ক্যারাম কাকুর ভালোনাম কিছু একটা ছিল| আমার মনে নেই| ক্যারাম কাকুই বলতাম আমরা| তখন ডাক্তারী পড়ছি| শনিবার বাড়ি এলে সোমবার খুব ভোরে কলকাতা ফিরতাম| সে ছিল আমার অ্যালার্ম ঘড়ি| ঠিক পাঁচটায় এসে জাগিয়ে দিত| তারপর একসাথে চা খেয়ে বেরিয়ে পড়তাম পাঁচটা চল্লিশের শান্তিপুর ধরতে| কোনোদিন নড়চড় হয়নি একটুও|
ক্যারাম কাকু আর নেই| করোনার থাবা এসে তুলে নিয়ে গেছে না ফেরার দেশে|
তার সুগার ছিল| মাঝে মাঝে দু একটা স্যাম্পেল ওষুধ নিয়ে যেত| খুব লাজুক আর শান্ত ছিল| কোনোদিন মুখফুটে চাইতো না কিছু|
কিছুদিন আগে এলো জ্বর এলো| কভিড রিপোর্ট পসিটিভ এলে ভর্তি হলো কল্যাণীতে| হঠাৎ শুনলাম নেই|
দারুণ অসহায় লাগে এইসব হুটহাট চলে যাওয়া দেখতে| দিন আনি দিনখাই এইসব মানুষগুলো হঠাৎ করে এসে পড়া দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপদগ্রস্ত খুবই| টেস্ট করতে গেলে লাইন| লাইন দিয়ে টেস্ট না করতে পেরে ফিরে আসা|
স্যাচুরেশন মাপার মেশিন অনেক দূরের বস্তু| বারে বারে এসে বলছে জ্বর সারছে না| ভর্তি হতে পারছে না| রুটি রুজি বন্ধ|
একজন এলো জ্বর| নাকে গন্ধ পাচ্ছে না| টেস্ট করানোর লাইন দিয়ে ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি তিনদিন| আজ কাশি বেড়েছে| ইনহেলার কেনার পয়সা নেই| স্যাচুরেশন ৯৪%| টেস্ট হয়নি| করোনা ওয়ার্ড এ ভর্তি কিভাবে হবে| অথচ হয়তো করোনাই এটা|
একের পর এক এরকম ভীড় এলে কিই বা করতে পারি| ভালো নেই| আশেপাশের পৃথিবীটা ছোট হয়ে যাচ্ছে রোজ| ক্যারাম কাকুরা যাঁরা এখনও পাতলা কাপড়ের মাস্ক আর সাবান জলের ভরসায় জীবন যুদ্ধ জারি রেখেছে, তাঁদের পেটের খিদে আর বাইরের বিপদ দুইই ঘাড়ের উপর|
ভয়ঙ্কর চাপে প্রায় ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে এই অসম লড়াইটাও জিততেই হবে| পাশে থাকুন|