প্রিয় পুণ্যদা,
আশা করি কুশলে আছেন। সূর্যের তলায় চমৎকার জীবন যাপন করছেন। আমি অত্যন্ত বিপন্ন। আর্থিক এবং মানসিক সঙ্কটে আছি।
তাহলে গুছিয়ে বলি। সে অর্থে অর্থোপার্জন তেমন হয়নি।নিজের ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে (খুপরিতে) নানা সামাজিক ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছিলাম। তাই পলিক্লিনিকে যোগ দিলাম। ভাবলাম-দুটো পয়সার মুখ দেখবো (অপুর বাবা, হরিহর রায়ের মতো)। তা অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকায়ে যায়। ঘটনাগুলো পড়ে মতামত দেবেন।
একজন মহিলা আর তার স্বামী একটা পৌরসভা অফিসের সামনে চায়ের দোকান চালাতো-ঐ কিয়স্ক ধরণের। আমার রোগী। দরিদ্র অভাগা আমি সময়ের ফলপাকুড়টা পেতাম। ওদের একমাত্র সন্তান ভাড়া খাটাতে একটা সুমো গাড়ি কিনেছিলো। যদিও তথ্য বিভাগে রাত্রে ভাড়া খাটতে গিয়ে একবার গাড়ি সমেত গড়গড়িয়ে নর্দমায় পড়ে গেছিলো কিন্তু চলছিলো ভালো।লক ডৌনে ইএমআই দিতে না পেরে গাড়ি ছেড়ে দিলো।পুরসভার আপিসের সঙ্গে চায়ের দোকান বন্ধ। সেদিন দেখাতে এসেছিলো। পলি ক্লিনিকের বাইরেই বিষণ্ণ দাঁড়িয়ে ছিলো। আমি গিয়ে পলি ক্লিনিকের টাকা মিটিয়ে ভেতরে ডাকলাম।
এরপরের জন নামই নাহয় দিচ্ছি। মুস্তাক আহমেদ। খাসি কাটার দোকানে কাজ করতো। দোকান বন্ধ, রোজগার বন্ধ। ওর পুত্রবধূর রক্তে চিনি- হ্যাঁ ওদের সন্তানদেরও বিয়ে হয়। এরাও বাইরে বসার জায়গায় বসে ছিলো।এদেরও আমি টাকা দিয়ে দেখলাম। ভাড়া গাড়ির ড্রাইভারের বৌ। তার বাকি টাকা ফেরত দিলাম।
ওর বর বলেছিলো” এই বুড়ো মরলে তুই কি বিনা চিকিৎসায় মরবি?”দেহাতি বৌটি তাতেও রাজি। কিন্তু আমাকে ছাড়া দেখাবে না।
ঘরে ঘরে শাড়ি বিক্রি করা স্বামী পরিত্যক্ত বৌটি। ছেলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে। শাড়ি বিক্রি নেই। হতাশা আর হতাশা। দুচোখ ভরে হতাশা ঝরে পড়ে। সে কী করে আমাকে দেখাবে?
পুণ্যদা আমার যে শখ ছিলো আলাস্কায় পেঙ্গুইন দেখবো, ফ্রান্সের ন্যুড বীচ, আসামের আদিবাসীদের গ্রামে থাকবো, আমাজনের বর্ষারণ্যে হাঁটবো, মায়ের মাধবীকুঞ্জ বাড়িতে ছাতারে আর হাঁড়িচাচার মাঝে সময় কাটাবো, তার কি হবে?
যে কাজের মেয়েটা রিসেপশনে এসে বলতো “জানো দিদি পদ্মশ্রীতে বসতো ডঃ ঘোষ। তাকে আমি দেখাইসিলাম গল ব্লাডার অপ্রাশেনের সময়, দিদি….
(…..র মুখে যুগপৎ লজ্জা আর বিস্ময়,ডাক্তারবাবুকে চিনতে না পারার জন্য) এমা দিদি! (কপালে হাত) আমি এক্কিবারে চিনতি পারি নি! কী ভালো মানুষ গো। মা ছাড়া কথা বলেন নি কখনো। আমাকে কতো যত্ন করি দেখতো।
সেইই তো আমার গল ব্লাডারের সব ব্যবস্থা করিল। হায় ভগমান আমি মোট্টে চিনতিই পারিনি”
এটা একটা মেসেজের কপি পেস্ট। একটা দুটো ব্যক্তিগত কথা-যেমন মেয়েটার নাম বা অসুখ বাদ দিয়ে।
দাদা আমাজনের জঙ্গল কি এর থেকেও সুন্দর? ন্যুড বীচে এর চেয়ে সুন্দর নারী আছে?
গভীর চিন্তায় আছি। তায় আবার বয়স কালে হিসুর মতো আবেগও সামলাতে পারি না। অকারণে চোখে জল আসে। যা আছে তাতে তো আমার দিন চলে যাবে। আমি কোথায় যাবো? এদের ছেড়ে?
প্রণতঃ দীপঙ্কর।
০১/০৯/২০২১