নজরুল মঞ্চ। মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় স্হান। স্টেজে ২৬৩ বা তার অধিক কিছু চেয়ার।
অনুষ্ঠান পরিচালনার ভার সি.এম. নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন। এরকমই হয়। এইসব অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও পরিচালনা উনিই করেন। আশেপাশে নির্মল শান্ত বাতাসের দাপাদাপি নেই।
ম্যাডাম হঠাৎই পিছনের সারিতে বসা ষাটোর্ধ্ব এক চিকিৎসকের দিকে তাকিয়ে বললেন, ডা: কড়াই, আপনি সামনে আসুন। এরপরই মাইক্রোফোন সচল হলো, ইনি ডা.এস.পি. কড়াই। আজ চিকিৎসক-সূর্য সম্মান পাচ্ছেন। রুগীর পরিষেবায় উনি এতটাই নিবেদিত যে সদ্য দায়িত্ব প্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্রীকেও সহজেই সবিনয়ে বলে দিতে পারেন, ম্যাডাম, কাল আমার দুটো অপারেশন আছে, ওটা সেরে বিকেলে দেখা করব।
হ্যাঁ, ঠিক কথা, আমি ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম। নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে ওনার চিকিৎসা থেকে বহু মানুষকে বঞ্চিত করেছি। হয়তো বা আমার জেদের জন্য। ছোটবেলা থেকেই আমি খুব জিদ্দি।
কিন্তু আজ তো শুদ্ধিকরণের দিন। আজ ওনার সমস্ত বকেয়া পাওনা ফিরিয়ে দেবার দিন। শুধু তাই নয় আমি অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি, মাননীয় চিকিৎসক এস.পি. কড়াই ওনার পুরানো কর্মস্থলে এমেরিটাস প্রফেসর হিসেবে যোগ দেবেন।
সঞ্জীব, সঞ্জীব , তুমি কোথায়!– দর্শকাসনের প্রথম সারির বিরলকেশ এক আধিকারিককে বললেন, টেক কেয়ার এন্ড নোট ডাউন।
আবার মঞ্চে। ‘করুনাচল! করুনাচল কৈ?
পক্ককেশ চিকিৎসক উপস্থিতি জানান দিতেই–
তুমি কালকেই জয়েন করো। আর মনে রেখো তোমার লেখা থামিও না। সুনির্মল বাণী নয়, তোমরা ফিল্ডে থেকে যুদ্ধ কর। তাই তোমার ক্ষুরধার লেখাই সত্যিটা জানতে আমায় সাহায্য করবে।
এবার মাননীয়া ঘুরে দাঁড়ালেন মঞ্চে উপবিষ্ট সেই ২৬৩ বা তার কিছু অধিক চিকিৎসকদের দিকে, আপনারা শুধু চিকিৎসক নন, এক একজন যোদ্ধা। যে স্বল্প পরিকাঠামোর মধ্যে দুষ্কৃতীদের দ্বারা নিপীড়িত হয়েও চিকিৎসা ব্যবস্থা চালিয়ে যাচ্ছেন তার জন্য সবাইকে আজ চিকিৎসকশ্রী সম্মানে ভূষিত করলাম।
এবার আবার দর্শকাসনের দিকে ফিরলেন।দর্শকাসনের বামদিক আলোকিত হলো। ঐ অংশ বৃদ্ধিজীবীদের জন্য সংরক্ষিত। অনেক আসনই আজ খালি পড়ে আছে। শ্মশ্রুগুম্ফ-শোভিত একজনের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বলে উঠলেন, আর কতদিন আপনি কাক দেখবেন। এবার এদের দিকে তাকান।
অবোধ কোথায়? তুমি তো মোটেও অবোধ কবি নও। তাহলে সুবোধ বালকের ন্যায় এদের কথা লেখো।
এবার শেষ চমক। সমস্ত প্রেক্ষাগৃহ আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠল। বিশাল প্রেক্ষাগৃহের সমস্ত আসন পূর্ণ।সকলের কোমরে দড়ি, সেই দড়ি থানার ওসিদের হাত ঘুরে পুলিশ কমিশনার হাত ছুঁয়ে ডিজির হাতে। সেই রজ্জুর শেষ অংশ মাননীয়ার সামনে।
সি এম ম্যাডাম ঐ রজ্জুতে হাত রেখে বললেন, এই অনুষ্ঠান আমি লাইভ করেছি যাতে সমস্ত দেশ আজ দেখে, কিছু দূর্বৃত্তের অত্যাচারে আমাদের চিকিৎসকরা নির্ভয়ে কাজ করতে পারছেন না। আজ চিকিৎসক দিবসে আমাদের অঙ্গীকার,–
এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে আমরা চিকিৎসক সমাজকে ও সমস্ত রাজ্যবাসীকে বার্তা দিতে চাই।
দুটো ট্রাকের হেডলাইটের জোরালো আলো পড়ে, অনিমেষ ডাক্তারের ঘুমটা ভেঙে গেল। ততক্ষণে শ্রীকান্তও চিৎকার জুড়ে দিয়েছে,কী ব্যাপার আজ রুগী দেখবে না। এই অসময়ে ঘুমোচ্ছ?
অনিমেষ ডাক্তার এখনো কেমন ঘোরের মধ্যে।
শ্রীকান্ত অবাক চোখে দেখছে, তোমার কি হয়েছে বলো তো? অবেলায় ঘুমাতে ঐ জন্যে বারণ করি।