আজ চেম্বারে বুচকি এসেছিল। দেড় হপ্তা আগে ওর একটা বাচ্চা হয়েছে। সে বাচ্চা আবির্ভাব হতে অনেক ধানাই পানাই করেছে। বিয়ের পরেও প্রায় দশটা বছর ছুটিয়ে খাটিয়ে ছেড়েছে ওর হবু মাইবাপকে।
বছর তিরিশ আগে বুচকিও একদিন আমার উপস্থিতিতে বাইরে বেরিয়ে এসে বাতাসের অক্সিজেন নিতে শুরু করেছিল।
সেই বুচি যখন অ্যাডোলেসেন্ট হল, তখন থেকে তার হাজিরা শুরু হয়েছিল আমার চেম্বারটায়। বিয়ের পরেও। এইসব মানুষগুলোর বোধহয় আমার ঘাড়ের ওপরে একটা অধিকার গজিয়ে যায়।
একবার ভেবেছিলাম এই বুচি কুচিদের নিয়ে, যাদের জন্ম প্রমাণপত্র আমাকে লিখে জানাতে হয়েছে, তাদের নিয়ে একটা সম্মেলন করবো; পরে দেখলাম তাহলে একটা স্টেডিয়াম ভাড়া নিতে হবে। শেষ পর্যন্ত মোল্লা অতদূর দৌড়ায়নি আর।
সম্ভবতঃ শ্যাম বেনেগালের মন্থন সিনেমাটায় একটা ডাক্তারের চরিত্র ছিল। সেই ডাক্তার তার চেনা পেসেন্ট পার্টির পরিবারের সবরকম সুকর্ম অপকর্মের উপদেষ্টা ও শরিক ছিল। আগেকার দিনে এরকম হতো। এমনকি বাড়ির ছেলে বা মেয়ের বিয়েতে পাত্রী বা পাত্র নির্বাচনেও নাক গলাতো।
অতটা না হলেও, বেশ কিছু ব্যাপারে দেখা গেছে, আমাকে না বললে ওদের শান্তি হয়না। আর আমিও অম্লান বদনে খানিক ‘নাক গলিয়ে’ ফেলি।
বুচি এসেই তার চিকিৎসাপত্তর এটা সেটা মিটে যাবার পরেই উঠে চলে যাওয়ার চেষ্টা না করে বরং চেয়ারটা আরো কাছে টেনে এনে বললো, ডাক্তার আঙ্কেল, আমি পটি করতে হলে কি দেশি মডেলে বসবো নাকি বিদেশী?
আমি জাস্ট বললাম, আমাদের দেশে কতজনের ঘরে কমোড আছে রে? আর কতোজনের ঘরে বাচ্চা পয়দা হয়?
আসলে, কেসটা হয়েছে কি, বুচকির বাচ্চা হওয়ার আগে ওর বর বাড়িতে নতুন টয়লেট বানিয়েছে, সেখানে অনেকবার বলা সত্ত্বেও সে কমোড বসায়নি।
কেন?
তার বিশ্বাস কমোডে বসলে নাকি ঠিকঠাক আউটপুট হয় না। আর, প্রশ্নের মাধ্যমে আমি যে যুক্তিটা এয়ার (Air) করলাম এইমাত্র, সেই কথাটাই নাকি ওর কত্তামশাই বলেছিল। আর এটাও বলেছিল যে সে লুঙ্গি পরে বা গামছা পরে ওখানে ঢোকে। জুতো পায়ে প্যান্ট শার্ট পরে বা স্কিনফিট লোয়ার পরে যারা ঢোকে, তারা তো আর হাঁটু মুড়ে… তাদের জন্য ঐসব উদ্ভট জিনিস বেরিয়েছে, কারণ ওগুলো খুলে রাখতে মূল্যবান সময় নষ্ট হয়, ততক্ষণে গীয়ার নিউট্রালে। অর্থাৎ অবধারিত ভবিষ্যত IBS, তাও আবার শীতের দেশে কিংবা ACতে থাকলে। আমার কথা শুনে সেই কত্তা তখন তূরীয় আনন্দে, মানে আনন্দ প্লাস প্লাস অবস্থায়।
বুচকি বেচারী মনমরা হয়ে গেল। আহা, অমন ফূর্তিবাজ মেয়েটার এমন কচুপানা মুখ দেখে মনে হল, বেশি যুক্তি ফ্যাদাতে গিয়ে সেমসাইড করে ফেলেছি। আশু রিপেয়ার কর্তব্য।
বললাম, একদিন দেখবি, জামাইবাবাজিই কমোড বসাচ্ছে, যখন ওর হাঁটুতে ব্যথা শুরু হবে।
এইবার, মাসির আমার হাসি ফিরলো।
ওহ্, সেটাতো শুরু হয়ে গেছে সুভান আল্লাহ।