ফোনটা বাজছিল টেবিলের ওপর। অনিমেষ হাত বাড়িয়ে ধরল ।
এখন অধিকাংশ পেসেন্টকেই বলা আছে, ছোটো খাটো অসুবিধে হলে ফোন করতে। তাই বাড়ির সবচেয়ে বাজে ফোনটা ইদানিং একটু বেশীই বাজে।
— ডাক্তারবাবু, ‘মাদার্স হরলিক্স’ পাচ্ছি না কি করব?
— আমি তো প্রেসক্রাইব করি নি।
— তা করেন নি, কিন্তু মাস দুয়েক আগে আপনাকে দেখিয়েছিলাম। এখন তো প্রায় ছ’মাস। ওটা না খেলে চলবে?
— প্রেসক্রিপসনের ওষুধগুলো খাচ্ছেন?
— সে তো শুধু আয়রন আর ক্যালসিয়াম।
— ওগুলোই খান। ফোন কাটল অনিমেষ। যেটা বলার ইচ্ছে হলেও বলতে পারল না, আপনিও একটা ফাদার্স হরলিক্স পেলে খেতে শুরু করুন।
আজকাল অনিমেষ বুঝতে পারে একটুতেই কেমন অধৈর্য হয়ে যাচ্ছে।
আবার মুঠো-ফোন হাতের মুঠোয় কেঁপে কেঁপে উঠছে। — ডাঃ চ্যাটার্জি, আপনি রুগী দেখছেন?
—- হ্যাঁ মা, এখনও দেখছি।
সেই ছোটবেলায় স্যারের কথা ,– মনে রাখিস, স্ত্রী-রোগ চিকিৎসকের কাছে সবার স্ত্রীই তোর মা।
তা সেই মা রিনরিনে গলায় বলে উঠলেন, আমি না ডাক্তার মন্ডলকে দেখাই। কিন্তু ওখানে না ভীষণ ভীড়। সকালে গেলে সেই দুপুরে ডাক পাই। এই সময়ে অতো ভীড়ে কি যাওয়া ভালো! আপনিই বলুন।
কি বলবে অনিমেষ? শুনে যাচ্ছে।
— আমায় একজন বলল, আপনার চেম্বারে একদম ভীড় নেই। একজন দুজন পেসেন্ট। তাই ভাবলাম এ মাসটা আপনার কাছেই দেখিয়ে নিই।
অনিমেষের এই ফোনটারও বয়েস হয়েছে। একটু-তেই চার্জ পড়ে যায়। আবার চার্জে বসাতে হবে।
—- আমি নমিতা বলছি স্যার। দু-দিন ধরে খুব বমিভাব।
— তোমাকে তো এর জন্যে ওষুধ লিখেছি, খাচ্ছ তো?
— আপনি স্যার ও’র সঙ্গে একটু কথা বলুন। ফোন হস্তান্তর বোঝা গেল।
— না স্যার, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন এ সময় কোনো ওষুধ আমি খাওয়াচ্ছি না। আর এটা স্যার একটু গ্যাস হয়েছে মনে হচ্ছে, একটা প্যান ফর্টি মেরে দিলে ঠিক হয়ে যাবে কি বলেন?
অনিমেষ ফোনের সুইচ অফ করল। ডায়াগনসিস, ট্রিটমেন্ট সবই হয়ে গেছে, শুধু অনুমোদনটুকু চাই।
ফোনের চার্জের একটা দাগ টিমটিম করছে।অনিমেষ ঠিক করল, আজ আর চার্জে বসাবে না।তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়াই ভালো।
এক দাগের ফোনও আবার নড়ে উঠল। বিরক্ত অনিমেষ হাত বাড়িয়ে ফোন তুলল,
–ডাক্তারবাবু, আমাকে হয়তো আপনার মনে নেই। একবছর আগে আপনার কাছে আমার মেয়ে হয়েছিল। আপনি কেমন আছেন স্যার? খুব সাবধানে থাকবেন।
—তুমি কি শুধু এই খবর জানার জন্য ফোন করলে।
— হ্যাঁ, ডাক্তারবাবু, ক’দিন ধরেই ভাবছিলাম আপনার একটা খবর নিই। আজ ফোনটা করেই ফেললাম। আপনি ভালো থাকুন। আমাদের জন্য ভালো থাকুন।
অনিমেষ উঠে ফোনটা আবার চার্জে দিল। এখন চার্জড থাকতেই হবে।