টাইফয়েড ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণঘটিত একটি রোগ। দায়ী জীবাণুর নাম Salmonellae typhi ও paratyphi।
প্রতি বছর সারা বিশ্বে টাইফয়েড জ্বরে আনুমানিক 11–21 মিলিয়ন মানুষ এবং প্যারাটাইফয়েড জ্বরে 5 মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হন। আনুমানিক 2,15,000 জন মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন।
সাধারণত জল বা খাবারের মাধ্যমে পেটে এই সংক্রমণ হয়। পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থার দুরবস্থা, পানীয় জলের দূষণ এই জাতীয় সংক্রমণের মূল কারণ।
বেশিরভাগ সময়ই কাঁপুনি সহ জ্বর আসে, তীব্র মাথাব্যথা থাকে। সঙ্গে খাবার খেতে অনীহা, বমি বমি ভাব ও শারীরিক দুর্বলতা থেকে থাকে। পেটে ব্যথা থাকতে পারে। পায়খানার সমস্যা থাকবেই এমন নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পায়খানা শক্ত হয়।
থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের উষ্ণতা পরীক্ষা করলে জ্বর আছে কিনা বোঝা যাবে। অনেক সময় শরীরে rash পাওয়া যায় (rose spot)। রক্তচাপ মাপা খুব জরুরি। শক (shock) জাতীয় জটিলতা তৈরি হলে, রক্তচাপ খুব কমে যায়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভয়ানক জটিল অবস্থার শিকার হতে হয়। নিউমোনিয়া (pneumonia), মস্তিষ্ক প্রদাহ বা এনকেফেলাইটিস (encephalitis), অন্ত্রে রক্তক্ষরণ (intestinal hemorrhage), অন্ত্রে ছিদ্র তৈরি হওয়া (intestinal perforation), সেপটিসেমিয়া (Septicaemia), শক (shock), ডিহাইড্রেশন (dehydration), কোমা (coma) ইত্যাদি জটিলতা তৈরি হতে পারে।
রোগনির্ণয় করার জন্য রক্তের কিছু পরীক্ষা করাতে হয়।
1. Widal Test (জ্বর হওয়ার অন্তত ৫-৭ দিন পর পজিটিভ রেজাল্ট পাওয়া যায়)
2. Blood Culture Test (অনেক বেশি নির্ভুল, অনেক আগেই পজিটিভ পাওয়া যায়, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রিপোর্ট পেতে সময় লাগে)
3. অন্যান্য রোগলক্ষণের ওপর ভিত্তি করে আনুষঙ্গিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
করণীয়:
১. ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
২. জ্বর বা মাথাব্যথা বেশি থাকলে প্যারাসিটামল (paracetamol) ট্যাবলেট ৫০০ মিলিগ্রাম (পূর্ণবয়স্ক) খাবার পরে একটা খেতে পারেন। দিনে দুটো থেকে তিনটের বেশি প্যারাসিটামল খাবেন না।
৩. জ্বর হলে কপালে জল পট্টি নিন। জ্বর খুব বেশি হলে মাথা জল দিয়ে ধুয়ে নিতে পারেন।
৪. মাথাব্যথা কমাতে অম্রুতাঞ্জন (amrutanjan) মালিশ করুন।
৫. জল বেশি করে খান।
৬. অতিরিক্ত ঝালমশলা যুক্ত ভারী খাবার খাবেন না।
৭. বিড়ি বা সিগারেটের নেশা থাকলে অন্তত কিছুদিন বন্ধ রাখুন।
৮. বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভিটামিন ওষুধ খাওয়ার কোনো দরকার পড়ে না। পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। আপেল, শশা, পেয়ারা, আঙুর, বেদানা ইত্যাদি ফল খান।
৯. ডাক্তারের পরামর্শ মতো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খান।
১০. রোগীর মানসিক অবস্থা, রক্তচাপ, তাপমাত্রা ইত্যাদি পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখতে হবে। পেটে ব্যথা, বমি বা জ্ঞান হারানোর মতো বিপজ্জনক লক্ষণ দেখা দিলে সত্ত্বর হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
টীকাকরনের মাধ্যমে টাইফয়েড রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
দু’রকমের টীকা পাওয়া যায়। মুখে খাবার টীকা এবং ইঞ্জেকশন যোগ্য টীকা। মুখে খাওয়ার টীকা কমপক্ষে ৬ বছর বয়সীদের দেওয়া যায়। এতে একদিন ছাড়া নেওয়ার জন্য চারটে বড়ি থাকে। ইঞ্জেকশন যোগ্য টীকা কমপক্ষে ২ বছর বয়সীদের দেওয়া যায়। প্রত্যেক ২ বছর অন্তর বুস্টার ডোজের ইঞ্জেকশন নিতে হয়। উভয় ধরনের টীকার কার্যকারিতা ৫০-৮০% মতো।
মোটকথা আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সময়, জল ও খাবারের ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। জীবাণু মুক্ত পানীয় জল ও রান্না করা গরম খাবার প্রতিরোধের মূল অস্ত্র।