একটি মজার ঘটনা বলি:
এক প্রেমিকা তার ডাক্তার প্রেমিককে বলেছিল – গভীর আবেগে উচ্ছসিত হয়ে আমার হৃদয় তোমার কাছে চলে গেছে। দেখে রাখো।
ডাক্তার প্রেমিক মজা করে রিপ্লাই দিল- তোমার যে বিরলতম রোগ হয়েছে গো! হার্টের এরকম হার্ণিয়া কিন্তু খতরনাক প্রাণঘাতী।
যাকগে – মজা ছেড়ে বাস্তবে আসি। সত্যিই হার্টেরও হার্ণিয়া হতে পারে। প্রেমে পড়ে হয় কিনা এখনো জানি না ?, তবে পেরিকার্ডিয়াম নামক যে ব্যাগের মধ্যে হার্ট থাকে, সেটির জন্মগত ত্রুটি বা কোন সার্জারি বা ইনজুরির পর হার্টের হার্ণিয়া হতে পারে।
শুধু প্রেমে পড়ে হোক, আর কোন কারণে না হোক সেটাই চাই। কারণ- তাহলে টুপ করে পটল তোলার জন্য পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হতে পারে!! অসময়ে … হার্ণিয়ার মতোই!
একটি কমেন্ট লিখতে গিয়ে মনে হলো লিখেই ফেলি। যে যার মত করে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা দিলে ব্যাপারটা সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তার উপর ব্যাক্তিগত মতকে বিজ্ঞান বলে চালানোর একটি ভয়ঙ্কর প্রবণতা অনেকেরই রয়েছে এই গ্রুপে বা সমাজে। যেটি আসলে চরম ক্ষতিকর।
সাধারণ অর্থে- হার্ণিয়ার সংজ্ঞা হলো একটি অর্গানের নিজস্ব অ্যানাটমিকাল পজিশন থেকে দুর্বলতম কোন জায়গা দিয়ে ঠেলে অন্য পজিশনে চলে যাওয়া।
আর এই কারণেই হার্ণিয়া শুধুমাত্র কুঁচকিতে হয় না! যে কোন জায়গায় হতে পারে! যে কোন অর্গানের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য।
এমনকি ব্রেন, ফুসফুস কিংবা মাংসপেশীতেও।
এবার এই দুর্বলতম জায়গা আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ সবল মানুষের ক্ষেত্রে থাকতে পারে না, এটা পুরোপুরি ভুল ধারণা। আর বয়স্ক এবং অন্য অসংখ্য কারণে অসুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে যেমন, এইরকম আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ সবল মানুষের ক্ষেত্রেও – হার্ণিয়া (বিশেষতঃ অ্যাবডোমিনাল হার্ণিয়া)-র একটি বড় কারণ হলো হাঁচি কাশি কনস্টিপেশন বা বেশি ওজন তোলার মত রিপিটেড স্ট্রেন।
ওয়েট লিফটিং অ্যাথলিটরা কোমরে বেল্ট পড়ে নেয় কেন দেখেছেন?? বড় কারণ হলো- হার্ণিয়ার ভয়ে!!
পায়ের মাংসপেশীর এক ধরনের হার্ণিয়া হয়, যেটা একদমই হঠাৎ এবং সুস্থ সবল মানুষের ক্ষেত্রে হতে পারে। অবশ্যই কুঁচকির হার্ণিয়াই সবচেয়ে বেশি হয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে বয়স ভেদে কারণ আলাদা।
ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটির কারণ- জন্মগত। কিন্তু বড়দের ক্ষেত্রে খানিকটা মাংসপেশীর দুর্বলতা আর রিপিটেটিভ স্ট্রেনই হলো মূল কারণ। এমনকি কাটা জায়গা থেকে যে হার্ণিয়া হয়, সেটার কারণও একই- পেটে বেড়ে যাওয়া চাপ।
আরো একটি হার্ণিয়া হয় আমাদের শরীরের মিডলাইন বরাবর। সেটির বড় কারণই হলো স্ট্রেন!
এছাড়াও যত রকমের হার্ণিয়া হয়, সবার ক্ষেত্রেই বেড়ে যাওয়া চাপই বড় ফ্যাক্টর।
আরেকটি উদাহরণ দিই: ফুসফুসের হার্ণিয়া- যাদের বহুদিন ধরে কাশি থাকে, অথচ দেখতে সুস্থ সবল- তাদের ক্ষেত্রে হতে পারে।
মাথায় রক্ত জমে বা কোন টিউমার বা অন্য কোন কারণে চাপ বেড়ে গেলে- ব্রেনের বিভিন্ন ধরনের হার্ণিয়া হয়। কোন কোনটা প্রাণঘাতী। হঠাৎ মাথায় রক্ত জমে যে সব মানুষ মারা যান, তাঁদের ক্ষেত্রে মূল কারণই হলো ব্রেনের হার্ণিয়া হবার সময় আমাদের ব্রেন স্টেমের উপর পড়া চাপ।
অতএব, না জেনে না দেখে নিজের মতামতকে এনাটমির জ্ঞান বলে চালাবেন না, মানুষ ভুল ধারণা করে ফেলবে।
এমব্রায়োলজিকাল সমস্যা থেকে শুরু করে জন্মের পর উদ্ভুত নানা কারণে হার্ণিয়া হয়। ধরে ধরে প্রত্যেকটি হার্ণিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা সাধারণের বোধগম্য হবে না বলেই এড়িয়ে গেলাম।
আরেকটি ছোট্ট মজার গল্প বলে শেষ করি। আজকাল অনেক রাজনৈতিক নেতারাই নিজের অবস্থানে চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে যখন তখন অন্য দলে চলে যান। এটাকেও কিন্তু হার্ণিয়া বলা চলে!! ??