সন্তান জন্মের পরে অবসাদ খুব বিরল নয়। সেই অবসাদ কাটিয়ে ওঠা যায়। নিজের অভিজ্ঞতার কথা লিখছেন এমন একজন যিনি নিজেই এরকম অবসাদের যন্ত্রণা ভোগ করেছেন, এবং তা কাটিয়েও উঠেছেন।
অবসাদ কাটিয়ে অনেকটা স্বাভাবিক পর্যায়ের দিকে এগোচ্ছি। এখনো পুরোপুরি ঠিক হইনি তবে আগের থেকে অনেকটাই স্থিতিশীল। আমি নিজেই জানি আমি নিজে থেকে ঠিক না হলে সাইক্রিয়াটিস্ট-এর ওষুধ বা সাইকোলজিস্টের সাথে কাউন্সেলিং করিয়ে কিছু হবে না। আমাকে নিজের থেকেই ঠিক হতে হবে।
আমি নিজে বুঝতে পারছিলাম আমার কিছু মানসিক সমস্যা হচ্ছে।আমি আমার গাইনি ডাক্তার চৌধুরী ম্যামকে বললাম আমার মানসিক সমস্যার কথা। বললাম “আমার মনে হচ্ছে আমি মেয়ের থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। কিন্তু আমি তা চাই না মন থেকে।” উনি আমাকে বোঝালেন এইসময়ের মানসিক সমস্যার ব্যাপারে। অনেকের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। তাই উনি আমাকে সাইক্রিয়াটিস্ট-এর পরামর্শ নিতে বললেন।
আসলে বেলা গর্ভে থাকা কালীন অনেকরকম চিন্তার মধ্যে দিয়ে মাসগুলো কেটেছে। তবে বেলা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যে, এতটা বেশি অবসাদে চলে যাবো ভাবিনি। আমি খুব দুর্বল মনের হয়ে গিয়েছিলাম। শুধু কান্না পেতো, কখনো বা কাঁদতাম। সবার ওপর রেগে যেতাম। জিনিসপত্র ফেলে দিতাম। প্রথমে কয়েকদিন বেলার ওপর রেগে যেতাম। রাতের দিকে বেশি হত। কারণ একা আমাকে রাত জাগতে হয়। এমনকি ওকে মাঝে মাঝে অবহেলাও করতাম। কয়েকদিন এটাও মনে হয়েছিল ওকে মেরে ফেলে মরে যাই নিজেও। পরে এইভেবে আরও কাঁদতাম। আমি এসব অস্বাভাবিক ভাবছি। আমি এরকম নই। কারণ এই সন্তানের জন্য একসময় পাগলামি করেছি। অনেক সমস্যা সামনে হাজির হয়েছিল তাও নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে গেছি। সেখানে বেলা যখন আমার কাছে কি সব ভাবছি। উল্টে নিজেকে সারাক্ষণ বেলার মধ্যে আবদ্ধ করে নিয়েছি। যাতে আমার আর বেলার সম্পর্কটা দৃঢ় হয়। মনের মধ্যে উল্টোপাল্টা কিছু না আসতে পারে।
গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই কিছু লোকের অবহেলা, খারাপ ব্যবহার আমার অবসাদ কাটাতে সাহায্য করলো। কোথাও যেন আমি একটা শক্তি অর্জন করলাম। নিজেই বুঝতে পারলাম বেলা আমার দুর্বলতা নয়। বেলা আমার শক্তি। যাকে আমি ৩৮ সপ্তাহ ৩ দিন গর্ভে ধারণ করেছি, তারজন্য আমি সবকিছু করতে পারি। আর নিজের একটা আত্মসম্মান বোধ কাজ করলো, যেটা আমার ভিতর থেকে চলে গিয়েছিল। আমি পারবো, আমাকে পারতে হবে এই মনোভাব আবার ফিরে পেলাম। পাশে মনকে শক্তি জোগাতে বরাবরের মতো পেলাম বাবাকে, সবসময় যে আশার আলো দেখিয়ে গেছে ও যাচ্ছে, হাল ছাড়তে দেয়নি কখনো। সাইকোলজিস্টের কাছে একটা কাউন্সেলিংও করিয়েছি।
বাসু ম্যাম বললেন, “তুই নিজে তোর প্রেরণা। সেখানে তুই জানিস তুই এই সময়টা কাটিয়ে উঠবি। আবার লড়তে পারবি। তোর কথা বলে অন্যকে প্রেরণা দিই। সেখানে তুই আবার এসেছিস। আমি জানি তুই পারবি।” আমি ভাবলাম সত্যিই তো কতো ছোট বয়সে কঠিন পরিস্থিতির সাথে মোকাবিলা করে আজ আমি এখানে, সেখানে এখন তো বুড়ি হতে চলেছি পারবো না হয়, পারবো আমি। সাইক্রিয়াটিস্ট বললেন আর যাই করিস সুইসাইড করিস না। তাঁকে উত্তর দিলাম মনে হয় মেয়েকে মেরে মরে যাই। বেলা আমার কোলেই ছিল আর সেই মুহূর্তে বেলা জোড়ে কেঁদে উঠলো। ডঃ চ্যাটার্জি বললেন, “দেখলি তো, ও তোর কথার প্রটেস্ট করলো।”
বেলা আমার জীবন। তাকে নিয়েই জীবনের বাকিটা পথ এগিয়ে চলা।