১। ৩০ জানুয়ারি কুষ্ঠ বিরোধী দিবস পালিত হচ্ছে। এই দিনটি সম্পর্কে কিছু জানা যাবে ?
উঃ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ৩১শে জানুয়ারি এই দিনটি পালিত হয়।
১৯৫৪ সালে ফরাসি মানবতাবাদী, লেখক, সাংবাদিক, সংগঠক রাউল ফলেরিউ তাঁর বন্ধু ফাদার বালেজ এর অনুরোধে জানুয়ারি মাসের শেষ রবিবার সারা বিশ্বের মধ্যে প্রথম এন্টি লেপ্রসি ডে বা কুষ্ঠ-বিরোধী দিবস উদযাপন করেছিলেন। রাউল চেয়েছিলেন যে এই দিনটি পালন হোক কুষ্ঠ রুগীদের সুচিকিৎসা ও তাদের সামাজিক মর্যাদা আদায়ের দাবিতে।
আমাদের দেশে অর্থাৎ ভারতে গান্ধীজির তিরোধান দিবস হিসেবে ৩০শে জানুয়ারি এই দিনটি “জাতীয় কুষ্ঠ বিরোধী দিবস” হিসেবে পালিত হয়। মহাত্মা গান্ধী তাঁর সারা জীবন ধরে এই রোগটি নিয়ে নানা অবদান রেখে গেছেন (সংযোজনী দ্রষ্টব্যঃ)
২। যে কোন মানুষের কি কুষ্ঠরোগ হতে পারে?
উঃ না। আপনি কি কখনো দেখেছেন যে আপনার আশেপাশে প্রত্যেকটি মানুষের সব ধরণের রোগ হচ্ছে? সবার কি হাঁচিকাশি হচ্ছে অথবা নাক দিয়ে জল পড়ছে অথবা পাতলা পায়খানা হচ্ছে? কুষ্ঠরোগের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একইরকম, সবাই কুষ্ঠরোগে ভোগেন না। এথেকে বোঝা যায় যে বিভিন্ন রোগের মোকাবিলায় আমাদের শরীর ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সাড়া দেয়। কোনো রোগ বা সংক্রমণের মোকাবিলা করার এই ক্ষমতাকে সেই মানুষটির ‘রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা’ বলে।
৩। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কি?
উঃ রোগ হওয়া আটকানোর জন্য জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরের লড়াই করার ক্ষমতাকে “রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা” বলে। সংক্রমণের মোকাবিলা করার জন্য আমাদের রক্তে বিশেষ ভাবে তৈরি কিছু কোষ আছে। এই কোষগুলোর মধ্যে ক্ষতিকারক জীবাণুদের চিনে নেওয়া, তাদের গিলে ফেলে হজম করা ও ধ্বংস করার ক্ষমতা ও শক্তি আছে। এই কোষগুলি ও তাদের ক্ষমতা আছে বলে আমাদের শরীর কুষ্ঠরোগের জীবাণু সহ অধিকাংশ ক্ষতিকারক জীবাণুর বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য।
৪। রোগের বিকাশ কিভাবে হয়?
উঃ আমাদের শরীরে কোনো জীবাণু প্রবেশ করার পর সেটি নিজের পুষ্টি ও বংশবৃদ্ধির জন্য একটি পছন্দসই জায়গা খুঁজে নিয়ে সেখানে বাসা বাঁধার চেষ্টা করে। অন্যদিকে আমাদের শরীর জীবাণুর এই বংশবৃদ্ধি, সংখ্যাবৃদ্ধি, বিস্তার কে প্রতিরোধ করে রোগের বিকাশ কে আটকানোর চেষ্টা করে। যদি শরীর জীবাণুকে মোকাবিলা করতে অক্ষম হয় তাহলে রোগের বিকাশ ঘটে।
৫।আমাদের প্রত্যেকের কেন সবধরণের রোগ হয় না?
উঃ এটা হল কোনো মানুষের শরীরের কোনো একটি নিৰ্দিষ্ট ধরণের জীবাণু কে চিহ্নিত করা ও তাকে চিনে নেওয়ার ক্ষমতা। বিভিন্ন মানুষের শরীরে ভিন্ন ভিন্ন কোষের একটি নিৰ্দিষ্ট অসুখের বিরুদ্ধে লড়াই করার কমবেশি ক্ষমতা থাকে যেমন যে মানুষটির শরীরে সাধারণ সর্দিকাশি রোগ কে মোকাবিলা করার প্রচুর ক্ষমতা, সে সর্দিকাশিতে ভুগবে না। অন্যদিকে যার শরীরে এই সর্দিকাশির বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা নেই বা কম, সে সহজেই ওই রোগে ভুগবে।
৬। প্রত্যেকে কেন কুষ্ঠরোগে ভোগে না?
উঃ সেই মানুষটির কুষ্ঠরোগের জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতার ওপর এটি নির্ভর করে। গবেষণায় জানা গেছে যে আমাদের জনসংখ্যার ৯৫-৯৯ শতাংশ মানুষ কুষ্ঠ রোগের জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষম বা লড়াই করার ক্ষমতা রাখে। অর্থাৎ কুষ্ঠ জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে কেবলমাত্র ১-৫ শতাংশ মানুষ কুষ্ঠ রোগে ভুগতে পারে।
এই “কোষ ভিত্তিক” প্রতিরোধ ক্ষমতাটি জন্মগত। জন্মের পরে এটির কোনো নড়চড় বা কমবেশি হয় না।
৭। কুষ্ঠরোগ কেন হয়? কুষ্ঠ কি জন্মগত রোগ ?
উঃ কুষ্ঠ জন্মগত কোনও রোগ নয়। অনেকে বিশ্বাস করতেন ও বলতেন যে পূর্ব জন্মের পাপের ফলে বা অভিশাপের ফলে কুষ্ঠ হয়।
আগে কুষ্ঠ নিয়ে এসব ভ্রান্ত ধারণা ছিল। ১৮৭৭ সালে নরওয়ে দেশের গারহার্ড হেনরিখ আরমেয়ার হ্যানসেন নামে বিজ্ঞানী সন্দেহাতীতভাবে প্রমান করেন যে এটি একটি জীবাণু ঘটিত রোগ যে জীবাণুর নাম মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রি। তিনি কুষ্ঠ রোগীর শরীরের রস নিয়ে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের তলায় পরীক্ষা করে এই জীবাণু আবিষ্কার করেন।
৮। কুষ্ঠরোগ এর প্রাথমিক লক্ষণ কি, কাকে সম্ভাব্য/ সন্দেহজনক বলবো?
উঃ চামড়ায় ফ্যাকাশে, লালচে, তামাটে রঙের ছোট বা বড় অসাড় দাগ,
এবং/অথবা চামড়া পুরু হয়ে যাওয়া এবং/অথবা তেলতেলে এবং/অথবা চকচকে ভাব এবং/অথবা গুটি;
এবং/অথবা হাতে/পায়ে ঝিনঝিনে বা অসাড় ভাব এবং/অথবা ঠান্ডা বা গরম জিনিস টের না পাওয়া এবং/অথবা কোন জিনিসকে হাত বা পায়ের আঙ্গুল দিয়ে আঁকড়ে ধরে রাখতে দুর্বলতা; পায়ের চটি খুলে আসা, জামার বোতাম লাগাতে অসুবিধে।
এবং/অথবা চোখ বন্ধ করতে না পারা এবং/অথবা হাত বা পায়ের আঙ্গুল বেঁকে যাওয়া এবং/অথবা হাতের তালু বা পায়ের তলায় ঘা এবং/অথবা অসাড় ভাব যুক্ত যে কোনো মানুষকে কুষ্ঠরোগী হিসেবে সন্দেহ করা হবে।
৯। শরীরে সাদা দাগ মানেই কি কুষ্ঠ।
উঃ না, সাদা দাগ মানেই কুষ্ঠ নয়। ধবল বা শ্বেতী রোগেও সাদা দাগ হয়। সেগুলো দুধ সাদা। দাগে গজানো লোমের রং থাকে না। দাগে অনুভূতি বজায় থাকে।
অন্যদিকে কুষ্ঠ এর দাগে রং ফ্যাকাশে হয়, দুধ সাদা নয়, ওই জায়াগায় থাকা লোমগুলি ঝরে যেতে পারে, যদি লোম থাকে তাহলে তার রঙের কোনও পরিবর্তন হয় না। এবং দাগের জায়গায় অনুভূতি লোপ পায়।
কুষ্ঠ রোগের দাগগুলো চামড়ার সমতল বা উঁচু হতে পারে, শরীরের যে কোনো জায়গায় হতে পারে দু’একটি জায়গা বাদে। জন্মগত দাগ, দুধ-সাদা দাগ, যে দাগগুলি হটাৎ চলে আসে এবং চলে যায়, যে দাগে চুলকানি আছে ইত্যাদি সাধারণভাবে কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ নয়।
১০। কুষ্ঠ রোগের কি কোনও ওষুধ আছে ? কুষ্ঠ রোগ কি সেরে যায় ? সারাজীবনই কি চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে?
উঃ হ্যাঁ কুষ্ঠ রোগের ওষুধ আছে। তিনটি ওষুধ, ড্যাপসোন, রিফামপিসিন ও ক্লোফজিমিন একত্রে গ্রহন করতে হয়। একে মাল্টি ড্রাগ থেরাপি বলে। রোগের ধরণের অনুযায়ী মাত্র ছয় অথবা বারোমাস ওষুধ (এমডিটি) গ্রহণ করতে হয়। সমস্ত সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই ওষুধ ও চিকিৎসা বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
১১। চিকিৎসা চলাকালীন বিশেষ কোনো সতর্কতা, খাওয়া দাওয়া চলা ফেরায় নিষেধাজ্ঞা?
উঃ কোনও বিধিনিষেধ নেই। খাদ্যাভ্যাসের সাথে কুষ্ঠ রোগের কোনোই সম্পর্ক নেই। রুগী হিসেবে চিহ্নিত হলে, চিকিৎসক রোগীকে পরীক্ষা করে দেখেন যে সে এই ওষুধ খাওয়ার জন্য শারীরিক ভাবে সক্ষম কিনা। তার পরে ওষুধ গ্রহণ চালু হয়।
১২। কুষ্ঠ রোগে সংক্রামিত বা রোগে ভুগছেন এমন কোনো মানুষের সাথে কি আমি বসবাস করতে পারবো?
উঃ হ্যাঁ পারবেন কারন কুষ্ঠ অতি সামান্য সংক্রামক। তবে রোগে ভুগছেন এমন মানুষের নিয়মিত এমডিটি ওষুধ খাওয়া বাধ্যতামূলক। অতি সম্প্রতি গবেষণার পরে PEP বলে একটি কর্মসূচি চালু হয়েছে। এই কর্মসূচি অনুযায়ী কুষ্ঠরোগীর পরিবারের বাকি সদস্য, তার বাড়ির আশেপাশের (তিনটি করে বাড়ি) প্রতিবেশী এবং তার সাথে সামাজিক মেলামেশা (শেষ একবছরে একটানা তিনমাসের বেশি সাপ্তাহিক কুড়ি ঘন্টার বেশি সামাজিক মেলামেশা) এমন মানুষ জনকে একবার একটি রিফামপিসিন ক্যাপসুল খাওয়ানো হচ্ছে।
প্রতিটি সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই চিকিৎসা পাওয়া যায়।
১৩। কোনো কুষ্ঠরোগীকে যদি আমি বিয়ে করি?
উঃ কেন নয়? আপনার শরীরে “কোষ ভিত্তিক প্রতিরোধ ক্ষমতা” বর্তমান থাকার সম্ভাবনা ৯৯%। অন্য যেকোন জুটির মতই আপনার বিবাহিত জীবন স্বাভাবিক হবে। যদি কাউকে প্রয়োজনীয় মাত্রার এমডিটি দিয়ে চিকিৎসা করা হয় তাহলে তিনি রোগমুক্ত ধরা যায়। মনে রাখবেন, এক কালে স্বামী বা স্ত্রী, কারুর কুষ্ঠ রোগ হলে তার ভিত্তিতে বিবাহ বিচ্ছেদ করা যেত। সেই বৈষম্যমূলক আইন এখন বাতিল হয়ে গেছে।
১৪। কুষ্ঠরোগীদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি আছে কি?
উঃ কুষ্ঠ বংশগত নয়, শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর রোগ হওয়া বা না হওয়া নির্ভর করে। আর ঘনিষ্ঠ মেলামেশার ঝুঁকির জন্য ওপরে উল্লেখিত পেপ ব্যবস্থা আছেই।
১৫। বাড়িতে রেখে কুষ্ঠরোগীর চিকিৎসা করা যেতে পারে?
উঃ হ্যাঁ। রোগীকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করাই ভাল। এতে রোগী মানসিক ভাবে চাঙ্গা থাকেন। হাসপাতাল বা কুষ্ঠ আশ্রমে কোনও অতিরিক্ত সুবিধে নেই। বাড়ির বাকি সদস্যদের ঝুঁকি থেকে রক্ষার জন্য ওপরে উল্লেখিত পেপ ব্যবস্থা আছেই।
১৬। কুষ্ঠ রোগে কি অঙ্গবিকৃতি অবশ্যম্ভাবী ? রাস্তা ঘাটে এত যে বিকৃত অঙ্গ রোগী দেখি ?
উঃ এইরোগে প্রধানতঃ প্রান্তিক স্নায়ু, ত্বক ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ আক্রান্ত হয়। সময়মতো রোগ নির্ণয় করে পর্যাপ্ত চিকিৎসা না হলে কিছু ক্ষেত্রে অঙ্গবৈকল্য ও অঙ্গ বিকৃতি হতে পারে।
রাস্তা ঘাটে যে বিকলাঙ্গ বা ঘা যুক্ত কুষ্ঠ রোগী আমরা দেখি, তাদের অধিকাংশই সেরে যাওয়া কুষ্ঠ রোগী। তারা সেই বিকৃত অঙ্গের যথাযোগ্য পরিচর্যা করে না বলেই ওই ভাবে বেঁচে আছে।
১৭। কুষ্ঠরোগের অঙ্গবিকৃতি কি ঠিক করা যায়?
উঃ হ্যাঁ, চিকিৎসা পর্ব চলাকালীন স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে এমডিটি ছাড়াও প্রেডনিসলন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়, ফিজিওথেরাপি বা ভৌত চিকিৎসার সাহায্য নেয়া হয়, ক্ষত স্থানের বিশেষ পরিচর্যা নেওয়া হয় ইত্যাদি।
চিকিৎসাপর্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পরে পুনর্গঠন-শল্য চিকিৎসা (রিকনস্ট্রাক্টিভ সার্জারি) করে বহুক্ষেত্রে। অঙ্গবিকৃতি ঠিক করা যায়। যারা ওষুধ পুরো খেয়ে শেষ করেছে, গত ছয়মাসে কোনও প্রতিক্রিয়ার ঘটনা হয় নি, গত তিন মাসে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খেতে হয় নি, অস্ত্রোপচার এর স্থানে কোনও সংক্রমণ নেই এই ধরণের রোগীকে ওই সার্জারির জন্য নির্বাচিত করা হয়।
সরকারি স্তরে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই চিকিৎসা করা হয় বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত প্লাস্টিক সার্জেন দ্বারা।
১৮। একজন কুষ্ঠরোগীকে সমাজে গ্রহণ করা উচিৎ?
উঃ কেন নয়? এই রোগটি যৎসামান্য সংক্রামক, এমডিটি বা বহু ওষুধ সমন্বিত চিকিৎসা দ্বারা সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। যক্ষরোগের মতই কুষ্ঠরোগ প্রধানতঃ হাঁচিকাশির মাধ্যমে ছড়ায়।
তিন মাত্রা এমডিটি খেলে একজন সংক্রামক রোগীর রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা চলে যায়, সে অসংক্রামক হয়ে পড়ে। যদি অনতিবিলম্বে রোগ নির্ণয় করা যায় এবং চিকিৎসা সঠিকভাবে সম্পূর্ণ করা যায় তাহলে কোন রকম অঙ্গ বৈকল্য বা বিকৃতি হয় না।
১৯। কুষ্ঠ আক্রান্ত কোন ব্যক্তিকে কাজকর্মে নিয়োগ করা যাবে? ছাত্রছাত্রী হলে পড়াশোনা?
উঃ হ্যাঁ, যদি ঐ ব্যক্তি চিকিৎসা চালিয়ে যান অথবা ইতিমধ্যে চিকিৎসা সম্পূর্ণ করে ফেলেছেন তাহলে সহনাগরিক/সহকর্মীদের কাছে তিনি আর কোন ভয়ভীতির কারণ থাকলেন না।
কুষ্ঠ রোগের কারণে কোনও ছাত্রছাত্রীকে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অথবা কর্মচারীকে বরখাস্ত করার সমস্ত বৈষম্যমূলক আইন বাতিল করা হয়েছে। এ ধরণের কাজ তাই আইনের চোখেও অপরাধ।
২০। কুষ্ঠ আক্রান্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্য কি কি কেন্দ্র আছে?
উঃ সারা ভারত জুড়ে বহু কেন্দ্র আছে যেখানে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের পাশপাশি অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের বন্দোবস্ত আছে।
২১। অঙ্গ বৈকল্য যুক্ত কুষ্ঠরোগী কি বিকলাঙ্গ ব্যক্তিদের প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা পেতে পারে?
উঃ হ্যাঁ, সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক এর মাধ্যমে এই ধরণের সুযোগ সুবিধা পাওয়ার বন্দোবস্ত আছে।
সংযোজনী এক:
জাতীয় কুষ্ঠ নির্মূল করন কর্মসূচিতে আশা কর্মীদের ভূমিকা:-
- কুষ্ঠরোগ সম্পর্কে নিয়মিত ভাবে জনসাধারণের মধ্যে সঠিক তথ্য প্রচার করা এবং তার মাধ্যমে এই রোগ সংক্রান্ত কুসংস্কারগুলি দূর করা।
- সন্দেহজনক রুগী যাতে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেরি না করে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য যায় তার উদ্দেশ্যে সচেতন করা ও সাহায্য করা।
- গৃহ পরিদর্শন এর সময় প্রশ্নোত্তর এর মাধ্যমে ও খালি চোখে দেখে সন্দেহজনক চিহ্নিত করা ও রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা করা। যে বাড়িতে কুষ্ঠরোগী আছে সে বাড়ির অন্য সদস্যদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা। প্রতি মাসে ১০০ জন মানুষকে এই ভাবে দেখতে হবে।
- নির্ণীত রুগী যাতে নিয়মিতভাবে ওষুধ খায় ও চিকিৎসার মেয়াদ সময় মতো শেষ করে তার জন্য নজর দেয়া ও নিয়মিত উৎসাহ দেওয়া।
- কোনও রুগী অনিয়মিত হয়ে পড়লে তাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা।
- যে সকল রুগীর অঙ্গ বিকৃতি আছে তারা যাতে নিজের বাড়িতেই নিয়মিত ওই বিকৃত অঙ্গ পরিচর্যা চালিয়ে যায় তার জন্য উৎসাহ দেওয়া।
- কুষ্ঠ রোগ সংক্রান্ত কাজ করার জন্য আশাকর্মীরা অতিরিক্ত উৎসাহভাতা পাবেন। আশা কর্মী দ্বারা চিহ্নিত ও প্রেরিত কোনও সন্দেহজনক যদি কুষ্ঠ রুগী হিসেবে নির্ণীত হন তাহলে কেস পিছু ২৫০ টাকা উৎসাহ ভাতা। (নতুন রোগীর কোনো অঙ্গবিকৃতি থাকলে ৫০ টাকা কম পাবেন)
- এছাড়াও পিবি শ্রেণীর রুগী চিকিৎসার মেয়াদ সম্পূর্ণ করলে কেস পিছু ৪০০ টাকা আর এম বি শ্রেণীর ক্ষেত্রে কেস পিছু ৬০০ টাকা উৎসাহ ভাতা পাবেন।
সংযোজনী দুই:
কুষ্ঠরোগে গান্ধীজির ভূমিকা: সংক্ষিপ্ত কালানুক্রম:
১৮৯৪-৯৫: ডারবান: রাস্তায় গান্ধীজির সাথে কুষ্ঠরোগীর সাক্ষাৎ।
১৮৯৭: ডারবান: নিজের বাড়িতে গান্ধীজি কুষ্ঠরোগীর পরিচর্যা করলেন।
১৯০৫: দক্ষিণ আফ্রিকা: ভারতে কাজ করতে গিয়ে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়েছেন এমন একজন মিশনারিকে নিয়ে গান্ধীজি একটি ছোট প্রবন্ধ লিখলেন।
১৯১৩-১৪: পুনে: সান্ধ্য ভ্রমণে বেরিয়ে গান্ধীজি একজন কুষ্ঠরোগীকে উদ্ধার করলেন।
১৯১৩-১৫: মাদ্রাজ: একজন কুষ্ঠরোগী যিনি বিশিষ্ট রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন তার ক্ষতস্থান গান্ধীজি নিজের কাপড় দিয়ে মুছে দিলেন।
১৯১৭: চম্পারণ: বিখ্যাত চম্পারণ যাত্রার সময় গান্ধীজি একজন কুষ্ঠরোগীকে সঙ্গে করে পৌঁছে দিলেন গন্তব্যে।
১৯২৫: কটক: ১৯শে আগস্ট, গান্ধীজি কটক কুষ্ঠ হাসপাতাল পরিদর্শন করলেন।
১৯২৫: পুরুলিয়া: ১২ই সেপ্টেম্বর গান্ধীজি পুরুলিয়া কুষ্ঠ হাসপাতাল পরিদর্শন করলেন।
১৯২৭: কটক: ২১শে ডিসেম্বর গান্ধীজি কটক কুষ্ঠ হাসপাতাল পরিদর্শন করলেন। তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। ওয়ার্ড ছেড়ে চলে আসার আগে কয়েকজনের সাথে মেলালেন হাত।
১৯২৯: আলমোড়া: কাঁসাই, বাগেশ্বর এর কুষ্ঠ হাসপাতাল পরিদর্শন করলেন গান্ধীজি।
১৯৩২: জেলে বন্দী অবস্থায় নিজের হাতে পারচুরে শাস্ত্রীর কুষ্ঠের ক্ষত পরিচর্যা করলেন গান্ধীজি।
১৯৩৯: পারচুরে শাস্ত্রীকে নিজের আশ্রমে আশ্রয় দেয়ার জন্য অন্যান্য আশ্রমিকদের মর্মস্পর্শী আবেদন জানালেন গান্ধীজি। আবেদন মঞ্জুর।
১৯৪০: দেশ বিদেশের বিখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে সাধারণ স্বাস্থ্যকর্মী যারা কুষ্ঠরোগ নির্মূল করার অভিযানে জড়িত তারা অনেকেই নিয়মিতভাবে ওয়ার্ধা সেবাগ্রামে আসছেন, গান্ধীজির সাথে আলাপ আলোচনা পরামর্শ করেছেন। উনি আধুনিক বিজ্ঞানের সাহায্যে কিভাবে এই রোগ দূর করা যায় তাতে উৎসাহী ছিলেন।
ডাঃ জীবরাজ মেহেতা এর দেওয়া ওষুধ সেবনের পরে শাস্ত্রীজির উন্নতি দেখে গাঁধীজি খুবই সন্তুষ্ট হন। কাছেই দত্তপুরে ওয়ার্ধায় মনোহর দেওয়ান কুষ্ঠ পুনর্বাসন কেন্দ্র খোলেন। শাস্ত্রীজি সেখানে স্থানান্তরিত হ’ন ও আমৃত্যু সেখানেই থেকে যান। গান্ধীজি এই মনোহর দেওয়ান কে “প্রকৃত মহাত্মা” খেতাবে সম্ভাষিত করেন।
১৯৪৪: সেবাগ্রাম: কস্তুরবা ট্রাস্ট গঠিত হ’ল। কুষ্ঠরোগ নিয়ে কর্মসূচি ওই ট্রাস্টের অন্যতম লক্ষ্য।
১৯৪৪: সেবাগ্রাম: গান্ধীজি দত্তপুর কুষ্ঠ হাসপাতাল পরিদর্শন করলেন ও তার কর্ণধার মনোহর দেওয়ানকে “প্রকৃত মহাত্মা” বলে আখ্যা দিলেন।
১৯৪৫: সেবাগ্রাম: ৯ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব বিখ্যাত কুষ্ঠ বিশেষজ্ঞ ডঃ ককরেন এসে দেখা করলেন গান্ধীজির সাথে।
১৯৪৬: মাদ্রাজ: ৪ঠা ফেব্রুয়ারি চেনগেলপুট উইলিংডন কুষ্ঠ হাসপাতালে রুগীদের সাথে দেখা করলেন গান্ধীজি।
১৯৪৭: ১২ই জানুয়ারি গান্ধীজি হরিজন পত্রিকায় কলম ধরলেন সিন্ধ প্রদেশের কুষ্ঠরোগীদের বাধ্যতামূলক বন্ধ্যাকরণ নিয়ে উত্থাপিত বিল কে ধিক্কার জানিয়ে।
১৯৪৭: নোয়াখালী: ৫ই ফেব্রুয়ারি তার প্রার্থনা শেষে সভায় গান্ধীজি কুষ্ঠরোগী ও অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের বিশেষ প্রতিনিধিত্ব এর কথা উল্লেখ করলেন।
১৯৪৭: কলকাতা: ৪ঠা সেপ্টেম্বর গান্ধীজি দেখতে গেলেন গোবরা মানসিক হাসপাতাল, বললেন যে এদের দুর্দশা কুষ্ঠরোগীদের চেয়েও খারাপ।
১৯৪৭: দিল্লি: ২৩শে ও ২৪শে অকটবর পরপর দু’দিন প্রার্থনা শেষের সভায় গান্ধীজি কুষ্ঠরোগের উল্লেখ করলেন। বার্তা পাঠালেন সারা ভারত কুষ্ঠরোগ কর্মী সম্মেলনে।