আমি স্বাস্থ্য দপ্তরের মাথা এবং উপ-মাথাদের কাছে একটা করুণ আবেদন করছি। আপনারা, নিশ্চয়ই, উত্তরের পাহাড় আর পাহাড়ের সানুদেশে থাকা তরাইকে আমাদের মানচিত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করেন।
সহজ সমীকরণঃ- দক্ষিণবঙ্গ+উত্তরবঙ্গ=পশ্চিমবঙ্গ
সে যাই হোক, সেই অবিচ্ছেদ্য উত্তরবঙ্গের আপামর জনগণেরও অধিকার রয়েছে সুচিকিৎসা পাবার। আমি সেই তাঁদের হয়ে আবেদন করছি (লক্ষণীয়, দাবী করছি না), সমতলে, রাজধানীতে যেমন সুচিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে, তেমন সুযোগ দেওয়া হোক ওই রাজবংশী-মদেশিয়া-উপজাতি সংখ্যাধিক্য থাকা জনসমষ্টিকে।
না, আমি পাঁচতারা হোটেল থাকা শিলিগুড়ির কথা বলছি না। নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজের কথা বলছি না।
অতি মেধাবী বেশ কিছু চিকিৎসকেরা (প্রায় চাইল্ড-প্রডিজিও বলা যেতে পারে যাঁদের), যাঁরা সিসিটিভির মুখ ঘুরিয়ে পরীক্ষা পাশ করেছেন শুধু নয়, সদ্য গ্রাজুয়েট এমবিবিএস হয়েও যে সব ডিপার্টমেন্টে শুধুই সুপারস্পেশালিটি পোস্ট-গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টরা পড়েন তাদের শিক্ষক হয়েছেন অবলীলায়। মেধার জোরে। একলা এবং সস্ত্রীক। একাধিক বিষয়ে নির্বাচিত হয়েছেন তাঁরা। সুবিধাজনক বিষয় যাতে বেছে নিতে পারেন, প্রতিভাবানদের তো সেই সুযোগ দিতেই হবে।
এই তরুণ নক্ষত্রসম-প্রতিভারা বিদ্যার দৌড়ে হারিয়ে দিয়েছেন অন্যান্য আগেই পাশ করা পোস্টগ্রাজুয়েট প্রার্থীদের। এক থেকে এগারোটা অবধি বিষয়ে তাঁরা ছাপিয়ে গিয়েছেন উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের। ( যদিও মাত্র একটি বিষয়েই প্রতিযোগিতা করা যাবে, বিজ্ঞাপনে এই রকমই বলা ছিল।) স্বাস্থ্যের পিতামহদের এক বাপ (মহাভারত স্মরণীয়), তাঁর করুণাধন্য এক প্রতিভাকে আলো দিতে পাঠিয়েছে তিন তিনটে ডিপার্টমেন্টে।
এই প্রতিভাদের অমূল্য মনীষার আলো কেন রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ বা কুচবিহার মেডিকেল কলেজের রোগীদের কাছে পৌঁছবে না?
অবিলম্বে এই হিরের কুচি, সাত রাজার ধন এক মাণিকদের সুচিকিৎসার ছোঁয়া পাবার সুযোগ পাক আমাদের আত্মার অবিচ্ছেদ্য অংশের ভাইবোনেরা।
উত্তরবঙ্গের চিকিৎসাক্ষেত্র কোনও কনডেমড সেল নয় যে সেখানে শুধু ইঞ্জেকশন চোরদের, কাজে ফাঁকি দেওয়া ডাক্তারদের, শীতল ঘরে কুচিকুচি করার শাস্তি দিতে পাঠানো হবে। এটা তো তা’ হলে প্রকৃতপক্ষে সেখানকার মানুষদেরই শাস্তি দেওয়া। প্রকৃত প্রতিভাদের স্বাদ পেতে চায় ওই বঞ্চিতরা।
আমার আবেদন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাকিমরা যেন নির্মল চিত্তে এই তনয় তনয়াদের আমাদের প্রাণের চাইতেও বেশি কাছের এই উত্তর-মানচিত্রের ছোঁয়া দিতে রাজি হন। আমরা প্রত্যন্ত-বাসী অন্ত্যজেরা, এঁদের আলোয় আলোকিত হতে চাই।
দাবী নয়, কাতর আবেদন!
খুব ভালো লাগলো।