২০ শে অক্টোবর ২০২২
ভোটপর্ব শেষ হওয়ার পর গণনার সময়ে ‘ওরা রিগিং করেছে’ ‘ওরা রিগিং করেছে’ জাতীয় অভিযোগ তোলার মানে হয় না। আমরা অবশ্য প্রতি পদক্ষেপেই গরমিল ইত্যাদির অভিযোগ তুলেছি – আপনাদের যেমন জানিয়েছি, রিটার্নিং অফিসারকেও জানিয়েছি।
কাউন্সিল নির্বাচন হয় দু’রকমের। ক্লজ জি আর ক্লজ এইচ। প্রথমটি চিকিৎসক-অধ্যাপকদের জন্য, দ্বিতীয়টি সব চিকিৎসকদের জন্য (অর্থাৎ চিকিৎসক-অধ্যাপকরা দু’ধরণের ভোটই দিতে পারবেন)। ক্লজ জি-র ভোটার বত্রিশশোর কিছু বেশি। ক্লজ এইচ-এর ভোটার বাষট্টি হাজারের বেশি।
ক্লজ জি-র ভোটগণনা শেষ হলো গতকাল। বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ থেকে কমপক্ষে সাতশো ব্যালট লুঠ হয়েছে, এ খবর আগেই পেয়েছিলাম। আমাদের ভোট দিলে ‘ওরা’ জেনে গেলেও যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় অনেক চিকিৎসক-অধ্যাপক আমাদের ভোট দেবেন ভেবেও দোনামনা করছেন, এমন খবরও জানতাম। তার পরেও জেতার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু গতকালই খবর পেলাম, প্রতিপক্ষ কমপক্ষে সাতশ-আটশ জাল ব্যালট ছাপিয়ে জমা করেছে। ভোটার সংখ্যা বত্রিশশো, ভোট পড়েছে সাতাশশো – তার মধ্যে লুঠ হওয়া ব্যালট এবং জাল ব্যালট মিলিয়েই হাজার-দেড়েক। অতএব, ফলাফল সহজেই অনুমেয়।
জাল ব্যালট ধরা কিছু কঠিন কাজ নয়। এত কাঁচা হাতের কাজ, দুটো ব্যালট বা দুটো ব্যালটের খামের রঙ এতখানিই আলাদা যে একনজরেই ধরা পড়ে যায়। রিটার্নিং অফিসারের কাছে আমরা সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। শাসকগোষ্ঠীকে ক্লিনচিট দেওয়ার ব্যাপারে তিনি আপাতত কল্পতরু দশাপ্রাপ্ত – জানালেন, প্রেসে কাগজ কম পড়ে গিয়েছিল বলে দুরকমের ব্যালট আর খাম এসেছে। যদিও সেই কথাটি তিনি আমাদের আগে জানাননি, পরেও লিখিতভাবে জানাননি।
ক্লজ জি-র ভোট গণনা সম্পূর্ণ। ফল-ঘোষণা না হলেও ফলের একটা আন্দাজ পাওয়াই যায়। এবং সেই ফল আমাদের অনুকূলে নয়। তারপরও যে পরিমাণ ভোট আমরা পেয়েছি, তাতে আমরা সত্যিই অভিভূত। খানিক চমৎকৃতও এই ভেবে যে, এতজন চিকিৎসক-অধ্যাপক হুমকি প্রলোভন অস্বীকার করে আমাদের পাশে থাকতে পারলেন!!
গত রাত্তির থেকে শুরু হয়েছে ক্লজ এইচ-এর ভোটগণনা। আমাদের জেতার সম্ভাবনা বেশি এখানেই। গণনা চলবে আজকের দিনরাত তো বটেই, হয়তো আগামীকালও।
এখানেও আমরা নিশ্চিত জানি, প্রতিপক্ষ কমপক্ষে পাঁচ-হাজার, মতান্তরে দশ হাজার জাল ব্যালট ছাপিয়ে জমা করেছে। এছাড়া যে ব্যালটগুলো ডাক্তারদের হাতে না পৌঁছে (আনডেলিভার্ড) কাউন্সিল অফিসে ফেরত এসেছে, তার মোট সংখ্যা রিটার্নিং অফিসার জানাতে চাইছেন না। তবে পোস্টাপিসের হিসেব আর রিটার্ন ব্যালটের গণনার হিসেবে বেশ কয়েক হাজারের ফারাক। সেই কয়েক হাজার ব্যালট যে কার হাতে গিয়েছে, তা অনুমান করা কঠিন নয়। তবে এসব জালিবাজি যে হবে এবং স্রেফ জনসমর্থনের স্রোতের মাধ্যমেই আমরা সেই সংখ্যাকে অতিক্রম করতে পারব, এটুকু হিসেব আমাদের ছিলই। শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে খেলাটা যে ফেয়ার গেম হবে না, এ তো সবাই জানে।
তো আমরা জাল ব্যালটের ব্যাপারটা নিয়ে খানিক বিচলিত হয়ে পড়েছিলাম। কেননা, সেক্ষেত্রে সংখ্যাটা অজানা এবং সব হিসেবই গুলিয়ে যেতে পারে। ক্লজ জি-র কাউন্টিং-এ জাল ব্যালট যে নির্ধারক না হলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিল, তা একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম। তবে কি ক্লজ এইচ-এও…
এক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। বিভিন্ন ধরণের খাম, রঙের কমবেশি হওয়া ব্যালট এবং রিটার্নিং অফিসারের তরফে একই যুক্তি – প্রেসে কাগজ কম পড়েছিল, তাই অন্য কাগজে ইত্যাদি প্রভৃতি…
কিন্তু, আহ্, অপরাধী যতই সেয়ানা হোক না কেন, অপরাধের চিহ্ন, ক্লু, সে ফেলে যাবেই। তদুপরি এ তো তৃণমূল কংগ্রেস (সন্দেহের অবকাশ নেই, কেননা ওপক্ষের ক্যাম্প থেকে প্রায়শই মা-মাটি-মানুষের স্লোগান উঠছে)!!
গণনা শুরু হতেই দেখা গেল, অজস্র ব্যালটে সিরিয়াল নম্বর এগারো-তে অর্জুন দাশগুপ্তর নামটিই অনুপস্থিত। পরিবর্তে সিরিয়াল নম্বর এক-এর নামটিই পুনর্মুদ্রিত। ব্যাপারটি এতখানি কাছাখোলা লেভেলের যে রিটার্নিং অফিসারের পক্ষেও এই ব্যালট যে জাল, তা অস্বীকার করা সম্ভব হয়নি। এই ব্যালটগুলো বাতিল হচ্ছে। যদিও, এমন খুঁত যে ব্যালটে নেই, অথচ জাল – কাগজ বা খাম দেখলেই ব্যাপারটা স্পষ্ট – সেসব ব্যালট দিব্যি ভ্যালিড ভোট হিসেবেই ধরা হচ্ছে।
এবং এমন ব্যালট গোছা গোছা। প্রতিটিতে, বলাই বাহুল্য, ‘সরকারপন্থী’ চিকিৎসকদের প্যানেলে ভোট!!
‘সরকারপন্থী’ চিকিৎসকদের নেতা সুদীপ্ত রায়ের সঙ্গে সহমত না হয়ে পারা যায় না – “এমন মেডিকেল কাউন্সিল নির্বাচন বাংলার চিকিৎসকরা আগে দেখেননি”।
একটানা আটচল্লিশ ঘণ্টার বেশি রাস্তায় তাঁবু গেঁড়ে বসে থাকার কাজটা সহজ নয়। এখনও অবধি যা ট্রেন্ড, তাতে আমরাই, সম্ভবত, জিতছি।
শুধু দূর থেকে শুভেচ্ছার মাধ্যমে নয়, কাছাকাছি যাঁরা থাকেন, প্লিজ, কাউন্সিল অফিসের সামনে আমাদের ক্যাম্পে এসে বসুন। আমাদের তো ভালো লাগবেই, আপনারও খারাপ লাগবে না, গ্যারান্টি।
সংযোজন
‘নিরবচ্ছিন্ন’ ভোটগণনায় সাত ঘণ্টার জলপানের বিরতিতে ঠিক কতরকমের খেলা হয়েছে, এখুনি বলা মুশকিল।
কিন্তু একটা খেলা ইতোমধ্যেই স্পষ্ট। ওই ফাঁকে আমাদের প্যানেলে ভোট পড়েছে, এমন বহু ব্যালটে বাড়তি কিছু ছাপ দিয়ে ব্যালট এবং ভোটটিই বাতিল করার বন্দোবস্ত হয়েছে।
বিরতিপূর্ব গণনার সময় এমন বাড়তি ভোটের কারণে আমাদের প্যানেল-ভোট বিশেষ বাতিল হয়নি। বিরতির পর এমন ব্যালট মুহুর্মুহু মিলছে।
ওই যে কবি বলেছেন, তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে। তৃণমূলের চিটিংবাজি প্রসঙ্গেই বলেছিলেন নিশ্চয়ই।
তবে মাত্রাজ্ঞান এঁদের চিরকালই কম। তৃণমূলের, অগত্যা -পন্থী চিকিৎসকদেরও।
কী আর করা! স্যাড লাইফ!!
পুনঃ- আজ সন্ধে সাতটা থেকে আগামীকাল বেলা বারোটা অবধি, আবারও, বিরতি। আবারও, খেলা হবে।