কথাটা প্রথম বাচ্চা বয়েসে শুনি স্কুলে।
বিশ্বাস করুন ইস্কুলেই প্রথম জানতে পারি,
একটা এইম, মানে তাক করে জীবনকে ছুঁড়তে হয়।
আমি একটা সত্তর থেকে আশির দশকে বেড়ে ওঠা বাচ্চা।
ঐ সময়ের সব বাচ্চাই বোধহয়, পরীক্ষায় লিখেছে,
সে রচনা।
এইম অফ লাইফ!!
ঠিক এরকমই ইংলিশে রচনা আসতো।
বাংলায় আসতো,
তুমি কি হতে চাও?
দুটো এক ভেবে আবার ভুল করে ফেলবেন না যেন।
ইংরিজিতে লেখার জন্য শেখানো মানে, মুখস্ত করানো চলতো,
কি কি তাক করে জীবন ভবিষ্যতে কোন দিকে ছুঁড়বে।
যেমন,
আমি ডাক্তার হতে চাই।
আমি বিজ্ঞানী হতে চাই।
আমি ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই।
যে যত ঠিকঠাক হতে চাইবে, সে ততো ঠিক নাম্বার পাবে।
বিজ্ঞানীদের বাজার বেশ চড়া ছিল।
এক সেকশনে, প্রায় পঞ্চাশ ছাত্রের মধ্যে, তিরিশ জনই বিজ্ঞানী!!
কিছু ডাক্তার আর বাকিটা ইঞ্জিনিয়ার।
যারা বিজ্ঞানী হোয়ে বিরাট বিরাট নম্বর পেয়েছিলো, বেশিরভাগটাই পরে অফিস কেরানি হয়ে, ইউনিয়ন গবেষক আর কাজে ফাঁকিবাজি বিজ্ঞানী হয়েছে।
বেশিরভাগ ডাক্তারদের ডাক্তারের চেম্বারে, রুগী হিসাবে দেখা যায়।
আর ইঞ্জিনিয়াররা কিন্তু সত্যি সত্যিই নব্য আসা তখনকার দিনে, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে গেছে।
আমি ঐ রচনা দেখলে, সে সময় বেশ ঘাবড়ে যেতাম।
আমি খেলোয়াড় হতে চাইতাম।
আর সেটা কাগজে কলমে লিখলে, মোটেও নম্বর মিলবে না।
কারণ মাস্টারমশাইয়ের আনকমন কোনো কিছুই পছন্দ ছিলই না।
সুতরাং অথবা তে রেনি ডে, ট্রাভেলিং এজ এ পার্ট অফ এডুকেশন-টেশন লিখে, কোনোমতে উৎরে দিতাম।
তবে বাংলায় কি হতে চাও!!
লেখা ভারী সহজ ছিল।
ওতে নিজেকে জড়িয়ে নেবার কোন চাপ ছিল না।
আমি বেশিরভাগ সময়েই, দেশ নায়ক, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস, খুব একঘেঁয়ে হয়ে গেলে বিজ্ঞানী জগদীশ বোস নিদেন অংকেই আতঙ্ক বলে, মনের সুখে সত্যেন বোস হতে চাইতাম।
বাংলায় সেই সময় আমার সহ বাচ্চারা, তুমি কি হতে চাও, লেখা তে, এছাড়াও বহুকিছু হয়েছে।
লেখক, উপন্যাসিক, প্রবন্ধকার, কবি এসব হতে চেয়েও, বিশাল নম্বর তুলে ফেলেছে।
এসব হবার সুবিধা ছিল মস্ত।
কবি হতে চাও, রবীন্দ্রনাথকে ফলো করে লিখে দিলেই, পনেরোতে বারো পাওয়া চাপের নয়। আর কারো নাম নেবার চাপ ছিল না বলে, তাঁদের জন্ম, মৃত্যু কোনো কিছুর হিসাব না দিলেও চলতো।
ও হ্যাঁ, তখন আবার বাংলা বা ইংরেজিতে পুরো নম্বর দেবার চল ছিলই না।
লিটরেচা্রে পুরো মার্কস কেউ নাকি পায় না। আর মাস্টারমশাইদের কারও দেবার সাহস অথবা হিম্মত ছিল না।
সম্ভবত দিলে মাস মাইনে কাটা যেত।
সেই সময়ের বাচ্চা আমরা,
যারা, তাক করার চেয়ে তুক করার ওপর বেশি ভরসা করতাম।
তাদের বেশিরভাগ ই আমার মতন,
সেই বয়েসের এইম মানে তাক করা, শুধুমাত্রই রচনা লিখে, বেশি নম্বর পাওয়ার ঘূর্ণির চক্করেই আটকে গেল।
এই বয়েসে পৌঁছে,
বোধহয় “এইম অফ লাইফ” এর মানে বুঝতে পেরেছি।
তাও বোধহয়!!
সদা খুশি থাকা, এটাই তাক করা উচিৎ।
এই রচনাটা লিখলাম, নিজেরই কেমন আনকমন লাগছে,
সন্তোষবাবু পড়লে,
নির্ঘাত পনেরোতে দুই দিতেন।
তাও হাতের লেখার জন্য!!!
সংগৃহীত