গ্যাসের আমি গ্যাসের তুমি।। দীর্ঘদিন ধরে ডাক্তারি করে আজও বুঝলাম না গ্যাসটা কী বস্তু। চুল পাকল, পাকা চুল ঝরে টাকও গজালো, তবু আজও যখন রুগি এসে বলে ডাক্তারবাবু, গ্যাসে বড় কষ্ট পাচ্ছি, তখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে — আজও। বহু জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় কারও হয় মাথাব্যথা। কারণ খুঁজলে পাই কারও চোখের রোগ, কারও আবার উচ্চ রক্তচাপ, কারও আবার সাইনাস পেকেছে।
অধিক কথায় কাজ কী ? বরং অনেক ঘটনার থেকে একটিই বেছে নিই। এক অ্যাপার্টমেন্টের তিনটি ছোট ছোট ফ্ল্যাটে তিন বৃদ্ধ বন্ধু বাসা বাঁধলেন। ভুবনবাবু, শোভনবাবু আর খগেনবাবু। এক সঙ্গে একই দিনে গৃহপ্রবেশ। জব্বর খাওয়াদাওয়া। সন্ধ্যাকালে ভুবনবাবুর হল বুকে ব্যথা, সঙ্গে ঘাম আর শ্বাসকষ্ট। ওঁর প্রতিবেশীরা বিভিন্ন গ্যাসের ওষুধ দিলেন। সারাটা রাত বেচারা কষ্ট পেলেন। তার পর শেষ রাতে ওঁর চোখ দু’টি বুজে এল। শ্বাসের ঘড়ঘড় শব্দটাও কমল। তার পর এই বেচারা অধম ডাক্তারের ডাক পড়ল। তখন ভোর হয় হয়। গিয়ে দেখি ভুবনবাবু ঘুমিয়ে পড়েছেন ঠিকই, তবে এটা ওনার চিরনিদ্রা।
ভুবনবাবুর ভবলীলা সাঙ্গ হল। ভদ্রলোক কি শুধুমাত্র গ্যাস থেকেই মারা গেলেন?
বহু দিন আগে এক সন্ধ্যাবেলা এক বৃদ্ধ দাঁতের ব্যথায় কাতর হয়ে প্রচুর ঘামতে ঘামতে আমার ভাঙা চেম্বারে এলেন। হাত দু’টো ঠান্ডা বরফ। চোখ গর্তে বসে গেছে। বলা বাহুল্য পটাং করে একটা ইসিজি করে ফেললাম। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। বেশ কিছু দিন ভুগে পিজি হাসপাতাল থেকে বেঁচে ফিরলেন।
আমরা বাঙালিরা ‘বিটিং হার্ট বাইপাস’ জানি, ভালো কোলেস্টেরল, মন্দ কোলেস্টেরল জানি, কিন্তু জানি না হার্ট অ্যাটাক হলে কী কী লক্ষণ হয়। সুকুমারের ভাষায় পাগলা ষাঁড়ে করলে তাড়া ঠেকাবার উপায়টা জানা নেই।
হার্ট অ্যাটাক হলে সাধারণ ভাবে বুকে ব্যথা হয়, কারও কারও বুকে চাপ ভাবও হতে পারে। প্রচুর ঘাম হয়, বমিও হয়। রক্তচাপ সাধারণ ভাবে কমতে থাকে। অনেকের ব্যথাটা চোয়ালে হতে পারে বা বাঁ হাতে থাকতে পারে।
এই ক’টা জিনিস মনে রাখলেই আর মাঝে মাঝে অর্থাৎ রোগে ধরার আগে মাঝে মাঝে পরীক্ষাটরীক্ষা করিয়ে রাখলে বিপদ অনেক দূর ঠেকিয়ে রাখা যায়। কিন্তু ধরা যাক, হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলোসমেত কোনও এক জন ওই রকম অবস্থায় পড়লে তখন কী করবেন ? অবশ্যই ডাক্তার ডাকবেন না। কথাটা পাগলের প্রলাপ নয়। হার্ট অ্যাটাকে সাধারণত প্রথম চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই চিকিৎসা করতে হয়। এই রোগে রক্ত জমাট বেঁধে হার্টের শিরা-ধমনীর মধ্যে আটকে রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয়। হার্টের পেশিগুলো রক্ত আর অক্সিজেন না পেয়ে মরে যায়। রক্তের দলাটা প্রথম চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই গলিয়ে দেওয়া সম্ভব। সুতরাং কোন ডাক্তার ডাকব, কখন তাঁকে নিয়ে পৌঁছব, তার পর কোথায় ইসিজি পাব, এই সবেই প্রথম দু-তিন ঘণ্টা চলে যাবে। সময় কিন্তু কম। অনেক ক্ষেত্রেই অসুখ এতটা সময় দেবে না। এর পর অ্যাম্বুলেন্স ডাকা, হাসপাতাল পৌঁছনো, বেড পাওয়া — ঝামেলা তো কম নয়।
তা হলে করবটা কী ?
ঠিক কথা। লাখ কথার এক কথা। বরং রুগীকে অ্যাসপিরিন ৩০০এমজি আর অ্যান্টাসিড, পারলে কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ ৪০এমজি খাইয়ে সোজা এমন হাসপাতালে নিয়ে যান যেখানে পরীক্ষাটরীক্ষা করে ঠিক দেখলে রুগীকে ফেরত পাঠাবে। না হলে প্রয়োজনে পুরো চিকিৎসা করবে। মনে রাখবেন প্রথম ছ’ঘণ্টার মধ্যে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টিই সেরা এবং নিরাপদতম চিকিৎসা। আসুন বরং প্রার্থনা করি এই রোগ যেন শত্রুরও না হয়।
শেষ কথা গ্যাসের জন্য বুকে ব্যথা, ঘাম ইত্যাদি ইত্যাদি হয় না।
সক্কলে ভালো থাকুন, মনের সুখে খেলাধুলো করুন। বাড়তি ওজন কমান। গান করুন, গান শুনুন। দৌড়ন। সুস্থ না থাকলে এত মধুর জীবন, এত সুন্দর পৃথিবীর রং রস রূপ গন্ধ বর্ণ সব কিছু উপভোগ করবেন কী করে?
Thanks for such good information.
ধন্যবাদ ভাই
কাব্যিক শিরোনাম চোখ টানলো, কিন্তু এত সংক্ষিপ্ত আলোচনায় হৃদয় ভরিল না ।
আমার মনে হয় আমরা ভবিষ্যতে আরও আলোচনা করতে পারবো । তবে বিপদে কি করতে হবে সেটা জানার জন্য এটা । সব পেলে নষ্ট জীবন ।
ধন্যবাদ ভাই
Helpful your valuable advice