? Single Donor Platelets (SDP) কী?
এক জন মানুষের whole blood থেকে মোটামুটি ৫০ মিলিলিটার প্লেটলেট তৈরি করা যায় তাতে ৩.৫ থেকে ৫ ×১০১০ সংখ্যক অর্থাৎ সাড়ে তিন থেকে পাঁচ হাজার কোটি প্লেটলেট থাকে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে প্লেটলেটের অভাবে সঞ্চালনের প্রয়োজন হলে এই রকম ছয় ইউনিট প্লেটলেট (Pooled Platelets) অর্থাৎ ৩০০ মিলিলিটার প্লেটলেট তাঁকে দিতে হয়। অনেক সময়ে প্লেটলেটের অভাবের ফলে চিকিৎসক এটা কমিয়ে ৪ ইউনিট প্লেটলেটও দিতে বাধ্য হন, তবে বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এর থেকে কম পরিমাণে সঞ্চালন করলে আখেরে লাভ হয় না।
সিঙ্গেল ডোনার প্লেটলেট একজন ব্যক্তির থেকেই সংগ্রহ করা হয়। এতে cell separator নামে বিশেষ একটি যন্ত্র লাগে। এতে একজন মানুষের শরীর থেকে whole blood ঢোকে, সেখান থেকে ছেঁকে শুধু platelets বার করে নেওয়া হয় এবং বাকি অংশটা সেই রক্তদাতার শরীরেই ফিরে যায় (কিছুটা প্লাজমাও নেওয়া হয় কারণ অণুচক্রিকাগুলি ঐ প্লাজমাতেই ভেসে থাকে, শুকনো করে ছেঁকে বের করা সম্ভব হয় না)। আর এই প্রক্রিয়াটি whole blood donation এর মতোই একটি closed process, ফলে একইভাবে রক্তদাতার সংক্রমণের কোনো সম্ভাবনা নেই। আর প্রতিবার নতুন রক্তদাতা আসার আগে যন্ত্রটিতে রক্তপ্রবাহের জন্য নতুন জীবাণুমুক্তচক্র আবার লাগানো হয়, ফলে এই পদ্ধতিতে পাওয়া প্লেটলেট ব্যবহার করলে তাতেও আগের রক্তদাতার থেকে কোনো রকম সংক্রমণের ভয় থাকে না। এই পুরো প্রক্রিয়াটিই live হয় অর্থাৎ রক্তদাতার শরীর থেকে রক্ত বাইরে এসে ঐ যন্ত্রের ভেতরে একটা জায়গায় জমা হয়, তার সাথে সেই সময়েই সেখানে প্লেটলেট আলাদা হতে থাকে এবং রক্তের বাকি উপাদানগুলি তার দেহে ফেরত যেতে থাকে। এই প্রক্রিয়াটিকে Apheresis বলে এবং SDP এর ক্ষেত্রে একে Plateletpheresis বলে এবং একইভাবে Plasmapheresis-এর মাধ্যমে দেহ থেকে শুধুমাত্র প্লাজমা নেওয়া সম্ভব।
SDP রক্তদাতার ক্ষেত্রে বাড়তি নির্দেশিকা সমূহ –
১) প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে কমপক্ষে দেড়লক্ষ প্লেটলেট থাকতে হবে অর্থাৎ প্রতি মিলিলিটার রক্তে কমপক্ষে দেড়শত কোটি প্লেটলেট থাকতে হবে।
২) তার দুই হাতেই রক্তদান করার মতো স্পষ্ট এবং সোজা শিরা থাকতে হবে।
(কারণ এই ক্ষেত্রে রক্ত শুধু শরীর থেকে বেরোয় না, আবার ঢোকেও। এছাড়া একটা হাত থেকে কোনো কারণে SDP নেওয়া না গেলেও, অন্য হাত থেকে যেন নেওয়ার চেষ্টা করা যায়।)
৩) SDP দানের আগেই রক্তদাতার রক্তের গ্রুপ (রক্তগ্রহীতার সাথে মিলতে হবে কারণ প্লাজমাও থাকে), TTI এবং Antibody screening এর পরীক্ষা করে নিতে হয়।
সাধারণ (Whole Blood) রক্তদানে পাঁচ থেকে আট মিনিট সময় লাগলেও এই ক্ষেত্রে প্রায় ৩৫ মিনিট থেকে এক ঘন্টার মতো সময় লাগে। এছাড়া SDP দেওয়ার আগে রক্তদাতার উপর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করতে প্রায় দুই – তিন ঘন্টা সময় লেগে যায়।অর্থাৎ কমপক্ষে চার ঘন্টা শুধু ব্লাড ব্যাঙ্কেই লেগে যায়। এছাড়া SDP থেকে পাওয়া প্লেটলেটের আয়ুও সর্বাধিক পাঁচ দিন।
ফলে SDP কোনো Emergency solution নয় বরং একটি Planned procedure.
তবে, RDP এর ক্ষেত্রে একাধিক ব্যক্তির রক্ত থেকে পাওয়া প্লেটলেট ব্যবহার করা হয়, ফলে TTI সংক্রমণের সম্ভবনা SDP-এর থেকে অনেকগুণ বেশী। এছাড়া Alloimmunization হয়ে Platelet transfusion refractoriness অর্থাৎ দাতার প্লেটলেট নষ্ট করে দেওয়ার সম্ভবনা RDP-এর ক্ষেত্রে SDP-এর থেকে অনেক বেশী। তাছাড়া RDP-এর ক্ষেত্রে লিউকোরিডাকশন করা না হলে সেই ক্ষেত্রে Alloimmunization এবং Febrile non-hemolytic transfusion reaction (FNHTR)-এর সম্ভাবনা SDP-এর (যেটা লিউকোরিডিউসড ভাবেই তৈরী হয়) থেকে অনেক বেশী। সর্বোপরি, SDP থেকে পাওয়া প্লেটলেটের গুণমান সাধারণত RDP থেকে পাওয়া প্লেটলেটের থেকে বেশী হয়।
কাজেই সাধারণ ক্ষেত্রে RDP ব্যবহার করা হলেও, এই সকল ক্ষেত্রে প্লেটলেটের প্রয়োজন হলে SDP ব্যবহার করা হয় –
১) ব্লাড ক্যান্সারের রোগীর ক্ষেত্রে,
২) অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার রোগীর ক্ষেত্রে,
৩) ডায়ালিসিস (বা ক্রনিক কিডনি ডিজিস) – এর রোগীর ক্ষেত্রে,
৪) থ্যালাসেমিয়া রোগীর ক্ষেত্রে,
ইত্যাদি।
? Covid Convalescent Plasma (CCP) কী?
ধরুন, আপনি একটি বাড়িতে থাকেন আর তাতে একদল ডাকাত হানা দিলো। আপনার রক্ষীবাহিনী তাদের চেনে না। ফলে তখন ডাকাতেরা কিছু সময় ধরে নিজেদের সংখ্যা আস্তে আস্তে বাড়াতে থাকলো এবং ডাকাতি করার সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে লাগলো। এরপরে ডাকাতি শুরু করতেই আপনার রক্ষী বাহিনী তাদের খুঁজে পেলো, এবং দুই দলের যুদ্ধ হয়ে ডাকাতেরা মারা গেলো। এরপরে যদি সেই একই দলের ডাকাত আবার ডাকাতি করতে আসে তাহলে এবার আপনার রক্ষীবাহিনী প্রথমেই তাদের চিনতে পারবে এবং দ্রুত দলবল বাড়িয়ে যুদ্ধ করে তাদের হারিয়ে দেবে।
এবার, ধরুন আপনার বন্ধুর ঘরেও একই দলের ডাকাতরা হানা দিয়েছে এবং বন্ধুর রক্ষীবাহিনী সেই মূহুর্তে লড়াইয়ে তেমন সুবিধা করতে পারছে না। তখন আপনি আপনার রক্ষী বাহিনী থেকে এমন কিছু সদস্যকে বেছে নিলেন হলো যারা এই ডাকাতদের চেনে এবং বন্ধুর বাড়িতে তাদের পাঠালেন। এবার এরা যেহেতু এইরকম ডাকাতের সাথে আগের যুদ্ধ করেছে তাই এই রক্ষীবাহিনী ঐ ডাকাতদের লড়াই করার বা ডাকাতি করার পদ্ধতি সম্পর্কে আগে থেকেই জানে এবং আপনার বন্ধুর রক্ষীবাহিনী থেকে আরো ভালো ভাবে জানে। ফলে, বন্ধুটির রক্ষীবাহিনী সহজেই জয়ী হলো।
একই ভাবে, কোনো ব্যক্তি SARS Cov-2 ভাইরাস (চলতি কথায় যাকে করোনা ভাইরাস বলা হচ্ছে) দ্বারা আক্রান্ত হলে তার শরীরের রক্তরসে ঐ ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরী হতে শুরু করে এবং তিনি সুস্থ হওয়ার কিছু দিন পরেও রক্তে সেই অ্যান্টিবডি উপস্থিত থাকে। অ্যান্টিবডি সম্বলিত সেই রক্তরস হলো Covid Convalescent Plasma (CCP) যেটি অন্য কোনো Covid-19 Positive রোগীর শরীরে সঞ্চালন করা যায়। এই CCP দ্বিতীয় ব্যক্তির শরীরে গিয়ে কোভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
১) যে রোগীরা কোভিড-১৯ থেকে সেরে উঠেছেন, তাঁরাই এই CCP দান করতে পারেন। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা, কোভিড-১৯ রোগের সমস্ত উপসর্গ থেকে মুক্তির ২৮ দিন পরে অথবা, এই রোগের উপসর্গ থেকে মুক্তির ১৪ দিন পরে যদি অন্তত চব্বিশ ঘন্টার ব্যবধানে পরপর দুইবার এঁদের নমুনার RT-PCR পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে (অর্থাৎ SARS Cov-2 ভাইরাসের অনুপস্থিতির প্রমাণ দুইবার পাওয়া যায়) তবেই এঁরা রক্তরস দান করার জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবেন।
২) এই ক্ষেত্রে অ্যাফেরেসিস পদ্ধতিতে রক্তদান করা হলে দেহ থেকে শুধুমাত্র ৪০০-৫০০ মিলিলিটার Plasma / রক্তরস নেওয়া হয় এবং রক্তের বাকি উপাদানগুলি দেহে ফেরত যায়। একজন দাতা প্রথমবার প্লাজমা দানের দুইসপ্তাহ পরে আবার দ্বিতীয়বার দান করতে পারেন। আর সুস্থ হওয়ার তিন মাস পরে তার শরীরে অ্যান্টিবডি কমে যাওয়ায় তারপরে তার শরীর থেকে CCP পাওয়া যায় না।
৩) এইভাবে প্লাজমা দান সম্পূর্ণ নিরাপদ কারণ রক্তদাতার সুরক্ষা মাথায় রেখেই এই পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়। কোনো ব্যক্তি রোগমুক্ত হয়ে সেই রক্তরস দান করার মত শারীরিক সক্ষমতা পেলে তবেই তার কাছ থেকে CCP সংগ্রহ করা হয়, নচেৎ নয়।
৪) CCP-দাতার রক্তরসে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডির পরিমাণ এবং ঘনত্ব পরিমাপ করে যথেষ্ট পরিমাণে কার্যকরী অ্যান্টিবডি পাওয়া গেলে তবেই দাতার শরীর থেকে CCP নেওয়া হয়ে। আর পরিমাণ কম হলে তাকে CCP দানের অনুপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই পরিমাপের জন্য CCP দানের আগে সম্ভাব্য রক্তদাতার উপর একটি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। কোভিড-১৯ এর S1 (Spike Protein) – এর বিরুদ্ধে IgG অ্যান্টিবডি তৈরী হয়েছে কি না সেটা এখানে পরিমাপ করে দেখা হয়, কারণ এটি একটি Protective অ্যান্টিবডি।
৫) এছাড়া কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা সেই ব্যক্তি অ্যাফেরেসিস পদ্ধতিতে CCP দান করবেন। ফলে SDP রক্তদাতার ক্ষেত্রে যা যা নিয়ম থাকে এক্ষেত্রেও সেই সব নিয়ম বজায় থাকে এবং সেইমত তার পরীক্ষা করা হয়।
৬) যিনি CCP গ্রহণ করবেন তার রক্তের সাথে CCP-র Minor Cross-match করে দেখে নেওয়া হয় যে উভয় রক্তের গ্রুপ মিলছে কি না।
এই রচনায় ডা ঋতম চক্রবর্তীর সাহায্য নেওয়া হয়েছে।
(চলবে)