মনমেজাজ ভালো না থাকলে আমি নিরুপমের কাছে চলে যাই। ছোকরা, আমার হাসপাতালেরই কর্মচারী। বা বলা ভালো – অফিস স্টাফ। চৌকস, চতুর, এবং চালিয়াৎ। আশ্চর্য সব বিষয়বুদ্ধির খবরাখবর রাখে মগজে । বিনা অথবা স্বল্প আয়াসে বড়লোক হওয়ার হাজার রকম ফন্দি ফিকির। আমি, সেইসব মন দিয়ে বসে বসে শুনি। মনটা এক ঝটকায় তরে যায়। শরীরে রক্তের ফোয়ারা ছুটতে থাকে টগবগ করে। খাঞ্জা খাঁ রকমের আনন্দ হয় শিরায় শিরায়। ভালো লাগে।
নিরুপমের প্রায় প্রতিটা ফিকির ব্যেমকে দেওয়ার মতো। না শুনলে জানতেই পারা যাবে না যে এতরকম সহজে বড়লোক হইবার পদ্ধতি থাকতে পারে এ জাহান্নম- জগতে।
একবার নিরুপম বলেছিল, ” কাক পুষুন। নধর সাইজের গোটা সাত আট পিস। ভালো ইনকাম আছে। ” শুনে আমি অবাক, ” কাক পুষব কী হে? হ্যাঁহ্? কাক পুষবো কী? কাক একটা পাখি হলো? রিসেল ভ্যালু পর্যন্ত নেই। বিচ্ছিরি চেহারা, জঘন্য ডাক। না হে নিরুপম, তুমি ঠাট্টা করো না। সিরিয়াসলি বলো। আছে? কিছু? বড়লোক হওয়ার রাস্তা?” নিরুপম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, কমপিউটারের কি বোর্ড থেকে হাত সরিয়ে আরাম করে বসেছিল। যাকে বলে, আয়েশ করে বসা। চেয়ারের পিছনে, পিঠ এলিয়ে দিয়ে। তারপর আমার দিকে ঝটাকসে ঘুরে, চোখদুটো একটু সরু করে বলেছিল,” আপনি কিসুই জানেন না। ”
এ কথা নিরুপম বলতেই পারে। সমবয়স্ক হলেও, আগেই বলেছি… ওর অর্থউপার্জনের অভিজ্ঞতা অপরিসীম। অভ্রান্তও বোধকরি। কাজেকাজেই ওর সরু চোখের সামনে আমি বরাবরই নতি স্বীকার করে এসেছি নতমস্তকে। চেয়ার টেনে একটু কাছাকাছি এগিয়ে বলেছি রামমন্দিরে আগত লালাজির মতো–” না না, সে তো ঠিক কথাই। কী-ই বা জানি! কিন্তু… আই মিন … তোমার ওই ইয়ে… কাক-টাক দিয়ে সত্যিই বড়লোক হওয়া যাবে বলছ?”
” যাবে”, একটুও উত্তেজনা না দেখিয়ে, রীতিমত প্রত্যয়ী স্বরে বলেছিল নিরুপম। এইক্ষণে ওকে অফিস স্টাফের পরিবর্তে, কাকের ডিস্ট্রিবিউটার কিংবা এজেন্ট মনে হচ্ছিল এক্কেবারে। ঘরের কলিং বেল বাজিয়ে, বায়স বিক্রি করতে এসেছে টাই বাগিয়ে। কা কা ধ্বনিতে চারিপাশ আমোদিত। সাহস করে স্রেফ কিনে নিতে পারলেই হলো। এক ঝটকাতে আমি রাজা। আর নিরুপমেরও দু পাইস ইনকাম হয় সেই চক্করে।
” বলো নিরুপম, বলো। টেনশন নিতে পারছি না আর। প্লিজ বলো। বড়লোক হতেই হবে আমায় শিগগিরই। ” বলেছিলাম আমি।
নিজের চোখ নিজে দেখা যায় না। নতুবা আমার বিশ্বাস, সেইসময়ে আমার মুখে কাসেম শেখ-এর ছায়া পড়েছিল। আলিবাবার ভাই। চল্লিশ চোরের গুহার সামনে লালায়িত খাড়ায়িত। টকটকে চোখ। টপটপে লাল।
” কাকের ডিমান্ড সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা আছে? মানুষ যে হন্যে হয়ে কাক খোঁজে, এ খবর আপনি রাখেন? ”
” না, কই তেমন তো…”
” শুনুন”, আমার সমস্ত সন্দেহকে ফুৎকারে নির্বাপিত করে বলে উঠেছিল নিরুপম, ” শুনুন…। কাক জোগাড় করবেন কয়েকটা। বেশি নয়। এই ধরুন সাত আটটা। আপাতত, তিন চারটে করলেও চলবে। কিনবেন না। কিনতে আপনি… পাবেনও না। কাক আপনাকে কিন্তু ধরতেই হবে, হ্যাঁ? ফাঁদ পেতে। সেসব ব্যবস্থা আমিই করে দেব নাহয়। আমার চেনা পরিচিত লোক আছে। এক্সপার্ট। যে পাখি বলবেন, সেই পাখি ধরে এনে দেবে। গ্র্যান্টি। তারপর ব্যাস। কাজ আদ্ধেক হাসিল। এরপর আপনি শুধু কাকগুলোকে একটা খাঁচায় পুরে ফেলবেন। পুরে, ভাড়া খাটাবেন। আপনি… ডাক্তার মানুষ। এটা একটা পয়েন্ট যদিও। তাই, ডাইরেক্ট ভাড়া খাটাতে যাবেন না। ইমেজ খারাপ হবে। এজেন্ট রাখবেন নাহয় একজন। সে ব্যবস্থাও… আমি দেখে নেব। ব্যাস। তারপর ভাড়া খাটাবেন। থার্টি সেভেন্টি। সত্তর আপনার, তিরিশ এজেন্টের। দিন গেলে তা ধরুন, হাজার দুই তিন হেসে খেলে। ”
এতক্ষণে আমি হাল ছেড়ে দিয়েছি। দিন গেলে তিন। তার মানে মাস গেলে নব্বই। সাতাশ এজেন্টের, আর… আর… নব্বই মাইনাস সাতাশ, সমান সমান তেষট্টি আমার। কড়কড়ে। সিক্সটি থ্রি থাউজেন্ড রুপিজ। জয় বাবা..। কাশেম শেখ থেকে ততক্ষণে ‘কুমার’ কিংবা ‘ করালীবাবু’ হয়ে গেছি আমি। সাক্ষাৎ যকের ধন আমার সামনে। সাহস করে তুলে নিলেই হলো।
” কাক ভাড়া খাটাবো তাই তো? সার্কাসে? সিনেমায়? বলো নিরুপম বলো…। দেরি করো না। ”
–” খাটাবেন। আপনি হিন্দু তো? হিন্দুদের উপাচার জানেন নিশ্চয়ই। আত্মীয় পরিজন মারা গেলে কাক’কে ভাতের দলা খাওয়াতে হয়। আত্মার শান্তি হয় এতে। এখন আপনিই বলুন, এই হাই রাইজের জগতে কাক কোথায় পাবেন? ভাত ছড়ালেন, তো দেখলেন কুকুর কিম্বা শালিক এসে খেয়ে গেল। তখন? পাবে? শান্তি? আপনার পরিজনের আত্মা? তাই কাক। বিশ্বাস করছেন না জানি, কিন্তু এরকম তিন চারজন আমার চেনা আছে। অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে কাক নিয়ে আসে। পকেটে ডাইরি থাকে। সাতটা থেকে সাড়ে সাতটা, বসাক বাবু। আটটা থেকে সাড়ে আটটা গৌতম রজক। ন’টা থেকে সাড়ে ন’টা রায় ম্যানসন…। যাবেন, কাক রাখবেন, ভাত খাওয়াবেন, চলে আসবেন। ইনকাম, দু পাঁচশ থেকে হাজার। প্লাস, কাক খাওয়ানোর পয়সাও বেঁচে গেল। উল্টে আপনিই পয়সা পাবেন। ”
” কেমন?” কথা শেষ করে নিরুপম শুধিয়েছিল সরু চোখদুটো এট্টুসখানিক বুজে নিয়ে।
–” ইয়ে, মাঝে আধা ঘন্টা করে গ্যাপ কেন? কাক’কে রেস্ট দিতে হবে? লেবার অ্যাক্ট?”
” না”, নিরুপম আলতো হেসে বলেছিল, ” ওটা এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যাওয়ার টাইম। পাশাপাশি বাড়িতে তো আর মরবে না। ওসব আমার ছক কষা আছে । আপনি এসব ছোটখাট পয়েন্ট বাদ্দিন। আপনি শুধু বলুন… রাজি?”
রাজি আমি কোনোকালেই হই না। বড়লোক হতে ভয় লাগে বড়। কিন্তু শান্তি হয়। বড্ডো শান্তি হয়। বললাম না? খাঞ্জা খাঁর মতো টগবগে তৃপ্তি আসে প্রাণমনে।
আজও কতকটা সেরকমই হলো। মনমেজাজ বিগড়ে ছিল দস্তুর রকম। ইদানিং বিগড়েই থাকে বেশিরভাগ। থৈ কূল কিনারা খুঁজে পাই না এই করোনা কোয়েশ্চেনের। সব কি বন্ধ করে রাখা উচিত? অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং পরিষেবা ব্যতীত আর যা কিছু লাক্সারি? ফুচকার ঠেলা, সিনেমার হল, দুর্গোৎসব মেলা কিংবা শপিংয়ের মল? কিন্তু তাহলে যে হাজার লক্ষ মানুষের পেটে লাথি পড়বে। মরার আগেই মরে যাবে বেবাক নিরন্ন হয়ে। অথচ আবার… খুলে রাখলেও ফ্যাচাং। মারী যে রেটে ক্রমবর্ধমান, তাইতে এইরকম আনন্দ উচ্ছাস বজায় থাকলে বর্তমানের দুর্দিন ক্রমশ দুঃস্বপ্নের মতো রাত হয়ে যেতে বাধ্য। টোটাল হুলাবিলা হ্যাঙ্গাম।
এ সত্যিই এক বড় দুরুহ ধাঁধা। জটিলের থেকেও জটিলতর প্যারাডক্স।
প্রায় বছর খানিক হতে চললো করোনা নামক অতিমারীর। এখনো পর্যন্ত নুন্যতম স্ট্যান্ডার্ড চিকিৎসা পদ্ধতি খুঁজে পাওয়া গেল না। চিকিৎসার ওষুধ হিসাবে যেগুলো ব্যবহার করছি আমরা, সেগুলো সবই পরীক্ষামূলক। বুক ঠুকে বলবার মতো একটি ওষুধও চিহ্নিত করা যায়নি, যেটা করোনার সঠিক চিকিৎসা। হোমিওপ্যাথি বা আয়ুর্বেদ অবশ্য দীর্ঘদিন আগেই নিদান দেগে দিয়েছে প্রত্যয়ের সাথে। তবুও… এহ বাহ্য … তাইতে লাভ হয়েছে ঘন্টার মাথা। মোটমাট কথা, করোনার বিজয়রথ এ যাবৎ অপ্রতিরোধ্য। যেসব রোগী সেরে উঠছেন, তাঁদের সিংহভাগ নিজের থেকেই সেরে উঠছেন। ওষুধ হিসাবে যেগুলি প্রয়োগ করা হয়েছে তাঁদের ওপর, সেগুলি প্রয়োগ না করলেও যে তাঁরা সেরে উঠতেন না, এ কথা বুক ঠুকে একজন চিকিৎসকও বলতে পারবেন না বোধ করি। অর্থাৎ, করোনা এমন একটি বেমারি, যার চিকিৎসা এখনো অধরা।
আবার অন্যদিকে দেখতে গেলে, ক’জনই বা মরছে করোনায়? ডেথ রেট তো সত্যিই নগন্য। এই নগন্য ডেথ রেটওয়ালা একটা রোগের জন্য অর্থনীতির মূলে কুঠারাঘাত করা কি যুক্তিযুক্ত?
এর বিপরীত যুক্তিও আছে আলবাত। ডেথ রেট কথাটা একটা শতকরা হিসাব। একশ জনের রোগ হলে ক’জন মরবে… এইরূপ। মুশকিলটা এইখানেই। করোনা সাংঘাতিক রকমের সংক্রামক। যে রেটে করোনা এগোচ্ছে, তাইতে সারা পৃথিবীর প্রায় সক্কলের করোনা হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে, পার্সেন্টেজে কম হলেও, মোট মৃত্যুর সংখ্যা আকাশ ছোঁয়া হয়ে উঠবে ক্রমে ক্রমে। অর্থাৎ, করোনা ভয়ঙ্কর।
ওদিকে আবার এর বিপরীত যুক্তিও বিদ্যমান। ডেথরেট যখন এতই কম, তখন এই একটি রোগকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে, বাকি সব বেমারিকে প্রান্তিক করে দেওয়া কি ঠিক? একথা এখন সক্কলে জানেন যে, করোনা ব্যতীত অন্য কোনো রোগ হলে আপনার সর্বনাশ। ধরা যাক আপনার স্ট্রোক করলো। গেলেন নার্সিংহোমে। সেখানে আপনাকে ‘ অবজার্ভেশন ওয়ার্ড’ এ ফেলে রাখা হলো প্রায় একদিন। যতক্ষণ না প্রমাণিত হয় আপনি কোভিড নেগেটিভ, ততক্ষণ চিকিৎসা হলো নামমাত্র। স্ট্রোকের সিটি স্ক্যানের পরিবর্তে করোনার ‘ আর টি পি সি আর ‘ করা হলো ঘটা করে। সরকারি হাসপাতালে অবশ্য এই খেঁচাকল নেই। তবে সেখানে অন্য বখেড়া আছে। হাসপাতালের পর হাসপাতাল কোভিড হাসপাতালে পরিণত হচ্ছে একে একে। সেখানে এখন স্রেফ কোভিড রোগের চিকিৎসা করা হয়।
আবার, মাক্কালি এর উল্টো যুক্তিও আছে দিব্যি। আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না যে, কিডনি স্টোনের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন যখন, তখন পাশের লোকটি কোভিড নিয়ে ভর্তি থাকুক। অর্থাৎ, কোভিড স্ক্রিন করাটাও জরুরি।
সব মিলিয়ে যাকে বলে, শাঁখের করাত। ল্যাজে গোবোরে। হাতে হ্যারিকেন। কিংবা উভয় সঙ্কট।
এবং এসব পরিস্থিতিতে কারই বা মন ভালো থাকে! আমারও ছিল না। আমারও নেই। তার উপর সর্বক্ষণ আমার চোখের সামনে ঘুরে বেড়ায় একটা দুঃখী ঘোড়া। অনাথ অশ্ব। মুখ নীচু। বুকে পাঁজরা গোনা যায় এক দুই তিন চার। এর পরেও কি ভালো থাকা সম্ভব? মানুষ হয়ে?
তাই গিছলাম নিরুপমের শরণে। সঙ্গে ত্রম্বকে গৌরী জুড়ে দিলেও মন্দ হয় না। পুজোর আবহে মন্ত্র হয়ে যাবে মহামায়ার একই সঙ্গে। মোটকথা, নিরুপমে সমর্পণ।
— ইয়ে, নতুন কিছু আছে? টেকনিক?
নিরুপম বেজার মুখ করলো। হাই তুলে বললো–” থাক। আপনার আর বড়লোক হয়ে কাজ নেই। এতগুলো শটকাট বললাম। কাক বললাম, এগরোল চাউমিন বললাম, স্নুকার কাম পুল টেবিল বললাম…।কানেই তুললেন না। আপনার আসলে বড়লোক হওয়ার ধক’ই নেই। ভীতু মানুষ। বড়লোকদের ইন্টারভিউ শুনেছেন? কখনো? শুনে একবার দেখবেন। সব্বাই একসময় পকেটে দশ টাকার ছেঁড়া নোট নিয়ে ঘুরত। আম্বানি বলুন, টাটা বলুন, শারুখ খান বলুন… সব। আধপেটা শরীরে ঢকঢক করে জল খেয়ে শুয়ে থাকত ফুটপাতে। তারপর নিউ নিউ টেকনিক নিলো। বুক ঠুকে। ব্যাস! ঘর ভত্তি সব হারি পাত্তির গাড্ডি…। আপনি তো আর সেসব পারবেন না। তাই… বাদ দিন। ”
আমি গায়ে মাখলাম না। এসব নিরুপমের তিরস্কার। সে অধিকার ওর বিলক্ষণ আছে। শিক্ষাগুরু বলে কথা! করুক না হয় তিরস্কার দু চারটে। করেও। কিন্তু নিরাশ করে না কখনো। আজও করল না। চেয়ারে শিরদাঁড়া বাঁকিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বললো–” একটা ভালো বুদ্ধি দিচ্ছি। জেন্যুইন। কাক-এর মতো ফ্যাতড়া বুদ্ধি না। ইমেজ খারাপ হওয়ার চান্স নেই। আপনি… ইস্কুল খুলুন। কিন্ডারগার্টেন। এক ঝটকায় ব্যাঙ্কব্যালেন্স কোটিতে। ইনভেস্টমেন্ট আছে অবশ্য কিছু ইনিশিয়াল। তবে তিন চার মাসেই হারি পাত্তির বন্যা বয়ে যাবে গ্রান্টি।”
“শুনুন” চেয়ার সামান্য টানলো নিরুপম , ” ফাস্টে লাখ পাঁচেক ঢালতে হবে। চেক লিখে দেবেন। নো ব্ল্যাক মানি বিজনেস। টোটাল হোয়াইট। তারপর সেই টাকা দিয়ে আমরা জমি কিনব। তিন কাঠা। শহরে পাবেন না। শহরে কিনে লাভও নেই। হেবি কম্পিটিশ্যান। মার্কেট স্যাচুরেটেড। শহর আর গ্রামের মাঝামাঝি কিনে নেব। সে দায়িত্ব আমার। কিনে,তারপর ইস্কুল বানাবো। তিন চারটে রুম, একটু ছোট খেলার জায়াগা, পাঁচ ফুট বাউন্ডারি, আর দেওয়ালে মিকি মাউস, ছোটা ভীম, গান্ধীজি, বৃক্ষরোপন। ব্যাস। কাজ ফিফটি পার্সেন্ট শেষ। বাকি ফিফটি পার্সেন্ট হলো– নামকরণ। একটা ঘ্যামচ্যাক নাম দিতে হবে। ইংলিশ নাম। সামনে, সেইন্ট। সেইন্ট পিটার, সেইন্ট পলস, সেইন্ট জেভিয়ার্স… এসব অলরেডি টেকেন। নতুন নাম ভাবতে হবে। ভাবুন। সেই নামে সত্যি সত্যিই সেইন্ট থাকতে হবে এমন মানে নেই। কে’ই বা দেখতে যাচ্ছে। মোটকথা নামে যেন ওজন থাকে। আমি একটা ভেবে রেখেছি। সেইন্ট রডরিগেজ্। চাপাচাপি নেই অবশ্য। ইস্কুল আপনার, নামও আপনিই ফাইনাল করবেন। রাজি? মিলিয়ে নেবেন ডঃ সেনগুপ্ত, ইস্কুল একদিন আপনার ইস্কুল কিন্ডারগার্টেন থেকে আপার প্রাইমারি হয়ে যাবে দেখতে দেখতে। ”
ঘোড়ার মুখটা তখনো চোখে ভাসছে। শুকনো। ছুঁচালো। চোখের কোণে পিঁচুটি। কানে ভনভন করছে ডাঁশ পোকা। দুঃখী ঘোড়াটা কান নাড়াতে নাড়াতে একা একা হেঁটে বেড়াচ্ছে শুনশান রাস্তাতে। নাহঃ। এসব এখনই ভোলা দরকার। এক্ষুণি ভুলে যাওয়া দরকার পুরোপুরি। নয়ত মনখারাপ জেঁকে বসবে ক্রমশ। ঘোড়ার পাশাপাশি এখন আবার একটা তেলচিটে বিছানাও দুখতে পাচ্ছি অস্পষ্ট। ঠিক যেন কমিকস স্ট্রিপের দুখানি পরপর ছবি। একটায়, ওই ঘোড়া। পরেরটায়, তেলচিটে বিছানাতে, ক্ষয়িষ্ণু যুবক। চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে খিদেতে।
গা ঝাড়া দিলাম,” শহরের বাইরে কিন্ডারগার্টেনে কে পড়বে হে? পাগল নাকি?”
নিরুপম হাসলো। করুণার হাসি। বললো, ” হেহ্। ওই তো! ওই তো আপনাদের বাজে স্বভাব। খবর কিছু রাখেন না দুনিয়াদারির। ইস্কুল কতরকমের হয় জানেন? তিন রকম। এক সরকারি। যেখানে পড়াশুনা হয় না। শুধু কৃমির ওষুধ আর সাইকেল বিলি করা হয়। তো সেইসব ইস্কুলে সত্যি সত্যি না পড়লেও চলবে। মানে ধরুণ, নাম থাকবে আপনার ছেলের খাতায় কলমে। কিন্তু ক্লাস করবে না। দরকারও নেই করার। বছর শেষে সাইকেল আর চাল ডাল নিয়ে চলে আসবে বাড়িতে। দুই, বেসরকারি কনভেন্ট। অ্যাডমিশন ফি শুনলে ফট করে প্যান্ট খুলে যাবে। আর তিন হলো, এইরকম। এই যে, যেরকম বানাবো। আমি আপনি মিলে। অ্যাই। দুনিয়ার যত হাড় হাভাতে পাবলিক, যারা জানে যে সরকারি স্কুলে পড়াশুনা হয় না আর বেসরকারি কনভেন্টের অনেক খরচ, তারা তাদের বাচ্চাদের ভর্তি করে দেবে এখানে। শিকনি মোছা গরীব বাচ্চা লাল রঙের টাই পরে স্কুলে যাবে। ঘ্যামই আলাদা। শিখবে একটু আধটু। ক্যাট, ডগ, আলমিরা। মাই নেম ইজ অমুক তসুক। ব্যাস। বাপ মা খুশি। ছেলেমেয়েও খুশ । অনেকটা ধরুন আড় মাছের কাটলেট। ভেটকি কেনার পয়সা নেই। আবার পাঙাশ মাছ খেলেও জাত যাবে। তাই… আড়। একদিক থেকে ধরতে গেলে,পুণ্যই করছেন আপনি। গরীবদেরও তো শখ হয় ইংলিশ মিডিয়ামে বাচ্চাকে পড়ানোর। তাই না? বলুন এখন… রাজি?”
নাঃ। না না না। নিরুপমের ” বড়লোক হইবার ক্লাস” আজ আর তেমন ফলপ্রসূ হল না কিছুতেই। ঘোড়ার মুখটা স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে উঠেছে ক্রমশ। ক্ষয়িষ্ণু যুবকের মুখটাও … মোটামুটি স্পষ্ট। এদের কাউকেই আমি চোখে দেখিনি যদিও। শুনেইছি স্রেফ। শুনেছি এদের কথা লোকমুখে। তাও, সে নয় নয় করে হয়ে গেল আজ প্রায় দুই তিন মাস। করোনা আটকাতে, ‘ লকডাউন’ চলছে যখন রমরমিয়ে। ওই তখনই একদিন নাইট ইমার্জেন্সিতে ছেলেদুটো এসেছিল। এক জনের কবজিতে গামছা জড়ানো, আরেকজন সেই গামছা চেপে ধরে ” সেলাই দিবে না, বলছি তো… সেলাই দিবে না” করে যাচ্ছে নাগাড়ে। রাত তখন প্রায় একটা দেড়টা হবে। আড়চোখে অলরেডি দেখে নিয়েছি, গামছাটা রক্তাক্ত। অনুমানও করে নিয়েছি মোটামুটি কেস’টা। মদ টদ খেয়ে নিজের কব্জিতে নিজেই ব্লেড মেরেছে সিওর। তবে, ছেলেটা বোধহয় ন্যাটা। বামহাতি। নয়ত, ডান কবজিতে কেউ ব্লেড মারে না।
অনুমান যদিও বিফলে গেল। ‘সেলাই দেবে না’- সঙ্গীটি বললো–” স্যার, ঘুড়ায় কামড় দিছে।”
শুনে চমৎকৃত হলাম। আমার চিকিৎসক জীবনে এ এক বড় আশ্চর্য ঘটনা বটে। কুকুর, বেড়াল, ছাগল, গরু, সাপ, বোলতা, ভিমরুল, খরগোশ, চিতাবাঘ, ইঁদুর, ছুঁচো, বউ/ বর মায় রাজহাঁসে কামড় দেওয়া রোগীও পেয়েছি বিস্তর। আমার এক সহপাঠী ছিল। নাম, সৌগত। বেজায় ফর্সা, এবং ফর্সা হওার গৌরবও ছিল রীতিমত। একদিন ফর্সাত্বের উদাহরণ স্বরূপ বলেছিল, ” আমার পায়ের আঙুলগুলো, বুঝলি সব্য, এতটাই ফর্সা যে, টিকটিকিরা ভুল করে ভাবে যে, ছোট টিকটিকি। তিন চারবার কুট কুট করে কামড়ে দিয়েছে আঙুলে।”
কিন্তু তাই বলে ঘোড়া? তাও জলপাইগুড়িতে? তাও আবার রাত দেড়টায়!
পরবর্তী কথোপকথন হলো নিম্নরূপ।
–ঘোড়া? এত রাতে? এত রাতে ঘোড়া কোথায় পেলি রে বাপ?
— তিস্তা পার্কের ঘুড়াটা আছে না স্যার? বাচ্চাদের পিঠে নিয়ে নিয়ে ট্রিপ মারে? লকডাউন চলতেসে তো। ঘুড়ার ব্যবসা নাই। মালিক তাই ছেড়ে দিসে। এখন এ পাড়া ওই পাড়া ঘুরে বেড়ায়। আইজ আসছিল হামদের পাড়াতে। চ্যাংড়া ব্যাংড়াগুলা ঢিলাচ্ছিল। এই আমি আর জয়ন্ত … জয়ন্ত গেল রুটি খাওয়াইতে। ঘুড়াটা সেই রোগা হই গেছে স্যার। হাড্ডি বাহরাই গ্যাছে। খায় নাই সিওর এক দুই হপ্তা। তাই জয়ন্ত বললো, চল রুটি খাওয়াই গা। তো, খাওয়াতে গিয়ে কামড় দিলো। অর দোষ নাই যদিও কুনো। ভয় পাইছে তো ঘুড়াটা খুব। ঢিলায় তো বাচ্চা কাচ্চাতে। মাইর দেয় ল্যাজে গিট্টি মাইরে…।
— এহঃ হে! ইঞ্জেকশন নিতে হবে তো রে! যা যা, ড্রেসিং করিয়ে সুঁই নিবি যা।
ছেলেদুটো ড্রেসিং-ঘরে চলে গেল। ব্যান্ডেজ করে, ওষুধ নিয়ে, হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছে যখন, তখন পাকড়াও করলাম আরেকবার, ” মালিককে খবর দিছিস? হ্যাঁ রে? ঘোড়ার মালিকের বাড়ি চিনিস?”
— চিনি তো স্যার। গিছলামও। মালিক চাদর জড়ায়ে শুয়ে আছে। বললো, আমিই তিনদিনোৎ খাই নাই, ঘুড়ায় খাওয়াইব কী? মরে গেলে মরে যাক ঘুড়া। মালিকটাও বুঝলেন স্যার, আইজ নয়ত কাইলেই এডমিট হবে পাক্কা এখানে।
ওই সেই। ওই সেই ঘোড়াটা আর সেই মালিকটার ছবিই স্পষ্ট হতে হতে, যন্ত্রণাদায়ক রকমের তীব্র হয়ে উঠছে ক্রমশ। আর তারই সাথে সাথে, লক ডাউন পার হয়ে, ওপেন আপ জমানার ফর্দটা দীর্ঘতর হয়ে উঠছে দিন কে দিন। যে ফর্দে, প্রতিদিন যোগ হচ্ছে একটার পর একটা নাম। স্বাস্থ্যকর্মীর, আমলার, পুলিশকর্মীর, ব্যাঙ্ক কর্মচারীর… জরুরি পরিষেবার সাথে জড়িত বিভিন্ন মানুষের। যাঁরা, পরিষেবা দিতে গিয়ে অকালে মরে যাচ্ছেন কেবলই। আমি আর কিছুতেই তাল মেলাতে পারছি না এসবের সাথে। বুঝতে পারছি না, লক ডাউনের স্বপক্ষে থাকব না বিপক্ষে। মধ্যপন্থা বলে কিছু হয় না। হতে পারে না। মানুষকে হয় গৃহবন্দী থাকার ফতোয়া দিতে হবে, নতুবা স্বাভাবিক জীবন যাপনের। ” যতটুকু না বেরোলেই নয় ” নিদান দাগলে, মানুষ বেরোবেই। সেইটেই মানুষের ধর্ম। এ এক বড় কঠিন যুগ সন্ধিক্ষণ। এ এক আজব খেঁচাকল।
এই সব চিন্তা, পীড়া দেয় কেবলই। নিরুপমের নিদানে ভুলে থাকতে পারি না এক লহমাও। ভুলে থাকতে পারি না সিনেমার ছবিতে বা গল্পের বইয়ের পাতাতেও। আর তাই আমি রাউন্ড দিই। রাউন্ড দিই এক্সটেনসিভলি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি ওয়ার্ডে ঘন্টার পর ঘন্টা। দিনের পর দিন। যে রোগে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা শতকরা পঞ্চাশ থেকে ষাট। কোভিডের থেকেও দশ পনেরো গুণ ভেশি। আর আবিষ্কার করি আশ্চর্য সব মুহূর্ত।
চার হিমোগ্লোবিন, আঠাশ কেজি ওজন আর ছেঁড়া নাইটি পরেও যেখানে আমার রোগিনীরা মোবাইলে গান শোনে, ” ইক অজনবি, হাসিনা সে, ইউ মুলাকাত হো গেয়ি…”
ক্রমশ বোধহয় বুঝতে শিখি যে, সামান্য… খুব খুব খু-ব সামান্য, এবং বড্ডো সামান্যই স্রেফ আমার হাতে রয়েছে। এ জগত,এই বিশ্ব চরাচর বদলানোর ক্ষমতা নেই আমার নূন্যতমও। আর তাই, যতটুকু আছে, যা যৎসামান্য আছে, নিবেদিত প্রাণ হতে পারি যেন স্রেফ সেইটুকুতেই।
হাসতে হাসতে তাই আমি রাউন্ড দিই আমার এই ছোট্ট হাসপাতালের ফ্লোরে ফ্লোরে। বকা দিই, – যেখানে সেখানে কফ থুতু ফেলো না। আদর করে বলি, “অজনবি হাসিনা! আরে ব্বাস! হেব্বি গান শুনছিস তো রে পাগলি।” এবং নিজেই নিজের পিঠ চাপড়াই– পুনম ঝিলম, এক্স ডি আর টিবি পেশেন্ট দুই বোনকে, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি প্রায় পুরোটাই। আর মাত্র মাস তিনেক। তারপরেই ছুটি দিয়ে দেব ওদের। ছুটির দিন, নিজেই নিজেকে ট্রিট দেব বরং ভালো মন্দ খানাপিনা করে। নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে রসদ জোগাড় করব ভবিষ্যত লড়াইয়ে যুঝে নেওয়ার।
ভালো হয়ে আসে আমার মন ক্রমশ। ঘোড়া আর ঘোড়ার মালিকের কমিকস স্ট্রিপের জায়গায় আরেকটা কমিকস স্ট্রিপ ফুটে ওঠে গোলাপি রঙের। হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরছে পুনম ঝিলম। ঝিলমের চোখে সোনালী রঙের চশমা। ভর্তি হয়েছিল যখন ঝিলম, তখন চশমা ছিল না যদিও। কেবলই বলতো , ‘ মাথা ব্যথা, মাথা ব্যথা’। তারপর টিবির চিকিৎসার সাথে সাথে , চোখের পাওয়ার টেস্ট করিয়ে, আর একে তাকে ধরাধরি করে চমৎকার একখানি চশমার জোগাড় করে দিয়েছি আমিই। বিনামূল্যে। দু তিন জায়গায় বলতে হয়েছে যদিও, ” প্লিজ, একটু দেখুন না। যদি পারেন…। চশমা কেনার পয়সা নেই। প্লিজ…।” তবুও, জোগাড় তো হয়েছে। চশমা। সোনালী ফ্রেমের। যে চশমা পরে গতকালকেই ঝিলম পুনমের গলা জড়িয়ে দেখছিল হাঁ করে সুঠাম নায়ককে। নায়কের নাম জানত না ওরা দুই বোনেই যদিও। মোবাইলের স্ক্রিনে আমিও খানিক দেখলাম তাই ওদের সাথে। তারপর চালিয়াৎ-হেসে বললাম, ” হিরোর নাম জানিস না? এ বাবা! এ তো অর্জুন রামপাল। সিনেমার নামটা অ্যাটলিস্ট জানিস তো? প্যায়ার ইসক অউর মুহব্বত। হেবি না? নামটা?”
এই বা কম কী! এইটুকুই যেন করে যেতে পারি আজীবন। অথবা, আমরণ। রাতে শোয়ার আগে আয়নার দিকে সপাট তাকিয়ে বলা, ” আরেহঃ সব্য কাকা! ফাটায় দিছো তো! আরো দুইখান পেশেন্ট ছুটি পাইলো তোমার আন্ডারে। পুনম ঝিলম দুজনেই যে তোমার প্রেমে পড়সে খ্যাল করসো? লিপিস্টিক লাগায় তুমারে দ্যাখলেই! সাব্বাশ! এইরকম আরো হাজার হাজার রোগিণীর সাঁইয়া আর লক্ষ লক্ষ রোগীর ভাইয়া হইয়া বাঁইচ্যা থাকো তুমি সব্য-বাবা। জিনা ইসি কা নাম হ্যায়।”
কিন্তু সেসব আত্মতৃপ্তি ঝটাকসে তেতো ঠেকে যায় সহসা। রাউন্ড সেরে বাড়ি ফিরবার পথে হঠাৎ দেখা হয়ে যায় এক সহকর্মীর সাথে। পেশায় … তিনিও ডাক্তার। পথচারীদের কোভিড টেস্ট করাচ্ছেন ডেকে ডেকে। অ্যাসিম্পটম্যাটিক কোভিড রোগী খুঁজে বের করার প্রকল্প। অন্তত এভাবেও যদি জনতার পুজো হিড়িককে কমানো যায়… তারই একটা আপ্রাণ প্রচেষ্টা। দুর্গা পুজো। কালী পুজো। জগদ্ধাত্রী পুজো। যীশু পুজো। জমজমাট পুজো…
স্যালুটেবল এই চেষ্টাটুকুও। প্রণম্য আলবাত। দাঁড়ালাম তাই স্কুটি থামিয়ে। বললাম সহকর্মীকে, ” ভালো আছ? দাদা?”
দাদাটি আমার চমকে দিয়ে বললেন, ” আরে তুই! চল্! ভালো লস্যির দোকান খুলেছে। লস্যি খাবি?”
আর আমার মন ঝট করে বিগড়ে গেল ফির সে। আমরা ডাক্তাররাই যদি লস্যি খাওয়ার বিলাসিতা করি কোভিড মারীতে, তাহলে সাধারণ পথচারীর আর মাস্ক নামিয়ে আড্ডা মারতে দোষ কোথায়?
নাহঃ। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিই আমি।
না। না। না। এরকম উচ্চ মধ্যবিত্ত থাকা যাবে না আর কিছুতেই।
বড়লোক হতে হবে। তীব্র, তী-ব্র রকমের বড়লোক। নোংরা বড়লোক। ফিলদি রীচ। টাকা থাকতে হবে কোটিতে, অর্বুদে, পদ্মতে। বিলিয়ন, মিলিয়ন, ট্রিলিয়ন। তবেই, হয়তো স্রেফ তবেই, পলিসি মেকার হতে পারব একটু হলেও। প্রভাবিত করতে পারব সরকারকে। জনমত’কে। জাহান্নম জন্নতকে।
নিরুপমের শরণাপন্ন হতে হবে আবার কালকেই। শর্টকাট টু বিকাম আ ট্রিলয়নিয়ার। শর্টকাট টু বিকাম আ পলিসি মেকার।
পারব কি?
নাহঃ। পারব না জানি আমি নিজেও।
এ জনম তাই, অপরের সমালোচনা না করে, স্রেফ নিজের কাজটুকু সৎ ভাবে করে যাওয়ার জন্ম। সমালোচনা মোটেই কাজের কাজ না। সময় কেটে যায় বিস্তর স্রেফ ওই সমালোচনা করতে গিয়েই। থাক ওসব বরং। কাজ কী বেকার বেকার সময় পচিয়ে? সব্বারই গল্প থাকে নিজের নিজের। সেইসব না জেনে সমালোচনা করে লাভটাই বা কী? ঘোড়া ছেড়ে দেয় মালিক অনেক যন্ত্রণাতেই। সেই যন্ত্রণার কথা না জানতে পারলে, লোকটাকে নির্দয় মনে হওয়াই স্বাভাবিক। দাদাটিরও হয়ত নিজস্ব গল্প আছে। হয়ত সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছে বেচারি রোদ্দুরে। হয়ত, তেষ্টা আর খিদে দুইই পেয়েছে খুব রকম। নাঃ, সমালোচনা বাদ টাদ দিয়ে নিজের কাজটুকু করেই এ জীবনটা কাটিয়ে দিই কোনোমতে আপাতত।
তারপর পরের জন্মে, পাখি হব নাহয়। প্রেফারেবলি- কাক।
ঝটাকসে হেগে দেবো ছড়াক ছড়াক এই সভ্যতার মাথার উপরে। হেগে, তারপর আবার অন্ন খাবো এই সভ্যতারই।
তদ্দিন…
( ক্ষমা করো হে রবি ঠাকুর)
বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে
একলা মরো রে।
দারুন। অনেকদিন পর। ভালো থাকবেন। এই টুকু ছাড়া আর কিছুই চাওয়ার নেই।