দেশ ও রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি চূড়ান্ত উদ্বেগজনক অবস্থায়। কোভিড সংক্রমণ এবং মৃত্যু প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে। দীর্ঘ লকডাউনে জীবিকা হারানো সাধারণ মানুষের অবস্থা ভয়াবহ। একদিকে পেটের টান, আগুন বাজার, অন্যদিকে করোনা আতঙ্ক। করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের জনস্বাস্থ্য পরিকল্পনা এবং প্ৰস্তুতির ঘাটতিতে এই আতঙ্ক সর্বব্যাপী রূপ নিয়েছে।
আপনি,আমি, আমরা সবাই দিশেহারা। যাদের করোনা উপসর্গ হচ্ছে তারা কি করবে, কোথায় যাবে, কোথায়, কিভাবে পরীক্ষা করাবে, কোথায় ভর্তি হবে, কিভাবে ভর্তি হবে, কোথায় এম্বুলেন্স পাওয়া যাবে, পাড়া, মহল্লায় কোন মানুষের সহায়তা পাবে, মনিটরিং সেল, কোভিড কন্ট্রোল রুমের নাম্বার কোথায় পাবে, কোথায় সেফ হোম, সেখানে কিভাবে ভর্তি হওয়া যাবে…এই সমস্ত বিষয়েই আমাদের সকলের অসহায় অবস্থা।
করোনা স্টিগমার কারণে সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসছে না। করোনা হয়েছে শুনলে অনেক কাছের মানুষও এড়িয়ে যাচ্ছেন। করোনা স্টিগমা কাটাতে সরকারের সংগঠিত উদ্যোগ নেই। রাজ্য স্বাস্থ্য প্রশাসন উপসর্গহীন বা অল্প উপসর্গযুক্ত রুগীদের বাড়িতে থাকুন বলে দায় সারছে। কিন্তু বাড়িতে আলাদা থাকার জায়গা না থাকলে কি করবে? থাকলেও তার চিকিৎসা কে করবে? প্ৰতিদিনের প্ৰয়োজন কিভাবে মিটবে? বাড়িতে থাকা করোনা রুগীর অবস্থা খারাপ হলে কি করবে? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর বেশিরভাগ মানুষ প্রশাসনের তরফে পাচ্ছে না।
করোনা স্টিগমা, চিকিৎসা পেতে দুঃসহ অভিজ্ঞতা এবং একঘরে হওয়ার আশঙ্কা, মানুষকে রোগ গোপন করে যেতে বাধ্য করছে। একই সঙ্গে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা, জরুরি চিকিৎসা পেতেও আমার আপনার, আমাদের সবারই দিশেহারা অবস্থা।
এই গভীর সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে আমরা সাধ্যমত পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়ে চলেছি। আমাদের চিকিৎসক সদস্যরা সাধ্যমত চেষ্টা করছেন মানুষকে সহায়তা দেওয়ার। তারা ২৪x৭ সক্রিয় থাকার চেষ্টা করছে। আপনার কোনো প্ৰয়োজনে আপনি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এই গভীর সঙ্কটে সমস্ত রকম সংকীর্ণতার উর্ধে উঠেই আমরা কাজ করতে চাই। নিজের পাড়া, মহল্লার যুব সমাজকে আমাদের অনুরোধ, আপনারা নিজেরাই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তুলুন মানুষের এই দুঃসময়ে পাশে দাঁড়াতে।
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়….
১. যদি কারো উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। স্থানীয় সমস্ত সরকারী হাসপাতালের ফিভার ক্লিনিকে এই পরামর্শ পাওয়া যাবে। তারাই পরামর্শ দেবে আপনার করোনা পরীক্ষার দরকার আছে কিনা। নমুনা সংগ্রহ যাতে সাথে সাথেই হয়, তা প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষের নজরে আনুন।
২. করোনা পরীক্ষা সরকারী-বেসরকারী ক্ষেত্রে হচ্ছে। যদিও প্রয়োজনের থেকে অনেক কম। যাদের উপসর্গ আছে বা যারা করোনা রুগীর সরাসরি সংস্পর্শে এসেছেন একমাত্র তাদেরই এই পরীক্ষার আদেশনামা আছে। সরকারী ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা করতে গেলে, সরকারী হাসলাতালের ফিভার ক্লিনিক থেকে এই পরীক্ষার এডভাইস নিতে হবে। মোটামুটি সব হাসপাতালে ফিভার ক্লিনিক চলছে। বেসরকারী ক্ষেত্রে করাতে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ লাগবে। নিজের ইচ্ছেমত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
৩. পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়লে উদ্বিগ্ন হবেন না। কারণ ৮০ শতাংশের বেশি রুগীর সাধারণ চিকিৎসা ছাড়া অন্য কিছু লাগে না। যেহেতু সমস্ত করোনা রিপোর্ট রাজ্যের কেন্দ্রীয় কোভিড পোর্টালে আপলোড করা হয়, তাই সাধারণ ভাবে স্বাস্থ্য দপ্তর থেকেই আপনার সাথে যোগাযোগ করবে। আপনার সঙ্গে কথা বলে তারা ঠিক করে দেবে উপসর্গ অনুযায়ী আপনি কোন কোভিড হাসপাতালে ভর্তি হবেন। বেড দেওয়ার দায়িত্ব স্বাস্থ্য প্রশাসনের। কোন হাসপাতালে আপনি ভর্তি হতে পারবেন সেটা স্বাস্থ্য প্রশাসনই ঠিক করবে। নিজের পছন্দ সেখানে কার্যকর হবে না।( বেসরকারী পেয়িং বেড ব্যতিরেকে)। স্বাস্থ্য প্রশাসন আপনাকে বাড়িতে আইসোলেশনে থাকতে বলতে পারে বা স্থানীয় সেফ হোমেও পাঠাতে পারে, আপনি যদি উপসর্গহীন বা অল্প উপসর্গ যুক্ত হন। স্বাস্থ্য দপ্তর ফোন না করলে,আপনি নিজেই আপনার জেলার কোভিড মনিটরিং সেলে যোগযোগ করবেন। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের সাহায্য নিন।
৪. এম্বুলেন্স পাওয়ার জন্যে দৌড়োদৌড়ি করার দরকার নেই। সমস্ত এম্বুলেন্স করোনা রুগী বহন করে না। এম্বুলেন্স রাজ চলছে, সতর্ক থাকবেন। করোনা রুগীর ক্ষেত্রে হাসলাতাল,সেফ হোম, কোয়ারেন্টাই সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার যাওয়ার দায়িত্ব জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের। তারাই ডেডিকেটেড কোভিড এম্বুলেন্স পাঠাবে। এর জন্যেও জেলার কোভিড মনিটরিং সেলে যোগযোগ করতে হবে।
৫. কোভিড হাসপাতালে আপনার পরিজন করোনা নিয়ে ভর্তি থাকলে দেখার জন্যে আপনি ওয়ার্ডে যেতে পারবেন না। রুগীর চিকিৎসা বা পরিস্থিতি সম্মন্ধে খবর পেতে ওই হাসপাতালের কন্ট্রোল রুমে যোগযোগ করতে হবে। সাধারণ ভাবে রুগী পরিজনকে ফোনে রুগীর অবস্থা জানিয়ে দেওয়ার কথা। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ সেই সহায়তা পাচ্ছেন না।
ভয় পাবেন না … আপনার পাশে আমরা আছি। সরকারী ব্যবস্থার, জেলা ভিত্তিক সমস্ত ফোন নাম্বার আপনার সুবিধার্থে সঙ্গে দিলাম। তবে সর্বত্র,এমনকি নিজের বাড়িতে, পরিচিত বন্ধুদের মধ্যেও সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি যেমন মাস্ক পরা, বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া,ফিজিক্যাল দূরত্ব বজায় রাখার অনুরোধ করছি। কোথাও হয়রানির স্বীকার হলে দ্রুত স্থানীয় বা কেন্দ্রীয় প্রশাসনের নজরে আনুন।
এএইচএসডি পশ্চিমবঙ্গ
Not a single phone number is readable,