সদ্য স্কুলোত্তীর্ণ তরুণী মায়ের সাথে এসেছে ডাক্তার দেখাতে। একটু উদ্বিগ্ন। চোখ দুটো কিছুটা সন্ত্রস্ত।
আজকাল এই বয়সের ছেলেমেয়েরা অনেক সময়ই একা অথবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আসে। ইনি অবশ্য এসেছেন মায়ের সঙ্গে।
‘বয়স কত?’
‘উনিশ।’
‘কি সমস্যা?’
‘ঘাড়ে-পিঠে ব্যথা, মাথার পিছনদিকে যন্ত্রণা। দু’মাস ধরে।’
‘হাতে ব্যথা হয়? ঝিনঝিন অথবা অবশ ভাব?’
‘বাঁ হাত মাঝে মাঝে ঝিনঝিন করে।’
মা পাশ থেকে বলে উঠলেন- ‘দিনে ছ-সাত ঘন্টা ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতে হয় তো!’
একটু আগে এরা যখন বাইরে দাঁড়িয়েছিল- ভেতর থেকে দেখছিলাম, মা কারো সাথে মোবাইল ফোনে ভিডিওতে কথা বলছে আর মেয়ে ঘাড় গুঁজে নিজের ফোনে টাইপ করে চলেছে।
যাই হোক, মাথা-ঘাড়-মেরুদন্ড পরীক্ষা করে দেখলাম। মারাত্মক কিছু নেই। শুধু ঘাড়ের পিছনের মাংসপেশীগুলো একটু শক্ত হয়ে আছে।
‘কি বুঝলেন, ডাক্তারবাবু? ‘
‘সে রকম খারাপ কিছু মনে হচ্ছে না।’
‘তবুও?’
‘সম্ভবতঃ কম্পিউটার নেক। সঙ্গে মানসিক চাপ। ভুল পজিশনে সারাদিন অনেকক্ষণ ধরে কম্পিউটার ব্যবহার করার জন্য ঘাড়ে ব্যথা হচ্ছে।
ল্যাপটপটা কোলের উপর না রেখে টেবিলের উপর রেখে চেয়ারে বসে ব্যবহার করতে হবে। একঘন্টা পরে পরে পাঁচ-দশ মিনিটের ব্রেক নেবে। সঙ্গে ঘাড়ের হাল্কা ব্যায়াম। ট্যাব বা মোবাইল ফোন কম ব্যবহার করবে।’
‘কি করে করবে ডাক্তারবাবু? পড়াশুনো আছে না? তাছাড়া কত প্রোজেক্ট রয়েছে। কম্পিউটার নিয়েই তো ওর কাজ!’
রোগিণী প্রাপ্তবয়স্কা। তাই তাকেই জিজ্ঞেস করলাম- ‘একঘন্টা পরে পরে পাঁচ মিনিটের জন্য ব্রেক নিতে পারবে না? কি নিয়ে পড়াশোনা কর?’
‘আপনি কি বুঝবেন? ও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে পড়াশোনা করে। সে কোর্স তো এখানে পড়ানো হয় না- তাই বাধ্য হয়ে বাইরে পড়তে যেতে হয়েছে।’
‘হুম্। ঠিক-ই। আমার তো আবার ন্যাচারাল ইন্টেলিজেন্স। তাই আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিষয়টা আমি ঠিক বুঝব না।’