দেখুন আপনার দু তিনটে লেখা পড়লাম, গভীরতা নেই, ওই মামুলি চুটকি টাইপ আর কি। বই প্রকাশ করতে পারেন, আমরা না হয় সেক্ষেত্রে একটু ঢাক ঢোল পিটিয়ে দেবো, কিন্তু প্রথম দফায় যে পাঁচশো কপি ছাপানো হবে তার বিক্রির দায়িত্ব আপনার। ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ থেকে শুরু করে আপনার যাবতীয় বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনের মধ্যে এটা করতে হবে আপনাকে।
তারপর যা বই বিক্রি হবে দ্বিতীয় সংস্করণ থেকে সেক্ষেত্রে কিছু টাকা পয়সা আপনি পেতে পারেন, যদি বিক্রি হয়।মানুষ তো এখন আর বই পত্র বিশেষ পড়ে না, আর পড়বেই বা কেন, সেরকম লেখা কোথায়? তার উপর চারদিকে কতো প্রলোভন, Netflix থেকে হৈ চৈ ,রিল …। পড়ার সময় কোথায়?
আরে কিছু তো বলুন? রাজি কি? নাকি লেখাগুলো নিজের নয়, গুগল করে তথ্য জোগাড় করে লিখে দেওয়া!
কাল একটা সাহিত্য সম্মেলন আছে, আপনার নিমন্ত্রণ রইলো। কিছু বিখ্যাত মানুষদের সঙ্গে আলাপ পরিচয় করিয়ে দেবো। এগুলো লাগে, বুঝলেন, সিগারেটের ধোঁয়াটা পুরো মুখের উপর। অনেক দিন হলো ছেড়ে দেওয়া, স্বভাবতই দমকা কাশি..
কাশি শেষ হলে কি খাওয়াবেন কাল? নির্লিপ্ত মুখে কাশি শেষ হবার পরে জিজ্ঞাসা করতে প্রকাশক মশাই অবাক!খাওয়াবো, কেন?
ওই যে কাল সাহিত্য সম্মেলনে নিমন্ত্রণ করলেন না, তাই জানতে চাইলাম।
সাহিত্য সম্মেলনে নিমন্ত্রণ করলে কেউ খাওয়ায়! ওখানে তো সাহিত্য নিয়ে আলোচনা হয় ,আলাপ হয়, মত বিনিময় হয় , এটাও জানেন না!! চা ,কফি থাকে অবশ্য, সেটা কি এমন হলো?
তাহলে বলবেন আমন্ত্রণ, নিমন্ত্রণ নয় কেমন?
আচ্ছা, খুব শিক্ষাদীক্ষা দেখাচ্ছেন মনে হচ্ছে। বইয়ের লাইনে পঁচিশ বছর আছি। কতো কচি দেখলাম। একেবারে প্রথমে এসেই ভুল ধরা শুরু করছেন প্রকাশকের!
শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষা বললেন না, সবাই বলে, কেন বলুন তো?
শিক্ষাদীক্ষা এক সঙ্গেই বলে। তাই।
ভুল, শিক্ষা হলো আপনি যে জ্ঞান অর্জন করছেন। তার ব্যবহারিক রূপ দীক্ষা।
আপনি কি এসব আপনার লেখায় লিখেছেন নাকি! এরকম এঁড়ে পাকা লেখা আপনার বন্ধুবান্ধব আত্মীয়রাও পড়বে না কিন্তু। প্রেম, ভালোবাসা, এসব নিয়ে লিখুন। পাবলিক খায়। দেখছেন না, সমস্ত মিডিয়া জুড়ে প্রেম ভালোবাসার বন্যায় মানুষকে প্রায় উন্মাদ করে দিচ্ছে।
প্রেম আর ভালোবাসার তফাৎ কি বলুন তো?
এখানেও সেই পাকামো করা আপনার! অত্যন্ত ফালতু লোক তো আপনি!!!? প্রেম, ভালোবাসা আবার আলাদা কিসের মশাই?
ভালোবাসা কোনো নিয়ম মানে না, অনেক অনেক বিস্তৃত, মন খোলা। আমরা সবাই বহু মানুষকে ভালোবাসতে পারি, বাসিও। ওতে অন্যায় নেই। এমনকি মানুষ ছাড়াও আকাশ, বাতাস প্রকৃতি অনেক কিছুই আমরা ভালোবাসি।ভালোবাসা একমুখী। আপনি সমুদ্র ভালোবাসেন, সমুদ্র আপনাকে ভালোবাসে কিনা সেটা এক্ষেত্রে গৌণ। সমুদ্র সত্যিকারের হতে পারে, কোনো ব্যক্তিও হতে পারে। দুজনের ক্ষেত্রেই একই অর্থ প্রযোজ্য।
প্রেম কিন্তু দ্বিমুখী। প্রেম দুটো মানুষের মধ্যে আদান প্রদানের মাধ্যমে হয়। অধিকার বোধ থেকে দায়িত্ব, কর্তব্য অনেক কিছু দিয়ে তৈরি। কাউকে ভালোবাসতে পারেন, কিন্তু সেটা প্রেম নাও হতে পারে। এটা বুঝতে পারলে পৃথিবীতে অনেক সমস্যার সমাধান। কিন্তু বুঝবে কে?
মশাই এই রইলো আপনার লেখার পাণ্ডুলিপি। আপনার দ্বারা লেখক হওয়া হবে না। আপনি ফেসবুকেই লিখতে থাকুন। ওটাই ঠিক আছে।
খুব খুশি হলাম। কেনই যে ডেকে আনেন, আর কেনই যে এত প্রশ্ন করেন সেটাই বুঝি না।
সব গাছে ফুল হয় না, ফল হয় না।
সবাই বিক্রয়যোগ্য করে নিজেকে উপস্থাপিত করতে পারে না।
ওই অবহেলা অনাদরে বেড়ে ওঠা গাছের প্রাণশক্তি খুব বেশি থাকে। একজন লোক ও যদি প্রখর রৌদ্রে দুপুর বেলায় তার সামনে বসে ছায়া পায় সেটাই অনেক।আর কিছুই চাহিদা থাকে না , বুঝলেন।
চলি। ভালো থাকবেন।