খুব সোজাসাপটা বলছি। আমাদের দাদা হৃদরোগ এ আক্রান্ত হয়েছেন এবং তিনি হার্ট ভালো রাখার তেলের বিজ্ঞাপন করেন এই নিয়ে কিছু ট্রোল চলছে। সে নিয়ে কোন বক্তব্য আমার নেই। আমি বলছি কি খাবো কি খাবো না?
আমরা মুলত ভেজিটেরিয়ান অথবা নন ভেজিটেরিয়ান খাই। শস্য, ফল,সব্জি, মাছ মাংস। কিছু কাঁচা খাই বাকি বেশিরভাগটাই রান্না করে খাই, কারণ আমাদের গরুর মতো জাবর কাটার সময় নেই (এই রে! গোভক্ত রা বিশ্বাস করুন গোমাতাকে অপমান করার কোন অভিপ্রায় আমার নেই)। তাই প্রকৃতি কিছু এনজাইম আমাদের শরীর থেকে উঠিয়ে নিয়েছে আর তাছাড়া সারাক্ষণ খাবার হজম করার জন্য ইন্টেস্টাইনকে কাজ করতে হলে এত রক্ত সাপ্লাই করতে হবে যে মাথায় রক্ত কম পরে যাবে, খালি খাব না ভাবাও প্র্যাক্টিস করব?
যাই হোক কথা হল প্রকৃতিমাতা, এই গোটা শস্য, ফল, দুধ, সব্জি মাছ মাংসে আমাদের শরীরে যা যা লাগে সব ভরে দিয়েছেন। এক্সট্রা কিচ্ছু লাগে না। বছর তিরিশ আগেও মা ঠাকুমারা বাড়িতে কাঁচা খাবার রান্না করে আমাদের খাওয়াতেন আর আমরাও সোনা মুখ করে খেতাম। তেল বাবা কাকারা ঘানিতে ভাঙ্গিয়ে আনতেন।
সমস্যা শুরু হোল এই গোটা ব্যাপারটা ইন্ড্রাস্ট্রি হয়ে যাওয়ায়। তাই কি খাব তা আপনারা ডাক্তার বা নিউট্রিসনিস্ট নন, ক্রিকেটারের কাছ থেকে শোনেন।
খাবার প্যাকেট জাত করার সঙ্গে সঙ্গে খাবারের গুবমান কমতে থাকল। খাবারটা বেশিদিন টাটকা রাখতে হবে, না হলে পরিবহন, বিপনন সম্ভব নয়, তাই খাবার প্রক্রিয়াকরণ শুরু হল। যাকে বলে প্রসেসিং। ব্যাস খাবারের খাদ্যগুণ কমে গেল। আর আমরা খাবারটা দেখে নয়, প্যাকেটটা আর বিজ্ঞাপনে সেই প্যাকেটটা কে ধরে হাসছে তাই দেখে খাবার কেনা শুরু করলাম। তা সে অভিনেতা, খেলোয়াড়, যে কেউ হলেই হল। যাকে আমরা ভালোবাসি সেই আমার সব বিষয়ের এক্সপার্ট।
তাহলে কি খাবো কি খাবো না?
১. যত পারবো সরাসরি ক্ষেত থেকে আনা ফ্রেশ ফল সবজি খাব, রান্না করব সবজি মাছ মাংস ফ্রেশ, প্যাকেট খুলে নয়।
২. আমার খাবার হজম করার ক্ষমতা আমি পেয়েছি আমার পুর্বপুরুষের কাছ থেকে, বাঙালি ভাত খাবে, পাঞ্জাবি রুটি এটাই স্বাভাবিক। পশ্চিম ইউপির মানুষ ভাত হজম করতে পারে না তেমনি তেলেগুরা রুটি খেয়ে হজম করতে পারে না। যা ঠাকুমা বানাতেন তাই বানান।
৩. খাওয়া, পরিশ্রম অনুযায়ী ব্যালান্স করতে শিখুন, যত পরিশ্রম তত খাওয়া।
৪. প্রাকৃতিক কোন খাবারই ক্ষতিকর নয় আবার বেশি পরিমাণে সব কিছুই ক্ষতিকর। খাবারে কতটা ওমেগা থ্রি কতটা কোলেস্টেরল এইসব না মেপে সব কিছু পরিমিত খান (বেশি খেতে চাইলে বেশি পরিশ্রম করুন আর কোন উপায় নেই)।
৫. যতটা পারবেন প্যাকেট খুলে খাবার খাওয়া বা রান্না করা থেকে বিরত থাকুন। যাঁরা চল্লিশের বেশি তাঁরা মনে করে দেখুন ছেলেবেলার কথা, প্যাকেট না খুলে খাবার খাওয়া সম্ভব।
খাবারকে খাদ্যগুণ নষ্ট করে প্যাকেটজাত করে বেশি দামে (ওই যে দাদার বিজ্ঞাপনের খরচ ওটা আপনিই দিয়েছেন এখন আবার আপনিই হাসছেন) বিক্রি করার সুযোগ আমরা করে দিয়েছি, সেই সঙ্গে সুযোগ করে দিয়েছি নিজেদের স্বাস্থ্য হানি করবার। বরং নজর দিন খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপর। কতটা জেনেটিক্যালি মডিফাইড, কতটা পেস্টিসাইড ব্যাবহার হচ্ছে, কতটা ক্ষতিকর প্রিজারভেটিভ ব্যাবহার হচ্ছে এইসবের ওপর। মনে রাখবেন প্রকৃতি আমাদের সব দরকারী খাবারই দিয়েছে আমরা তাকে নিয়ে যেন বেশি বিকৃত না করি। সব খান আর খুব পরিশ্রম করুন। সবাই ভালো থাকুন। আর দাদা অবশ্যই সেরে উঠবেন আর আগের মতই দাদাগিরি করবেন। রাজনীতি না করলেই হল।