কেটে গেল ঘটনাবহুল পাঁচ মাস। আর জি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় নৃশংস ভাবে খুন ও ধর্ষণ হওয়া তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত আর দোষীদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়েছে সারা রাজ্য, সারা দেশ। সুপ্রিম কোর্টের সুও মোটো, সি বি আই গুটি কয়েক মুখ বন্ধ খাম আর কতিপয় গ্রেফতারির দ্বারা আশার আলেয়া প্রজ্জ্বলিত হয়ে আবার মরীচিকার মত অন্তর্হিত হয়ে গেছে।
বিচার ও তদন্তের দিক থেকে আদৌ ঘটনাবহুল নয় এই পাঁচ মাস। অস্বাভাবিক পুলিশি তৎপরতায় ঘটনার পরের দিনই গ্রেফতার হওয়া সিভিক ভলান্টিয়ার ছাড়া আর কোন সাফল্যের নজির নেই। গ্রেফতারির সময় আপাত নিরুত্তাপ এই সিভিক ভলান্টিয়ারকে কয়েক সপ্তাহ আগে কোর্টে যাতায়াতের পথে মরিয়া হয়ে কিছু বলতে দেখা যায়, তার পরের দিন থেকে প্রিজন ভ্যানে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। এর পরে সঞ্জয় রাইয়ের কোন বিশেষ শুনানি হয়েছে বলে শোনা যায়নি। টালা থানার ওসি-র ছাড়পত্রে সূর্যাস্তের পর বেআইনি পোস্টমর্টেম হয় অগণিত আঘাতে ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহের, যে পোস্টমর্টেম ঘিরে হাজার প্রশ্ন, যে মৃত্যুকে প্রথমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা হয়েছিল! টালা থানার ওসি জামিন পেয়ে স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করেছেন। খুনের মামলায় সন্দীপ ঘোষকে চার্জশিট দিতে পারেনি সি বি আই, তাই খুনের মামলায় তারও জামিন। সন্দীপ ঘোষের আহবানে ভোর রাতে সেমিনার রুমে ‘তারকা সমাবেশ’, ১৪ অগাস্ট রাতে আর জি কর হাসপাতালে দুষ্কৃতীহানা, মৃতদেহ আবিষ্কৃত হল যে সেমিনার রুমে সেই ঘরের পাশেই রাতারাতি বেআইনি ভাঙ্গার কাজ, ‘স্বাস্থ্যশ্রী’ পাওয়া অধ্যক্ষকে অপসারণের বদলে ন্যাশানাল মেডিক্যালে বদলির চেষ্টা, হাসপাতালের জাল ওষুধের কারবার আর মৃতদেহের ব্যবসা – সন্দেহাতীত ভাবে ঘটে যাওয়াএই ঘটনা গুলি এখন বোধ হয় বাড়ির শিশুদের ও অজানা নেই। প্রমাণ লোপাটের ভুরি ভুরি প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও জামিন হয়ে যায় কারন সি বি আই এর কাছে না কি যথেষ্ট প্রমাণ নেই ! প্রমাণ খোঁজার দায়িত্ব কাদের? নির্যাতিতার মা বাবা তদন্ত এবং মামলার গতি প্রকৃতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে । অন্ধকারে লক্ষ লক্ষ জনতা যারা ১৪ অগাস্ট রাত থেকে পথে নেমেছে’ন।
‘Circumstantial Evidence’ দিয়ে ধনঞ্জয়ের ফাঁসি হয়ে গেল, কোন রকম প্রমাণ ছাড়াই শুধু মানুষের বিশ্বাস দিয়ে পাঁচশ বছরের ঐতিহ্যবাহী বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে রামমন্দির পর্যটন কেন্দ্রের উদ্বোধন হয়ে গেল, শুধু নির্যাতিত চিকিৎসকের বিচার আটকে আছে প্রমাণের অভাবে (!), যার হত্যা কোন গহন অরণ্যে বা নির্জন মরু প্রান্তরে হয়নি, হয়েছে একটি ব্যস্ততম সরকারি হাসপাতালে, যেখানে এই হত্যার সময় সংলগ্ন এলাকায় ছিল অসংখ্য মানুষের উপস্থিতি। ঔপনিবেশিক বিচার কাঠামোর উত্তরসুরি তথা প্রতিভূ আমাদের এই আইন ও বিচার ব্যবস্থায় পাঁচ মাসের মধ্যে বিচার শেষ হয়ে দোষীরা সাজা পেয়ে যাবে এমন আশা করা বাতুলতা, কিন্তু বিচারের গতি প্রকৃতি কোথাও কোন আশার আলো দেখাতে পারছেনা। আলো জ্বলে শুধু উৎসব প্রাঙ্গনে, চোখ ঝলসানো আলোর অদ্ভুত আঁধার গ্রাস করে সমাজ ও রাজনীতিকে। ১৪ অগাস্টের যে জনসমুদ্র রাস্তায় নেমেছিল, সে সমুদ্রে এখন ভাঁটার টান । রাজ্য জুড়ে উৎসবের জোয়ার–কেক, কল্পতরু, পিঠে, পুলি, সঙ্গীত, শিল্প, খ্রিষ্টজয়ন্তী আর বিবিধ মেলা। মেলার সমারোহে গা ভাসিয়েছেন যাঁরা তাঁরা এই হত্যা কাণ্ড ভুলে গেছেন এমন নয়, রাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে গভীর নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে যে ঘটনা, সেই অসহায় যন্ত্রণায় ব্যথা উপশমকারী মলমের প্রলেপ দিচ্ছে শীতকালীন উৎসব, আর সেই জন্যেই উৎসবের আয়োজন। সে দিক থেকে বলা যায় শাসক গোষ্ঠী এই মুহূর্তে প্রত্যাশিত সাফল্য পেয়েছেন। দুর্গা পূজার সময়ে প্যান্ডেল বয়কটের ডাক দেওয়ায় বাংলার অর্থনীতি যে নিদারুণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল সে ক্ষতি আশা করা যায় সামলে দেবে উইন্টার কার্নিভাল। দুঃখ দৈন্য সব নাশি জননী বক্ষে তুলে নিয়েছেন, তাই বঙ্গ সন্তানরা শোক শয্যা ছেড়ে ‘পুনঃ কমল কনক ধনধান্যে’- বাংলা আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।
প্রতিবাদী মিছিলের ঢল মেলা-অভিমুখী হতেই ঝটপট জামিন হয়ে যায় থ্রেট কালচারের কুশীলবদের। তবু এরই মধ্যে প্রতিবাদের মশাল নিভতে দেয়না এক দল ‘বোকা বুড়ো’, যারা শহর ছাড়িয়ে গঞ্জ, গঞ্জ ছাড়িয়ে গ্রাম, রাজপথ ছাড়িয়ে আলপথ ধরে এগিয়ে চলেছে – পাহাড় কেটে ধূলিসাৎ করবেই। দ্রোহের কার্নিভাল, জনতার চার্জশিটের পর লাগাতার কর্মসূচি চলছে- ভস্মীভূত হয়েছে মুখ্য-স্বাস্থ্য-পুলিশ মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা। সারা রাত ধরে ‘জোট বাঁধো তৈরি হও’ ধ্বনিতে কেঁপে ওঠে বড়দিনের নিউ মার্কেট, পার্ক স্ট্রিট ।
বিষহরি রাজ্যে সব রকম দাওয়াই থাকে। যে বোকারা পৌষ পার্বণ, খ্রিষ্ট জয়ন্তী, ইংরেজি বর্ষবরণ উৎসবে যোগ দেবেনা, তাদের জন্যে মগজ ধোলাই- মধ্যবিত্তের চৈতন্যদর্পণে শ্রেণী সংঘাতের রূপকল্প (রণবীর সমাদ্দার, ‘মধ্যবিত্তের চৈতন্য দর্পণ’, আনন্দ বাজার পত্রিকা, ২৩ শে ডিসেম্বর ২০২৩)। গত শতাব্দীর ষাট সত্তর দশকে বসন্তের বজ্রনির্ঘোষে উনবিংশ শতকে বাংলার নবজাগরণের রূপকারদের শ্রেণী চরিত্র উদ্ঘাটিত এবং সমালোচিত হয়। তাঁরা সমাজে ‘বাবু’ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করতেন, যাঁদের উৎপাদন ব্যাবস্থা, ভুমি সম্পর্ক এবং কায়িক শ্রমের সঙ্গে কোন সম্পর্ক ছিল না। অধ্যাপক সমাদ্দার মনে করেন এই শ্রেণীর উত্তরসুরিরাই আধুনিক বাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণী- “এই শ্রেণীর সদস্যরা যুক্তিবাদী, স্বভাবগত ভাবে বামপন্থী, ভুমি সম্পর্ক থেকে বহুদিন বিচ্ছিন্ন। লেখাপড়া ভালবাসেন, কলম এবং মাথার সাহায্যে জীবন চালান, ভাবেন যে যুক্তি দিয়ে সব সমস্যার সমাধান হতে পারে।” সহজ ভাষায় আদতে নিষ্কর্মা এবং মাতব্বর প্রকৃতির এই মধ্য শ্রেণীকে লেখক সামাজিক গুরুত্বহীন মনে করেন কারন এদের কাজ শুধুই মগজাস্ত্র দিয়ে কল্পনার ফানুস ওড়ানো। সামাজিক বা রাজনৈতিক আন্দোলনে এই শ্রেণীর সঙ্কীর্ণতা আর সুযোগ সন্ধানী চরিত্র ধরা পড়ে যায় বুদ্ধি আর বিবেচনার আতস কাঁচে-
“সংগ্রামের বিকাশের চরম মুহূর্তে কায়িক শ্রমে নিয়োজিত সমাজের সাধারণ স্বার্থকে পাশে সরিয়ে রেখে নিজস্ব স্বার্থ ও দৃষ্টিভঙ্গীকে মধ্য শ্রেণী তুলে ধরে সাধারণীকৃত স্বার্থ বলে”। এই আত্মশ্লাঘায় মত্ত বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে দেখলে স্বয়ং মার্ক্স বা এঙ্গেলসও শ্রমিক শ্রেণীর মজুররাজের পরিবর্তে মধ্যবিত্তরাজের কথা ভাবতেন- এ হেন বক্রোক্তি আর শ্লেষের উদাহরণ ছড়িয়ে আছে তাত্বিক লেখার শুরু থেকে শেষ অবধি। ঊনবিংশ শতকের বাবুরা যেমন কলিযুগের বিচিত্র অবতার হিসেবে বর্ণিত হয়েছিলেন, আধুনিক বাংলার মধ্যবিত্তরাও তেমনই অন্তঃসারশূন্য, আত্মগরিমায় পূর্ণ ধনুর্ধর কৌতুকের পাত্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন এই লেখায়।
কোন সন্দেহ নেই, এই স্বভাবনেতা মধ্যবিত্তদের উদয় নয়া উদারনীতির আবির্ভাবের পর শিক্ষা, আর্থিক সচ্ছ্বলতা, পণ্যের অবাধ বিশ্বায়ন, প্রযুক্তির সার্বজনীনতা মধ্যবিত্ত কে উল্লম্ব সামাজিক গতিশীলতায় উদ্বুদ্ধ করেছে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে শত যোজন দুরত্বে থাকা এই সুখবিলাসী আত্মকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতা পরায়ণ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কাছে অতীতের আন্দোলন বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গেছে। বাঙ্গালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিবর্তন বা উদ্বর্তন নিয়ে পূর্ণাঙ্গ গবেষণায় এই পরিবর্তন আলোচিত হবে। অধ্যাপক সমাদ্দার এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার দিশা দেখিয়েছেন তাঁর বিভিন্ন প্রবন্ধে। দুরূহ তত্ত্বালোচনায় তাঁর অবদানকে স্বীকার করে নিয়ে বালখিল্য প্রাকৃত জনের কয়েকটি অর্বাচীন পর্যবেক্ষণ – মধ্যবিত্ত শ্রেণীর নেতিবাচক চরিত্র চর্চার এক আশ্চর্য সমাপতন ঘটছে বিভিন্ন আন্দোলনের প্রেক্ষিতে। যখনই কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচার বা রাষ্ট্র শক্তির দুর্নীতি আর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে নাগরিক আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে, তখনই কোন এক দুর্জ্ঞেয় কারণে অধ্যাপক সমাদ্দার নিপীড়িত নিম্নবর্গীয় চৈতন্যের প্রতীক হয়ে জেগে উঠে মধ্যবিত্ত নাগরিকদের সংগঠিত প্রতিরোধকে সমাজ বিচ্ছিন্ন ‘এলিটিজম’ বলে চিহ্নিত করছেন। যে নাগরিক প্রতিবাদ ক্ষুদ্র ব্যক্তি স্বার্থের গণ্ডি পেরিয়ে কোথাও এক জোট হবার স্বপ্ন দেখছে তাকে বিদ্রুপের কশাঘাতে বিদ্ধ করে জনবিরোধী তকমা দিচ্ছেন অধ্যাপক সমাদ্দার। তুলে ধরছেন ‘জনবাদী’ রাজনীতির তত্ত্বের আড়ালে এক বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর বিজয় পতাকা।
একটু পিছনে তাকানো যাক। ২০১৪ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে হোক কলরব আন্দোলন। এক ছাত্রীর যৌনহেনস্থাকে কেন্দ্র করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ছাত্রদের লড়াই। ছাত্রদের অনেক অভিযোগের মধ্যে অন্যতম একটি ছিল আই সি সি-তে তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কন্যা প্রিয়দর্শিনীর উপস্থিতি। রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি তদন্ত প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে এই যুক্তিতে প্রিয়দর্শিনী মল্লিকের অপসারণ দাবি করেছিল ছাত্ররা। অভিযোগ নিরসনে আই সি সি-র ব্যর্থতা নিয়ে সমাদ্দার মহাশয় চিন্তিত হন নি। পুলিশের দ্বারা ছাত্রীর যৌন হেনস্থা নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি। শুধু বিচলিত হয়েছিলেন বিদ্রোহী ছাত্রদের সাংস্কৃতিক রসদে যা প্রকাশ পেয়েছিল তীব্র সরকার বিরোধী শ্লোগানে!
সাম্প্রতিক আন্দোলন নিম্নবর্গের সঙ্গে নাগরিক মধ্যবিত্তদের সংঘর্ষ যা প্রায় শ্রেণী সংঘর্ষের চেহারা নিয়েছে বলে অধ্যাপক সমাদ্দার মনে করেন। দুর্নীতি আর অগণতান্ত্রিকতার উপর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক-সামাজিক ব্যাবস্থা নয়, তথাকথিত নাগরিক মধ্যবিত্তর সঙ্গে নিম্ন শ্রেণীর সংঘর্ষই ফ্যাসিবাদী শক্তির উত্থানের পথ প্রশস্ত করবে বলে তাঁর ধারণা। সরকার এবং প্রশাসনের মদতপুষ্ট দুর্নীতি এবং নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলন শ্রেণী সংঘর্ষ হিসেবে তকমা পায় তাঁর লেখায়। গত কয়েক দশকে শিক্ষার প্রসাদ বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর এক অংশকে অসাধু উপায়ে নানা সুবিধা পাইয়ে এক বিশেষ সুবিধাভোগী শ্রেণী তৈরি করা হয়েছে যারা প্রয়োজনে যে কোন রকম দুর্নীতি এবং খুন-রাহাজানি করতে প্রস্তুত। নিম্নবর্গের একটি বড় অংশের দুর্বৃত্তায়ন সরকারের ক্ষমতার ভিত্তি। মনে পড়ে ইতালিতে ফ্যাসিজমের উত্থানের প্রেক্ষাপটে একটি ছোট গ্রামকে নিয়ে লেখা ইগনাসিও সিলোনের কালজয়ী উপন্যাস ‘ফন্তামারা’। ‘কাফনি’ বা গ্রামের নিম্নবিত্ত মানুষ দের এক অংশ ফ্যাসিস্ত দলের হয়ে কাজ করে, গ্রামের মানুষের উপর অত্যাচার, নারী ধর্ষণ – সব ধরনের দুষ্কর্মেই ফ্যাসিস্ত ব্ল্যাক শার্ট বাহিনীর প্রধান সহায় এই ক্যাফন রা-
“They, too, were poor men, but poor men of a special kind:landless, jobless or with many jobs, which is the same thing, and averse to hard work. Too weak and cowardly to rebel against the rich and the authorities, they preferred serving them in order to be able to rob and oppress other poor men, cafoni, small landowners. When you met them in the street in daylight, they were humble and obsequious, but at night and in groups they were evil, malicious, treacherous…recruiting them in a special army, giving them a special uniform and special arms, was a novelty”.
কোথাও কোথাও দেশ কাল সময়ের আশ্চর্য সমাপতন হয়!
অভয়া কাণ্ড, হাসপাতাল দুর্নীতি এবং হুমকি রাজ কায়েমে প্রধান অভিযুক্ত সন্দীপ ঘোষ, সুদীপ্ত রায়, সুশান্ত রায়, আশিস- বিরূপাক্ষ-অভীক, বিনীত গোয়েল এবং আরো অনেকে – এরা কেউই নিম্নবর্গীয় দুর্বৃত্ত নয়, এই রাঘব বোয়ালদের হাত ধরেই ‘জনবাদী’ সরকার তার ক্ষমতার সৌধ রচনা করেছে। দিন কে রাত, রাত কে দিন বানানোর ক্ষমতার অধিকারীরা বিচারকে প্রহসনে পরিণত করে আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল, আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বীর দর্পে স্ব স্ব ক্ষেত্রে পুনর্বহাল হচ্ছে। প্রতিবাদী মানুষ কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। আন্দোলনের এই ক্রান্তি লগ্নে গ্রাম-শহর সংঘর্ষ ,জনবাদ-মধ্যবিত্তরাজের বিরোধ তত্ত্ব নিয়ে নিরলস লিখে চলেছেন প্রখ্যাত সমাজতত্ত্ববিদ।
আশার কথা এই যে প্রতিবাদীরা তেমন তত্ত্ব কথায় আগ্রহী নন। গত পাঁচ মাসে প্রতিবাদী কর্মসূচিহীন পাঁচটি দিন খুঁজে পাওয়া যাবে না। নগর কলকাতার সীমা অতিক্রম করে জেলা শহরগুলিতে গড়ে উঠছে প্রতিবাদী মঞ্চ – গ্রামের দরজায় কড়া নাড়ার অপেক্ষায় দিন গুনছে আন্দোলন। প্রতিবাদ আর সরকার বিরুদ্ধতার নিরিখে অবশ্যই ঘটনাবহুল বিগত পাঁচ মাস, যে পাঁচ মাসে অধ্যাপক সমাদ্দার তিনটি তাত্ত্বিক প্রবন্ধ লিখেছেন নাগরিক প্রতিবাদের বিরুদ্ধে। এর তাৎপর্য বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়-
“আজ মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে দুটো দল / মাঝামাঝি নেই তো কিছুই … “
লেখাটা পড়ে খুব ভাল লাগল। Justice এর দাবিতে গড়ে ওঠা আজকের এই গণ আন্দোলন 1947 এর পরের সবচেয়ে বড় আন্দোলন–যা নন্দীগ্রাম আর লালগড আন্দোলনকেও ছাড়িয়ে গেছে।
70 এর দশকে মেদিনীপুর জেলে বন্দি–বর্তমানে এখানকার শাসকদের পৃষ্ঠপোষক–বুদ্ধিজীবীর চাটুকারিতা দেখে বিস্ময় জাগে। লেখিকা এই নিবন্ধে তা উন্মোচিত করেছেন।
মাওযের লেখা ‘যে বোকা বুড়ো পাহাড় সরিযেছিল ‘ –তার সঙ্গে বর্তমান আন্দোলনকারীদের এই জগদদল পাহাড় সরানোর উপমাটি যথার্থ। অনেক অভিনন্দন।