ফের কোভিড-১৯ এর শিকার একজন মহিলা চিকিৎসক। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা, মারা গেলেন এই অসুখে। প্রায় প্রতিদিনই একজন ডাক্তারের মৃত্যু খবর আমাদের কানে পৌঁছবেই- রোজই আমাদের আত্মীয় বিয়োগ। কেউ পেশাদার জীবনের শেষ প্রান্তে, কেউ সবে পেশাদার জীবন শুরু করেছিল। ৬ মাসের শিশু হারালো তার বাবাকে, ৭০ বছরের বৃদ্ধার সাথে চির বিচ্ছেদ হল তার একমাত্র সন্তানের – দু ক্ষেত্রেই হারিয়ে গেলো সংসারের ভার বওয়ার কাঁধটা।
এতো গেলো সহকর্মীদের কথা। কিন্তু এর বাইরেও ডাক্তারি করতে গিয়ে নতুন নতুন রোগী আর নানা রোগে মৃত্যু দেখা একরকম রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। স্বাভাবিকভাবেই বেশিরভাগ লোকের ধারণা, এই সব বিষয় আর আমাদের মনে কোনও প্রভাব ফেলে না। কারণ আমরা এই মৃত্যু দেখে অভ্যস্ত। আমাদের কাজ শুরুর প্রথম দিন থেকে পরামর্শ দেওয়া হয় এসব দুঃখ, কষ্ট যেন আমাদের স্পর্শ করতে পারে না। যদিও শুনতে যতই ভাল লাগুক না কেন, বাস্তবিক পক্ষে তা খুবই কঠিন। আবেগের প্রকাশ দুর্বলতার লক্ষণ বলে যতই বোঝানো হোক না কেন তা মেনে নেওয়া মুশকিল। এই কারণে আমরা বেশিরভাগই পেশাগত জীবনকে ব্যক্তিগত জীবন থেকে আলাদা করতে ব্যর্থ হই। শুধু সহকর্মীর মৃত্যুতে নয়, কোনও কোনও রোগীর জন্যও আমরা অনেক রাত ঘুমোতে পারি না। কোনও রোগী সারা জীবন মনে থেকে যায়। বছরের পর বছর আমরা কী করলে আরও ভাল পরিষেবা দিতে পারতাম তা নিয়ে ভাবতে থাকি, ভুগি কিছু করতে না পারার অন্তর গ্লানিতে। তাই কোন এক হাউস স্টাফ ডেথ সার্টিফিকেট লিখে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা দেখে, দু চোখ জলে ভিজে যায়, কোনো ডাক্তার তার ঘুমন্ত ছেলের কপালে হাত বুলাতে বুলাতে সদ্য সন্তান হারা বাবা মার কথা ভেবে তাকে আঁকড়ে ধরে। আপন মনে গেয়ে ওঠে-
হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে যাহা- কিছু সব আছে আছে আছে –
নাই নাই ভয়, সে শুধু আমারই , নিশিদিন কাঁদি তাই।
আসলে একজন রোগী বা সহকর্মীকে বাঁচাতে না পারার দুঃখের কারণে আমরা নিরানব্বইটা রোগীকে সুস্থ করার আনন্দ উপভোগ করতে পারি না। তাই শেষ পর্যন্ত আমরা মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে মনোকষ্টে ভুগতে শুরু করি। দুঃখ প্রকাশ না করার এই ট্যাবু ভেঙে আমাদেরই বেরিয়ে আসতে হবে। এই হারানোর মধ্যে দিয়ে আমরা অনেক কিছু খুঁজে পাই।
এ মোর হৃদয়ের বিজন আকাশে
তোমার মহাসন আলোতে ঢাকা সে ,
গভীর কী আশায় নিবিড় পুলকে
তাহার পানে চাই দু বাহু বাড়ায়ে।
Very well said! There’s a term in psychology “countertransference” which is absolutely true. Though we dissect professional and personal life, there are many instances where these merge, because it’s the same individual.
I convey my heartfelt regards for the Doctors n all the medical staffs. It’s because of you, rests spend a peaceful night!
মানুষ হলে মানবিক গুন্ গুলো যে থাকবেই।
ভালো লেখা।