সপ্তমী দিনটা ছুটি পেলেও মহাষ্টমী কেটে গেল কাজের চাপে। সারাদিন ধরে ইমার্জেন্সি করে সন্ধ্যাটাও বাদ গেল না। বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় মাঝরাত।
তবে যাতায়াতের পথে লক্ষ্য করা গেল পুজোর ভীড় কিন্তু বেশ কম। রাসবিহারী কানেক্টরে ট্রাফিক জ্যাম নেই। বড় পুজোর মণ্ডপের সামনে বিস্তর ফাঁকা জায়গা। উৎসাহীরা ব্যারিকেডের বাইরে থেকেই সেল্ফি তুলতে ব্যস্ত। পুলিশ সার্জেন্টরাও বেশ শান্তিতে রয়েছেন মনে হলো। রাস্তা খুঁড়ে তৈরী করা বাঁশ দিয়ে ঘিরে রাখা ‘প্রবেশ’ এবং ‘বাহির’পথ প্রায় জনশূন্য বললেই চলে। মুহুর্মুহু অমুক হারিয়ে গেছে বা তমুকের বাড়ির লোক প্যান্ডেলের সামনে যোগাযোগ করুন,এই জাতীয় ঘোষণা ও শোনা যাচ্ছে না।
শুধু রাস্তার পার্শ্ববর্তী খাবারে দোকানগুলি ভর্তি মানুষের ভীড়ে। সেখানেই চলছে তুমুল বেচাকেনা।
গলিপথগুলোও জনাকীর্ণ ।
বড় রাস্তাতে এমনিতেই পুজোর সময়ে গাড়ি দাঁড়াতে দেয় না পুলিশ। এবারেও তার অন্যথা হয়নি। একটু খারাপই লাগছিল। পুজোর এই উৎসবের আনন্দে কত জন যে সামিল হতে পারলেন না, সেই কথা ভেবে। কত মানুষের রুজিরোজগারেও হয়তো পড়ছে ভাঁটার টান। কিন্তু মহামারীর এই আবহে বেঁচে থাকাটাই তো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই না?
‘জান হ্যায় তো জাহান হ্যায়’!
আর গরীব বা দৈনিক মজুরদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব তো প্রশাসন বা রাজনৈতিক দলগুলোর। প্রতি পরিবারের কে বা কারা কোন পার্টিকে কোন ইলেকশনে কাকে ভোট দিয়ে থাকেন, এই সমস্ত খবর যদি এলাকার দাদাদের নখদর্পণে থাকে,তাহলে তাদের এটাও জানা উচিৎ যে কার কার বাড়িতে এখন উনুন জ্বলছে না।
যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতি রাজ নিয়ে হম্বিতম্বি করা হয় বিভিন্ন বক্তব্যে, তার মাধ্যমে যদি সরকার সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষটার ঘরে চাল পৌঁছে না দিতে পারেন তাহলে আর কি প্রয়োজন সেই ব্যবস্থা রাখার?
সারা বিশ্বজুড়ে খারাপ সময় চলছে। দুর্ভিক্ষ আর অর্থনৈতিক মন্দার অশনি সংকেত রয়েছে সবার মাথার উপর। এই সময়েই তো প্রয়োজন দক্ষ নেতৃত্বের আর সঠিক সিদ্ধান্তের।
তাই তাৎক্ষণিক খারাপ লাগাকে নস্যাৎ করে দিয়ে ভাবতে হবে আগামী দিনগুলোর কথা। যদি পুজোতে ভীড় না করে ভাইরাসকে আমরা সরিয়ে রাখতে পারি, তবে শেষ হাসি আমরাই হাসবো। সারা ভারতের মতো কেসের সংখ্যা আমাদের রাজ্যেও কমে গিয়ে শেষ হবে ফার্স্ট ওয়েভ।
আমাদের মতো ডাক্তারদের জীবনে সেই জন্য কোন কালেই সপ্তমী, অষ্টমী বা নবমী কোন বিশেষ দিন নয়। সেই চিকিৎসক হওয়ার পর থেকেই। ধরে রাখা আছে যে আচমকাই কোন আপৎকালীন বিপর্যয় ঘেঁটে দিতে পারে আপনার গোটা দিনের প্ল্যানটা।
তাই ধরে নিন এবার পুজোর আনন্দ করার সুযোগটা একটু নষ্ট হয়ে গেছে সবার। ডাক্তারদের স্বাভাবিক জীবনের মতোই।
কিন্তু বেঁচে থাকলে পরের বার দ্বিগুণ আনন্দ করার সুযোগটা থাকছে। ডাক্তারি তো আর সবাইকে করতে হচ্ছে না।
তাই কম ভীড় আর কম গায়ে পড়া মানুষ দেখে আশা বাড়ছে আমাদের।
সবাইকে এই বাঁচার লড়াইয়ে যোগদান করার জন্য অনেক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।
ভালো থাকবেন।