ম্যারি পাটনাম জ্যাকোবি। নিউ ইয়র্ক কলেজ অফ ফার্মাসি থেকে গ্র্যাজুয়েট হওয়া প্রথম মহিলা। ফিমেল মেডিকেল কলেজ অফ পেনসিলভেনিয়া থেকে MD ডিগ্রিলাভের বছর দুই পর পাড়ি দিলেন প্যারিস। লক্ষ্য প্যারিস ইউনিভার্সিটির Ecole De Medicine. চিকিৎসাশাস্ত্রের অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সেখানে মেয়েদের প্রবেশাধিকার ছিল না। ২ বছরের লড়াই ও বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বেঞ্জামিন বলের সহায়তায় ১৮৬৮এ প্রথম মহিলা হিসাবে ভরতি হলেন Ecole De Medicine-এ। ১৮৭১ এর জুলাইয়ে সেখান থেকে গ্র্যাজুয়েট হলেন।
প্যারি কমিউনের গড়ে ওঠা থেকে প্যারিসের রাস্তা রক্তে পিছল করে তার পরাজয়, চোখের সামনে দেখলেন জ্যাকোবি। ‘৭১ এর শেষে দেশে ফিরলেন। সঙ্গে নিয়ে ফিরলেন প্যারির থেকে উপহার পাওয়া দর্শনকে, যা প্রভাবিত করল তাঁর আগামী তিন দশকের কর্মকাণ্ডকে।
ল্যান্সেট পত্রিকার সম্পাদক রিচার্ড হর্টনের গত বছর ‘দ্য প্যারিস কমিউন অ্যাণ্ড দ্য বার্থ অব আমেরিকান মেডিসিন’ শীর্ষক লেখায় মেলে তার অসাধারণ বিবরণ – ‘In the extraordinary milieu, one of the most remarkable minds of 19th century medicine was formed.’
প্যারি কমিউনের পতন এবং তাঁর প্রগতিশীল বন্ধুবৃত্তের উপর অযথা আক্রমণ তাঁকে ব্যথিত করে তুললেও তিনি ভোলেননি প্যারির শিক্ষাকে।
‘The body has social and political, as well as biological dimensions’ তাঁর এই মতাদর্শকেই জ্যাকোবির সমসাময়িক সময়ের চিকিৎসকদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠার কারণ বলে মনে করেন তাঁর জীবনীকার কার্ল বিটেল।
প্যারিস থেকে USA-তে ফিরে তিনি আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রয়োগে ল্যাবরেটরি সায়েন্সের ভূমিকা, এই নিয়ে মূল বিতর্ক শুরু করেন এবং চিকিৎসাশাস্ত্রে experiment ও স্ট্যাটিস্টিক্সের প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা জোরেসোরে প্রতিষ্ঠা করেন।
জ্যাকোবি এই ধারণা গড়ে তোলার চেষ্টা করেন যে বিজ্ঞানের অগ্রগতি আর নারীসমাজের অগ্রগতি পরস্পরের হাত ধরাধরি করে চলে। চিকিৎসাশাস্ত্রে মেয়েদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে সদা সচেষ্ট ছিলেন তিনি। আর এই বিষয়ে এক অর্থে তাঁর পথপ্রদর্শক এলিজাবেথ ব্ল্যাকওয়েলের থেকে তাঁর মতামত ছিল ভিন্ন। ব্ল্যাকওয়েল চিকিৎসাশাস্ত্রে মেয়েদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির কারণ হিসাবে দেখিয়েছিলেন, মেয়েদের ‘নরম মন’ এর কারণে সেবাকার্যে তাদের সফলতার হিসাবনিকাশ ; জ্যাকোবি এই ধারণা ভেঙে দিয়ে বললেন চিকিৎসাশাস্ত্রে অংশগ্রহণে উদ্দেশ্যের নিরিখে ছেলেদের থেকে মেয়েদের উদ্দেশ্য ভিন্ন কিছু নয়।
১৮৯৪ সালে জ্যাকোবি লেখেন ‘Common Sense Applied to Women’s Suffrage’, পরবর্তীকালে আমেরিকায় মেয়েদের ভোটাধিকার আন্দোলনে এর ভূমিকা ছিল যথেষ্ট। ওই সালেই New York State Constitution-এ মেয়েদের ভোটাধিকারের দাবি বাতিল করে দেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে লড়াইকে অন্যতম উদ্দেশ্য করে গড়ে ওঠে ‘League For Political Education’. ৬ জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের মধ্যে জ্যাকোবি ছিলেন অন্যতম।
চিকিৎসাশাস্ত্রে তাঁর বহু অবদানের মধ্যে যুগান্তকারী ছিল Menstruation নিয়ে যাবতীয় পুরাতন বস্তাপচা চিন্তা চেতনাকে ধ্বংস করা। ঋতুকালে মেয়েরা বিশ্রামে না থাকলে তাদের বন্ধ্যাত্বের যে মিথ এতোদিন প্রচলিত ছিল, তাকে নস্যাৎ করলেন জ্যাকোবি। এ ছিল সেকালে এক বিপ্লবেরই সমান! আর এখানেই আমরা ফিরে যাব আবারও সেখানে, যেখান থেকে আমাদের গল্প শুরু হয়েছিল।
হর্টন যথার্থ উপসংহার টেনেছেন “The origins of her philosophy, a philosophy that provides the seed for an American renaissance today, lay in the blood spilt on the streets of Paris 150 years ago.”