“ডাক্তার বাবু একটু emergency রুমে আসবেন। জরুরী দরকার।”
“Emergency doctor আছে তো?”
“আপনাকে দরকার বলেই তো ডাকছি। একটু আসুন।”
রুমের বাইরে বেশ অনেক লোক। পরিচিত সম্ভ্রান্ত মানুষজন। একটা মৃদু ফিসফাস চলছে “কি যে দিনকাল এলো, শেষ পর্যন্ত ইনিও মাল খেয়ে বেহুঁশ….!!!”
সব কিছুই কিরকম চাপা চাপা, মৃদু ভাবে।
Emergency রুমে ঢুকে দেখলেন এক মহিলা প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় শুয়ে। হাতে মাথায় বিভিন্ন চোট আঘাতের ছাপ।মহিলাকে খুব ভালো করে চেনেন উনি। খুব শান্ত, ভদ্র, নম্র। স্বামীর সঙ্গে খুব যে ভালো বনিবনা হয় মনে হয় না।উনি নিজেকে বিরাট কিছু ভাবেন। মাঝে মধ্যেই মহিলা এসে নিজের হতাশা দুঃখের কথা বলে যান।
“কেসটা কি?”
Emergency doctor কানের সামনে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে “বাড়ির লোক বলছে মদ খেয়ে আউট হয়ে পড়ে গেছে।” মাতাল হলে যা যা হয় অর্থাৎ অ্যালকোহল intoxication-এর সব রকমের সিম্পটম ও নিজেও পেয়েছে। ও নিজেও বলছে মুখের গন্ধ আটকাতে উগ্র পান মশলা খাওয়া। ওর বিশ্বাস এখনই যদি রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা মাপা হয় প্রমাণ হয়ে যাবে।
কিছু না বলে এমএস মহিলার কাছে যেতেই মহিলা ইশারা করেন সবাইকে বাইরে বেরিয়ে যেতে। শুধু যেন এমএস থাকে।
স্বামী বেরোতে রাজি হন না।
এমএস একজন তাঁর বিশ্বস্ত নার্সকে সাক্ষী রেখে স্বামীকে বেরিয়ে যেতে বলেন।
স্বামী চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিলে এমএস কড়া ভাষায় উত্তর দেন-“ধরে নিন এটা মদ খাবার কেস নয়। পুলিশ ডাকতে পারি আমি। হয় বাইরে যান, নয়তো পুলিশ ডাকবো।”
“আপনি আমার পজিশন জানেন? জানেন কোম্পানির রুলস? কি করতে পারি আপনাকে?”
“যা করার পরে করবেন, বাইরে যান, নয়তো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দেব।”
ঘর ফাঁকা হতেই মহিলা জড়ানো গলায় চোখ জলে ভেজা, কিছুটা যন্ত্রণায় কিছুটা হয়তো সবটা শুনে কৃতজ্ঞতায়
বলে উঠলেন “আপনি তো আমার সব জানেন ডাক্তারবাবু। মদের গন্ধ আমি সহ্য করতে পারি না। তাই পার্টিও যাই না। আমার মাথা ঘোরে ওই গন্ধে। আমি মদ খাই নি ডাক্তারবাবু।”
এমএস শুধু জানতে চাইলেন “কখন থেকে এই রকম সিম্পটম শুরু হয়েছে আপনার?”
“দুপুরে খাবার পরে হালকা ঘুমিয়েছিলাম। বিকাল থেকে।”
“কি খেয়েছিলেন?”
“আজ একটু বেশি পরিমাণেই ভাত খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। আসলে এত গরম বলে পান্তা ভাত খেয়েছিলাম। তারপর এক গ্লাস আঙ্গুরের রস।”
“সারা গায়ে এই চোট আঘাতের দাগগুলো মোটেই টাল সামলে পড়ে যাবার মতো লাগছে না, সেটা কি করে হলো?
উনি ডিউটি শেষে ফিরলেন। আমার তখন পুরো মাতালের মতো অবস্থা। হাত পা টলছে, মাথা ঘুরছে, কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। উনি রোজ রাতে মদ্যপান করেন। ওনার তো খুব স্ট্রেস। অন্য ঘরে কাজ সেরে ঘুমোন। উনি নাকি বোতল দেখে বুঝতে পেরেছেন আমি মদ খেয়েছি।”
“প্যান্টের বেল্টটা…..”
“থাক আর বলতে হবে না।”
ইমারজেন্সি ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে “সামনে তো পোস্ট গ্রাজুয়েট এন্ট্রান্স। MCQ প্র্যাক্টিস চলছে জানি। বলোতো মদ না খেয়েও মাতালের মতো অবস্থা হতে পারে কোন রোগে?”
দীর্ঘ সময় নেওয়াতে এমএস বলে উঠলেন “Auto brewery syndrome. পড়ে নিস আজ। হ্যাঁ, তুই ঠিক ওর রক্তে এখন অ্যালকোহলের মাত্রা পাওয়া যাবে। মদ বা অ্যালকোহল হলো ইথানল। ABS হলে শরীরে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় কিছু খেলে, সুগার খেলে শরীর তার নিজস্ব পদ্ধতিতে ferment করে তাকে ইথানলে পরিণত করবে। গ্লুকোজ চ্যালেঞ্জ টেস্ট করে এটি নিশ্চিত হওয়া যায়।
লোকটা জানে ওর বউ মদ খায় না। কিন্তু ওদের বনিবনা নেই। মহিলাকে সবার সামনে অপদস্থ করাই ছিল ওর উদ্দেশ্য। কোথাও পাঠিয়েও কোনো লাভ নেই। ওর নেশা কেটে যাবে। বড়ো হাসপাতাল রক্তে অ্যালকোহল পেলে বাকিটা সত্যি ধরে নেবে।”
“তাহলে এই হারামী মালটাকে এমনি এমনি ছেড়ে দেব স্যার?”
“বউটাকে রাতে এখানে রেখে দে। সকালে ঠিক হয়ে যাবে। পরে কোনো বড়ো ডাক্তার দেখিয়ে নিতে বলিস।
আর ওই মালকে বলিস ‘আমরা কিন্তু সবটাই বুঝতে পেরেছি, সবটাই জানি। কি কি করতে পারি সেটা ভেবে রাখবেন কেমন….'”