আগের দিন বয়সের কথা বলেছিলাম। এবার একটু অর্থনৈতিক বিষয়ের দিকে চোখ রাখা যাক।
যা জানানো হয়েছে তাতে অগ্নিবীরেরা প্রথম বছরে পাবেন ৩০ হাজার টাকা প্রতি মাসে, দ্বিতীয় বছরে ৩৩ হাজার, তৃতীয় বছরে ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা, আর শেষ বছরে ৪০ হাজার টাকা। এমনিতে খারাপ নয়, কিন্তু মজাটা অন্য জায়গায়।
যে কোনো ধরনের consolidated pay-এর থেকে সাধারণত: কোনো টাকা কাটা হয় না, provident fund বাদে। এক্ষেত্রে হবে। সরকার কেটে রাখবে ৩০ শতাংশ টাকা, কোনো fund-এ নয়, নিজের কাছেই। অর্থাৎ প্রথম বছরে নিজের ত্রিশ হাজারের মধ্যে ৯ হাজার টাকা কেটে হাতে পাবে ২১ হাজার টাকা প্রতি মাসে, দ্বিতীয় বছরে তেত্রিশ হাজারের মধ্যে ৯৯০০ টাকা কেটে ২৩১০০ টাকা, তৃতীয় বছরে ৩৬৫০০ টাকা প্রাপ্য, কিন্তু ১০৯৫০ টাকা কেটে ২৫৫০০ টাকা আর শেষ বছরে, চল্লিশ হাজারের মধ্যে ১২ হাজার টাকা কেটে ২৮ হাজার টাকা মাত্র!
(প্রসঙ্গত: এখন একজন সিপাহী সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েই প্রথমে বেতন পায় বেসিক হিসাবে ২১,৭০০ টাকা, এর সঙ্গে DA, এবং অন্যান্য অনেকগুলি allowance, কোনটা সার্বজনীন, কোনটা নির্দিষ্ট এলাকার জন্য আলাদা আলাদা রকম। সবমিলিয়ে হাতে আসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা! এছাড়া স্থায়ী চাকরীর অন্যান্য সুযোগসুবিধা, যেমন স্বাস্থ্য পরিষেবা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আরো কিছু সুবিধা, নির্দিষ্ট দিনের বিভিন্ন রকম ছুটি, এবং সর্বোপরি পেনশনের সুযোগ। অবসরের পরও সেনা পরিচয় দিতে পারে এবং আরো কিছু সুবিধা জীবনভর পায়। এরা যে ধরনের কঠিন এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কাজ করেন, তার পরিপূরক প্যাকেজ এদের দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।)
এইবারে অগ্নিবীরদের চার বছরের শেষে “সেবানিধি” (জমকালো নাম দেয় বেশ ভালো!) প্রকল্পে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে, ১১ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা। এই বিশাল টাকার অঙ্কের কথা বাজারে তুমুল ছড়ানো হচ্ছে, কিন্তু আসল বিষয়টি হল, এরমধ্যে “অগ্নিবীর” দের কাছে থেকে কেটে নাওয়া টাকার পরিমাণ ৫ লক্ষ ২ হাজার টাকা। আর সরকার দেবে ৫ লক্ষ ২ হাজার টাকা, এরসঙ্গে ইন্টারেস্ট যোগ করে পরিমাণ হবে ১১ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা। (একেবারে contributory profident fund-এর গপ্পো!)
এর বাইরে কোনো allowances, DA ইত্যাদি পাবে না। (সম্প্রতি নৌ বাহিনী আবার বলেছে, অল্প কিছু allowance দেওয়া হবে… বিক্ষোভের পরবর্তী সময় এই ঘোষনা)।
জীবনবিমা থাকবে ১ কোটি ১২ লক্ষ টাকার, এটাও বিক্ষোভের পরে ঘোষনা। নইলে প্রথমে ৪৮ লাখের কথা বলা হয়েছিল। এছাড়া গুরুতর দুর্ঘটনা হলে, অঙ্গহানি হলে তার জন্যও এখন বিক্ষোভের পরবর্তীতে বীমার কথা বলা হয়েছে।
এই নাকি ৩ বছরের হোম ওয়ার্ক। প্রকল্প পেশ করার পরে বিক্ষোভ হওয়ায় প্রায়শই নিয়ম পাল্টাতে হচ্ছে, নতুন নতুন কথা বলতে হচ্ছে। ঠিক এইরকম হয়েছে নোটবন্দির সময়, GST চালু করার পরে। অজস্র বার নানা রকম নিয়ম পাল্টাতে হয়েছে। জনগণকে “গিনিপিগ” করে একের পর এক নানা অসম্পূর্ণ, অদ্ভুত প্রকল্প। এই চলছে।
আরো বেশ কিছু কথা বলা বাকী থেকে গেল। পরের পর্বে লিখছি।