যদি রাতের বেলা আপনার পেটে ব্যথা হয় তখন আপনি প্রথমেই যান আপনার এলাকার ডাক্তারের বাড়িতে। তার থেকে যদি বেশি কিছু হয় তখন কোনো বেসরকারি হাসপাতালে। আর সরকারি হাসপাতাল? না, না, সেখানে আবার ডাক্তার থাকে নাকি? তারা আবার কাজ জানে নাকি? ওগুলো চাষাভূষোদের জায়গা।
একটা হিস্টেরেক্টমি করাতে আপনি ₹৬৬,০০০ খরচা করে আত্মশ্লাঘা করেন। আপনার আনন্দের শেষ থাকে না যখন আপনি শোনেন রেল, বি পি সি এল বিক্রি হবে। ছেলেকে বেসরকারি স্কুলে পড়ানোর গর্বটাই আলাদা। কিন্তু এসবের সুদূরপ্রসারী প্রভাবের কথা আপনি ভাবেন নি।
হ্যাঁ আপনার অভিযোগ ভুল নয়। সরকারি হাসপাতালের বাথরুম থেকে ইউ টি আই এর সম্ভবনা প্রবল বললে কম বলা হয়। সরকারি কর্মচারীদের আঠারো মাসে বছরের গল্প সবার জানা। কিন্তু এর সমাধান বেসরকারিকরণ নয়। কেন নয় সেই অর্থনৈতিক কচকচানিতে যাব না। শুধু এই কঠোর বাস্তবের সম্মুখীন হয়ে যা উপলব্ধি করতে পারছি আমরা সবাই সেটাই বলি শুধু।
যখন করোনা ভাইরাসের দ্বারা পৃথিবী আক্রান্ত তখন আই এ এফ এবং অতি বিদ্বিষ্ট এয়ার ইন্ডিয়া মানুষকে আনতে ব্যস্ত। জৌলুসপূর্ণ ইন্ডিগো এয়ারলাইনস বা ভিস্তারার টিকিটিরও দেখা নেই। সেই বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে মানুষগুলোকে পরীক্ষা করতে ব্যস্ত কিছু সরকারি চাকর। হ্যাঁ চাকুরে নয়, চাকর মানে গভর্নমেন্ট সার্ভেন্ট। আইসোলেশন সেন্টারের দায়িত্ব দেশের জওয়ান আর সরকারি ডাক্তারদের ওপর। সেখানে দিনের আলোয় চার ব্যাটারির টর্চ জ্বেলে খুঁজলেও অ্যাপোলো, মেদান্ত বা রেড্ডিদের পাওয়া যাবে না।
আরো একদলকে আপনারা আজ পাবেন না আপনাদের পাশে। তারা হলো ধর্মের ধ্বজাধারীরা। আজ আপনার পাশে নেই জাতের নামে বজ্জাতি করা জাত জলিয়াতেরা। একেবারে যে নেই তাই বা বলি কিভাবে। এখন আমাজনে গোমূত্র রমরমিয়ে বিক্রি হয়। দুফোঁটা খালি পেটে সেবন করলেই করোনার চোদ্দো পুরুষ উদ্ধার হয়ে যাবে। আজ সমস্ত মন্দিরের দরজা বন্ধ, গির্জার ধ্বনি স্তব্ধ, আজানের শব্দ নেই। আছে শুধু কাশির শব্দ , আছে পৃথিবী জুড়ে হাহাকারের শব্দ আর আছে নীরবে কাজ করে যাওয়া কিছু ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী এবং সরকারি কর্মচারীদের পরিবারের মানুষের বুক ধড়ফড়ানির শব্দ। আজও আমার বাবা রেলের ওয়ার্কশপে যাচ্ছে। আজও আমার দাদা দিদিরা রুগী দেখে চলেছে , আজও কিছু স্বাস্থ্যকর্মী মাস্ক পরে বা না পরে কাজ করছে। কারণ শত শত সাম্রাজ্যের ভগ্নশেষ পরে ওরা কাজ করে।
আর আপনাদের প্রিয়তম প্রাইভেট সেক্টরের ভূমিকা এখানে ঠিক কি রকম? তারা কি পরিস্থিতির মোকাবিলায় সামনে এগিয়ে এসেছে? কোন বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা এগিয়ে এসেছে? কোন কর্পোরেট তার ডাক্তারদের ওপর জরুরি অবস্থার ভার তুলে দিয়েছে? তারা কোন কোয়ারান্টাইন সেন্টার চালু করেছে?
সরকারি সংস্থা কাজ না করলে তার সমাধান বেসরকারিকরণ নয়, তার সমাধান সেগুলোকে কাজ করানো। সরকারি হাসপাতালে কেন সেবা পাওয়া যাবে না তা প্রশ্ন করুন, দাবি করুন, প্রয়োজনে আন্দোলন করুন, কিন্তু সেগুলোকে ধীরে ধীরে কর্পোরেটের হাতে তুলে দিয়ে নিজেদের সমূহ বিপদ ডেকে আনবেন না।
আজ করোনা প্রমাণ করে দিল কেন স্বাস্থ্য মানুষের মৌলিক অধিকার হওয়া উচিৎ। কেন সবার জন্য স্বাস্থ্যের দাবি আরো জোরদার হওয়া উচিৎ।
অসাধারণ বক্তব্য ॥ মানব সভ্যতার এক বিশেষ সন্ধিক্ষণে বিজ্ঞানের অবিরত চর্চা চলছে জীবন কে বাঁচাবার স্বার্থে , সঙ্গে কিছু মানুষ নিজ জীবন কে বাজি রেখে কাজ করে চলেছে ॥ পৃথিবী আগামী দিনে ঐ সমাজ সভ্যতার অনিবার্য সমাজতান্ত্রিক রূপ কেই গ্রহণ করবে ॥ এই মানুষ গুলিকে কুর্নীশ !