ডায়াবেটিস বিশেষ করে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে অনেক সময় রোগ ধরা পরে দেরিতে। রোগীর তেমন কোনো সমস্যা থাকে না। যেমন- বারবার প্রস্রাব করা, ওজন হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি। অন্যকোনো কারণে রক্ত পরীক্ষা করতে গিয়ে হঠাৎ করে ডায়বেটিস ধরা পরে।
এখন মূল প্রশ্ন হল যখন রোগীর কোনো সমস্যা হয়না, তখন আমরা রোগীর ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করব কেন?
তার প্রধান কারণ ডায়াবেটিস হলো নিঃশব্দ ঘাতক। ডায়াবেটিসকে যদি অনিয়ন্ত্রিত ছেড়ে দেওয়া হয়, সে নিঃশব্দে দেহের বিভিন্ন অংগ প্রত্যংগের ক্ষতি করে। এবং অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর এই সব ক্ষতি হয়ে যাওয়ার পরে ডায়াবেটিস ধরা পরে।
মনে রাখতে হবে এই সব ক্ষতি গুলির বেশিরভাগ অপরিবর্তনীয় বা irreversible। একবার ক্ষতি হওয়ার পর হাজার চিকিৎসা করলেও ক্ষতিগ্রস্ত অংগ আর পুরোপুরি ঠিক হবে না।
সে কারণেই ডায়াবেটিস একদম প্রথম অবস্থায় ধরা এত জরুরি। প্রথম থেকে ডায়াবেটিস আয়ত্তে রাখলে এই ক্ষতি হওয়ায় সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। যার পরিবারে ডায়াবেটিসের রোগী আছে, তার ত্রিশ বছরের পর প্রতি দুই বছরে অন্তত একবার রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করা উচিৎ।
এখন ডায়াবেটিস থেকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কি ক্ষতি হয়, দেখে নেওয়া যাক।
১. চোখঃ
• রেটিনোপ্যাথি
• ম্যাকুলার ইডিমা
• ছানি বা ক্যাটারাক্ট
• গ্লুকোমা
এর ফলে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে পারে। এমনকি হঠাৎ করে একজন অন্ধ হয়ে যেতে পারেন।
২. স্নায়ুতন্ত্রঃ
• সেনসরি নিউরোপ্যাথি= হাত পা ঝিন ঝিন করে, সাড় চলে যায়।
• মোটর নিউরোপ্যাথি= হাত পায়ের জোর কমে যায়।
• অটোনমিক নিউরোপ্যাথি= নানা রকম পেটের সমস্যা হয়। রক্তচাপ হঠাৎ করে বাড়া কমা হয়। ইত্যাদি।
৩. হৃদপিণ্ডঃ হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা ২ থেকে ৪ গুণ বেড়ে যায়।
৪. স্ট্রোকঃ ডায়াবেটিসে স্ট্রোকের সম্ভাবনাও ২ থেকে ৪ গুণ বেড়ে যায়।
এছাড়াও যে অঙ্গসমূহের ক্ষতি হতে পারে
৫.পরিপাকতন্ত্রঃ বদহজম, ডাইরিয়া।
৬.যৌনাঙ্গঃ যৌন ক্ষমতা হ্রাস পায়।
৭.ত্বকঃ নানা রকমের সংক্রমণ ও অন্যান্য আরো সমস্যা হয়।
৮. সংক্রমণঃ পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন অংগে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাংগাসের সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের যক্ষা অনেক বেশি হয়।
৯.দাঁতের সমস্যা।
১০.শ্রবণশক্তি কমে যায়।
এছাড়াও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে দুটি তাতক্ষণিক ক্ষতি হতে পারে। ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস (টাইপ ১) ও হাইপার অসমোলার কোমা(টাইপ ২)।
পরবর্তী কয়েকটি পর্বে এই সব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।