২০১৫ সাল। চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জিতলেন চিনদেশের এক বিজ্ঞানী। মহিলা বিজ্ঞানী। চিনদেশের প্রথম বিজ্ঞানী, যিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হলেন। কে? তিনি কে, সে বিষয়ে যাওয়ার আগে তিনি কী কী নন, সেটুকু বলে নেওয়া যাক, কেননা, নোবেল জয়ের পর তাঁর রাতারাতি খ্যাতির সাথে সাথে ভেসে উঠেছিল একটি শব্দবন্ধ – প্রফেসর উইথ থ্রি “নো”জ।
১. ইনি এমন একজন প্রফেসর, যিনি দীর্ঘদিন গবেষণার সাথে যুক্ত থাকলেও যাঁর নিজের কোনো ডক্টরেট ডিগ্রী নেই।
২. যিনি কখনোই পশ্চিমদেশের কোনো বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন নি। তাঁর লেখাপড়া বা গবেষণার পুরোটাই তাঁর নিজের দেশের মাটিতে।
৩. বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা যেমন করে দেশবিদেশের ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমির সাম্মানিক সদস্য হয়ে থাকেন, এঁর বরাতে তেমন কিছুই জোটেনি। চিনের একাধিক বিজ্ঞান পরিষদের একটিরও তিনি সাম্মানিক সদস্য নন।
তাঁর নাম, তু ইউইউ। ম্যালেরিয়ার ওষুধ আর্টেমিসিনিন আবিষ্কারের কারণেই তাঁর এই পুরস্কার। কিন্তু, ওষুধ আবিষ্কার, নাকি পুরোনো ইতিহাস ঘেঁটে ওষুধের পুনরুদ্ধার?? পুরোটা জানতে হলে আমাদের একটু পিছিয়ে যেতে হবে।
তু-এর জন্ম ১৯৩০ সালে, তিরিশে ডিসেম্বর। ছেলেবেলায় টিবি-তে আক্রান্ত হওয়ার কারণে লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটে। পরবর্তীতে বেইজিং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ফার্মাসি থেকে ফার্মাসি পাস করেন। পড়াশোনা এবং গবেষণার কাজ এগোতে থাকেন চায়না অ্যাকাডেমি অফ চাইনিজ ট্র্যাডিশনাল মেডিকেল সায়েন্সে। তাঁর মুখ্য গবেষণার বিষয় ছিল চিনদেশের প্রথাগত চিকিৎসাপদ্ধতির ভেষজ ওষুধপত্র। হ্যাঁ, আমাদের দেশের সাথে চিনদেশের একটা বেসিক ফারাক রয়েছে। সেখানে তাঁদের পুরোনো সনাতন পদ্ধতিগুলো নিয়ে রীতিমতো অ্যাকাডেমিক গবেষণা চলে – চিকিৎসার উপাদান প্রচলিত প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতির অন্তর্গত হলেও, সে বিষয়ে গবেষণা কখনোই সনাতন পদ্ধতির অনুসারী নয়। অর্থাৎ প্রাচীন প্রচলিত চিকিৎসার উপাদান খুঁটিয়ে যাচাই করে নেওয়া হয় আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের কষ্টিপাথরে।
ফার্মাসি পাস করে তু যোগ দিলেন গবেষণায়। শিস্টোসোমা একপ্রকার কৃমি, যা সংক্রমণ ঘটায় ক্ষুদ্রান্ত্র এবং মূত্রথলিতে। শুনতে কৃমি হলেও অসুখটা জটিল। সে সময়, অর্থাৎ গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে এর খুব কার্যকরী চিকিৎসা চিনদেশে ছিল না। তু ইউইউ এই অসুখের প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতিকে নতুন করে প্রয়োগ করা যায় কিনা, সে নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন।
এদিকে, ষাটের দশকের দ্বিতীয়ার্দ্ধে, শুরু হল ভিয়েতনাম যুদ্ধ। জলাজঙ্গলের মধ্যে গেরিলা যুদ্ধে মস্ত সমস্যা হিসেবে দেখা দিল ম্যালেরিয়া। এমন ম্যালেরিয়া, যা কিনা প্রচলিত ক্লোরোকুইনে সারতে চায় না। পরিস্থিতি এমন, যত মানুষ যুদ্ধে মারা যাচ্ছে, ম্যালেরিয়ায় তার চাইতে কম নয়। বিশ্বের মহাশক্তির বিরুদ্ধে এক গরীব দেশের যুদ্ধে, অসুখবিসুখে এমন করে প্রাণহানি ঘটতে থাকলে, সমরাস্ত্রের অসাম্য অতিক্রম করতে পারলেও, শেষমেশ যুদ্ধটা একেবারেই একপেশে হয়ে দাঁড়ায়। বাধ্য হয়ে হো চি মিন কথা বললেন চিনের তৎকালীন প্রিমিয়ার (প্রধানমন্ত্রীর সমতুল্য) ঝাউ এনলাই-এর সাথে। যদি প্রথাগত চৈনিক ভেষজ ওষুধের কেতাবে এ রোগের কোনো দাওয়াই থাকে…!! ঝাউ এনলাই আলোচনা করলেন মাও সে তুং-এর সাথে। শুরু হলো ওষুধ খোঁজার এক গোপন প্রকল্প। নাম প্রোজেক্ট ৫২৩ – উনিশশো সাতষট্টি সালের মে মাসের তেইশ তারিখ প্রোজেক্টের সূচনা – মাস আর তারিখ মিলিয়ে প্রোজেক্টের নামকরণ। প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতি ছেঁকে ওষুধ পুনরাবিষ্কারের ক্ষেত্রে তু ইউইউ আগেই কিছু কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। ১৯৬৯ সালে, প্রোজেক্ট ৫২৩-এর ভার সঁপে দেওয়া হলো তাঁরই হাতে।
এর আগে অব্দি, ম্যালেরিয়ার ওষুধ খুঁজতে বিজ্ঞানীরা দু’লক্ষ-এরও বেশী গাছগাছালি খুঁজে দেখেছিলেন – সিঙ্কোনা গাছ থেকে কুইনিন পাওয়ার পরে সাফল্য কিছুই আসেনি। দায়িত্ব পাওয়ার পরেই তু গেলেন ভিয়েতনাম। খুঁটিয়ে দেখলেন আক্রান্ত মানুষজনের উপসর্গ। ফিরে এসে নিজেকে ডুবিয়ে দিলেন প্রাচীন পুঁথিপত্রে, যাতে লেখা রয়েছে হাজারো অসুখ-বিসুখের প্রথাগত চিকিৎসাপদ্ধতি। মাথায় রাখা যাক, প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতির এমন বইপত্র হীরের খনি হতেই পারে। কিন্তু, হীরের খনি মানে হীরের দোকান নয় – খনিতে হাজার অকাজের প্রস্তরখণ্ডের মধ্যে লুকিয়ে থাকলেও থাকতে পারে এক-আধটি হীরে। সেই ছানবিন করে হীরে বের করে আনার কাজটি সহজ নয়। শুধু কি বই, প্রচলিত সনাতন চিকিৎসাবিদ্যার অনেকটাই প্রবাহিত হয় বংশপরম্পরায়, মুখে মুখে। তু ইউইউ দৌড়ালেন চিনদেশের বিভিন্ন প্রান্তে, আলোচনা করলেন বিভিন্নধরনের প্রাচীন পরম্পরাভিত্তিক চিকিৎসাপদ্ধতিতে যাঁরা সিদ্ধহস্ত, এমন চিকিৎসকদের সাথে। বছরদুয়েকের মধ্যে প্রায় হাজারদুয়েক গাছগাছড়া ঘেঁটে দেখা হয়ে গেল।
আশার আলো দেখা গেল মাত্র একটি গাছ নিয়ে। বৈজ্ঞানিক নাম Artemisia annua – সন্ধান মিলল ষোলশ বছর প্রাচীন এক পুঁথিতে। ইন্টারমিটেন্ট ফিভার – অর্থাৎ যে জ্বর একটানা চলার জায়গায় মাঝেমধ্যে ছেড়ে যায় এবং ফিরে ফিরে আসে – দেখা গেল, এই বইয়ে তার চিকিৎসার জন্যে এই গাছটিকে বলা হয়েছে আপদকালীন ওষুধ, যেটা হাতে রাখা জরুরী। বেশ কথা। উৎসাহিত তু ইউইউ গাছ থেকে নির্যাস বের করে প্রয়োগ করার চেষ্টা করলেন। নির্যাস বের করার প্রথাগত প্রণালীই অনুসরণ করলেন – গরম জলে ফুটিয়ে বা ভিজিয়ে রেখে রস নিষ্কাষণ – কিন্তু, সে আরক প্রয়োগ করে কিছুই কাজ হলো না। না, ভেঙে পড়লেন না তিনি। আবারও ফিরে গেলেন প্রাচীন গ্রন্থে। হ্যাঁ, এবার বুঝলেন নিজের ভুল। গরম করায় ওষুধের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটিই বিনষ্ট হয়েছে। এবার শীতল দ্রাব্য ব্যবহার করে রস নিংড়ে নেওয়া হল, প্রয়োগ করা হল গবেষণাগারের ইঁদুরের দেহে। কার্যকারিতার প্রমাণ মিলল অবিলম্বে।
১৯৭২ সাল। তু ইউইউ এবং তাঁর সহযোগীরা প্রাচীন পুঁথির নির্দেশিকা অনুসরণ করে যে গাছের দিশা পেয়েছিলেন, সফল হলেন তার সক্রিয় উপাদানটিকে আলাদা করতে। নাম দিলেন চিংহাউসু – আমরা যাকে চিনি আর্টেমিসিনিন নামে। তু ইউইউ-রা গবেষণা করতে শুরু করলেন আর্টেমিসিনিন-এর রাসায়নিক প্রকৃতি, তার ফার্মাকোলজিকাল ধর্ম – আর্টেমিসিনিন-এর রসায়ন নিয়ে চর্চার মধ্যে দিয়ে বছরখানেকের মধ্যেই পাওয়া গেল ডাইহাইড্রো-আর্টেমিসিনিন। আর্টেমিসিনিন-এর চাইতে এই ডাইহাইড্রো-আর্টেমিসিনিন অধিক সক্রিয়, অধিক কার্যকরী এবং এই উপাদান ওষুধ হিসেবে প্রয়োগ করাও তুলনামূলকভাবে সহজ। তু ইউইউ এবং তাঁর সহযোগীদের এই আবিষ্কার, সংশয়াতীতভাবেই, গত শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আবিষ্কারের অন্যতম। এবং যে আবিষ্কারগুলি সবচেয়ে বেশী মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে, তাদের মধ্যে এই আর্টেমিসিনিন আবিষ্কার একেবারে প্রথম দিকেই স্থান পাবে।
যদিও ওষুধ খোঁজা একটি দলগত প্রয়াস, তবু সেই দলের নেত্রী হিসেবে তু ইউইউ-এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রচারের আলো এড়িয়ে চলা তু চিরকালই নেত্রী হিসেবে নিজের দায়িত্ব বিষয়ে সচেতন। আর্টেমিসিনিন-এর ক্লিনিকাল ট্রায়ালে প্রথম স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ওষুধ খাওয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, রিসার্চ টিমের প্রধান হিসেবে এটুকু দায়িত্ব তো আমার রয়েছেই।
সমাজতান্ত্রিক দেশে অবশ্য ব্যক্তির চাইতে দল বড়। ব্যক্তির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, স্বীকৃতি বা সম্মান দলের। আর তাছাড়া, যেহেতু প্রোজেক্ট ৫২৩ ছিল এক যুদ্ধকালীন প্রকল্প, কাজেই অল্পবিস্তর মিলিটারি গোপনীয়তা তার সাথে জড়িত। অতএব, আর্টেমিসিনিন আবিষ্কারের খবর যখন চিনদেশের জার্নালে প্রকাশিত হয়, তখন তাতে লেখক-গবেষক হিসেবে কারোরই নাম থাকে না। তার ক’বছর বাদে, ১৯৮২ সালে, নামজাদা জার্নাল ল্যানসেট-এ যখন আর্টেমিসিনিন বিষয়ে নিবন্ধ প্রকাশিত হয়, তখনও তু ইউইউ-এর নামটি অনুচ্চারিতই ছিল। অবশ্য, ঠিক তার আগের বছরই, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে আর্টেমিসিনিন বিষয়ক আলোচনার সময়, তু ইউইউ ছিলেন সেই দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তবু, বিশ্বজুড়ে এক সাড়াজাগানো আবিষ্কারের পেছনে যিনি, তাঁর নামটি সবাই ভুলেই গিয়েছিলেন। না, ঠিক ভুলে যাওয়া নয় – জানতে পারলে তবেই না ভুলে যাওয়ার প্রশ্ন!! তু ইউইউ-এর নাম তো কেউ জানতেই পারেনি।
নামটা অজানাই রয়ে যেত। হয়ত হারিয়েই যেত। বিশ্বজুড়ে কয়েক কোটি শিশুর প্রাণ বাঁচানো ওআরএস পাউডারের আবিষ্কর্তা ডাঃ দিলীপ মহলানবিশ আমাদের এই দেশের, এই রাজ্যের, এমনকি এই কলকাতা শহরের বাসিন্দা হলেও আমরা কজনই বা তাঁর নাম জানি!! কতটুকু স্বীকৃতি তাঁর বরাতে জুটেছে? তু ইউইউ-এর নামও এমন করেই হারিয়ে যেত বিস্মৃতির গভীরে। আর্টেমিসিনিন চিনদেশের আবিষ্কার, একথা সকলে জানলেও আবিষ্কারকের নাম কেউ জানতেন না।
তু ইউইউ-এর আবিষ্কারের পঁচিশ বছরেরও বেশী সময় বাদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ-এর দুই গবেষক খুঁজে বের করলেন আর্টেমিসিনিন-এর আবিষ্কারকের নাম। গবেষকদের নাম লুই মিলার এবং শিনঝুয়ান সু। সাংহাইয়ে সংক্রামক ব্যাধি বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে এসে তাঁরা চিনদেশীয় গবেষকদের কাছে জানতে চাইলেন আর্টেমিসিনিন-এর আবিষ্কারকের নাম। আশ্চর্য! সেখানেও কেউই তাঁর নাম জানে না!! মিলার আর সু হাল ছাড়ার পাত্র নন। সন্ধান জারি রইল। তাঁদের চাপাচাপিতেই চিনদেশে তাঁদের সতীর্থরা ঘাঁটা শুরু করলেন পুরোনো নথি – এমন সব নথি, যা কিনা এত বছর ধরে চাপা ছিল রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার ছাপসহ। শেষমেশ জানা গেল সেই মানুষটির নাম – তু ইউইউ।
লুই মিলারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এত হ্যাপা পুইয়ে আর্টেমিসিনিন-এর আবিষ্কারকের নাম জানতে চাইলেন কেন? উত্তরটি মনে রাখার মতো।
…পেরুর আদিবাসীরা কুইনিনের ব্যবহার জানত, যাদের থেকে জেনে নিয়ে ম্যালেরিয়ায় কুইনিন ব্যবহার করে জেস্যুইট খ্রিস্টান মিশনারিরা। ওষুধের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার সেটি। সেই আবিষ্কারকের নাম আর কোনোদিনই জানা যাবে না। আমি চাইনি, কুইনিনের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই আবিষ্কার, আর্টেমিসিনিন, তার আবিষ্কারকের নামটিও এমন করেই হারিয়ে যাক।…
তু ইউইউ-কে খুঁজে বের করার জন্যে মিলারদের এই লাগাতার প্রয়াসটুকুর জন্যেই আজ আমরা তাঁর নাম জানি। নামটি প্রকাশ্যে আসার পরেই, ২০১১ সালে, তু ইউইউ ভূষিত হন লাস্কের পুরস্কারে – চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মার্কিনদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার। তার চার বছর বাদে আসে নোবেল পুরস্কারও। সব পুরস্কারের মঞ্চেই তু একই কথা বারবার বলেন – এই আবিষ্কারের কৃতিত্ব তাঁর একার নয়, এ এক দলগত প্রয়াস। এবং এটি প্রকৃতপক্ষে কোনো নতুন আবিষ্কার নয়, এটি প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্র ঘেঁটে সেখানকার নিদানের প্রয়োগ বর্তমানের প্রেক্ষিতে।
হঠাৎ কেন তু ইউইউ-এর গল্প কেন বলতে বসলাম? তাঁর কথা এমনিতেও জানা দরকার। প্রথাগত অর্থে ডক্টরেট ডিগ্রী ছাড়াও কী অসীম অধ্যাবসায় থাকলে এমন আবিষ্কারের পথে চলা যায়, সেটা জানা প্রয়োজন। জানা প্রয়োজন, একজন মায়ের পক্ষে নিজের এক বছরের শিশুসন্তানকে একা ফেলে দিনের পর দিন গবেষণাগারে পড়ে থাকার জন্যে ঠিক কতখানি নিষ্ঠা জরুরী। জানা প্রয়োজন, বিজ্ঞানচর্চার জন্য কতখানি দায়বদ্ধতা জরুরী। এবং আমাকে দেখুন-এর এই সময়ে দাঁড়িয়ে, নিজেকে প্রচারের আড়ালে রেখে নিরন্তর কাজ করে চলার এমন উদাহরণ সবার সামনে রাখা জরুরী।
তাছাড়াও, দেশের প্রথাগত প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতি খুঁজে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রয়োগের ক্ষেত্রেও তু ইউইউ-এর কথাটুকু মনে রাখা দরকার। এদেশে যখন অতীত গৌরব পুনরুদ্ধারের নামে জগাখিচুড়ি চিকিৎসাব্যবস্থার পথে হাঁটার পরিকল্পনা চলছে, তখন তু ইউইউ নোবেল বক্তৃতায় যে কথাগুলো বলেছিলেন, বক্তৃতার অন্তত সেই অংশটুকু মনে গেঁথে নেওয়া জরুরী।
“Through inheriting, developing, exploring
and improving, we can discover new medicines beneficial to mankind.”
প্রতিটি শব্দ লক্ষ্য করুন। আমাদের প্রাচীন আয়ুর্বেদ অবশ্যই আমাদের গৌরবময় উত্তরাধিকার। দুশো বছরের ঔপনিবেশিক শাসন আমাদের সেই গৌরবের স্মৃতি ভুলিয়ে দিয়েছে, একইসাথে সেই চিকিৎসাপদ্ধতি বিষয়ে গবেষণা রুদ্ধ করে বিজ্ঞানটিকেই পিছিয়ে রেখেছে। সেই উত্তরাধিকার নিঃসন্দেহে নতুন করে পুনরুদ্ধার জরুরী – এক্সপ্লোর করা জরুরী।
কিন্তু, একইসাথে সমান জরুরী তাকে সমকালীন প্রেক্ষিতে প্রয়োগযোগ্য করা – তু ইউইউ-এর কথার দুটো শব্দ, ডেভেলপ করা এবং ইমপ্রুভ করা। য়িং ও ইয়াং তত্ত্বের ‘পরে নির্ভরশীল চৈনিক চিকিৎসাপদ্ধতিকে চোখ বুঁজে আঁকড়ে ধরেননি তিনি। সেই শাস্ত্র ছেনে তিনি তুলে এনেছেন ওষধি – তার সক্রিয় উপাদানটিকে বাকি বাড়তি উপাদান থেকে আলাদা করেছেন – তার কার্যকারিতা আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের নিয়ম মেনে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন – সক্রিয় উপাদানটির রাসায়নিক ধর্ম বিশ্লেষণ করে সমকালীন ফার্মাকোলজির পাতায় এনেছেন – আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানও একে কোন এক প্রাচীন প্রাচ্য পুঁথি অনুসারী চিকিৎসার গুলবাজি বলে উড়িয়ে দিতে পারেনি।
উল্টোপথে হাঁটতে চাইলে, পরীক্ষানিরীক্ষার শ্রমসাধ্য পথ এড়িয়ে স্রেফ অতীত গৌরবের উত্তরাধিকার বলে হাজার বছরের পুরনো চিকিৎসাকে বর্তমানে অপরিবর্তিত স্থাপনার প্রয়াস হলে, আদতে, প্রাচীন চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং দেশের বর্তমান বিজ্ঞান, উভয়েরই সম্মানহানি ঘটে।
অবশ্য তু ইউইউ-এর পথটি কঠিন। সেই পথ ধরে এগোতে হলে, অপরিসীম নিষ্ঠা ও অধ্যাবসায় জরুরী। কজনের আর সে পথে হাঁটার মেধা রয়েছে? অতএব, একবিংশ শতকে পৌঁছানোর শেষে, আমাদের জন্যে বরাদ্দ বলতে ওই গোময়-গোমূত্র – আর সেই অমোঘ উক্তি – “সবই ব্যাদে আছে”!! তাই না?
চমৎকার লেখা! আয়ুর্বেদে জাতীয়তাবাদ এবং আধুনিকীকরণের জিগির না থাকলে আবাদ করলে ফলতো সোনা।
সমৃদ্ধ হলাম। ধন্যবাদ ম
অসাধারণ ও সময়োপযোগী লেখা।
খুব ভালো লাগলো। বিশেষত আজকের এই রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে লেখাটি উপযোগী। আজ চীনের বিশ্ববাজারে এই রমরমা এমনি এমনি হয়নি। আসলে আমাদের সমাজ কখনো সেই ভেতর থেকে নাড়া পায়নি। আর সেই নাড়া দেওয়ার কোনো রাজনৈতিক প্রয়াস তো মেইনস্ট্রিম রাজনীতিতে নেই বা অদূর ভবিষ্যতে হবে বলে মনে হয়না। খুবি লজ্জার যে আমিও ডঃ দিলীপ মহালনবীশ এর নাম জানতাম না। এরকম আরো লেখা চাই।
Nice write up, please motivate Indian doctors to do proper research in Indian Ayurvedic treatment. Our Indian MBBS, MD, MS, DM doctors only know use of ready made Allopathy medicines, they don’t believe in Ayurvedic, Homeopathy, Naturopathic, Unani treatment. Now the world is changing so give primary focus in other form of Alternative medicines, apart from Allopathy. So my advise to all Allopathy doctors is pay respect to other alternative form of medicine doctors and support other medical field also, for a total and sustainable development. Jai Hind.