আজকে যখন এই পর্ব লিখতে বসছি তখন মন উদ্বেগে ভরে আছে। জুনিয়র ভাই বোনেরা আজকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত দেখে হয়তো জীবন বাজি রাখবে। আমরণ অনশন শুরু করতে পারে।
দাবি কার কাছে রাখছে? রাখছে এমন এক প্রশাসনের কাছে যারা জনগণের সেবা করার জন্য জনতা কর্তৃক নির্বাচিত। নির্বাচিত সেবকদের আর যাই হোক ঔদ্ধত্যের কোনো সুযোগ ভারতীয় সংবিধান দেয়নি। সব কিছুই তো আর সংবিধান মেনে চলে না। চললে আজকে ডাক্তারদের জীবন বাজি রাখার কোনো প্রয়োজন পড়তো না।
আজকে থ্রেট এর বিষয় হিসেবে যেটা বলার চেষ্টা করবো সেটা প্রশাসনিক স্বচ্ছতা। কোনো বিষয় অস্বচ্ছ হয়ে গেলে সেটা থ্রেট এর আকার নেয়। বারবার বলাতে আপনারা রেগে যেতে পারেন। আমি কিন্তু নাচার। আপনাদের আবার নিশ্চিন্দীপুরের ভোজ সভায় নিয়ে যাবো। ধরুন আপনি যাচ্ছেন আপনার মাসিক কিস্তিতে কেনা মোটর গাড়িতে। রাত্রিবেলা। দারুন কুয়াশা পড়েছে। দুই হাতের দূরের জিনিস আপনার ঠাওর হচ্ছে না। এরকম অবস্থায় গাড়ি চালাতে গেলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা প্রবল। এই অবস্থায় গ্রাম ছাড়া ওই রাঙ্গা মাটির পথ গানের সুর হয়ে আপনার কাছে আসবে না। আসবে থ্রেট হয়ে। আপনার জীবন বিপন্ন হতে পারে। আপনি সামনের যে রাস্তা সোজা মোলায়েম ভেবেছিলেন সেখানেই আছে এক বিরাট গর্ত। আপনার গাড়ি পাল্টি খাবে।
বিগত কিছু বছরে সারা রাজ্যে বেশ কিছু সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। বাইরের দৃষ্টিনন্দন শোভা যেকোনো পাঁচতারা বেসরকারি হাসপাতালকে বলে বলে দশ গোল দিতে পারে। বাইরের শোভা যদি হাসপাতালের একমাত্র কাজ হতো তাহলে তাজমহল হতো দেশের সেরা হাসপাতাল। সেটা হবার নয়। হাসপাতাল চিকিৎসার জায়গা। তাই কতটা চিকিৎসা পরিষেবা একটি হাসপাতাল দিতে পারছে তাই দিয়েই তার মূল্যায়ন হওয়া উচিত। গরুর সিং কতো সুন্দর তাই দিয়ে নয় গরু দিনে কত সের দুধ দেয় তাই দিয়েই গরুহাটায় গরুর দাম নির্ধারিত হয়।
এইটা বোঝার জন্য আপনাদের দুয়েকটা ডাক্তারির বিষয় একটু গোদাভাবে বুঝে নিতে হবে। এই স্পেশালিটি কি আর সুপার স্পেশালিটি কি সেটা একটু গোদাভাবে বুঝে নিলেই আপাতত কাজ চলে যাবে। ডাক্তারির স্পেশালিটি বলা হয় সেইগুলোকেই যেগুলো অঙ্গ সংস্থান অনুযায়ী ভাগ করা হয়। যেমন ধরুন যিনি ইএনটি স্পেশালিস্ট তিনি নাক কান আর গলার রোগের বিষেশজ্ঞ। নাক কান গলার কোনো রোগ হলে তিনি তার চিকিৎসা খুব উচ্চ মানে করতে পারবেন। যিনি হাড়গোড় এর রোগ চিকিৎসা করেন তিনি অর্থোপেডিক সার্জেন। এরকম করেই স্পেশালিটি ঠিক হয়। যে হাসপাতালে ধরুন চোখের বিষেশজ্ঞ আছেন আর চোখের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সকল রকমের যন্ত্রপাতি ওষুধপত্র আর প্রয়োজনীয় সাহায্যকারী কর্মচারী আছে সেটা চোখের স্পেশালিটি হাসপাতাল। যে হাসপাতালে একাধিক বিষয়ের বিষেশজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আর সহকারী কর্মী আছেন সেটি মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল।
এবারে আসি সুপার স্পেশালিটি বিষয়ে।
আপনারা আন্দাজ করেই ফেলেছেন এই যদি স্পেশালিটি হয় তাহলে সুপার স্পেশালিটি নিশ্চয় এর চেয়েও উন্নত কোনো বিষয়। আপনারা ঠিক ধরেছেন। কোনো স্পেশালিটির মধ্যে আরো জটিল আর আরো উন্নত চিকিৎসার নাম সুপার স্পেশালিটি। সুপার স্পেশালিটি হলো স্পেশালিটির আরও ওপরের ধাপ। জটিল আলোচনায় না ঢুকেই বলছি ডাক্তারিতে সুপার স্পেশালিটি হলো হার্টের চিকিৎসা বা কার্ডিওলজি কিডনির চিকিৎসা বা নেফ্রোলজি নার্ভ আর ব্রেনের চিকিৎসা বা নিউরোলজি লিভারের চিকিৎসা বা হেপাটোলজি রক্ত আর অস্থিমজ্জার চিকিৎসা বা হেমাটোলজি। এরকম আরো অনেক আছে কিন্তু সেই লম্বা লিস্ট আর বললাম না।
আপনারা যে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল পেয়েছেন তাহলে সেখানে কোন কোন ডিপার্টমেন্ট থাকার কথা?
এর উত্তর আপনাদের এতক্ষণে জানা হয়ে গেছে।
আপনি বলতে শুরু করবেন কার্ডিওলজি নিউরোলজি হেমাটোলজি নেফ্রোলজি হার্ট সার্জারি ব্রেন সার্জারি ইত্যাদি ইত্যাদি।
এখানেই কবি কেঁদেছেন। এই হাসপাতালগুলোতে ঠিক সেই সেই চিকিৎসা হয় যেগুলো আপনাদের সেই পুরোনো রংচটা জেলা হাসপাতালে হতো। মেডিসিন সার্জারি গাইনি ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার আগের লেখায় বলেছিলাম যে একে তো পঞ্চাশ জনের খাবার ছিলো। সেটাও খিচুড়ি আর লাবড়া। মহাজন কিন্তু বলে গেছেন সব খাবার আছে। আপনি এসে আশাহত হবেন। আপনার রাগ হবে। সেটা যারা ভোজসভা ডেকেছে তাদের ওপর নয়। যারা খাবার পরিবেশন করছে তাদের ওপর। রেস্টুরেন্টে যেরকম খাবার খারাপ হলে সব গালাগালি ওয়েটার খেতে বাধ্য হয়।
বিরাট প্যান্ডেল থুড়ি হাসপাতালের মাথায় লেখা আছে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। ভেতরে কোনো সুপার স্পেশালিটি ডিপার্টমেন্ট নেই।
এতবড় প্রশাসনিক মিথ্যাচার পৃথিবীর আর কোনো সভ্য দেশে হয় কিনা আমার জানা নেই।
এই প্রশাসনিক মিথ্যাচার আর অস্বচ্ছতা ডাক্তার আর স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে এক বিরাট থ্রেট।
আবার বলি
তোমার আমার একই স্বর
জাস্টিস ফর আর জি কর
WE DEMAND JUSTICE
(চলবে)