হাইপারটেনশন ও স্ট্রোক
স্ট্রোক হলো হৃদরোগের পরেই হাইপারটেনশনের রোগীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ। প্রতিবছর পৃথিবীতে অন্তত ৫০ লক্ষ মানুষ স্ট্রোকের ফলে মারা যান। এবং প্রায় দুই কোটি মানুষের প্রতি বছর স্ট্রোক হয়। যাদের অনেকেই বাকি জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যান। দুঃখের বিষয় এই বিপুল সংখ্যক স্ট্রোকের অধিকাংশই অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপের জন্য। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে যাদের অধিকাংশই প্রতিরোধ করা যেত।
এই প্রসঙ্গে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলার লোভ সামলাতে পারছি না। একটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক হিসাবে থাকাইকালীন ১২৮ জন স্ট্রোকের রোগীর বেশ কিছু তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। দেখা গেছিল, এনাদের মধ্যে ১১৪ জনের রক্তচাপ ভর্তির সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল। ৩২ জন রোগী ওষুধ খেতে খেতে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কেউ কয়েক মাসের জন্য, কেউ আবার কয়েক দিনের জন্য। ২৭ জন জানতেনই না তাঁদের হাইপারটেনশন আছে। এর থেকেই বোঝা যায় রক্তচাপ নিয়মিত পরিমাপ করা এবং নিয়মিত হাইপারটেনশনের ওষুধ খাওয়া স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য কতটা জরুরি।
স্ট্রোকের প্রকারভেদঃ
স্ট্রোক দুই রকমের হয়।
১) ইশ্চেমিক স্ট্রোকঃ এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কোনো ধমনীর রক্তচলাচল বন্ধ হয়ে স্ট্রোক হয়। ৮৫% ক্ষেত্রে ইশ্চেমিক স্ট্রোক হয়।
২) হেমারেজিক স্ট্রোকঃ এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কোনও রক্তবাহী নালী, উচ্চ রক্তচাপে বা অন্য কোনও কারণে ফেটে গিয়ে মস্তিষ্কের মধ্যে রক্তপাত হয়। প্রায় ১৫ শতাংশ স্ট্রোক হলো হেমারেজিক স্ট্রোক।
স্ট্রোকের উপসর্গঃ
- হঠাৎ করে দেহের এক পাশ দুর্বল হয়ে যাওয়া।
- হঠাৎ কথা জড়িয়ে যাওয়া।
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
- খিঁচুনি হওয়া।
- বমি হওয়া।
- মাথাব্যথা হওয়া (সাব অ্যারাকনয়েড হেমারেজের ক্ষেত্রে)।
- বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে একাধিক বার স্ট্রোক হয়ে স্মৃতি শক্তি কমে যেতে পারে, হাত- পা দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
চিকিৎসাঃ
- ওষুধের মাধ্যমে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে হবে। স্ট্রোকের রোগীদের ক্ষেত্রে এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রক্তচাপ স্বাভাবিক না থাকলে, কিছুদিনের মধ্যেই আবার স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি। রোগী যাতে নিয়মিত ওষুধ খান, তা নিশ্চিত করতে হবে।
- ফিজিওথেরাপি ও নার্সিং কেয়ার স্ট্রোকের চিকিৎসায় খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্ট্রোকের রোগীদের দুর্বল অঙ্গ প্রত্যঙ্গের জোর ফিরে পাওয়ার প্রধান উপায় নিয়মিত ফিজিওথেরাপি করা।
- স্ট্যাটিন জাতীয় কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধও প্রায় সব স্ট্রোকের রোগীকে দেওয়া হয়।
- এছাড়াও ইশ্চেমিক না হেমারেজিক স্ট্রোক এবং স্ট্রোকের নানা জটিলতার দিকে লক্ষ্য রেখে চিকিৎসক আরও কিছু ওষুধ দিতে পারেন।