আজ সারাদিন কেটেছে তুমুল ব্যস্ততায়। লক্ষ্য করে দেখছি বিগত কয়েকদিন ধরে একটু কাজের চাপ বেড়েছে।আউটডোর, ইমার্জেন্সি আর সার্জারি র হার হাসপাতালের সব ডিপার্টমেন্টে ই ধীরে ধীরে বাড়ছে।কোভিডের আতঙ্ক একটু হলেও যেন কমেছে মানুষের মনে। নন কোভিড রোগীরা আসতে শুরু করেছেন হাসপাতালে।
একটু প্রবীণ ডাক্তারেরা যাঁরা হাসপাতালে কম আসছিলেন অথবা রাউন্ডে এলেও বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করছিলেন,তাঁরাও ছন্দে ফিরছেন ক্রমে ক্রমে। ছন্দ ফিরছে কাজে।
আর কোভিডের অভিজ্ঞতা বুঝিয়ে দিয়েছে ঠিক কোথায় কোথায় সাবধান হতে হবে চিকিৎসকদের। যেমন পিপিই এখন শুধু ব্যবহার হচ্ছে মূলত কোভিড পজিটিভ রোগীর অপারেশনে অথবা অন্য কোন প্রসেডিওর চলাকালীন। অন্যথা ব্যবহৃত হচ্ছে শুধুমাত্র N95 মাস্ক এবং অবশ্যই স্যানিটাইজার।
এই মহামারীর মধ্যে যে এতদিন হাসপাতাল, দিনরাতের ইমার্জেন্সি আর অপারেশন করে এখনো কোভিডমুক্ত থাকতে পেরেছি তার একমাত্র কৃতিত্ব N95 মাস্কের। আমাদের আর ভাইরাসের মধ্যবর্তী এই মাস্কের দেওয়াল এই মূহুর্ত পর্যন্ত অটুট। কাল কি হবে অবশ্য কারো জানা নেই।
সারা পৃথিবী জুড়ে যখন এই লড়াইটা চিকিৎসকরা চালাচ্ছেন ভাইরাল মহামারীর বিরুদ্ধে তখন একটা অদ্ভুত হাস্যকর ছবি ভেসে এলো হোয়াটসঅ্যাপে। আমার খুব প্রিয় এক নিউরোসার্জন বন্ধু পাঠিয়েছেন।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক রোগী বসে আছেন কোন এক চিকিৎসকের ক্লিনিকে। মাথায় তাঁর প্লাস্টার করা। অনেকটা ক্রিকেট খেলার হেলমেটের আদলে তৈরী করা সেই শিরস্ত্রাণ। চোখের জায়গায় দুটো গর্ত। রোগীর মাথার খুলিতে চোট লেগে সম্ভবত কোন ফ্র্যাকচার হয়েছে। যা নিউরোসার্জারির মতো অন্তত জটিল বিভাগের চিকিৎসার বিষয়। খুলির ফ্র্যাকচার অনেকরকম হতে পারে। হেয়ারলাইন হলে অথবা মস্তিষ্কের আঘাত না থাকলে একরকম। কিন্তু ‘ডিপ্রেসড’ থাকলে এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে ইমার্জেন্সি লাইফসেভিং অপারেশন করতে হয়। সেটাই আধুনিক শল্যচিকিৎসার দস্তুর।
কিন্তু এখন চিকিৎসা ব্যবস্থায় সারা ভারতবর্ষ জুড়েই একটা ডামাডোল শুরু হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার কয়েকদিন আগে নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন যে আয়ুর্বেদ শিক্ষায় শিক্ষিত ডাক্তারেরা একটা পর্যায় অবধি আধুনিক শল্যচিকিৎসা করতে পারবেন। জেনারেল সার্জারি, আই, ইএনটি, ডেন্টাল এবং অর্থোপেডিক বিভাগকে তাঁদের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে প্রাথমিকভাবে।
আমি বিশ্বাস করি আধুনিক চিকিৎসা (modern medicine) ছাড়া বাকি চিকিৎসা ব্যবস্থাগুলির কোন বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই। তাই এই কোভিড মহামারীর বাজারে এই অত্যন্ত অবিবেচক সিদ্ধান্ত বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থার মূলে কুঠারাঘাত করছে বলেই মনে করছি।
আয়ুর্বেদ বা হোমিওপ্যাথিতে যদি মানুষ বিশ্বাস করেন তাতে আমার আপত্তি থাকতে পারে না। কারণ দিনের শেষে আপনি কি স্বাস্থ্য পরিষেবা নেবেন সেটা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত বিষয়। আমার আপত্তি সব চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আধুনিক চিকিৎসার সাথে মিলিয়ে দেওয়ার এই অপচেষ্টাকে।
হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদ, ইউনানি এই চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি সরকার তাঁর নিজের ইচ্ছেমতোই চালান তাতে কারো কিছু যায় আসে না, কিন্তু মিলিয়ে দিতে গেলে যে ‘খিচুড়ি’ ই রান্না হবে তার প্রমাণ আজকের এই ছবিটি। অত্যন্ত খারাপ মানের খিচুড়ি।
শরীরের হাড়ে ফ্র্যাকচার হলে তার চিকিৎসার একটি পদ্ধতি হলো প্লাস্টার করে সেই হাড়ের উপর এবং নীচের জয়েন্ট দুটিকে ইমোবিলাইজ করা। যাতে হাড়ের ভাঙা অংশটি জূড়ে যেতে পারার সময় পায়। যেটা খুলির ফ্র্যাকচারে কখনোই সম্ভব নয়। কারণ খুলির ভিতরে থাকে মস্তিষ্ক। যা মানুষকে পৃথিবীর অন্যসব প্রাণীর চেয়ে আলাদা করে রেখেছে। যেখানে আঘাত পৌঁছলে মানুষটির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
হাতুড়ে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে মান্যতা দিয়ে আপনি যদি এই ধরনের mixopathy-কে আশকারা প্রদান করেন তার ফলশ্রুতিতে এটাই ঘটবে।
মাথায় প্লাস্টার!!