আবার সেই দুঃখ আর ভ্যাঁ-র গল্প। এ আবার যেমন তেমন দুঃখ নয়– খোদ কর্ণভূষণ-সম্পর্কিত মর্মবেদনা! কানে ‘মণিমাণিক্য খচিত কর্ণকুন্ডল’ ব্যতীত খোদ রাজা-মহারাজার চরিত্র চিত্রণের ক্ষেত্রেই ‘পার্সোনালিটি’ কিঞ্চিত কম পড়িয়া যায়– সেখানে মহিলার দুলহীন কান হলে কান যে কাটা পড়ে!
মা মেয়ে দুজনেই প্রায় কেঁদে পড়ল– মেয়েটি কানে দুল পরতে পারে না!!
যে কোনো দুল পরলেই অ্যালার্জি হয়। কানের লতিতে ভয়ানক ঘা, চুলকুনি। দেখাল। দেখলাম। প্রায়ই দেখি আমরা। শুধু দুল নয়–যে কোনো ধাতুর গয়না থেকেই এই সমস্যা হতে পারে, হয় অনেকের। ব্যাপারটা Contact Dermatitis, স্পর্শজনিত ত্বকপ্রদাহ। নিকেল ইত্যাদি ধাতুতে সবচেয়ে বেশি হয়– কারণ এরা ভীষণ প্রতিক্রিয়াশীল– চামড়ার সংস্পর্শে এলেই ফোঁস করে ওঠে আর নানারকম অঘটন ঘটায়। সোনা সবচেয়ে মহৎ ধাতু– কারো সঙ্গে কোনো ঝগড়া ঝাঁটিতে নেই। সাধারণত সোনার গয়নাতে অ্যালার্জি হয় না। আবার এক্কেবারে যে হয় না তাও নয়। সোনার ভেতর খাদ হিসেবে মেশানো অন্য ধাতুও থাকে তো। তারা কিছুটা দায়ী। এরকম কারো কারো হয়। বিরল ঘটনা। ইনি সেই বিরলদের মধ্যে একজন। যার সোনার ছোঁয়া লাগলেও অ্যালার্জি হয়।
গলার মালা আজকাল মুক্তো, পুঁতি, কাপড়, পাট, দড়ি, গামছা, খড় কুটো কোদাল এসব কিছু দিয়ে ম্যানেজ করা যায়। কিন্তু কানের দুল যা দিয়েই তৈরী হোক না কেন– সামান্য ধাতুর বাঁধুনি ছাড়া তাকে কানে আটকে রাখা যাবে না।
এই অ্যালার্জির চিকিত্সা আছে– হালকা স্টেরয়েড মলম আর অ্যান্টি অ্যালার্জির বড়ি। সে তো সাময়িকভাবে ভালো থাকার। সারাজীবন ধরে চলবে না।
মা মেয়ে নাছোড়– কিছু একটা ব্যবস্থা করুন। সারাজীবন দুল না পরে থাকব? দুল না পরে কলেজ যাব? বিয়েবাড়িতেও দুল পরব না? তাই হয়? দুল পরে পরদিন কান ফুলিয়ে ঘুরব? তাও কি হয়?
কি করা যায়? কানের সঙ্গে ছোঁয়া লাগবে না বা মিনিমাম ছোঁয়া লাগবে– এমন কানের দুলের ডিজাইন আঁকতে বসলাম। দুলের পেছনের চ্যাপ্টা গুঁজি থেকে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা অন্য ধাতুর হয়। এর মাঝে সাবান জল জমে থাকে– সেটাও অনেক সময় কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিসের কারণ। তাহলে গুঁজির সঙ্গে ছোঁয়া বাঁচানো যেতে পারে একটা ছোট করে কেটে কাগজের চাকতি দিয়ে তার উপরে গুঁজিটা গুঁজে। সরু তারের ঝোলানো হুক দিয়ে দুলটা যদি কানে আটকানো যায়, ধাতুর সঙ্গে ত্বকের স্পর্শের এরিয়া অপেক্ষাকৃত কম হয়। অর্থাৎ ধাতুর সঙ্গে ত্বকের মিনিমাম দেখা সাক্ষাৎ, মিনিমাম কনটাক্ট এরিয়া।
মলম আর ট্যাবলেটের সঙ্গে দু ‘চারটে এমন ডিজাইন এঁকে দিলাম। সোনা কেন রুপো দিয়েও বানিয়ে নিতে পার বাছা। সোনা রুপো কেনার মতো বড় ট্যাঁক আর ক’জনার–অন্য ধাতু হলেও চলবে। মেলা থেকে কেনা দু চার টাকার জাঙ্ক গয়নার মতো এক্সক্লুসিভ ডিজাইন, দুনিয়ার কোনো স্যাকরা আজ অবধি শিখে উঠতে পারেনি। সোনাদানা দু চক্ষের বিষ, জাঙ্ক গয়না দেখলে নিজেও লম্ফ দিয়ে কিনতে ছুটি কিনা– তাই ঘাঁতঘোঁতগুলো ভালো জানি। এগুলো কানের সঙ্গে স্পর্শের জায়গায় দুদিকেই দুটো কাগজের চাকতি দিয়ে পরতে হবে। তবে বেড়াতে যাবার সময় ছাড়া চব্বিশ ঘণ্টা পরে থেকো না বাপু। যা রয় সয় তা বারো মাস বয়।
কয়েক মাস পরে মেয়েটি এসেছিল আজ, পাশের চেম্বারে ডাক্তার দেখাতে। আমার সঙ্গে দেখা করে গেল, এসে কান টেনে দেখাল–এই দেখো আন্টি দুল পরছি এখন, অ্যালার্জি হয় না –কি মজা ।
সে দাঁত বার করে হাসছে আর আমি গম্ভীর মুখে বসে মনে মনে —