কাঁধে ব্যথা। শেষ ৬ মাসে ব্যথাটা বেড়েছে। বয়স হচ্ছে। ঠান্ডাও পড়েছে।
কিন্তু এ ব্যথাটা ঠিক সেইরকম নয়, একটু অন্যরকম। অনেকক্ষণ কাঁধে কিছু বয়ে নিয়ে গেলে যেমন ব্যথা হয়, অনেকক্ষণ কেউ কাঁধে হাত রাখলে যেমন ব্যথা হয়, সেইরকম। আগে কোনও আত্মীয় বন্ধুকে চিরকালের জন্য বিদায় জানাতে হলে কাঁধে করে বহন করে নিয়ে যাওয়া হতো। সেই যাত্রা পথে ভেসে উঠত ভালবাসা, মান-অভিমানের কোলাজ। চিরকালের জন্য হারিয়ে ফেলার হাহাকার। যে কাঁধে হাত রেখে সে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটত সেই কাঁধই তার ভার বইছে।
সেই একই কাঁধের ব্যথা, ফিরে ফিরে আসছে গত ৬ মাসে। প্রতিটি সহকর্মীর মৃত্যুর খবর, প্রতিটা চলে যাওয়া ডাক্তারের ছবির তলায় RIP লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে তাঁদের দেহ বহন করে নিয়ে চলেছি আমরা সবাই মিলে।
যোদ্ধারা বীরের মতো যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করলে স্বর্গে যায়। এই যোদ্ধারা বীরের থেকেও বীর, নিজের মৃত্যু যে কোনও সময় আসতে পারে জেনেও তাঁরা অন্যকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে ব্যস্ত। নিজের পরিজনেরা বিপদে পড়তে পারে জেনেও তাঁরা বেরিয়ে পড়েন এই মহামারীর সঙ্গে লড়াই করতে। এঁরা তো দেবশিশু। নিজের কাজ শেষ করে স্বর্গে ফিরে যাচ্ছেন। পাশে দাঁড়ানো সহযোদ্ধারা যাঁরা বয়ে নিয়ে গেলেন তাঁরা মৃত্যু দেখেও পিপিই পরে আবার যুদ্ধে নামেন, কোনও কিছুর প্রত্যাশা না করে। তাঁদের চোখ দিয়ে রক্ত গড়ায়, হৃদয় দিয়ে কান্না। কোনোটাই দেখা যায় না।
মহামারী কেটে যাবে। আমরা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাব। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে লাফালাফি শুরু হবে। প্রত্যাশা পূরণ না হলে মারামারি হবে। শুধু ডাক্তারদের মারার আগে দেখে নেবেন তাঁদের কাঁধের সেই দাগগুলো, যা একটার পর একটা মৃতদেহ বহন করার সময় পড়েছে।