ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসায় খাদ্য, ব্যায়াম ওষুধ পত্র তিনটিরই ভূমিকা অসীম। প্রথমে আমরা জেনে নেব ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য সম্পর্কে।
ডায়াবেটিসের খাদ্য নিয়ে আলোচনা করার আগে খাদ্যের দুটি জিনিস আমাদের জানা দরকার। বিভিন্ন খাদ্যের ক্যালোরি ও গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে কম ক্যালোরি যুক্ত খাবার এবং কম গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্সের খাবার উপকারি। এছাড়াও ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট জাতীয় খাবারের অনুপাত ঠিক রাখা প্রয়োজন। এই পর্বে আমরা বিভিন্ন খাদ্যের ক্যালোরি সম্পর্কে জানবো। তার সাথে এও জেনে নেব আমাদের দৈনন্দিন ক্যালরি চাহিদা কতটুকু।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহের ওজন অনেক সময়ই বেশি থাকে। ওজন কমানোর জন্য আমাদের দৈনন্দিন ক্যলরি চাহিদার থেকে অন্তত ৫০০ ক্যালোরি কম খেতে হবে। এতে প্রতি দু-সপ্তাহে প্রায় এক কেজি ওজন কমে।
দৈনন্দিন ক্যালরি চাহিদাঃ
মোটামুটি পরিশ্রম করেন এরকম মাঝ বয়সী মহিলার প্রতিদিন ক্যালরি চাহিদা ২০০০ ক্যালোরি।
পুরুষদের ক্ষেত্রে সেটা প্রায় ২৫০০ ক্যালরি।
এটা মনে রাখতে হবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ক্যালরির চাহিদা কমে।
ক্যালরি কিভাবে গ্রহণ করা উচিৎঃ
যেহেতু, খাদ্যের তাপ বা ক্যালরি দেহযন্ত্রকে সচল রাখে, দেহের কাজ করার শক্তি যোগায়, তাই কিভাবে ক্যালরি গ্রহণ করবেন, তা জানা ও বোঝা খুবই গুরুত্বপুর্ণ।
- একজন মানুষ দৈনিক কত ক্যালরি গ্রহণ করবেন, তা নির্ভর করে তার উচ্চতা, বয়স, লিঙ্গ, তিনি কত কর্মঠ, এবং তার শরীরের BMR, তিনি ওজন বাড়াতে, কমাতে, না ঠিক রাখতে চান, এবং তিনি ব্যায়ামের মাধ্যমে কত ক্যালরি বার্ন করেন, তার ওপর।
- তাই প্রতিদিন, প্রতি বেলা ক্যালরি মেপে খাবার খেতে হবে।
- ওজন ঠিক রাখতে বা কমাতে নিয়মিত কম ক্যালরির খাবার খেতে হবে। আর মাঝে মাঝে অল্প পরিমানে বেশি ক্যালরির খাবার খেলেও ক্ষতি নেই। তবে সেদিন একটু বেশি ব্যায়াম করা যেতে পারে। তাহলে, সেদিনের মোট ক্যালরির চাহিদার সমতা বজায় থাকবে।
- অধিক ক্যালরির খাবার খেলে, সেটা দিনের প্রথম ভাগে খেলে ভালো, কারণ, তাহলে তা সারাদিনের কাজের মাধ্যমে বার্ন হয়ে যাবে। রাতে যেহেতু কম কাজ করা হয়, তাই তা রাতে খেলে শরীরে ফ্যাট হিসাবে জমতে পারে।
- একবারে বেশি ক্যালরির খাবার না খেয়ে, বারে বারে ২০০ থেকে ৫০০ ক্যালরির খাবার খাওয়া ভালো, এতে একবারে বেশি ক্যালরি শরীরে ফ্যাট হিসাবে জমে যাবার ভয় থাকে না।
- অধিক ফাইবার যুক্ত খাবার, যেমন: শাক-সবজি, ফল, বিনস, বাদাম ইত্যাদি খেলে তা হজমেও সাহায্য করে। আর এগুলোর অন্যান্য উপকারিতা তো আছেই। এগুলোতে ক্যালরিও কম থাকে।
- একবেলা বেশি ক্যালরি খেলে অন্য বেলা চেষ্টা করা উচিত যাতে কম ক্যালরি খাওয়া হয়।
- অধিক ক্যালরি যুক্ত খাবারগুলো হচ্ছে: লাল মাংস (খাসির মাংস), মাখন, তেল, চর্বি, ফাস্ট ফুড, তেলে ভাজা খাবার, কেক, অধিকাংশ বিস্কিট, পনির, বাদাম, চকলেট, আইসক্রিম, ক্রিম, চিনি যুক্ত খাবার, বিরিয়ানি, ফ্রাইড রাইস, কোল্ড ড্রিংস ইত্যাদি।
- বেশি ক্যালরি হলেই যে সেটা খাওয়া যাবে না, তা কিন্তু নয়। কিছু বেশি ক্যালরির খাবার, যেমন: বাদাম, চকলেট, পিনাট বাটার, মধু, পনির অল্প পরিমানে খেলে এগুলোর উপকারিতাগুলো পাওয়া যায়।
বিভিন্ন খাবারের ক্যালোরির মানঃ (আনুমানিক)
সকালের খাবার | ||
সিদ্ধ ডিম | ১ | ৮০ ক্যালোরি |
ডিমের ওমলেট | ১ | ১২০ |
এক স্লাইস পাউরুটি | ১ | ৪৫ |
এক স্লাইস পাউরুটি + বাটার | ১ | ৯০ |
রুটি | ১ | ৬০ |
পরোটা | ১ | ১৫০ |
সবজি | ১ কাপ | ১৫০ |
লাঞ্চ/ ডিনার | ||
সাদাভাত | ১ কাপ | ১২০ |
ফ্রাইড রাইস | ১ কাপ | ১৫০ |
বিরিয়ানী | ১ কাপ | ২০০ |
ডাল | ১ কাপ | ১৫০ |
দই | ১ কাপ | ১০০ |
সবজির তরকারী | ১ কাপ | ১৫০ |
মাংস | ১ কাপ | ১৭৫ |
সালাদ | ১ কাপ | ১০০ |
কাটলেট | ১ | ৭৫ |
আচার | 1 tsp | ৩০ |
ফল | ১ টা | ১৫০(বিভিন্ন ফলের বিভিন্ন রকম) |
পানীয় | ||
দুধ চিনি ছাড়া লাল চা | ১ কাপ | ১০ |
দুধ চিনি সহ চা | ১ কাপ | ৪৫ |
চিনি চাড়া দুধ | ১ কাপ | ৬০ |
চিনি সহ দুধ | ১ কাপ | ৭৫ |
দুধ চিনি সহ হরলিক্স | ১ কাপ | ১২০ |
ফ্রুট জুস কন্সেট্রেটেড | ১ কাপ | ১২০ |
কোমল পানীয় | ১ বতল | ৯০ |
বিবিধ | ||
জ্যাম | ১ চা চামচ | ৩০ |
বাটার | ১ চা চামচ | ৫০ |
ঘি | ১ চা চামচ | ৫০ |
চিনি | ১ চা চামচ | ৩০ |
বিস্কুট | ১ | ৩০ |
ভাজা বাদাম | ১ কাপ | ৩০০ |
পুডিং | ১ কাপ | ২০০ |
আইস ক্রিম | ১ কাপ | ২০০ |
সিংগাড়া | ১ টি | ১২০ |
ভেলপুরি/পানিপুরি | ১ টি | ১৫০ |
মিষ্টি | ১ টি | ১৫০ |
আলুভাজা | ১ কাপ | ২০০ |
স্যান্ডউইচ | ১ টি | ২৫০ |
চিকেন ফ্রাই | ১ পিস | ২০০ |
চাইনিজ নুডুলস | ১ প্লেট | ৪৫০ |
চাইনিজ ফ্রাইড রাইস | ১ প্লেট | ৪৫০ |
পিৎজা | ১ প্লেট | ৪০০ |
বিভিন্ন ফল আর diabetes উপর তার প্রভাব এই বিষয় টির উল্লেখ থাকলে আরো ভালো হতো। খুব ভালো তথ্য সমৃদ্ধ লেখা।