৭ই এপ্রিল, ২০২১ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে সারা পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে শুভেচ্ছা বার্তা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা প্রতিটি নাগরিককে এক উন্নততর সুস্থ পৃথিবী গড়ে তোলার প্রচার অভিযানে যোগ দিতে আহ্বান করেছেন।
আমরা জানি পৃথিবী জুড়েই নানান বৈষম্য ছড়িয়ে আছে। কিছু মানুষ অন্যের তুলনায় অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে বড় হন। কেননা যে পরিবেশে তাঁদের জন্ম, তাঁদের পক্ষে বেড়ে ওঠা, বেঁচে থাকা, কাজকর্ম করা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি সহজ হয়। একইভাবে তাঁরা অন্যান্য ক্ষেত্রের মত স্বাস্থ্যপরিষেবাতেও অন্যদের তুলনায় বেশি সুযোগ-সুবিধা পান। ফলত তাঁরা অন্যদের তুলনায় সুস্থতর জীবন যাপন করতে পারেন।
এর বিপরীতে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই স্বল্প দৈনিক আয়, কম কাজের সুযোগ, খারাপ বসবাসের ব্যবস্থা, শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া, লিঙ্গ বৈষম্য ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে লড়াই করে বেঁচে থাকেন। একটি মানুষের বেড়ে ওঠার জন্য যে সঠিক নিরাপদ পরিবেশ, পরিশুদ্ধ জল- বায়ু, খাদ্যের নিরাপত্তা ও সঠিক স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রয়োজেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা তাঁরা পাননা।
মানুষের মধ্যে এই বৈষম্য অন্যায্য তো বটেই, কিন্তু একে প্রতিরোধ করা যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে মানুষকে তার সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দিতে হবে। তারা নেতাদের কাছে প্রতিটি মানুষের সুস্বাস্থ্য ও বেঁচে থাকার জন্য কাজের সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছেন। আসলে কাজের সঙ্গে স্বাস্থ্যের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। সমস্ত মানুষ যেন তাঁদের প্রয়োজন মত সঠিক গুণমানের স্বাস্থ্যপরিষেবা পান তা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে।
সারা পৃথিবী জুড়ে সবার ওপরেই কোভিড 19 মহামারী আঘাত হেনেছে। কিন্তু এই আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেই বিরাট সংখ্যক বঞ্চিত মানুষ, যাঁরা গৃহহীন অবস্থায় অসুরক্ষিত জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁরা ভালো গুণমানের চিকিৎসা পরিষেবা কম পান। খুব স্বাভাবিক ভাবেই এইসব মানুষেরা রোগের সংস্পর্শে বেশি করে এসেছেন। অতিমারী সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য রাষ্ট্র দ্বারা নেওয়া ব্যবস্থাগুলিতে তাঁরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এরকম একটা সংকটের সময়ে নেতাদের উচিত সমাজের স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কাজ করা, যে বিশাল সংখ্যক সুবিধাবঞ্চিত গরিব মানুষ লকডাউনের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাঁদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে তাঁদের সমস্যার সমাধান করা। এই কাজ করতে গিয়ে সামাজিক অসাম্যগুলোকে চিহ্নিত করে তা দূরীকরণের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। কাজ করতে করতে দেখা যাবে অধিকাংশ সমাধান গুলি কখনো স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের ভেতরকার বা কখনো স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের বাইরের সমস্যা। সরকার এবং সমাজ যদি সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে একসঙ্গে কাজ করে তবে অবশ্যই সামাজিক ক্ষেত্রে তার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়ে।
এই কাজ করতে গিয়ে প্রথমে প্রয়োজন নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করা। বয়স, লিঙ্গ, আয়, শিক্ষা, বিকলঙ্গতা, স্থান ভৌগোলিক অবস্থান এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ভেদে একটি নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যের তথ্য জোগাড় করে তা ব্যবহার করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে তাহলেই উপজনগোষ্ঠীগুলির মধ্যে যে সব ফারাক আছে তা বোঝা যাবে, পাশাপাশি তার প্রতিরোধকারী ব্যবস্থাও নেওয়া যাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও তার সহযোগীদের মতে যেসব দেশ পারস্পরিক ঝগড়া ও বিবাদে ক্ষতিগ্রস্ত সেখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শৈশবের বিকাশ। পাশাপাশি মানুষের ভালো থাকা তথা স্বাস্থ্য ও কাজের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এইসব ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে বৈষম্যের মূল কারণগুলি খুঁজে বের করে প্রতিরোধের চেষ্টা করা উচিত সরকারের। এর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ বাড়ানো। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ভবিষ্যতে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।
সারা পৃথিবী জুড়ে সকল নাগরিককে স্বাস্থ্যপরিষেবা দেওয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দেশগুলিকে তাদের জাতীয় সীমারেখা পেরিয়ে কাজ করার অনুরোধ করেছে। পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবার সুরক্ষা দিতে পারলেই কোভিড 19 অতিমারী কে রুখে দেওয়া সম্ভব। কোভিড 19 প্রতিরোধ করতে সারা বিশ্বে নিয়মিত চিকিৎসা, পরীক্ষা ও টিকার সমতামূলক সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এই কাজে সমাজের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বার্তার ভাবানুবাদ।।