জ্বর কোনো রোগ নয়। বরং এটিকে একটি রোগ উপসর্গ বলা যেতে পারে। আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করে। সারাদিনের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে তাপমাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
সন্ধ্যার দিকে শরীরের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ হয়। পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের শরীরের কোর তাপমাত্রা মোটামুটিভাবে ৩৬-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৮-১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর মধ্যে থাকে। যে কোনো কারণে তাপমাত্রা এর চেয়ে বেশি হলে তাকে জ্বর বলা হয়। সকালের দিকে মাপলে তাপমাত্রা ৯৮.৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট এবং সন্ধ্যায় মাপলে ৯৯.৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর বেশি হতে হবে। জ্বর মাপা হয় ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটার দিয়ে।
শরীরের কোর তাপমাত্রার সবচাইতে ভালো নির্দেশক হল Rectal temperature বা পায়ুপথের তাপমাত্রা। কিন্তু পরিমাপের সুবিধার্থে সাধারণত oral temperature অর্থাৎ মুখগহ্বরের তাপমাত্রা বা axillary temperature অর্থাৎ বগলের তাপমাত্রা মাপা হয়। স্বাভাবিকভাবে বগলের তাপমাত্রা মুখগহ্বরের চাইতে ০.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট কম থাকে এবং মুখগহ্বরের তাপমাত্রা পায়ুপথের চাইতে আরও ০.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট কম থাকে।
সবসময় রোগজীবাণু সংক্রমণের ফলেই যে জ্বর হয় এমনটা নয়। শরীরে কোনো অটোইমিউন রোগ যেমন রিউমাটয়েড আর্থাইটিসের কারণেও জ্বর হতে পারে। আবার অনেক দীর্ঘ সময় ধরে প্রখর রোদে থাকার ফলেও জ্বর হতে পারে।
শরীরে রোগজীবাণু প্রবেশ করলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি অংশ হিসেবে শরীরে কিছু রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণ ঘটে। এগুলিকে অটাকয়েডস (autacoids) বলা হয়। এই অটাকয়েডসের জন্যই যেমন ক্ষতস্থানে ব্যথা হয়, ফুলে যায় তেমনই জ্বরও হয়। শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মূল কাজটি করে থাকে হাইপোথ্যালামাস। সংক্রমণজনিত রোগের প্রতিরোধে নিঃসৃত প্রোস্টাগ্ল্যানডিন জাতীয় অটাকয়েডসগুলি হাইপোথ্যালামাসের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী অংশে কাজ করে এবং শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। বেশি তাপমাত্রায় প্রতিরক্ষার জন্য সংঘটিত বিক্রিয়ার কার্যকারিতা এবং গতিবেগ বৃদ্ধি পায়।
সুতরাং জ্বর শরীরের জন্য খারাপ কিছু নয় বরং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে মজবুত করার ক্ষেত্রে জ্বরের ভূমিকা রয়েছে। তবে খুব বেশি তাপমাত্রায় শরীরের মেটাবলিক ক্রিয়াকলাপ বিঘ্নিত হতে পারে এবং দেহকোশের বিনাশ হয়। তাই জ্বর বেশি হলে সেক্ষেত্রে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্যারাসিটামল বা অ্যাসিটামিনোফেন সবচেয়ে নিরাপদ ওষুধ।
প্যারাসিটামল একপ্রকার সেন্ট্রাল অ্যানালজেসিক। এটি শরীরে রক্তের সঙ্গে মিশে যায় এবং প্রোস্টাগ্ল্যানডিন তৈরিতে সাময়িকভাবে বাধাদান করে। প্রোস্টাগ্ল্যানডিন জাতীয় অটাকয়েডস তৈরির জন্য দায়ী উৎসেচকটি হল Cyclooxygenase বা COX এনজাইম। প্যারাসিটামল এই COX এনজাইমকে ইনহিবিট করে বা অবদমিত করে। ফলে সাময়িকভাবে প্রোস্টাগ্ল্যানডিন তৈরি হতে পারে না, জ্বর কমে আসে।
অল্প জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়ার দরকার নেই, অন্য উপায়ও আছে। যদি কাঁপুনি না থাকে, শরীরকে যথাসম্ভব অনাবৃত রাখুন, অতিরিক্ত জামাকাপড় পরা চলবে না। কপালে জলে ভেজানো কাপড় রাখা যেতে পারে বা আরও ভালো হয় যদি সারা শরীর জল দিয়ে মোছা যায়। জলে ভেজা কাপড় শরীরের থেকে লীনতাপ গ্রহণ করে, ফলে তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসে। তবে খুব বেশি জ্বর হলে প্যারাসিটামল খেতে হবে। সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে, পূর্ণবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে ওষুধের মাত্রা যেন দিনে ২০০০ মিলিগ্রামের বেশি না হয়।
সুন্দর শিক্ষা ও সচেতনতামূলক লেখা।
Paracetamol নিরাপদ ওষুধ বাজে বকা থামান জেনে এসে বলবেন কেমন
মোস্ট dangerous ওষুধ এর তকমা আছে paracetamol er Gaye
Baki ta খুব ভালো লিখেছেন
লেখক লিখেছেন ,প্যারাসিটামল হলো জ্বরের সবচেয়ে নিরাপদ ওষুধ |জ্বরের জন্য যে ওষুধগুলি ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে নিরাপদ| দেখলাম শুধু শুধু ঔষধ ব্যবহারের কথা বলেননি ,প্রয়োজনে ব্যবহার করতে বলেছেন |