১২ মে ২০২৫
আজ একটি “যুদ্ধ উন্মাদনা বিরোধী গণমিছিল” ছিল কোলকাতায়। “প্রয়োজনীয় যুদ্ধ” বিরোধী নয়, “যুদ্ধ উন্মাদনা” বিরোধী। বাধ্য হয়ে বীরের মতো যুদ্ধ করা আর যুদ্ধের নেশার ঘোরে যুদ্ধ করা আলাদা ব্যাপার।
বীর যোদ্ধা আর যুদ্ধোন্মাদের মধ্যে পার্থক্যটা কেমন? সিংহ আর খ্যাপা ষাঁড়ের তফাতের মতো। সিংহ নিজের জায়গায় আপন মেজাজে খুশি থাকে। খাদ্যের প্রয়োজনে বা শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হলে যুদ্ধ করে এবং তখন সিংহবিক্রম দেখায় কিন্তু যুদ্ধ শেষে নিজেকে এবং নিজের পরিবারকেও সুস্থ রাখে৷ অপরপক্ষে খ্যাপা ষাঁড়ের লক্ষ্য হল দিকবিদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে সবাইকে গুঁতিয়ে দেওয়া, তাতে নিজের লাভ হবে না ক্ষতি হবে, সেসবের হিসেব না করেই। আপনার দেশকে আপনি কী বানাতে চান? সিংহ না ষাঁড়?
“যুদ্ধ উন্মাদনা বিরোধী” যে মিছিল আজ ছিল, তার আহ্বায়কদের প্রচারিত পোস্টার আমি দেখেছি। পহেলগাঁওয়ের অপরাধীদের শাস্তি চাওয়া হয়েছে। যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘন করা চলবে না বলা হয়েছে। (এটা পাকিস্তানের আচরণের বিরুদ্ধে বক্তব্য বলেই মনে হল, কারণ তারাই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে এবং শর্তগুলো মূলত ভারত দিয়েছে।) এর সঙ্গে দেশে সাম্প্রদায়িক বিভাজন রোধ করার কথা বলা ছিল (যেটা দেশের স্বার্থেই) এবং শান্তি চাওয়া হয়েছে৷ প্রত্যেকটা দাবি একেবারে ভারত সরকারের দাবির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।
অথচ সেই মিছিলে মবিল ছুঁড়ে আক্রমণ করা হয়েছে বলে শুনতে পেলাম। পুলিশ আক্রমণকারীদের বদলে মিছিলকারীদেরই গ্রেপ্তার করেছে। ভারত সরকারের দাবির সঙ্গে একমত হবার অপরাধে আক্রমণ এবং গ্রেপ্তার! এটা কি সরাসরি ভারত সরকারের বিরোধিতা হয়ে গেল না ভক্ত-পুলিশ যুগলবন্দীর তরফে? ভারত সরকার প্রথম থেকেই বলে আসছেন যে যুদ্ধ কখনোই তাঁদের ‘চয়েস’ ছিল না এবং এখনো নয়, তাঁরা শান্তি চান, শান্তির প্রয়োজনেই তাঁরা জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেছেন, যুদ্ধ চান না বলেই শুরুতে পাকিস্তানের মিলিটারি ঘাঁটি বা সিভিলিয়ান এলাকাকে টার্গেট করেননি, পাকিস্তান ভারতের সিভিলিয়ানদের হত্যা করার পর তা প্রতিহত করার জন্য সেদেশের কিছু আক্রমণাত্মক মিলিটারি ঘাঁটিকে প্রতিআক্রমণ করতে বাধ্য হয়েছেন, এমনকি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে পাকিস্তান ফের প্ররোচনা দেবার পরেও সেই ফাঁদে পা দেননি। দেশে সাম্প্রদায়িক বিভাজন বন্ধ করার উদ্দেশ্যে সরকার সরাসরি বার্তা দিয়েছেন সেনাবাহিনীর দুই মুখপাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে। অর্থাৎ সরকার যা বলছেন, মিছিলও তাই বলছে। এই মিছিলকে আক্রমণ করা মানে ঘুরিয়ে ভারত সরকারকেই আক্রমণ করা। তাহলে দেশদ্রোহী কারা? শান্তি চেয়ে মিছিলকারীরা নাকি আক্রমণকারীরা?
সংবাদপত্র মারফত জানা গেছে, এর আগেই শান্তির বার্তা দেবার কারণে এক বাম দলের একজন নেত্রীকে কুৎসিত গালিগালাজের মুখে পড়তে হয়েছে। যারা গালি দিয়েছে, তাদেরই সমমনস্ক লোকজন ১০ তারিখ থেকে আমাদের বিদেশ সচিবকে গালি দিচ্ছে, ট্রোল করছে৷ সেনাবাহিনীর মুখ হয়ে ওঠা দুই মহিলাকে নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করছে। প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করাও শুরু হয়ে গেছে, যদিও এরা আপাতদৃষ্টিতে তাঁরই দলের সমর্থক। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সরাসরি সরকারের শীর্ষ পদাধিকারী সচিব এবং সেনাবাহিনীর মুখপাত্রদের অপমান করার অপরাধে কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে এখন পর্যন্ত?
সরকার যদি এখনই এই খ্যাপা ষাঁড়ের দলকে না থামান, তাহলে এরাই অদূর ভবিষ্যতে সরকারকে বিপাকে ফেলবে, বিশ্বের সামনে ভারতের সম্ভ্রম ধুলোয় মিশিয়ে দেবে এবং দেশকে কোনোদিনই ষাঁড়ের বদলে সিংহ হতে দেবে না। যাঁরা শান্তি চেয়ে মিছিল করছিলেন, তাঁদের দ্বারা এসব ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কাদের সমর্থন করবেন? যুদ্ধোন্মাদদের নাকি নিজেদের প্রতিরক্ষা সচিব এবং সেনাকর্তাদের?
অনবদ্য 🙏