(বি: দ্র: প্রথম কটা লাইন পড়েই কেস দেবেন না please, শেষটা পড়লে সব রাগ গলে জল হয়ে যাবেই যাবে, গ্যারান্টি।)
সকাল থেকেই social media-য় নানান জনের Valentines Day post দেখছি, আর মুচকি মুচকি হাসছি। ভাবছি এই শুরু হল হ্যাজ, “ভ্যালেন্টাইন’স ডে মানে কি শুধু …, আসলে তা হল…”; অনেকটা ছোটবেলার রচনা লেখার ঢঙে “স্বাধীনতা মানে কি শুধুই…”; যত্তসব, খালি ভাবের ঘরে চুরি! ভাবতে ভাবতে দিন প্রায় ফুরোবার মুখে ফুরসৎ পেলাম নিজস্ব একটা ভ্যালেন্টাইন’স ডে হ্যাজ নামানোর।
ছোটবেলায় ভ্যালেন্টাইন’স ডে বলে কোন জিনিস একেবারেই অশ্রুতপূর্ব ছিল। কাছাকাছি উচ্চারণের একটাই নাম জানা ছিল, ভ্যালেন্টিনা তেরেস্কোভা। এ পর্যন্ত পড়ে যদি কেউ ভাবেন, “আমার প্রথম ভ্যালেন্টাইন ভ্যালেন্টিনা” বলে হ্যাজ নামানো শুরু, তাহলে অবশ্যই ভুল করবেন। আসলে জানাই শুধু ছিল না, একেবারে ঠোঁটস্থ ছিল এইসব নামগুলো। ভ্যালেন্টিনা তেরেস্কোভা, শ্বেতলানা সাবিৎস্কায়া, কনস্ট্যান্টিন ৎসিওল্কভস্কি, এইসব নামগুলো মুখস্থ ছিল একটামাত্র বইয়ের কল্যাণে। মির পাবলিশার্স প্রকাশিত আ. ভালকভের লেখা “পৃথিবী ও আকাশ”।
এইসব নামগুলো মুখস্থ ছিল বলে স্কুল লেভেলের ক্যুইজে বেশ সুবিধে হত। সেটা সামান্য ব্যাপার। কিন্ত আমার ওপর বইটার প্রভাব ছিল গভীর, ব্যাপ্ত ও জীবনব্যাপী। ঐ একটামাত্র বইয়ের কল্যাণে জ্যোতির্বিজ্ঞান, মহাকাশবিজ্ঞান, astrophysics এমনভাবে মগজে উপনিবেশ গড়ে বসল, সেটাই হয়ে গেল আমার প্রথম কৈশোরের প্রথম ধ্যানজ্ঞান। স্কুলের ব্ল্যাকবোর্ডে লিখতাম নিজের কল্পনার তত্ত্ব, ভর আর সময়ের পারস্পরিক পরিবর্তনের সূত্র; সূত্রে থাকত একটা ‘K’, মানে Kshetra’s constant.
সেই প্রাক- ইন্টারনেট যুগে তথ্য সহজলভ্য ছিল না একেবারেই। জানতেই পারিনি Astrophysics কীভাবে পড়ানো হয়, কোথায় পড়া যায়। কিছুটা সেকারণে, কিছুটা নিজের অস্থিরমতিত্বের জন্যে প্রথম আবেগ সেভাবে পরিণতি পায় নি। তবে প্রথম প্রেমের মতো রেশ রেখে গেছে গোটা জীবন জুড়ে। ঐ একটামাত্র বই পড়ে আমার যুক্তিবাদে হাতেখড়ি, আমার নিরীশ্বরবাদী অবস্থানের ঘোষণা ও যাপন। অন্য কোন পড়াশুনো-গবেষণা না করে, শুধুমাত্র ঐ একটামাত্র বই অবলম্বন করেই জিওর্দানো ব্রুনোর জীবনী-নির্ভর একটা পূর্ণাঙ্গ নাটক “ফিনিক্সের নবজন্ম” লিখে ফেলা ক্লাস ইলেভেনে। [সে নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল আমারই পরিচালনায় আমাদের সংস্থা ঊর্বী সাংস্কৃতিক প্রসেনিয়ামের প্রযোজনায়। সে অন্য গল্প।]
ঐ একটামাত্র বই আমার মনে যে বীজ বপন করেছিল, সেই বীজের বংশবিস্তারের কারণেই পরবর্তীতে আমার সবচেয়ে প্রিয়, সবথেকে বেশিবার পড়া বই হল “A Brief History of Time”. এখনও ‘Interstellar’ দেখতে গিয়ে স্তব্ধবাক হয়ে যাই। এখনও রাতের আকাশের দিকে তাকালে তারায় ভরা আকাশ দেখি না, দেখি সময়ের স্রোত, আমার মননে ধরা পড়ে বিভিন্ন সময়ে উৎপন্ন আলোর অন্তহীন নদীপথ। প্রথম infatuation- এর প্রভাব এড়াতে আর পারলাম কোথায়! আমার আকাশ জুড়ে থাকল সময় আর সমগ্র সময় জুড়ে পৃথিবী। জীবন-জীবিকা, passion-profession- এর সীমানা ছাড়িয়ে অস্তিত্বের কণায় কণায়, কোয়ার্কে-কোয়ান্টামে থেকে গেল “পৃথিবী ও আকাশ”। আসলে infatuation- এর আকর্ষণ বা প্রেম-এর সমর্পণ, সবকিছুই অনির্ণীত। সত্যিই যে কোন মানুষ, যে কোন সম্পর্ক, যে কোন বিষয়, যে কোন বস্তুই হতে পারে ব্যক্তিবিশেষের ভ্যালেন্টাইনের আধার, ভ্যালেন্টাইনের রূপক।
এই উপলব্ধির পরেও কি আর অন্যদের ভ্যালেন্টাইন post-কে আঁতেলিকৃত হ্যাজ বলে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করা চলে! সে তো নিজের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতার সামিল!