ঋতু বদলের সময় ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সংক্ষেপে ফ্লু-র বাড়বাড়ন্ত হলেও বছরের অন্য সময়েও এই অসুখ হতে পারে। আর কখন যে কার শরীরে এই অসুখ বাসা বাধবে তা কেউ আগে থেকে বোঝা অসম্ভব। বেশিরভাগ সময়ে ফ্লু-র জন্য শরীরে সাময়িক অসুবিধা হলেও সাত দিনের মধ্যে তা নিজে থেকেই সেরেও যায়। তবে সন্তানসম্ভবা মহিলা, বয়স্ক ব্যক্তি ও বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ফ্লু বড়সড় সমস্যা ডেকে আনতে পারে। আর মায়ের থেকে সদ্যোজাত শিশুর মধ্যে ফ্লু সংক্রমণ হলে তা খুব জটিল আকারও ধারণ করতে পারে।
সন্তানসম্ভবা অবস্থায় মা ও সন্তানকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ফ্লু-র টিকা নেওয়া জরুরি। আর এই টিকা একেবারে নিরাপদ। শুধু গর্ভে থাকাকালীন সময়েই নয়, মা এই টিকা নিলে জন্মের পরেও বেশ কয়েক মাস সন্তানের ফ্লু সংক্রমণ রোধ করা যায়। ফ্লু-র টিকা নেওয়া সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা এখনো মানুষের মধ্যে রয়ে গেছে। সেই সব ধারণা ও আসল বিষয় সম্পর্কে এবার জেনে নেওয়া যাক।
ভুল ধারণা- ফ্লু-র টিকা শিশুর স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।
সত্যি– এখনো পর্যন্ত ফ্লুয়ের টিকার জন্য মা ও শিশুর কোনও সমস্যা হয়েছে বলে জানা যায়নি। বরং সমীক্ষায় জানা গেছে, প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ফ্লু সংক্রমণ হলে তার থেকে মায়ের শরীরে ব্রংকাইটিস এমনকী নিমোনিয়া পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও জটিলতা হিসেবে দেখা দিতে পারে কানের সংক্রমণ, সেপসিস, হার্টের সমস্যা, মেনিনজাইটিস ও এনসেফেলাইটিস। কাজেই অনেক অসুখ থেকে দূরে রাখার জন্য এই টিকা নেওয়া দরকার।
ভুল ধারণা- এই টিকা নেওয়ার নির্দিষ্ট সময় আছে। তারপরে নিয়ে আর কোনও কাজ হয় না।
সত্যি– সমীক্ষায় জানা গেছে, প্রেগন্যান্সির প্রথম কয়েক সপ্তাহ থেকে প্রসবের আগে পর্যন্ত যে কোনও পর্যায়ে এই টিকা নেওয়া যায়। সাধারণত প্রেগন্যান্সির শেষের দিকেই ফ্লু সংক্রমণ বেশি হয়। কাজেই এই টিকা নেওয়ার কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই।
ভুল ধারণা- ইনফ্লুয়েঞ্জা কঠিন কোনও অসুখ নয়।
সত্যি– ফ্লু খুবই সংক্রামক অসুখ। এই ভাইরাস একজনের থেকে অন্যের মধ্যে সহজেই হাঁচি, কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রমণের উপসর্গ হিসাবে দেখা দেয় জ্বর, গায়ে ব্যথা, ক্লান্তি। ফ্লু-র সঙ্গে সাধারণ সর্দি কাশির তফাৎ আছে। সাধারণ সর্দি, কাশির থেকে ফ্লু অনেক বেশি জটিল হয়ে উঠতে পারে। প্রেগন্যান্ট মহিলাদের ফ্লু-র জটিলতা হিসাবে নিমোনিয়াও হতে পারে। প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ফ্লুয়ের কারণে মিসক্যারেজ হওয়া ছাড়াও স্টিল বার্থ, প্রিম্যাচিওর বার্থ বা কম ওজনের শিশু জন্মানোর আশঙ্কাও সামান্য পরিমাণে থেকেই যায়।
ভুল ধারণা- ফ্লু-র টিকার কোনও গুরুত্ব নেই।
সত্যি– এই টিকা ফ্লু ভাইরাস সংক্রমণের বিরূদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সমীক্ষায় জানা গেছে, এই ভাইরাস সংক্রমণের কারণে প্রতিবছর প্রেগন্যান্ট মহিলা সহ অন্যান্যরাও সাংঘাতিক অসুস্থ হতে পারে। মৃত্যু হওয়াও অসম্ভব নয়। কাজেই এই অসুখ থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য টিকার কোনও বিকল্প নেই।
ভুল ধারণা- এই টিকা নিলে ফ্লু-র চান্স বেড়ে যায়।
সত্যি– এই টিকায় যে ধরনের ভাইরাস থাকে তা কখনোই ফ্লু ডেকে আনেনা।
ভুল ধারণা- জীবনে একবার এই টিকা নেওয়াই যথেষ্ট।
সত্যি– ফ্লু এর জন্য দায়ী ভাইরাসের চরিত্র প্রতি বছর পাল্টে যায়। সেই অনুযায়ী পালটানো হয় এর টিকাও। তার মানে এক বছরের ভাইরাসের টিকা নির্দিষ্ট মেয়াদের পরে আর কাজ করে না। কোনও মহিলা আগের বছর এই টিকা নিলেও প্রেগন্যান্ট হওয়ার পড়ে আবার নেওয়া দরকার। কারও মনে টিকা নেওয়ার ব্যাপারে কোনও সন্দেহ থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া দরকার।