১.
ব্রঙ্কিওলাইটিস সরু শ্বাসনালীর প্রদাহজনিত রোগ। প্রদাহের কারণ মূলত ভাইরাস সংক্রমণ। শীতের শুরু থেকে মূলত দু’বছরের কম বয়সী শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হয়।
২.
জীবাণু সংক্রমণের ফলে শ্বাসনালী থেকে প্রচুর পরিমাণে মিউকাস নিঃসরণ হয়। ফলে শ্বাসনালী সরু হয়ে যায়। ফুসফুসে হাওয়া চলাচল ব্যাহত হয় এবং ফুসফুসে হাওয়া জমতে শুরু করে।
৩.
প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণ ভাইরাস সংক্রমণের মতো নাক, চোখ দিয়ে জল পড়া, জ্বর, অল্প কাশি এসব দেখা যায়। খারাপ ধরনের ব্রঙ্কিওলাইটিসে উচ্চ তাপমাত্রা, খাবার খেতে না পারা, তীব্র শ্বাসকষ্ট, বুকে শাঁইশাঁই আওয়াজ এসব দেখা যায়।
৪.
সাধারণ ব্রঙ্কিওলাইটিসে রোগ নির্ণয়ের জন্য বিশেষ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। সামান্য চিকিৎসায় অধিকাংশ বাচ্চা সুস্থ হয়ে যায়। খারাপ ধরনের ব্রঙ্কিওলাইটিসে আপনার ডাক্তার প্রয়োজন মনে করলে কিছু রক্ত পরীক্ষা, বুকের ছবি করতে বলতে পারেন। উন্নত দেশগুলোতে এবং কিছু অত্যাধুনিক টার্শিয়ারী হাসপাতালে সংক্রামক ভাইরাস নির্ণয়ের পরীক্ষা করা হয়। যদিও রোগের চিকিৎসায় তার খুব বেশি ভূমিকা নেই।
৫.
বাড়িতে প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়ান। নাক বন্ধ হ’লে বারবার নর্মাল স্যালাইন নাকের ড্রপ দিন। বাচ্চার শরীরে জলশূন্যতা হ’তে দেবেন না। খারাপ ধরনের ব্রঙ্কিওলাইটিসে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করা দরকার। খারাপ রোগে দু-তিন সপ্তাহ অব্দি কাশি থাকতে পারে।
৬.
ব্রঙ্কিওলাইটিসে শ্বাসনালী ফোলানোর ওষুধ, স্টেরয়েড বা অ্যান্টিবায়োটিকের প্রায় কোনও ভূমিকা নেই। এই পয়েন্টটা বিশেষ করে মাথায় রাখুন – ‘জ্বর হওয়া’ বা ‘কাশি না কমা’ অ্যান্টিবায়োটিকের অভাবজনিত লক্ষন নয়। কাশি কমছে না দেখে ব্রঙ্কিওলাইটিসে কোটি-কোটি অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ালে আদপে বাচ্চারই ক্ষতি। আপনার ডাক্তারের ওপর বিশ্বাস রাখুন। অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার জন্য ডাক্তারের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করবেন না।
৭.
কম ওজনের বাচ্চা, জন্মগত অনাক্রম্যতা-হ্রাসজনিত রোগ, জন্মগত হৃৎযন্ত্রের রোগ, দীর্ঘদিন স্টেরয়েড নেওয়া বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া দরকার। এসব ক্ষেত্রে ভাইরাস মারার ওষুধ, মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ইত্যাদি দিয়ে চিকিৎসার দরকার হ’তে পারে। যদিও সাধারণ ব্রঙ্কিওলাইটিসে এসব ওষুধের বিশেষ কিছু প্রয়োজন হয়না।
৮.
খুব বেশি তাপমাত্রা, বুকের দুধ বা খাবার খেতে না পারা, বারবার বমি, শ্বাসক্রিয়ার হার বেড়ে যাওয়া, নেতিয়ে পড়া বা পেচ্ছাব কমে যাওয়া.. এসব লক্ষন দেখলে দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যান।
৯.
বাড়িতে বাচ্চার সামনে বিড়ি-সিগারেট খাবেন না। পারলে একদম ছেড়ে দিন। তাতে আদপে আপনারই লাভ। সর্দি-কাশিতে ভুগছে এমন বাচ্চাদের থেকে সুস্থ বাচ্চাকে দূরে রাখুন। পরিষ্কার করে সাবান দিয়ে ধোবেন। বাচ্চাদের নাক-মুখ চেপে হাঁচি-কাশির ব্যাপারটা বেশ কষ্টকর। তবু চেষ্টা করুন নাক-মুখের সর্দি-জল পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলতে। খেলনা, বল, পুতুল, দরজা-জানালা এসব লেগে থাকা জীবাণু থেকেও সুস্থ বাচ্চার সংক্রমণ হতে পারে।
১০.
এ রোগের কোনও ভ্যাক্সিন এখনও তৈরি করা সম্ভব হয়নি। সাধারণ স্বাস্থ্য-সচেতনতা গড়ে তুলুন। এবং অবশ্যই অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্ক হোন।
খুব ভালো পোস্ট, উপকৃত হলাম
আপনার দুটো পোষ্ট ই খুব ভালো লাগলো।
শাসকষটো ও ন কমা কাঁসির বিষয়ে কিছু বলুন ।