সংক্রমণ শুরু হয়েছিলো ঠিক কোথায় ,
এখন মনে করা মুশকিল।
কোনো একটা কারখানায় ঘেঁষাঘেঁষি মানুষের মধ্যে,
অথবা কোনো ধর্মীয় জটলায়,
কিংবা হতেও পারে কোনো মেলা বা মিছিলে।
মোট কথা, আক্রান্ত মানুষেরা তখন যুথবদ্ধ ছিলো,
স্বভাবত, এর থেকে তার, তার থেকে ওর করে ছড়িয়ে গিয়েছিলো
দল ভেঙে একলা হওয়ার পর প্রত্যেকের ঘরে ঘরে।
আপাতসুস্থ মানুষেগুনো বোঝেও নি,
সে বিষ তাদের ঘর ছাপিয়ে পাড়া, পাড়া পেরিয়ে গ্রাম,
গ্রাম পেরিয়ে মহকুমা ও জেলা উজাড় করে দেওয়ার ক্ষমতা ধরে।
লক্ষণ দেখে বুঝেছিলেন দু চারজন দূরদর্শী,
ছড়িয়ে পড়লে আর সামলানো যাবে না,
কিন্তু কর্তৃপক্ষকে সেই সন্দেহ জানাতে উল্টে তাঁরাই ধমক খেয়েছিলেন গুজব ছড়ানোর অভিযোগে।
পরবর্তী গবেষণায় জানা গিয়েছে,
ততক্ষণে ওপরমহলেও বেশ ছড়িয়েছে সংক্রমণ।
প্রথম মৃত্যুটি কার ঘরে, সেটাও আজকে ঝাপসা।
তবে তার পরে জ্যামিতিক হারে মৃত্যু বেড়েছে,
সেটা তো আপনারা সবাই দেখেছেন।
ভয়ে বাড়ি খালি করে পালিয়েছে মানুষ, কিন্তু কোথায় যাবে ? চারদিকে ঘেরাটোপ, যেখানেই গেছে,
সংক্রমণ নিয়ে গেছে তারা,
স্বভাবতই, ব্যাধির প্রকোপ এড়াতে পারেনি।
এ সময়েও, কিছু প্রাজ্ঞ আবেদন করেছিলেন রাষ্ট্রের কাছে, জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করা হোক,
সেনাবাহিনীর তৎপরতায় মোকাবিলা না করলে আক্রান্তদের সংখ্যা কমার কোনো সম্ভাবনাই নেই।
হর্তাকর্তারা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন,
এরকম ছোটোখাটো কত ঝাপটা দেশের ওপর দিয়ে গেছে ! নির্লিপ্তভাবে তারা বলেছেন,
সমস্ত চিকিৎসার সরঞ্জাম মজুত রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে তাছাড়া এটা ঠিক অত বড় রোগ কিনা,
সেটা প্রমাণসাপেক্ষ।
কয়েকটা চটজলদি টোটকাও বাতলেছেন সুনজরে থাকা কিছু চিকিৎসক,
যদিও আগের কোনো সংক্রমণে তারা কোনো কাজই করেনি।
কাজেই না হলো টিকা আবিষ্কার,
না হলো ওষুধ ও পথ্যের ব্যবস্থা,
ক্রমেই আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে লাগলো।
ক্রমে তা সিংহাসনও ছুঁলো, রাজা মন্ত্রী থেকে আমলা, কেউ বাকি রইলেন না,
আর দেখতে দেখতে একটা গোটা দেশ,
অজান্তে ও অজ্ঞতায় চিকিৎসার অভাবে সেই ব্যাধির বধ্যভূমি হয়ে উঠলো।
সৌভাগ্যে কেউ দেশ ছেড়ে পালালেও,
শোনা গেছে, সংক্রমণ তাকেও ছাড়েনি, পিছু পিছু গেছে নতুন ভূমিতে।
শুধু অদ্ভুত ইম্যুনিটিতে নগণ্য কিছু লোক সংক্রমিত হয়নি, কেন জানি তাদের দিকেই লোকে এখন সন্দেহের চোখে দেখে।
ধর্মের ঘৃণা। এ ভাইরাস একবার ছড়ালে, তুচ্ছ হাজার করোনা।