তিথি মন্ডল, ২৮ বছর বয়স। (নাম পরিবর্তিত)
Nasopharynx বা গলবিলের ক্যান্সার, কেমোথেরাপি দিয়ে খুব ভালো কাজ হওয়ায় প্ল্যান ছিল রেডিয়েশন ও কেমো একসাথে দেবার। কয়েকদিন আগে বাড়ির লোকজন এসে খবর দেয় রোগ নাকি অনেক বেড়ে গেছিল, নাক দিয়ে প্রচুর রক্তপাত হওয়ার স্থানীয় হাসপাতালে ভরতি। জানতে চাইছিলেন, মেডিকেল খোলা কিনা, এলে চিকিৎসা হবে কি না। উত্তর দিতে পারি নি।
শেখ মতিউর, ৪৭ বছর বয়স। (নাম পরিবর্তিত)
ফুসফুসের ক্যান্সার, ছড়িয়ে গেছিল শিরদাঁড়ায়। চেষ্টা করা হয়েছিল রেডিয়েশন দিয়ে শিরদাঁড়ার টিউমার কমানোর, যাতে ব্যথা কম থাকে, যাতে হঠাৎ শিরদাঁড়া ভেঙে হাত পা এবং অন্যান্য অঙ্গ অকেজো না হয়। মাঝখানে বড়ো দিনের গ্যাপ -এখন অনেক চেষ্টায় কোনোমতে হাঁটছেন, রোগের কী অবস্থা (নিঃসন্দেহে খারাপ) তা হয়ত আরো কিছু পরীক্ষায় বোঝা যাবে।
নুপুর দাস, ৪৫ বছর বয়স। (নাম পরিবর্তিত)
ব্রেস্ট ক্যান্সারের পেশেন্ট, কেমো দিয়ে টিউমারের সাইজ কমিয়ে অপারেশন করার কথা, কেমো দেওয়ায় কাজ ও হয়েছিল ভালোই। তারপর লকডাউন আর কোভিড হাসপাতালের ভয় কাটিয়ে যখন আউটডোরে এলেন, টিউমার বেড়ে আগের অবস্থায়। ব্রেস্ট ক্যান্সার – যে রোগে আজকের দিনে চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির জন্য রোগীর 5 বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অন্তত 70 থেকে 80 শতাংশ, সেখানে আগের অবস্থায় পৌঁছে যাওয়া মানে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আর নেই বললেই চলে।
খুরশিদা বেগম, ৬০ বছর বয়স। (নাম পরিবর্তিত)
ব্রেস্ট ক্যান্সার, চিকিৎসা শেষ হওয়ার দশমাস পর এসেছিলেন বগলে ফোলা নিয়ে। বায়োপসি করতে বলা হয়েছিল৷ আজ আরো দেড় মাস পর, এখনো বায়োপসি হয় নি, আর ফোলাও বেড়েছে বেশ খানিকটা (রোগ ফিরে আসার সম্ভাবনা বেশ ভালোই)।
কলকাতা মেডিকেল কলেজকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয় ৭ই মে থেকে। তার অনেক আগে, লকডাউন ও করোনা আতঙ্কের শুরুতেই কমে গেছিল পেশেন্ট আসার পরিমাণ। ট্রিটমেন্ট কোর্সের মধ্যে থাকা পেশেন্টদের ট্রিটমেন্ট আটকে যায়, আটকে যায় ট্রিটমেন্ট শেষ হওয়া পেশেন্টদের ফলো আপ। তারপরেও কিন্তু পেশেন্টরা খুব বেশি দিন বাড়িতে আটকে থাকতে পারেনি, তাঁরা বা তাঁদের বাড়ির লোকজনেরা কষ্ট করেই এসেছেন হাতে প্রেসক্রিপশন নিয়ে, ক্রমশ দিন বাড়তে থাকা লকডাউনের মধ্যেই।
বাড়ছিল পেশেন্ট আসার পরিমাণ, কারণ বাড়তে বাধ্য; কারণ রোগটার নাম ক্যান্সার ; কারণ চিকিৎসা ছাড়া রোগটাকে আটকে রাখার কোনো উপায়ইই নেই। তাই কেমোথেরাপি রেডিয়েশন সবই চলছিল লকডাউনেও৷ এবার এই ৭ই মে থেকে এই বিপুল সংখ্যক পেশেন্ট দের কি হল?! “Only covid” কাজেই সাধারণ আউটডোর বন্ধ। যাঁদের সাসপেক্টেড ক্যান্সার ছিল, তাঁরা বায়োপ্সি করতে পারলেন না, যাঁদের বায়োপ্সি হয়েছিল তাঁরা বাকি পরীক্ষা করাতে পারলেন না। যাঁদের কেমোথেরাপি চলছিল, পরবর্তী ডেট ছিল মে মাসেরই কোন এক তারিখে, তাঁরা নির্দিষ্ট দিনে গাড়িভাড়া করে লকডাউনের মধ্যে (আশা করি যাতায়াতের খরচ বা সমস্যা বুঝতেই পারছেন) এসে দেখল কেমোথেরাপি হচ্ছে না, পরিবর্তে রেফার করা হচ্ছে অন্য দুটি সরকারি হাসপাতালে। তাঁরা ভেবেই পাননি চিকিৎসার মাঝপথে কিভাবে অচেনা হাসপাতাল গিয়ে সব ব্যবস্থা করবেন। যাঁরা অন্য হাসপাতালের নির্দিষ্ট ডিপার্টমেন্টে গিয়ে পৌঁছাতে পারলেন, তাঁরাও পরবর্তী চিকিৎসার ডেট পেলেন অনেক দেরিতে, কারণ হাসপাতালগুলিতে এমনিতেই রোগীর লম্বা লাইন। যাঁদের রেডিয়েশন চলছিল বা শুরু হবার ডেট ছিল তাঁদেরও একই অবস্থা।
আর এসবই হল মাত্র ৩ দিনের নোটিশ। LEVEL 4 COVID EXCLUSIVE HOSPITAL! সব ভর্তি বন্ধ, সব ওয়ার্ড তড়িঘড়ি ফাঁকা। কোন পরিকল্পনা নেই এত পেশেন্টের কী হবে! পরদিন পেশেন্ট আসলে তাঁদের কোথায় ঠিক করে রেফার করা হবে বা রেফার করলেও যেখানে রেফার করা হবে সেখানে ভর্তি হবে/ দেখা হবে কিনা তার বিন্দুমাত্র নিশ্চয়তা নেই।
উপরে যে কজনের নাম বললাম (প্রত্যেকের নাম পরিবর্তিত) তা ছাড়াও আছেন তাঁরা যাঁরা গত পাঁচ বছরে বা তারও আগে চিকিৎসা করিয়ে আজ সুস্থ, কিন্তু নিয়মিত চেক আপে আছেন, কারণ যেকোনো সময় এই মারণ রোগের ফিরে আসার সম্ভাবনা থেকেই যায়। এরকম অসংখ্য ঘটনা ক্রমাগত ঘটছে, এবং ঘটবেও – যদি রাজ্যের এত বড়ো একটা টার্সিয়ারি কেয়ার সেন্টার সর্বোপরি মেডিকেল কলেজকে “Only Covid” বানিয়ে সাধারণ মানুষের চিকিৎসাকে আটকানো হয়।
কারণ কোভিড কেস নিকট ভবিষ্যতে কমার সম্ভাবনা প্রায় নেই, কাজেই Only Covid ব্যবস্থাও থাকবে অনির্দিষ্টকাল। এরকম পরিস্থিতি চলতে পারে না। কোভিড পরিষেবা থাকুক, শুরু হোক নন কোভিড সাধা্রণ পরিষেবাও। সবার জন্যই।
নাহলে প্লিজ আমাদের এই ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করা হোক যাতে রোগীরা মরিয়া হয়ে চিকিৎসা নিতে আসলে বলতে পারি, “আগে করোনা পজিটিভ হয়ে এসো, তারপর তোমার ক্যান্সারের চিকিৎসা করব”।
Life threatening condition should be treated parallel y along with covid treatment.
অন্য রোগীর জীবনের বিনিময়ে করোনা’র চিকিৎসা হচ্ছে। মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটছে। ক’টাই বা আমরা জানতে পারি! আপৎকালীন অবস্থা সামাল দেওয়ার জন্য কোনও ব্যবস্থাই নেই। কারণ প্রায় পুরোটাই তুলে দেওয়া হয়েছে প্রাইভেটের হাতে।
প্রশ্ন হলো এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার কি ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষা নেবে?
COVID-19 চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসপাতালের ব্যবস্থা করা হোল না !প্রতিদিন হাজার হাজার মৃত্যু পথযাত্রী রোগীকে সুস্থ করা হাসপাতাল বন্ধ করে covid হাসপাতাল করা হোল, কারণ সরকারের নাকি টাকা নেই ! অথচ এই লক ডাউন পর্যায়ে ও ক্লাব গুলোকে টাকা দেওয়া হলো !কয়েক হাজার কোটি দিয়ে মারণাস্ত্র কেনা হলো !কর্পোরেট দের ছাড় দেওয়ার বন্যা বইলো !প্রকৃতি ধ্বংস করে বৃহৎ পুঁজির বিকাশের পথ প্রশস্ত করার ছাড় পত্র দেওয়া হোল !শ্রমিক শোষণের মাত্রা বাড়াতে বহু সংগ্রামে বহু জীবনের বিনিময়ে অর্জিত অধিকার খর্ব করতে শ্রম আইন সংশোধন করা হোল ! বহু পরিযায়ী (? )শ্রমিকদের হত্যা করা হলো !খেটে খাওয়া মানুষ দের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোল !
আসলে সরকার গুলো সাধারণ জনগণের জন্য নয় l শুধু ভাঁওতা দেওয়ার জন্য বলে গণতান্ত্রিক সরকার বা মা মাটি মানুষের সরকার !
As
একটাই জিনিস অদ্ভূত লাগে, এই সিদ্ধান্ত যাদের সাহায্যে নেওয়া হয়, তারাও তো ডিগ্রীতে ডাক্তার। মেডিকেল কলেজের গুরুত্ব তাদের অজানা?!