যে সংক্রামক ব্যাধি এখন সঙ্গত কারণেই বিশ্বজুড়ে খবরের শিরোনামে তার সম্পর্কে অনেক তথ্যই এখন আপনার জানা। ডিসেম্বর ২০১৯ এ চিন দেশে শুরু হয়ে করোনার ছায়া এখন আমার আপনার দোরগোড়ায়। প্রতিরোধের জন্য যে সমস্ত সাবধানতার কথা রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে প্রচার করা হচ্ছে সেগুলো অবশ্যই মেনে চলবেন। আমার এই লেখা মূলত অন্ত:স্বত্ত্বা মহিলা বা হবু মায়েদের উদ্দেশ্যে।
নভেল শব্দটির অর্থ নতুন। অর্থাৎ করোনা গোত্রীয় যে সমস্ত ভাইরাস আমাদের কাছে পরিচিত এটি তাদের থেকে ভিন্ন চরিত্রের। রোগটি যেহেতু নতুন, আমাদের কাছে বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যও তাই সীমিত। আর গর্ভাবস্থায় কোনো সংক্রমনের প্রভাব সম্পর্কে বলতে গেলে যে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার দরকার তাও এই মুহূর্তে নেই। তবু এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই আলোচনা।
1. করোনা ভাইরাস ডিজিজ ১৯ (কোভিড ১৯) কি প্রেগন্যান্সিতে বেশি বিপজ্জনক?
প্রেগন্যান্সি চলাকালীন মেয়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদিও সামান্য কমে যায় তবু এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে রোগটি গর্ভাবস্থায় বেশি ভয়ঙ্কর। এতদিনে এটা আমাদের জানা হয়ে গেছে যে বয়স্ক মানুষেরা বেশি ক্ষতিপ্রবণ। আর এক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম বয়সই হয়তো হবু মায়েদের সম্ভাব্য হাতিয়ার। তাছাড়া গর্ভকালীন সীমিত রোগ প্রতিরোধ (immuno suppression) ক্ষমতা কখনোই কেমোথেরাপি চলাকালীন বা HIV infection এর মতো ততটা ভয়াবহ নয়।
2. হাত ধোয়া, দূরে থাকা ইত্যাদি ছাড়া আর কোনো বিশেষ সাবধানতা?
বিশেষ কিছু নয় তবে হাত অবশ্যই ধোবেন। বারবার ধোবেন। ভালো করে ধোবেন। অন্তত পক্ষে কুড়ি সেকেন্ড। হাঁচি সর্দি হয়েছে এরকম মানুষ থেকে দূরে থাকবেন। নিজের এরকম কোনো উপসর্গ হলে বা জ্বর এলে চিকিৎসককে ফোন করবেন।
3. মাস্ক পরা কি আবশ্যিক?
সর্দি-কাশি-জ্বর হলে অবশ্যই পড়বেন। আক্রান্ত রোগীদের কাছে আসতে বাধ্য হলে পড়বেন। অন্যথায় দরকার নেই। আর এর জন্য সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্কই যথেষ্ট।
4. গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ হলে বাচ্চা কি বিকলাঙ্গ হতে পারে?
নভেল করোনা ভাইরাস সম্পর্কে এক্ষুনি হলফ করে কিছু বলে ফেলা সম্ভব নয় তবে করোনা গ্রুপের অন্য সদস্যেরা যেমন SARS বা MERS ভাইরাসের কোনো জন্মগত ত্রুটির জন্য দায়ী করা হয় নি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এন্-কভকে অতখানি ক্ষতিকারক বলে মনে হচ্ছে না।
5. মায়ের কি কি সমস্যা হতে পারে?
শরীরের তাপমাত্রা বাড়ার জন্য আর পাঁচটা জ্বরে যেমন হয়, কোভিড ১৯ এও গর্ভপাত (miscarriage), অপরিণত অবস্থায় ডেলিভারি (premature delivery) ইত্যাদির সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। চিন দেশ থেকে প্রকাশিত তথ্যে এখনও পর্যন্ত কোনো অন্ত:স্বত্ত্বা মহিলার মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় নি। এটাও প্রমাণিত যে SARS বা MERS এর তুলনায় কোভিড ১৯ এর মারণ ক্ষমতা অনেক কম।
6. গর্ভাস্থ ভ্রূণে রোগ সংক্রমণ কি সম্ভব?
গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ হয়েছে এরকম মায়েদের গর্ভফুল (placenta) বা গর্ভস্থ জলীয় পদার্থ (amniotic fluid) নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং সেখানে কোনো রোগ জীবাণু পাওয়া যায় নি। সীমিত সংখ্যায় হলেও প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এ ব্যাপারেও অযথা টেনশন করার মতো কোনো কারণ পাওয়া যায় নি।
7. আক্রান্ত মা কি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন?
এ ধরণের রোগ সব চেয়ে বেশি ছড়ায় বাতাসে ভেসে থাকা অনুকণা (droplets) বা নিকটস্থ জড় বস্তু (fomites) যেমন তোয়ালে, রুমাল, দরজার হাতল, ফোন, পেন ইত্যাদি থেকে। মাতৃদুগ্ধ মারফত রোগ সংক্রমনের কোনো প্রমাণ এখনও অবধি পাওয়া যায় নি। তবে স্তন্যদানের সময় যাতে আক্রান্ত মায়ের থেকে সন্তানের সংক্রমন না হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে নিষ্কাশিত দুধও (expressed breast milk) দেওয়া যেতে পারে। মনে রাখবেন মাতৃ দুগ্ধের কোনো বিকল্প নেই। অযথা ভয়ের বশে শিশুকে মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত করবেন না।
8. প্রতিষেধক ভ্যাকসিন কিছু আছে কি?
এই মুহূর্তে তো নয়ই। আগামী এক দুবছরেও আসবে কি না সন্দেহ আছে। যে কোনো টীকা আবিস্কারের পর তাকে বাধ্যতামূলক কিছু সেফটি চেক এর মধ্যে দিয়ে নিয়ে যেতে হয়। গোটা পদ্ধতিটি যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ।
9. বাড়িতে থাকা ছোট বাচ্চার বিপদ কতখানি?
দেখা গেছে শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের তীব্রতা অপেক্ষাকৃত কম। তাই বলে বিয়য়টি হাল্কা ভাবে নিলে চলবে না। বড়োদের মতো তাদেরও একই সাবধানতা মেনে চলতে হবে। ফ্লু-টাইপ কোনো অসুস্থতা হলে নিজ নিজ চিকিৎসককে ফোন করুন।
10. টোটকা চিকিৎসা কিছু করা যায় কি?
সুযোগসন্ধানী কিছু মানুষ হয়তো কিছু ভিত্তিহীন দাবি রাখবেন। যেমন কেউ কেউ বলছেন গোমূত্রের কথা। এসব বুজরুকিতে কান দেবেন না। কোভিড ১৯ এর বিরুদ্ধে কার্যকরী কোনো ওষুধ এখনও আবিষ্কৃত হয় নি। সহায়ক চিকিৎসা (supportive care) এবং ভাইরাস সংক্রমনের সুযোগে যাতে অন্য রোগ জীবাণুও শরীরে প্রবেশ না করতে পারে সেই দিকেই লক্ষ্য রাখা বাঞ্ছনীয়।
পরিশেষে:
অপরিচিত হানাদার। অনেক কিছুই এখনো অজানা। তবু সেই বহু পুরনো আপ্তবাক্য ভুললে চলবে না। Prevention is better than cure. প্রতিরোধ করুন। প্রতিকার পরের কথা।
সতর্ক থাকুন। আতঙ্কে নয়।
খুব ভালো লাগলো
আপনাকে এবং ডক্টরস ডায়লগ কে ধন্যবাদ এই আপৎকালীন উপদেশের জন্য।