ইমারজেন্সি রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে যেতে গিয়ে দেখি রুগীদের অপেক্ষা করার চেয়ারে তিনজন মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ বসে। একজন দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে মুখ হাঁ করে ঘুমোচ্ছে। বাকি দুজন ঘামে পুরো স্নান করে আছে। আমাকে দেখে দুজন উঠে দাঁড়ালেও আর একজনকে কনুই দিয়ে গুঁতো মেরেও জাগাতে পারলো না।
আমি ওদের বসতে বলেই ঘরে ঢুকে বেল বাজিয়ে ওদের ভেতরে আসতে বললাম।
ভেতরের সিসিটিভি-তে দেখছি ওরা জামা গুঁজে নিচ্ছে, টাই ঠিক করছে।
একজন ঘরে ঢুকে গুড মর্নিং বলতেই বললাম বাকিদেরও ডেকে নাও।
তিনজন একসঙ্গেই ঘরে।
বসো।
এসি-টা আরো ঠাণ্ডা করে দিলাম।
বেল বাজিয়ে বললাম, ওদের জন্য একটু জল পাঠাও।
কেন Stay এই গরমে? আগেও বলেছি। এভাবে এই গরমের মধ্যে আসবে না। সব প্রোডাক্ট জানা। হিট স্ট্রোক হয়ে যাবে। বাইরে ৪৫ ডিগ্রি।
স্যর, এটাই আমাদের কাজ। ওসব ভেবে কি লাভ?
একজন জল নিয়ে ঢুকতে তাকে ওদের মধ্যে একজন বললো, দাদা এই জলের বোতল টা একটু ভরে দেবেন? আসলে এখানে ঢোকার আগে সিভিক পুলিশ দাঁড় করিয়েছিল বাইক।
ওকে দেখে মায়া লাগছিল। মুখটা শুকিয়ে কাঠ।
ওকে নিজের বোতলের জলটা খেতে দিয়েছিলাম।
টেবিলের উপর কয়েকটা ORS-এর প্যাকেট ছিল। বললাম নিয়ে নাও।বোতলে জলের সঙ্গে মিশিয়ে নাও।
জন হেনরি দেখিনি। শুনেছি তার সম্বন্ধে গান।
বাইরের বহু দরিদ্র দিনমজুর তবুও দেখেছি অনেক। কিন্তু তোমরা!!!
আমাদের অবস্থা ওদের থেকেও খারাপ স্যার। ওরা চাইলে একদিন নিজের ব্যবসা বন্ধ রাখে যারা নিজে গায়ে গতরে খাটে, আর যারা বাধ্য রোজ খাটতে তাদের আবার সুখী সুখী হাসি মুখ দেখাতে হয় না, তাই অন্তত একটু হলেও সহানুভূতি জোটে। আমাদের কিছুই নেই।
কিছু উত্তর ছিল না আমার।
ওদের বুকে মে দিবসের একটা করে ব্যাজ ছিল।