাক তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। যেমন, জয়েন্ট এন্ট্রান্স পাশ করে যে ডাক্তারিতে ঢুকলো সে বলছে, সমাজের জন্য, গরীব মানুষের জন্য পরিষেবা দেবেন, কিন্তু যে ইঞ্জিনিয়ার হবে তার কাছে যেন সমাজের গরীব মানুষের জন্য কিছু করার প্রত্যাশা নেই। ডাক্তারের মা যদি বলে আমার ছেলে ৫০০ টাকা ফিজ নেয়, সে ডাকাতের মা হয়ে যাবে কিন্তু আইআইটি অথবা আইআইএম-এ শীর্ষ স্থানাধিকারীরা ক্যাম্পাস ইন্টারভিউতে কোন কোম্পানিতে কত বেশি টাকার প্যাকেজ অফার পেয়েছে সেটা তাদের আত্মীয়রা জানতে বেশ স্বচ্ছন্দ। তা বেশ গর্ব করার বিষয়। ধরে নেওয়া হয় আই আই টি থেকে পাশ করে তুমি বিদেশ যাবে আর সরকারি টাকায় ডাক্তারি পড়ে গন্তব্য হবে গ্রাম।
এখানেই সমস্যা। বছরের পর বছর ডাক্তারদের অর্থ উপার্জনকে যেন অপরাধ বলে মনে করা হয়। ডাক্তারদের ফিজ দিতে গিয়ে সবার যেমন বেশি দিয়ে ফেললাম বলে মনে হয়, বিউটি পার্লার, সিনেমা- থিয়েটারে টাকা খরচ করার সময় তেমন মনে হয় না। আমার মনে হয়, সমাজ, সংবাদমাধ্যম এমনকী আমলা সবার বোঝা উচিত, সব পেশারই দুটো দিক থাকে- একটা দিক হল নিজের ও নিজের সংসারের দেখাশোনার জন্য অর্থ উপার্জন করা আরেকটি দিক হল সমাজের জন্য কিছু করা। সব পেশারই এই দুটো দিক থাকা দরকার। তবে কেন ডাক্তারদের ওপর সব দায়ভার চাপানো হয়! যখন কোনও উকিল ৫০০০ টাকা কনসালটেশন ফি চান তা দেওয়ার সময় সবার মনে হয় তিনি খুব বড় কোনও উকিল। কিন্তু ডাক্তারদের সামনে একটা মহান হবার গাজর ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তুমি এক টাকা , পাঁচ টাকা নিয়ে রুগী দেখে ভগবান সাজো।ডাক্তারিটা অন্য যেকোনো পেশার মতো একটা পেশা, ডাক্তাররা সততার সাথে রুগী দেখছে কী না এটাই শুধু মাত্র বিবেচ্য। তারা দেবতাও নয়, অসুর নয়, তারা মানুষ।
তাই কিছু ডাক্তার কেন গ্রামে যাচ্ছে না বা বেশি ফিজ নিচ্ছে এটা নিয়ে ভাবার আগে ভাবি আমাদের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি হচ্ছে কী না বা ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ এ বিষয়ে সরকার কি ভাবছে।