দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি বিশেষ ৬
সান্তা দাদু,
কাল বড়দিন। আমরা বাংলা মিডিয়ামে পড়া ছাপোষা বাঙালি। গ্রামের লোক। আমরা ক্রিসমাস বলি না। বলি ‘বড়দিন’। সবাই চাইছে তোমার কাছে কিছু না কিছু। যদি সত্যিই ফেরিওয়ালার বেশে স্বপ্ন ফেরি করতে করতে আজ স্লেজে চড়ে এ দুর্ভাগা দেশে আস, তবে চটপট কটা আবদার সেরে নি তোমার কাছে …
শীতের সময়। হাঁপানির সমস্যায় ছেয়ে গেছে গ্রাম থেকে শহর। এদিকে পাকা ধান অকাল বৃষ্টিতে শেষ করে দিয়েছে নবান্নের আনন্দ। সাধ করে আলু বসিয়েছিল গ্রামের লোক। অকাল বর্ষণে আলুগাছের গোড়ায় জল জমে বিঘের পর বিঘে এখন মরুভূমির আকার নিয়েছে। সান্তা দাদু, তোমার কাছে চাইবো যেন ইনহেলারগুলোর দাম কমে যায় এই বড়দিনে। তিনশো পাঁচশ হাজার কত্ত সব দাম। কটা মানুষই আর কিনতে পারে বলো ? কান্নাকাটি করে দেখাতে এসে । গরীব মানুষ, বড়দিন তো ওদেরও। একটু দেখো এদের সান্তা দাদু।
মেহবুবের মায়ের রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস আছে। সঙ্গে আছে ড্রাগ আলার্জি। পুরো গ্রাসনালি ভরে গেছে ঘা এ। মেহবুব মাঠে জনের কাজ করে। অন্ধভাবে ভালোবাসে মাকে। একমাত্র মা ছাড়া তার আর কেউ নেই। মাসে মাসে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় মাকে। পেটের ব্যথাটা বেড়ে ওঠে হঠাৎ হঠাৎ। হাসপাতালের বাইরের নোংরা মাটিটাতে একটা অয়েলক্লথ পেতে মাসের পর মাস কাটিয়ে দেয় মেহবুব। ঘুম আসে না তার চোখে। শীতের রাত। শিশির পড়ে। তবু সে বসে থাকে । সান্তা দাদু , পারলে একবার হাসপাতাল গুলোর বাইরে গুলো ঘুরে এসো। হাসপাতালগুলো ভরে গেছে মেহবুবের মত মানুষে। সব মেহবুবের মা যেনো সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে, এই আবদার করি তোমার কাছে। সবাই মিলে কেক কাটি না হয়। সবারই না হয় শুভ হোক বড়দিন।
আলুর কোল্ড স্টোরেজে পাহারাদারের কাজ করে বিভূতি চাটুজ্জে। দু পয়সা ইনকামের আশায় সময় পেলে পুজো টুজো করে বেড়ায় এই গ্রাম ওই গ্রাম। বাড়ি সুদ্ধু আমায় দেখাতে আসে। ছেলেটাকে কলকাতাতে রেখে পড়ায়। ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছে। ছেলেটাও পড়াশোনায় ভালো। কয়েকবার এসেছে আমার কাছে। সান্তা দাদু, শুধু এটুকু দেখো যেনো এক্সট্রা টাইম করে শীতের দিনে কোল্ড স্টোরেজের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার স্বপ্নগুলো একদিন সত্যিই বাস্তবের মুখ দেখে। বড়দিন, আরো বড় করে স্বপ্ন দেখতে শিখুন চাটুজ্জে মশায়। আরও বড় . আরও… অনেক অনেক বড় ….
Sera laglo pore