গতকাল আমার স্বখাত সলিলে ডোবার কথা কানে যেতেই (মানে ফেসবুক দেওয়ালে করা কেলেঙ্কারির হদিশ, নিঃসন্দেহে), মেয়ে মেসেজ করল। সাত সমুদ্র তেরো নদীর পাড়ে অনেক দূর মহাদেশ থেকে।
ইনি আমার “বড়ছেলের-ব্যাচমেট”তুতো কন্যা আমার। এমনিতে খোঁজ টোজ নেয় না। কিন্তু নজর রাখে। একবার কী করে বাঁকুড়া মিমস বলে এক পেজে ঢুকেছিলাম। আমার তরল অতিপাকামোর জন্যই। সে সেই দূর প্রবাস থেকে ইয়াব্বড় এক ধমক।- এক্ষুনি বেরিয়ে এসো ওই জঘন্য পাতা থেকে।
সে প্রায় বছর পাঁচেক আগে। তারপরে আর সে’রকম খোঁজ নেয়নি। নিল গত বছর। যখন ফুল ফ্যামিলি কোভিডে যাই যাই। যদিও ডাক্তার না, প্রচুর জানে টানে। কী করতে হবে না হবে, দু’বেলা খোঁজ নিল সেরে ওঠা ইস্তক। তারপর অ্যাদ্দিন বাদে, ফের একটু আগে। – কী গো, তোমার নাকি মন খারাপ।
সত্যি কথাটা কবুল করলাম। কী ভাবে অন্যের লেখা টুকে পোস্ট করে ধরা খেয়েছি সেই বৃত্তান্ত।
শুনে দাবড়ে বলল,- সে তো তুমি বরাবরই টুকে লেখো।
বলেই ইদানিং কালে লেখা এক সিরিয়াল কিলারের গপ্পো উল্লেখ করে বলল, ওটাও তো টুকে লেখা। বলেই পিডিএফ পাঠাল একটা বইয়ের। বলল, – ২৮২ পৃষ্ঠার গল্পটা পড়ো।
পড়লাম। পড়ে সন্তর্পণেপ জিজ্ঞেস করলাম,- হ্যাঁ রে, ওটাও তবে ডিলিট করি? তুই ছাড়াও মস্ত আর এক লেখকও বলেছেন। ইয়ে মানে, কাছাকাছি থিম এই ব্যাপারটা।
সান্ত্বনা দিয়ে বলল,- আরেঃ, তা কেন? একই রকম সিরিয়াল কিলার শুধু। তারপর তো ব্যাপার আলাদা।
তারপরে নিজেই আমার মন খারাপে ফিরল। পুরো ইতিহাস শুনে বলল, তবে শোনো আমার মন খারাপের গপ্পো।
সেই গপ্পোটা আপনাদেরও শোনাই ওই কন্যার জবানিতে।
” উত্তর দিতে দেরি হল একটু। ডিনার করছিলাম। কদিন আগে অনলাইন গ্রসারিতে দেখি বাটারনাট স্কোয়াশ নুডল। ভাবলাম কোন নতুন রকমের নুডল হবে। আজকে রান্না করব বলে খুলে দেখি পাতি সরু সরু করে নুডলের মতন করে কাটা কুমড়ো।
অগত্যা চিংড়ি দিয়ে কুমড়োর তরকারি রেঁধে সেই দিয়েও ডিনার হল।”
আলগোছে জিজ্ঞেস করলাম, “এটাও ফেসবুকে দেব?”
বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ দিয়ে দাও, কিন্তু সাথে এটাও লিখো পুরো ব্যাপারটাই হয়েছে আমেরিকানদের গাধামির জন্য। এরা চেনা নাম না পেলে খেতে পারে না। এরা আমাদের চাকে কি বলে বলো তো? chai tea। এত্ত বিরক্ত লাগে না শুনলে!
অবশ্য এর থেকেও নিদারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে এর আগে একবার।
ভেগান জানো তো? এক ভেগান বন্ধু তার জন্মদিন সেলেব্রেট করতে এক রেস্টুরেন্টে ডেকেছে। গিয়ে দেখি দারুন হাই ফাই এক ফ্রেঞ্চ বিস্ত্রো। ছোট ছোট টেবিল, ইতস্তত আলো জ্বলছে, হালকা মিউজিক, মানে বেশ কেতের ব্যাপার।
তা মেনুতে দেখলাম মাছ মাংসও আছে। আমার রেস্টুরেন্টে গিয়ে ভেজ খেতে মোট্টে ভাল্লাগেনা। আর আমেরিকান ফ্রেঞ্চ রান্না আমার খুব একটা পোষায় না। মশলা ইউজ করে না তো সেরকম, খুব ব্ল্যান্ড লাগে।
তা সেসব কারণে অনেক ভেবে চিন্তে স্টেক অর্ডার করলাম। ভাবলাম ওটা মশলা ছাড়াও খুব একটা খারাপ হয় না।
এরপর তো বসে গল্প করছি, স্টেক এলো, কাটতে গিয়ে টেক্সচারটা অন্য রকম লাগছে।
ভাবলাম কি জানি হয়ত, ফ্রেঞ্চ দোকান তাই কোন কিছু কায়দা করেছে।
মুখে দিতে প্রথম কামড় দিয়েছি, বন্ধুর উচ্ছ্বসিত প্রশ্ন, স্টেকটা একদম আসলের মত খেতে না?
মুখে তখন একটা বিজাতীয় স্বাদ। কোনমতে গিলে বন্ধুকে জিগেস করলাম, “এটা কি ছিল?”
বলল, “এটা ভিগান স্টেক। তুমি রেস্টুরেন্টে গেলেই মাছ মাংস খোঁজো। তাই তোমার কথা ভেবেই এই জায়গাটা বেছেছি। এরা ভেগান অল্টারেনেটিভ মেটেরিয়াল দিয়ে মাছ মাংস বানায়। একদম আসলের মতন খেতে না?”
সেদিন যে ওকে মারধোর না করে চুপচাপ কোন মতে ওটা গিলেছি, ওর অনেক সৌভাগ্য। ছাতু, মাসরুম, আর মুসুর ডালের “স্টেক”! আমাকে ফ্রিতে দিলেও ওই অখাদ্য খেতাম না।
আর সেখানে ৬০ ডলার গাঁটগচ্চা দিয়ে স্টেকের পাশে সঙ্গত দেওয়া মটরশুঁটি খেয়েই বাড়ি চলে এসেছিলাম।
কি অত্যাচার বলোতো? মুসুর ডাল খেলে মুসুর ডাল খা। তা না সাথে মেপল সিরাপ, মাশরুম, ছাতু মিশিয়ে স্টেক বানিয়ে খাচ্ছে। অত স্টেক খাওয়ার ইচ্ছে থাকলে ভেগান হওয়ার দরকার কি!”
কন্যা এতক্ষণ একটানা বলে, একটু বিরতি দিয়ে শুধোলো,
” মন ভাল হল?”
★
হল বই কি!
★
তবে এই লেখাটাও টুকে লেখা। বুঝতেই পারছেন। অধিকাংশ কথাই ওর। অনুমতি নিয়েই ওর সংলাপ টুকেছি।
হ্যাঁ, স্ক্রিন শটও আছে। আছে বই কি।