(প্রথমাংশের পরে)
১৮৩৮ সালের জুন মাস। ২২ নভেম্বর সকাল ৮টার সময় ও’শনেসির বাড়ির ভৃত্য তাঁর হাতে একটি চিরকুট দেয়। চিরকুটে লেখা, হাকিম আবদুল্লা গেটে দাঁড়িয়ে আছেন। হাকিমকে ৩ সপ্তাহ আগে এক পাগলা কুকুর কামড়েছিল (কলকাতার রাস্তাঘাটে তখন পাগলা কুকুরের প্রাচুর্য নিয়ে কোন সন্দেহ প্রকাশ করা যাবে না)। হাকিম নিজে এখন নিজের শরীরে জলাতঙ্কের লক্ষণ বুঝতে পারছেন। এজন্য ও’শনেসির সাহায্যপ্রার্থী হয়েছেন। অনুমান করা যায় মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক হিসেবে নিশ্চয়ই তাঁর সুনাম কলকাতার সমাজের একাংশে প্রসারিত হয়েছিল। যে জন্য হাকিমের তাঁর কাছে আসা চিকিৎসার অন্তিম আকাঙ্খা নিয়ে।
১৯৩৮ জুড়ে ও’শনেসি ভারতীয় গাঁজা (Indian hemp), চরস এবং “মাজুন”-এর ওষুধ হিসেবে কি কি গুণ ও ধর্ম রয়েছে এ নিয়ে সুবিস্তৃত কঠোর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় লিপ্ত। সম্পূর্ণভাবে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন এই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে। এরকম সময়ে হাকিমের উপরে পরীক্ষা চালানোর সুযোগ পেলেন তিনি। একটি জুড়ি গাড়িতে ছিলেন হাকিম। হাকিম তাঁকে জানালেন – আগের দিন সন্ধেবেলা এক পুকুরের পাশ দিয়ে যাবার সময় তাঁর শরীরে উদ্বেগজনক প্রতিক্রিয়া হয়। এরপর থেকে তিনি আর কোন ধরনের তরল পদার্থ গিলতে পারছেন না। ও’শনেসি দেখলেন, হাকিমের চোখ অস্থির, সন্দিগ্ধ এবং বন্য দেখাচ্ছে। পালস ১২৫। শীতল ঘামে ভিজে আছে তাঁর শরীর। সঙ্গে সঙ্গে মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতালে (সেসময়ে এখনকার মতো মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালস তৈরি হয়নি, মেডিক্যাল কলেজের লাগোয়া একটি বিল্ডিং-এ ৩০-৫০টি বেড নিয়ে একটি কাজ চালানোর মতো হাসপাতাল তৈরি হয়েছে কেবল) ভর্তি করলেন।
ও’শনেসির ভাষায় – “never can I forget the indescribable horrors of the paroxysm which ensued. It abated in about three minutes, and morbid thirst still goading the unhappy man.” যাহোক, এঁকে “হেম্প রেজিন” দেওয়া শুরু হল। প্রথমে ২ গ্রেন (১ গ্রেন = ৬৪.৮ মিলিগ্রাম) দেওয়া হল (কিভাবে দেওয়া হল এর বিস্তারিত বর্ণনায় যাচ্ছিনা, প্রয়োজন নেই)। এর পরিণতিতে হাকিম স্ফূর্তির সাথে বকবক করতে শুরু করলেন। ৩টি ডোজ এরকমভাবে পরপর দেবার পরে কিছু খাবার খেতে চাইলেন হতভাগ্য হাকিম। এ পদ্ধতিতে চারদিন চিকিৎসা হল। কিন্তু পঞ্চম দিনে সকাল ৩টের সময় তাঁর রোগের প্রকোপ প্রচণ্ডভাবে বেড়ে যায়। ২৭ নভেম্বর ভোর ৪টের সময়ে তাঁর সমস্ত কষ্টের অবসান ঘটে। তিনি মারা যান।
পরবর্তী সময়ে এই কেসটিকে নিয়ে পুনর্ভাবনা করতে গিয়ে ও’শনেসির উপলব্ধি – “Reviewing the preceding summary of this interesting case, it seems evident that at least one advantage was gained from the use of the remedy—the awful malady was stripped of its horrors;—if not less fatal than before, it was reduced to less than the scale of suffering which precedes death from most ordinary diseases.” এই ভয়াবহ রোগের ততোধিক ভয়াবহ মৃত্যু যন্ত্রণার লাঘব হয়েছিল। মৃত্যুকে ঠেকানো যায়নি। একজন প্রকৃত বিজ্ঞানসাধকের মতো বললেন – “আমি এতটা হঠকারী নই যে দাবী করবো এই narcotic থেকে এই রোগের কার্যকরী ওষুধ পাওয়া যাবে, এমনকি একটি কেসের ক্ষেত্রেও।” কিন্তু এটা সম্ভব যে রোগটির ক্ষেত্রে “to divest of its specific terrors the most dreadful malady to which mankind is exposed.”
হ্যাঁ। প্রতিটি ক্ষেত্রে রোগের নিরাময় না হলেও রোগের ভয়াবহতা থেকে রোগীকে মুক্তি দেবার চেষ্টা প্রতিটি ক্ষেত্রে ও’শনেসি করেছেন। Indian hemp নিয়ে তাঁর সুদীর্ঘ গবেষণার ফসল হিসবে ১৮৩৯ সালে প্রকাশিত হল On the Preparation of Indian Hemp, or Gunjah (Cannabis Indica) গ্রন্থটি কলকাতা থেকে। পরে লন্ডন থেকেও ১৮৪৩ সালে প্রকাশিত হয় এ গ্রন্থটি, সামান্য কিছু পরিবর্তন সহ। তার আগে প্রভিন্সিয়াল মেডিক্যাল জার্নাল-এর জানুয়ারি ২৮ এবং ফেব্রুয়ারি ৪, ১৮৪৩, সংখ্যায় পরপর দুটি সংখ্যায় দুটি কিস্তিতে প্রকাশিত হয় এই লেখা। ইউরোপ এবং আমেরিকার চিকিৎসক মহলে শোরগোল পড়ে। আমরা আসবো সে কাহিনিতে।
(লন্ডন থেকে ১৮৪৩ সালে প্রকাশিত)
আমরা আপাতত ভারতীয় গাঁজার ওষধিগুণ দিয়ে চিকিৎসার আলোচনা থেকে সামান্য সময়ের জন্য বিরতি। আরেকবার বোঝার চেষ্টা করি প্রবল অনুসন্ধিৎসা, মৌলিক চিন্তাভাবনা এবং তত্ত্বকে বাস্তবে প্রয়োগ করার মতো অসামান্য সমাহার ও’শনেসির মেডিক্যাল আবিষ্কার ও সেগুলোর আন্তর্জাতিক পরিচিতির ইতিহাসকে।
তিনি একইসাথে মেডিসিন, বোটানি, ফার্মাকোলজি, কেমিস্ট্রি, মেডিক্যাল টক্সিকোলজি তথা ফরেন্সিক মেডিসিন, ধাতুবিদ্যা, ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল, নতুন ভাবনায় মেডিক্যাল কলেজে মেডিক্যাল শিক্ষার ধারাকে প্রভাবিত করা, জলের নীচের ইঞ্জিনিয়ারিং, গ্যালভানিক ইলেক্ট্রিসিটি নিয়ে কাজ করেছেন। নাইটহুড পেয়েছেন ভারতে টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার পত্তন করার জন্য। কিন্তু টেলিগ্রাফ নিয়ে আমি আলোচনা করবোনা।
গবেষক ও’শনেসির সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত
একজন ২১ বছরের সদ্য পাস করা এডিনবারের এমডি যুবকের গবেষনাপত্র প্রকাশিত হল ল্যান্সেট-এর মতো পিয়ার-রিভিউড জার্নালে – “On the Mode of Detecting Nitric Acid, and the total inefficacy of the New Test of Decolourising the Sulphate of Indigo” শিরোনামে (২৯ মে, ১৮৩০)। ল্যান্সেট-এ পরপর প্রকাশিত চিঠি এবং গবেষণাপত্রগুলো – “The Detection of Nitric Acid” (২ জুন, ১৮৩০); “On the Detection of Iodine and the Hydriodate of Potash, in Animal and Mineral Admixture” (১৩ জুলাই, ১৮৩০); “Analysis of a Suspected Stain by Nitric Acid, with Observations” (২১ আগস্ট, ১৮৩০); “On The Toxicological Relations of the Sulphocyanic Acid” (২ অক্টোবর, ১৮৩০); “Poisoned Confectionery. The Detection of Gambogf, Lead, Copper, Mercury, and Chromate of Lead, in various articles of Sugar Confectionery” (১৪ মে, ১৮৩১); “Proposal of a New Method of Treating the Blue Epidemic Cholera by the Injection of Highly-Oxygenised Salts into the Venous System (the birth of I.V. fluid therapy – commonly known today as “the Drip”)” (১০ ডিসেম্বর, ১৮৩১); “Experiments on the Blood in Cholera” (৩১ ডিসেমর, ১৮৩১); “Chemical Pathology of Cholera. Remarks on “Dr. Thompson’s analysis of the blood of individuals affected with Malignant Cholera” (২৬ মে, ১৮৩২); “the Blood in the Cholera” (২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৮৩৩)।
৮ আগস্ট, ১৮৩৩, ও’শনেসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বেঙ্গল মেডিক্যাল সার্ভিসে যোগ দিলেন। ১০ ডিসেম্বর, ১৮৩৩, কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে এসে পৌঁছলেন। এরপরে ১৮৩৫ সালের আগস্ট মাসে মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেবার আগে কটক, বিহার এবং দমদমে আর্মি মেডিক্যাল সার্ভিসের বিভিন্ন পোস্টে কাজ করেছেন। ভারতের মতো সুযোগসুবিধেহীন দূরতম প্রান্তে বসেও বিহারের গয়া থেকে (তখন তিনি মেডিক্যাল সার্ভিসে অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জনের পদে) ল্যান্সেট-এ গবেষণাপত্র প্রকাশ করলেন – “Discovery of a New Principle (Sub-Rubrine) in Human Blood; In Health and Disease, and also in the Blood of Several of the Lower Mammalia” (৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৩৫)। এই পেপারটিতে প্লীহার অসুখে তিনি আবিষ্কার করলেন – “labouring under disease of the spleen, my attention was forcibly attracted by some very remarkable phenomena, which were wholly inexplicable according to the previous state of our knowledge of the composition of the blood.” অনেকটা পথ পেরিয়ে আসার পরে এখন আমাদের আধুনিক মননে ভাবতে ইচ্ছে করে তিনি কালাজ্বরের কোন আদিরূপ দেখেছিলেন? উত্তর জানা নেই। অনুমান মাত্র।
এই পেপারেই বলছেন – “To complete the history of this remarkable substance a minute ultimate analysis is peremptorily required. I regret to say that the necessary apparatus required, neither can I in this remote situation attempt the construction of one on which I could at all rely.”
নিত্যনতুন আবিষ্কারের নেশায় বুঁদ একজন বৈজ্ঞানিকের মানসিক অস্থিরতা চলছে মেডিসিনের অগ্রগতির জন্য। এরকম একজন গবেষক, চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী ছিলেন মেডিক্যাল কলেজের প্রথম যুগের শিক্ষক। মেডিক্যাল কলেজকে সেসময়ে ইংল্যান্ড বা আমেরিকার প্রভিন্সিয়াল মেডিক্যাল স্কুলগুলোর তুল্য বলে গণ্য করা হত।
উপনিবেশিক বিজ্ঞান থেকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান
এখানে আমাদের বোঝা দরকার, ভারতীয়রা যাকে “জ্ঞান” বলে গণ্য করতো উপনিবেশিক ক্ষমতার কেন্দ্রে সেটাকে কেবলমাত্র “তথ্য” হিসেব গণ্য করা হতো। ক্ষমতার কেন্দ্র একে পরিশুদ্ধ করে অনুমোদন করলে তখন সেটা নতুন চেহারায় “জ্ঞান” হিসেবে আমাদের কাছে পরিগণিত হত। এমনটাই সেসময়ের ভারতীয় শিক্ষিত জগৎ বুঝতে অভ্যস্ত ছিল। এমনকি এরকম সুদূর উপনিবেশের মাটিতে সাদা চামড়ার সাহেবরাও এভাবে বুঝতো। এভাবে বিষয়টিকে উপস্থাপিত করা যায় – জ্ঞান > তথ্য > ধুয়েমুছে সংশোধন করা/সত্যতা যাচাই করা > “প্রকৃত” এবং “খাঁটি” জ্ঞান। এরকম একটি প্রক্রিয়াকে ব্রুনো লাতুর তাঁর সায়ান্স ইন অ্যাকশন গ্রন্থে বলছেন – “the first to sit at the beginning and at the end of a long network that what I will call immutable and convertible mobiles. All these charts, tables and trajectories are centuries old or a day old”।
কিন্তু ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে ১৮৩৫-৪৫ সময়কালে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জগৎ থেকে একাধিক উদাহরণ দেওয়া যা জ্ঞান উৎপাদনের উল্লেখিত প্রক্রিয়াকে অন্তর্ঘাত করেছে। এখানকার তত্ত্বায়ন প্রাধান্যকারী তত্ত্বায়নের সঙ্গে বহুক্ষেত্রেই মূলগতভাবে পৃথক অবস্থানে ছিল। বরঞ্চ উপনিবেশিক বিজ্ঞান, বিশেষ করে মেডিক্যাল কলেজের ক্ষেত্রে, আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানের সমকক্ষ হয়ে উঠেছে এবং ইউরো-আমেরিকান বিজ্ঞানের চর্চাকে কিছুক্ষেত্রে প্রভাবিতও করেছে। আমরা একাধিক উদাহরণ দেখে নেব।
প্রথম, কলকাতার মেডিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সোসাইটির মুখপত্র কোয়ার্টার্লি জার্নাল অফ মেডিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সোসাইটি-র প্রথম সংখ্যায় (১৮৩৭) যুগ্ম সম্পাদক হেনরি গুডিভ এবং ও’শনেসি (দুজনেই তখন সদ্য প্রতিষ্ঠিত মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক) লিখলেন – “It must not be said of us in Europe, that expatriation has rendered us inefficient in the advancement of our profession … that amidst the many impediments which beset us here, we will pursue with unabated zeal the various useful and enobling branches of our truly philanthropic art.” এখানে আমরা একটি বিশেষ ব্যাপারে নজর রাখি – গুডিভ এবং ও’শনেসিরা উপনিবেশিক সমাজে বিজ্ঞানের চর্চা করছেন, কিন্তু বিজ্ঞানের “global network”-এর সাথে একটি সংযোগ তৈরি করার ধারাবাহিক চেষ্টা করছেন। এজন্য পূর্বোক্ত প্রতিবেদনে বলছেন – “We cordially and earnestly, then, invite our brethren in the provinces to aid us in our usual undertaking … The Medical Society of Calcutta has already earned a high name in the list of scientific bodies.”
দ্বিতীয়, এ লেখার প্রথমাংশে বলেছি যে ১৮৩৬ সালের ১৭ মার্চ মেডিক্যাল কলেজের প্রথম তিনজন অধ্যাপক বিশিষ্ট রাজপুরুষদের উপস্থিতিতে একবছর সময়ে (২৮ জানুয়ারি, ১৮৩৫, মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়) মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষার অগ্রগতি নিয়ে লিখিত রিপোর্ট রাখেন। ও’শনেসি তাঁর লেকচারে বলেন, এই গরীব দেশের মানুষকে বাধ্য হয়ে চড়া দামে ইউরোপীয় মেডিসিন কিনতে হচ্ছে। অথচ এই মেডিসিনগুলোর উপাদান এ দেশেই পাওয়া যায়। কম মজুরিতে এখানকার গরীব মানুষেরা এগুলো তৈরি করেন। শুধু তাই নয়, মেডিসিন তৈরি হবার পরে ওদেশ থেকে আমদানি করার খরচও ভারতের মানুষকে দিতে হয়। এজন্য এত অধিক মূল্যে গরীব মানুষদের দামী বিদেশী মেডিসিন কিনতে হচ্ছে। এজন্য তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য ছিল – “I have taken the trouble of counting the number of medicines now imported from Europe. They amount to several hundreds, all of which, except about 80, may be prepared or grown in this country. For these 80 many different efficient substitutes exist in known indigenous productions.” এক্ষেত্রে ব্রুনো লাতুরের ধারণার সাথে সাজুয্য পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন – “Possessed of many of the finest dye stuffs in the world, India is forced to export them to a more enlightened land, where the cottons also exported from India receive their colour and return to the place of their original production.” আজকের চোখে দেখলে উপনিবেশিক মাটি থেকে জ্ঞানের তথাকথিত কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একধরনের যুদ্ধ ঘোষণা বলা যায়। এরকম একটি স্বাধীন চিন্তার মানসিকতা এবং দরিদ্র ভারতকে স্বনির্ভর করার ব্যতিক্রমী চিন্তা কি তাঁর আইরিশ সত্তার মধ্যে ছিল? উত্তর জানা নেই।
তৃতীয়, ব্যারি ক্রসবি তাঁর Irish Imperial Networks Migration, Social Communication and Exchange in Nineteenth-Century India (২০১২) গ্রন্থে জানাচ্ছেন, ও’শনেসির ভারতীয় গাঁজা বা “হেম্প” নিয়ে প্রথম দফার পরীক্ষার ফলাফল “using Indian hemp on both humans and animals were published in the Transactions of the Medical and Psychiatric Society of California in 1842, where they generated considerable interest. In the mid nineteenth century cannabis was virtually unknown as a drug in Europe and North America. Within a few years of O’Shaughnessy’s experiments, however, it was being used as a medication to treat a wide range of conditions by many of the leading doctors in Ireland, including Robert Graves and Sir Philip Crampton in Dublin.” (পৃঃ ১৮৪)
চতুর্থ, মেডিক্যাল কলেজের কেমিস্ট্রি ক্লাসে ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিজম নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার ফলশ্রুতি ১৮৩৭ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত তাঁর পুস্তক On the Employment of the Electro-Magnet as a Moving Power; with a Description of a Model Machine worked by this Agent। দ্য নর্থ আমেরিকান রিভিউ সেসময়ের একটি নামকরা বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল। এই জার্নালের অক্টোবর, ১৮৩৭ সংখ্যায় ও’শনেসির বইটির ৫ পৃষ্ঠার রিভিউ প্রকাশিত হল। রিভিউয়ের শুরুতে বলা হচ্ছে – “It would have been natural to expect from Calcutta a case of indigo or of gum shellac, rather than a pamphlet upon a matter of science.” অর্থাৎ, কলকাতার মতো একটি জায়গা থেকে বিজ্ঞান-বিষয়ক প্যাম্ফলেটের বদলে থেকে নীল চাষের খবর বা কাঠের বার্নিশ করার জন্য আঠার খবর জানা যাবে এরকমটাই প্রত্যাশিত। এখানেই ও’শনেসির মতো মানুষদের হাত ধরে শুধু ইউরোপীয় জ্ঞানের ভুবন থেকে চুঁইয়ে আসা জ্ঞান গ্রহণ করার বিপরীতে ভারতে উৎপাদিত জ্ঞান আন্তর্জাতিক (বা প্রথম বিশ্বের জগতে) স্বীকৃতি পাবার জায়গা করে নেয়। যদিও এই বিশেষ পরীক্ষার ক্ষেত্রে ও’শনেসির মেডিসিনে ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিজম প্রয়োগের লব্ধ ফলাফল নিয়ে নিশ্চিত কোন দাবী করা যাবেনা। এসব সত্ত্বেও এটা ইউরো-আমেরিকান মৌরসিপাট্টার দুনিয়ায় একধরনের অন্তর্ঘাত বা subversion বলা যেতে পারে।
পঞ্চম, ও’শনেসি গ্যালভানিক ব্যাটারি নিয়েও পরীক্ষানিরীক্ষা করেছিলেন। এমনকি সিডনিগামী Equitable নামে একটি জাহাজ ফলতার কাছে চড়ায় আটকে গেলে তিনি শক্তিশালী গ্যালভানিক ব্যাটারি ব্যবহার করে জাহাজটিকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেন (O’Shaughnessy, “Memorandum on the Explosion of Gunpowder under Water by the Galvanic Battery”, Journal of the Asiatic Society of Bengal 8, no. 94 (1839): 860-862)। এর আগে Parbary’s Oriental Herald-এ (১ম সংখ্যা, ১৮৩৭, পৃঃ ২০) প্রকাশিত হয়েছিল – “Dr. O’Shaughnessy was electrifying the higher ranks of Calcutta society with his galvanic battery, and displayed much zeal and intelligence in explaining the science. He had lectured with great éclat at Government House; and his lecture-room in the New Medical College was thronged whenever it opened.” এমনকি, গ্যালভানিজমের ব্যবহার করেছিলেন aneurism সারাতে (O’Bryen Bellingham, Observations on Anerism, and its Treatment by Compression, ১৮৪৭, পৃঃ ১০১)।
যে বৈজ্ঞানিকের অনুসন্ধান খাবারে ভেজাল আবিষ্কার করা দিয়ে শুরু হয়েছিল, পরবর্তীতে ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইন ইনফিউশনের যুগান্তকারী আবিষ্কার (বিংশ শতাব্দীতে হলে নোবেলজয়ী হতেন আশা করা যায়) থেকে ভারতীয় গাঁজাকে বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করে বিশেষ ডোজে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার থেকে ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিজম, গ্যালভানিজম এবং বিভিন্ন ধরনের বিষক্রিয়ার উপাদানের আবিষ্কার করা এবং হয়তো তুলনায় ছোট আরও কিছু ছোটখাটো আবিষ্কার ও’শনেসি করে গেছেন। একটি মানুষ এতগুলো কাজ ছাড়াও আরও অনেক কাজ করেছেন। এমনকি ভারতে প্রথম টেলিগ্রাফের প্রচলন করাও তাঁর মস্তিষ্ক ও উদ্ভাবনী শক্তি সঞ্জাত।
এখানে আরেকটি কথা উল্লেখ করা দরকার। অ্যাকাডেমিয়ায় চালু ইতিহাস চর্চায় মেডিসিনকে সাম্রাজ্যবাদের “মানবিক মুখ” হিসেবে দেখার একটি যৌক্তিক প্রবণতা আছে। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজে ও’শনেসি যখন ছাত্রদের কেমিস্ট্রি শিখতে বলেন দেশের সম্পদকে উপযুক্ত ব্যবহারের লক্ষ্যে, কিংবা দামী বিদেশী ওষুধের বিকল্প কমদামী দেশি ওষুধ তৈরির প্রকরণ শিখতে কিংবা এদেশের নিজস্ব উৎপাদিত সম্পদ যাতে বেশি দাম দিয়ে ইংল্যান্ডের কাছ থেকে কিনতে না হয়, সে কাজে ব্যবহারের জন্য, তখন মেডিসিন আর শুধুমাত্র “মানবিক মুখ” হয়ে থাকেনা। নিজের আভ্যন্তরীন শক্তিতে মানুষের উপকারে আসার জন্য ব্যবহৃত হয়। স্মরণে রাখতে হবে, গুডিভ মেডিক্যাল কলেজের পূর্বোক্ত বক্তৃতায় কেন মেডিসিন ভালোভাবে শিখতে হবে বোঝাতে গিয়ে বলেছিলেন – “But alas! The poor are for the most part totally helpless; they have nowhere to look for aid of any kind; they die thou7sands for want of the commonest relief.” এ কথাগুলো তখন আর সাম্রাজ্যবাদী হাতিয়ার থাকেনা। মেডিসিনের অন্তর্নিহিত চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়।
ভারতের প্রথম প্রাণীদেহের ওপরে পরীক্ষা, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এবং রোগীর সম্মতিপত্রের আদিরূপ
১৮৩৬ সালের কথা বলছি। সেসময় ও’শনেসি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের হৃদয় জয়-করা ২৭ বছরের একজন টগবগে শিক্ষক, গবেষক এবং চিকিৎসক (অনেকটা ডিরোজিওর মতো)। সেসময় কলকাতার বাজারে বিষাক্ত নাক্স ভোমিকার (Nux Vomica) ছাল ভিন্ন কার্যকরী ওষুধ বলে বাজারে বিক্রী হত। ইংরেজ ডাক্তারদের একাংশের এতে সন্দেহ হয়। ফ্রেডেরিক করবিন সম্পাদিত The Indian Review and Journal of Foreign Science and the Arts পত্রিকার ১ম সংখ্যায় (১৮৩৭) এ নিয়ে “Caution to the Public” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ও’শনেসি এ নিয়ে তাঁর ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করেন। তাঁর রিপোর্ট ছিল – “The dog to which was administered one drachm of the extract was first convulsed one hour and twelve minutes after, and after a few rapid and strong fits of convulsion died in one hour and thirty one minutes। The dog which got half a drachm of the extract became convulsed 30 minutes after, and, after several fits of tetanic convulsions, died one hour and two minutes after.” (৫ অক্টোবর, ১৮৩৫, পৃঃ ২৮৮) [১ ড্রাম = ১.৭৭ গ্রাম]
তাঁর লেখা পূর্বোক্ত On the Preparation of Indian Hemp, or Gunjah পুস্তকেও তিনি মানুষের ওপরে প্রয়োগ করার আগে অ্যানিম্যাল ট্রায়াল করেছিলেন। এতে তিনি দেখেছিলেন মাংসাশী প্রাণীদের ক্ষেত্রে চরসের প্রভাব বেশি পড়ে, তুলনায় তৃণভোজীদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব অনেক কম – “while carnivorous animals and fish, dogs, cats, swine, vultures, crows, and adjutants, invariably and speedily exhibited the intoxicating influence of the drug, the graminivorous, such as the horse, deer, monkey, goat, sheep, and cow, experienced but trivial effects from any dose we administered.”
১৮৩৮ সালে, তিনি প্রথমে একটি মাঝারি সাইজের কুকুরের ওপরে ১০ গ্রেন নেপালি চরস প্রয়োগ করেন। আধ ঘন্টার মধ্যে কুকুরটি “stupid” এবং নিস্তেজ হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ১ ড্রাম “মাজুন” (চরসের জলীয় দ্রবণ) ছোট সাইজের একটি কুকুরকে দেওয়া হয়। সে প্রবল আনন্দে লাফালাফি আরম্ভ করে। ৩য়, ৪র্থ এবং ৫ম ক্ষেত্রে আরও ছোট কুকুরের ওপরে গাঁজার অ্যালকোহলীয় দ্রবণ দিয়ে পরীক্ষা করেন। ৬ষ্ঠ ক্ষেত্রে ২০ গ্রেন প্রয়োগ করেন একেবারে ছোট্ট একটি কুকুরের ওপরে। এ সমস্ত পরীক্ষা থেকে তিনি বোঝেন কুকুরদের ক্ষেত্রে কোন ব্যথার অনুভূতি ছিলনা, কিংবা কোন খিঁচুনি হয়নি।
প্রাণীদেহে এই ফলাফল দেখার পর মানুষের ওপরে তিনি এবার ওষুধটি প্রয়োগ করতে শুরু করলেন। ১৮৪৩ সালে প্রভিন্সিয়াল মেডিক্যাল জার্নাল-এ যখন দু’কিস্তিতে তাঁর গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় তখন তিনি ১৮৩৯-এর পুস্তকের থেকে আরেকটু পরিমার্জনা করেছেন। আমি সেখান থেকে কেসগুলো উল্লেখ করছি – (১) Cases of Rheumatism treated by Hemp. Catalepsy produced by on6 grain, (২) Case of Hydrophobia (আমি এর আগেই হাকিমের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ ও ফলাফলের কথা উল্লেখ করেছি)। (৩) Use in Cholera (এক্ষেত্রে একজন খাঁটি বিজ্ঞানীর মতো পরিষ্কার করে বলেন, “It is but fair to state, however, that the character of the epidemic was not at the time malignant. I admit the cases to be inconclusive, but I conceive them to be promising, and that they deserve the due attention of the practitioner.”), (৪) Use in Tetanus, (৫) Case of Infantile Convulsions, এবং (৬) Use in Delirium Tremens (মদ বা গাঁজা ছেড়ে দিলে যে প্রবল অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণ কথাবার্তা শুরু হয় অর্থাৎ withdrwala syndrome, সেরকম পরিস্থিতি)।
ও’শনেসির প্রাইভেট প্রাক্টিসে একদিন (১০ সেপ্টেম্বর, ১৮৩৮) এক সাহেব দম্পতি (মিঃ এবং মিসেস জে বলে উল্লেখিত) ১৫ দিন ধরে ক্রমাগত খিঁচুনিতে ভোগা (convulsive disorder) মাত্র ৪০ দিনের শিশুকে নিয়ে আসে চিকিৎসার জন্য। যেদিন ও’শনেসি দেখলেন সেদিন “the attacks were almost unceasing, and amounted to regular tetanic paroxysms. The child had, moreover, completely lost appetite and was emaciating rapidly.” এবং, ও’শনেসির বয়ানে – “I had by this time exhausted all the usual methods of treatment, and the child was apparently in a sinking state.” সেসময়ের চিকিৎসা বলতে জোঁক দিয়ে রক্তমোক্ষণ, ব্লিস্টার প্রয়োগ করা, বমি এবং পায়খানা করানো। এছাড়া টার্টার এমেটিকের (অ্যান্টিমনি পটাশিয়াম টার্টারেট) বহুল ব্যবহার ছিল। এই কচি শিশুটির ঘাড়েও ব্লিস্টার প্রয়োগ করা হয়েছিল।
যাহোক, এই শিশুটিকে নতুন ওষুধটি দেবার জন্য তিনি “Under these circumstances I stated to the parents the results of the experiments I had made with the hemp, and my conviction that it would relieve their infant if relief could possibly be obtained. They gladly consented to the trial”। ভারতের ক্ষেত্রে এই প্রথম নথিভুক্ত হল রোগীর অনুমতি নিয়ে চিকিৎসার (informed consent) নতুন অধ্যায়।
১/২০ গ্রেন “হেম্প” চিকিৎসা শুরু হল। তারপর নানা ওঠানামার মধ্য দিয়ে গিয়ে “The child is now (December 17) in the enjoyment of robust health, and has regained her natural plump and happy appearance.” অর্থাৎ, ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর, মোট তিনমাস চিকিৎসার পরে সুস্থ সবল শিশু বাড়ি গেল। আরেকজন চিকিৎসক ডঃ নিকলসন এ চিকিৎসার সাথে যুক্ত ছিলেন। এবং চিকিৎসা হয়েছিল মেডিক্যাল কলেজে।
আমি ক্যানাবিস বা গাঁজা নিয়ে অন্য অসুখগুলোর ক্ষেত্রে ট্রায়ালগুলো নিয়ে আর বিস্তারিত কিছু বলছিনা। এটুকু শুধু বলা যায়, সেসময়ে ও’শনেসির যুগান্তকারী কাজের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে সঠিক এবং নির্দিষ্ট ডোজে ব্যবহার করলে ক্যানাবিসকে বহুক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় এবং কার্যকরী ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায় – টিটেনাসের lock-jaw সারানো থেকে সার্জারির সময় বেদনা থেকে মুক্তিতে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে ব্রিটিশ জার্নাল অফ অফথ্যালমোলজি-তে (অক্টোবর, ২০০৩) প্রকাশিত হচ্ছে “Cannabinoids and glaucoma” শিরোনামে গবেষণাপত্র। সেখানে বলা হচ্ছে – “In 1839, Dr William Brooke O’Shaughnessy, an Irish physician at the Medical College of Calcutta, published a detailed report ‘‘On the preparations of the Indian Hemp or Gunjah.’’ After performing animal studies, he determined that cannabis preparations were safe and effective in treating rabies, rheumatism, epilepsy, and tetanus.” এমনকি নেচার-এর মতো জার্নালে (২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫) “A potted history” প্রবন্ধে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে – “O’Shaughnessy was of critical importance in introducing Indian hemp to British and North American physicians”। Therapeutic Advances in Musculoskeletal Disease জার্নালে “Medical cannabis for orthopaedic patients with chronic musculoskeletal pain: does evidence support its use?” (জুলাই ২, ২০২০) শীর্ষক রিভিউ পেপারে বলা হচ্ছে – “Medicinal applications of cannabis remained largely unknown to the West until the mid-1800s, when William O’Shaughnessy, an Irish physician working in Calcutta, India, first reported a series of basic animal experiments and human cases on various Indian Ayruvedic medicinal claims … O’Shaughnessy recommended its use for spasticity, pain and epilepsy-related convulsions. Following this, the availability of cannabis extracts in over-the-counter medications, as well as its general use, proliferated rapidly throughout North America and Europe and, by 1850, cannabis was listed in the United States (US) Pharmacopeia as a treatment option for approximately 100 symptoms.”
ক্যানাবিস এরকম বহুল প্রচার পাবার পরে ওষুধের কাউন্টারে প্রেস্ক্রিপশন ছাড়াই বোতলে করে বিক্রি হতে শুরু করলো ইংল্যান্ড, আমেরিকা সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। নীচে এর ছবি দেওয়া হল। আমেরিকাতে ক্যানাবিসের বহুল প্রচারের ক্ষেত্রে Du Pont পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি এবং হেনরি ফোর্ডের মতো প্রভাবশালী ধনকুবেররা এর বিরুদ্ধে প্রচারে মিডিয়াকে বিপুলভাবে ব্যবহার করে – কারণ, Indian hemp থেকে ভালো জাতের গাড়ির চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় বায়োমাস জ্বালানি এবং ভালো জাতের কাগজ তৈরি হত। এজন্য আমেরিকায় এর মেডিক্যাল ব্যবহারের সূচনা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল।
এবারে তাঁর আবিষ্কৃত কুইনিনের উপজাত নার্কোটিন (noscapine) নিয়ে কথা বলবো। ১৮৩৮ সালের গোড়ায় সম্ভবত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে কলহের কারণে পেরু সরকার ভারতে ৫ বছরের জন্য Peruvian bark বা সিঙ্কোনা গাছের ছাল, যা থেকে অতি প্রয়োজনীয় কুইনাইনের মতো ওষুধ তৈরি হত, রপ্তানি করা নিষিদ্ধ করে। “ক্যালকাটা মেডিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সোসাইটি”-র ১৮৩৮ সালের আগস্ট মাসের সভায় ও’শনেসি সভ্যদের নজর এ সমস্যার দিকে আকৃষ্ট করেন। এরপরে সভার সদস্যদের সামনে তিনি তাঁর আবিষ্কার করা কুইনাইনের বিকল্প হিসেবে (বাংলায় সহজলভ্য আফিম থেকে যা তৈরি করেছিলেন) narcotine দিয়ে চিকিৎসা করা ৩২ জন রোগীর বিবরণ পেশ করেন। এরমধ্যে ২টি কেসের ক্ষেত্রে ডঃ গুডিভ স্বয়ং ফল পেয়েছিলেন। ল্যান্সেট-এ (জুলাই ২০, ১৮৩৯) প্রকাশিত হয়েছিল নার্কোটিন তৈরির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া এবং ম্যালেরিয়ার ইন্টারমিটেন্ট ধরনের জ্বরের চিকিৎসায় এর ফলাফল।
ক্যালকাটা মন্থলি জার্নাল-এ (1838, No. XLVII, p. 506-508) ও’শনেসির পেশ করা সমস্ত কেসের (যাদের নার্কোটিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে) একটি টেবিল প্রকাশ করা হয়।
এই টেবিল থেকে দেখা যায় ২০ জনের বেশি চিকিৎসক (সবাই বেঙ্গল মেডিক্যাল সার্ভিসের সামরিক চিকিৎসক) ১৪১টি কেসের চিকিৎসা করেছেন। এরমধ্যে ১২৫ জনের সম্পূর্ণ নিরাময় হয়। ৫ জন চিকিৎসাধীন। ১১ জনের ক্ষেত্রে কোন ফল পাওয়া যায়নি। উল্টোদিকে, ১৭টি ক্ষেত্রে যেখানে কুইনাইন ব্যর্থ হয়েছে সেখানে নার্কোটিন সফল হয়েছে। ২১ জন প্র্যাক্টিশনার যারা নার্কোটিন ব্যবহার করেছেন তাদের মধ্যে ১৭ জন অতি সন্তোষজনক মন্তব্য করেছেন, ২ জন নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি, ২ জন কেবল সংখ্যাভিত্তিক রিপোর্ট ছাড়া আর কিছু জানাননি।
কুইনাইনের থেকে অনেক কম দামে (১ আউন্সের মূল্য ৬ আনা) এই ওষুধ পাওয়া যাবে বলে ও’শনেসি জানান। তিনি আরও নিশ্চয়াত্মক ফলাফলের জন্য নার্কোটিনের (আজকের ভাষায়) মাল্টি-সেন্ট্রিক ট্রায়াল করতে চেয়েছিলেন। তাঁর অভিমত ছিল দুর্গম এবং কলেরা অধ্যুষিত অঞ্চলে, যেমন বার্মার Kyok Phoo, Akyab এবং চট্টগ্রাম, তমলুক ও রংপুরের মতো জায়গায় এ ওষুধ রোগীদের উপরে পরীক্ষা করার জন্য পাঠানো হোক। কিন্তু বাংলার মেডিক্যাল বোর্ড এতে গররাজি হয়। ফলে নার্কোটিনের পরবর্তী ফলাফল অজানা থাকে।
শেষ কথা
বাস্তবিকই “শেষ নাহি যে শেষ কথা কে বলবে”! ও’শনেসি ক্লাস রুমের কেমিস্ট্রিকে প্রাক্টিক্যাল কেমিস্ট্রির চেহারা দিয়েছেন। বিভিন্ন ওষুধ তৈরি ও প্রয়োগের মধ্য দিয়ে ভারতে প্রথম বায়োকেমিস্ট্রি এবং ফার্মাকোলজির সূচনা করেছেন। কেমিস্ট্রি ও বিজ্ঞানের শিক্ষাকে ছাত্রদের মাঝে একটি প্রাণবন্ত চিন্তা এবং বাস্তবের মাটিতে প্রয়োগ করার সজীব প্রবাহ হিসেবে দেখেছেন।
উপনিবেশিক বিজ্ঞানকে উন্নীত করেছেন আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার স্তরে। আবার মেডিক্যাল কলেজের ক্লাস রুমে ছাত্রদের উৎসাহিত করেছেন কেমিস্ট্রির জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে ভারতের খনিজ, উদ্ভিজ্জ এবং ধাতুর চরিত্রের ক্ষেত্রগুলোকে সম্যকভাবে বুঝে এদেশের কাজে ব্যবহার করে অনেক স্বল্পদামে দেশীয় প্রোডাক্ট তৈরি করতে।
মেডিক্যাল কলেজে তাঁর পূর্বোক্ত লেকচারে বলেছিলেন – “There are numerous and very powerful poisons, rapidly proven fatal, when taken in a certain quantity … very little practice in the laboratory will enable you to detect the 100th part of a grain of arsenic, corrosive sublimate, &c. In any mixture can be presented to you … very often enable you to protect persons labouring under false accusations.”
ভারতে মেডিক্যাল টক্সিকোলজি তথা ফরেন্সিক মেডিসিনের সূচনা করলেন। সূচনা হল ও’শনেসির হাত ধরে মেডিক্যাল কলেজে – ১৮৩৬ সালে, প্রায় ৩০০ বছর আগে। কিন্তু এদেশের চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীমহলে মানুষটি বিস্মৃত রয়ে গেলেন আজও।
At least now our policy makers should realize the importance of science which has remained unpopular till date.Investment in research is also not up to the mark.We should understand if one tiny little particle oh sorry virus can put a stop to school,college,universities and affect the overall economy then what is importance of doing research to know them.Moreover to make science popular idol worship pattern should also change.In the text books of school to tv interviews we should shocase scientists and their biographay,struggle and achievements and not only those who are celebrities by the virtue of being a Bollywood star or a singer.I am not telling we should not make them celebrities,they are off course entertainers and celebrities.But one scientist hardwork,perseverance and brainwork and potential for analytical thinking makes pathbreaking changes like tesla,Graham Bell,rutherfird,watson,crick ,satyen bose,cv raman,apc roy or arthur kornberg or nirenberg and matahi did.So,scientists achievements should come to the knowledge of even layman .That could change the scenario.Last but not the least to get research output quantum change in research grant should come.Even in the school education instead of only mugging up of theory practical experiment based learning ,analysis,discussion from the findings should be focussed.This is my feeling which I have realized in my career of 17 years of teaching starting from school to college to now a university.
I have started looking at Medical College at a new perspective after reading this article. Thanks. Incidentally I wish to mention in US cannabis is now much used medicine. In fact entire Latin American uses it. Once I visited opium factory of Gazipur (UP) a government factory, to my surprise I found monkeys are addicted to Ganja. Eye opening article
অনন্যসাধারণ এই ব্যক্তিত্বকে নিয়ে আরো আলোচনা দরকার।
বহু অজানা তথ্য জানলাম। ধন্যবাদ,
ভাবা যায়, ঐ যুগে ও’শনেসি কত সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা ও পরীক্ষানিরীক্ষা করেছিলেন। আজকের দিনে কি চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এই ভাবনা ভাবার সুযোগ পাচ্ছেন? চিকিৎসকদের মধ্যে যাঁদের গবেষণা করার ঝোঁক আছে তাঁদের একটা ছোট অংশকেও যদি সরকারী উদ্যোগে গবেষণা করার সুযোগ দেওয়া হয় তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম উপকৃত হবে এবং ঔষধ কারবারীরা সাবধান হবে।
ধন্যবাদ ডঃ জয়ন্তকে ও’শনেসিকে স্মরণ করে এমন শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করার জন্য।
It is important to show the younger generations of doctors in West Bengal that their institutions had at one time significantly contributed to discovery in medicine. The commercialisation of medical practice may have been an important deterrent for such innovative thinking. It is important to try to bring back the culture of performing honest and rigorous research alongside the practice of medicine.
যদি সরকারী উদ্যোগে গবেষণা করার সুযোগ দেওয়া হয় তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম উপকৃত হবে এবং ঔষধ কারবারীরা সাবধান হবে।
ডঃ ও’শনেসির মতো একজন প্রতিভাধর ব্যক্তির সম্বন্ধে জানতে পারলাম,‘তার থেকে ও বড়ো কথা তোমার এই অসাধারণ লেখা মনে প্রেরণা জোগায়।
Apurba lekhoni, somridhyo holam
Very well written.
অনেক কিছু জানলাম। সুন্দর লেখা।